কাল ভোর সাড়ে পাঁচটায় শুরু মেলবোর্ন টেস্ট-রোমাঞ্চের অপেক্ষায় বক্সিং ডে টেস্ট

বিশ্বকাপ জয়ের পর শচীন টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারে অপূর্ণতা বলে কিছু থাকার কথা নয়। কিন্তু আছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কখনো যে টেস্ট সিরিজ জেতা হয়নি! বিশ্বকাপ দলে ছিলেন না রাহুল দ্রাবিড়। কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ারেরও সবচেয়ে বড় আক্ষেপ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জিততে না-পারা। বলছেন, ‘হাজার খানেক রান বা সেঞ্চুরি ৫টি কম হলেও আফসোস থাকত না যদি অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিততে পারতাম!’ অস্ট্রেলিয়াকে পেলেই কীভাবে যেন সেরাটা


বেরিয়ে আসে ভিভিএস লক্ষ্মণের। এমন কিছু ইনিংস খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, তাঁর ক্যারিয়ারে তো বটেই, টেস্ট ইতিহাসেরই সেরা ইনিংসগুলোর তালিকায় যেগুলো জায়গা পেয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই আছে ৪টি সেঞ্চুরি। কিন্তু সিরিজ জয়ের অংশ হতে না পারলে কি পূর্ণতা পাবে লক্ষ্মণের অস্ট্রেলিয়া-বীরত্ব?
শুধু বর্তমানের এই তিন মহীরুহই নয়, হাজারে-মানকড়-ভেংসরকার-গাভাস্কার-কপিল-আজহার বা সৌরভ, এই অপূর্ণতা থেকে গেছে সবারই। ১৯৪৭ সালে লালা অমরনাথ থেকে শুরু করে ২০০৮ সালে অনিল কুম্বলের দল—অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়নি ভারতের কোনো দল। তবে ইতিহাস এবার বদলে যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়া দলে পালাবদল আর সাম্প্রতিক ফর্ম বলছে, অপূর্ণতা ঘোচানোর সেরা সুযোগ এবারই। কাল মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্ট দিয়ে পর্দা উঠছে যে সিরিজের।
বক্সিং ডে টেস্ট শুনলেই খানিকটা বিষাদ ছড়িয়ে পড়ার কথা অস্ট্রেলিয়া শিবিরে। এমনিতে অস্ট্রেলিয়ার বক্সিং ডে রেকর্ড দারুণ। সত্তরের দশক থেকে নিয়মিত হয়ে আসা ২৯টি বক্সিং ডে টেস্টের মাত্র ৬টিতে হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু গত বক্সিং ডে টেস্টের স্মৃতিটা দুঃসহ। মেলবোর্নের মেঘলা সকালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ডারসন-ট্রেমলেটের সুইংয়ের কাছে বিধ্বস্ত হলো ৯৮ রানে। দুপুরের রোদে সহজ হয়ে গেল উইকেট, দিন শেষে ইংল্যান্ড বিনা উইকেটে ১৫৭। চার দিনেই ইনিংস ও ১৫৭ রানে জিতে ২৪ বছর পর অ্যাশেজ ধরে রাখল ইংল্যান্ড।
এর পরের এক বছরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং-দুশ্চিন্তা বেড়েছে আরও। ডারবানের ৪৭, হোবার্টে ৭৪ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সুইং বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্ব। টেস্টের আগে চার দিনে মেলবোর্নে তাই ‘সুইং বোলিংয়ে ব্যাটিং’ ক্যাম্প হয়েছে ক্লার্ক-পন্টিং-হাসিদের। তবে এই তিনজনের আগে যাঁরা ব্যাটিংয়ে নামবেন, শুরুর সুইং-ঝড় সামলাতে হবে তাঁদেরই। আর সেই তিনজন মিলে খেলেছেন মাত্র ৫ টেস্ট! তবে অস্ট্রেলিয়ার ভরসাও আবার এই তিনজন। ২ টেস্ট খেলেছেন ডেভিড ওয়ার্নার, আদ্যন্ত ব্যাট করেছেন দ্বিতীয়টিতে। ৩ টেস্টে ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটি শন মার্শের। আজই ব্যাগি গ্রিন পাবেন এড কাওয়ান। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে এবার দুর্দান্ত ফর্মে আছেন ২৯ বছর বয়সী বাঁহাতি ওপেনার, ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও করেছেন সেঞ্চুরি।
কিউরেটর ক্যামেরন হজকিনস বলছেন, ম্যাচের প্রথম সকালেই কেবল সহায়তা পাবেন বোলাররা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়াবে ব্যাটসম্যানদের দিকে। কিন্তু প্রথম সকালে যদি আবারও ব্যাট করতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে? মাইকেল ক্লার্কের দাবি, গত বক্সিং ডে টেস্টের ভূত তাঁরা ঝেড়ে ফেলেছেন। সুইং বোলিংয়ের বিপক্ষে সাম্প্রতিক ব্যর্থতার পরও ব্যাটসম্যানদের সহজাত খেলার পক্ষেই অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক, ‘যদি প্রথমে ব্যাট করি, তার পরও আমি মনে করি, সহজাত ব্যাটিং করাটা জরুরি। নিজেদের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। ব্যাটিং নিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছি, প্রস্তুতি তাই দারুণ হয়েছে। এখন মাঠে গিয়ে উপভোগ করা আর নিজেদের মেলে ধরার ব্যাপার। শুরুতে বল সুইং করবে, কিন্তু আমরাও প্রস্তুত।’
ক্লার্কদের সবচেয়ে বেশি বেগ দিতে পারেন যে দুজন, সেই জহির খান ও ইশান্ত শর্মার ফিটনেস অবশ্য প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও শেষ পর্যন্ত দুজনই হয়তো খেলবেন। ভারতের অপূর্ণতা ঘোচানোর সেরা সুযোগ বলেই ভারতের ওপর চাপও যথেষ্ট। ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি অবশ্য চাপটাকে দূরে ঠেলতে চাইলেন, ‘বাড়তি চাপ নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। আমরা প্রতিটি ম্যাচ জয়ের চেষ্টা করি, এটাও তেমন একটি ম্যাচ। আমাদের সবকিছু সহজ রাখতে হবে, ছোটখাটো ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক করতে হবে।’
তার পরও চাপ এসেই যায়। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের তিন মহারথীর শেষ অস্ট্রেলিয়া সফর এটাই। এই সিরিজের পর প্রায় দুই বছর দেশের বাইরে ভারতের টেস্ট নেই। তাঁদের বিদেশের মাটিতে শেষ সিরিজও তাই হতে পারে এটাই। টেন্ডুলকার-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণরা নিশ্চয়ই চাইবেন ৬৪ বছরের খরা ঘুচিয়ে সিরিজটাকে স্মরণীয় করে রাখতে! রয়টার্স, ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.