অশ্রু ও ভালোবাসায় শহীদজায়াদের সংবর্ধনা
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে যখন হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়, তখন তাঁর আট ছেলেমেয়ের সবাই শিশু-কিশোর। স্বামীর মৃত্যুর পর অসহায় স্ত্রী নূরজাহান সিরাজী চোখে অন্ধকার দেখছেন। কিন্তু সব কষ্ট বুকে চেপে আট সন্তানকে মানুষ করেছেন শহীদ এই বুদ্ধিজীবীর স্ত্রী। গত চল্লিশ বছর ধরে তিনি স্বামী হারানোর কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন। তবে রাষ্ট্র কখনো তাঁর ত্যাগের স্বীকৃতি দেয়নি। কেবল নূরজাহান সিরাজীই নন, শহীদ
বুদ্ধিজীবী আবদুল আলিম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদ অধ্যাপক আবুল হাশেমের স্ত্রী জেবুন্নেসা বেগম, শহীদ আবদুল কাদেরের স্ত্রী আবেদা খানমসহ অসংখ্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এখনো স্বামী হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন।
গতকাল শনিবার এমন ২২ জন শহীদজায়াকে সম্মাননা পদক দিয়েছে প্রজন্ম ’৭১ ও আমরা মুক্তিযোদ্বার সন্তান। এখন থেকে প্রতিবছর ডিসেম্বরে শহীদজায়াদের সম্মাননা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আয়োজকেরা। তবে তাঁদের দাবি, রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক আগেই এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এখনো হয়নি। ভবিষ্যতে রাষ্ট্র তাঁদের সম্মাননা দেবে বলে আশা করেন তাঁরা।
গতকাল আরও যাঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন: হাসনা হেনা কাদির (মরণোত্তর), রওশন আজিজ, সালমা হক, আনোয়ারা বেগম, নিলুফার খানম, মেশরুন নাহার, জেসমিন আলম, আনোয়ারা বেগম, আসিয়া খাতুন, রাশিদা বেগম, আমেনা বেগম, আলেয়া বেগম, শাহেদা আক্তার, মনোয়ারা খাতুন, মোসাম্মৎ আলেয়া বেগম, আয়েশা খাতুন, রহিমা খাতুন ও নূরজাহান বেগম।
জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনারকক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা উপস্থিত ছিলেন। শহীদজায়াদের সম্মাননা জানাতে গিয়ে তাঁদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘কী যে কষ্ট আমরা বুকের ভেতর চেপে রেখেছি, সেটি বলার নয়। পিতৃঋণের বোধ থেকে আজকে আমাদের সন্তানেরা আমাদের সম্মাননা দিচ্ছে। এই সন্তানদের অনেকের কাছে তাঁদের বাবা বলতে ছবি ছাড়া আর কোনো সম্বল নেই। তবুও তাঁরা বাবাকে বুকের ভেতর আগলে রেখেছেন। বাবার আদর্শ তাঁরা বুকের ভেতর ধারণ করছেন।’
জেবুন্নেসা বেগম বলেন, ‘আমার সন্তান কখনো বাবাকে দেখেনি। আমি আমার সন্তানকে বলি, তোমার বাবা ২ নম্বর সেক্টরে শহীদ হয়েছেন। তুমি তাঁকে দেখোনি। কিন্তু স্বাধীন দেশ পেয়েছো। এই দেশের মাটি তোমার বাবার রক্তে।’ একপর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, আমরা এখনো এই আশায় আছি। আমরা চাই, এই অন্যায়ের বিচার হোক।’
এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কারণ বলতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি শাহীন রেজা নূর বলেন, ‘দুটি কারণে এই অনুষ্ঠান। প্রথমত, চল্লিশ বছর ধরে দেশবাসী স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। কিন্তু স্বজনহারার বেদনা যাদের মধ্যে আছে তারাই জানে, কী কষ্ট তাদের বুকের ভেতর আছে। জীবনের শেষবেলায় এসে শহীদদের স্ত্রীরা প্রতীক্ষায় আছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। দ্বিতীয়ত, শহীদদের স্ত্রীরা চল্লিশ বছর ধরে অবিরাম সংগ্রাম করে চলেছেন। কিন্তু তাঁদের সেই সংগ্রামের কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাই আমরা এই অনুষ্ঠান শুরু করলাম। আমরা মনে করি, শহীদজায়াদের সম্মানিত করার মধ্য দিয়ে এ জাতি গৌরবান্বিত হবে।’
প্রজন্ম ’৭১-এর সহসভাপতি নাদিম কাদির বলেন, ‘আমরা একাত্তরে যাঁরা বাবাকে হারিয়েছি, আমাদের প্রত্যেকের মায়েরা যুদ্ধের পর আরেকটি যুদ্ধ করেছেন। আজ যে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা তাঁদের এখানে আনতে পেরেছি, সেটি আমাদের জন্য সম্মানের।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম হামিদ বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও এই মায়েদের যুদ্ধ শেষ হয়নি। কিন্তু এত কষ্ট করার পরও আমরা তাঁদের শান্তি দিতে পারিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমেই কেবল আমরা তাঁদের শান্তি দিতে পারি।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, আজকে শহীদজায়াদের সম্মাননা জানানোর যে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো, সেটি যেন অব্যাহত থাকে।
গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আপনাদের মতো মায়েদের সালাম। আপনারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলেই আমরা একটি দেশ পেয়েছি।’
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের উপদেষ্টা নূরন্নবী খান বলেন, জাতীয়ভাবে এমন অনুষ্ঠান করার দরকার ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা তা করতে পারিনি।
গতকাল শনিবার এমন ২২ জন শহীদজায়াকে সম্মাননা পদক দিয়েছে প্রজন্ম ’৭১ ও আমরা মুক্তিযোদ্বার সন্তান। এখন থেকে প্রতিবছর ডিসেম্বরে শহীদজায়াদের সম্মাননা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আয়োজকেরা। তবে তাঁদের দাবি, রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক আগেই এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এখনো হয়নি। ভবিষ্যতে রাষ্ট্র তাঁদের সম্মাননা দেবে বলে আশা করেন তাঁরা।
গতকাল আরও যাঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন: হাসনা হেনা কাদির (মরণোত্তর), রওশন আজিজ, সালমা হক, আনোয়ারা বেগম, নিলুফার খানম, মেশরুন নাহার, জেসমিন আলম, আনোয়ারা বেগম, আসিয়া খাতুন, রাশিদা বেগম, আমেনা বেগম, আলেয়া বেগম, শাহেদা আক্তার, মনোয়ারা খাতুন, মোসাম্মৎ আলেয়া বেগম, আয়েশা খাতুন, রহিমা খাতুন ও নূরজাহান বেগম।
জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনারকক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা উপস্থিত ছিলেন। শহীদজায়াদের সম্মাননা জানাতে গিয়ে তাঁদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘কী যে কষ্ট আমরা বুকের ভেতর চেপে রেখেছি, সেটি বলার নয়। পিতৃঋণের বোধ থেকে আজকে আমাদের সন্তানেরা আমাদের সম্মাননা দিচ্ছে। এই সন্তানদের অনেকের কাছে তাঁদের বাবা বলতে ছবি ছাড়া আর কোনো সম্বল নেই। তবুও তাঁরা বাবাকে বুকের ভেতর আগলে রেখেছেন। বাবার আদর্শ তাঁরা বুকের ভেতর ধারণ করছেন।’
জেবুন্নেসা বেগম বলেন, ‘আমার সন্তান কখনো বাবাকে দেখেনি। আমি আমার সন্তানকে বলি, তোমার বাবা ২ নম্বর সেক্টরে শহীদ হয়েছেন। তুমি তাঁকে দেখোনি। কিন্তু স্বাধীন দেশ পেয়েছো। এই দেশের মাটি তোমার বাবার রক্তে।’ একপর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, আমরা এখনো এই আশায় আছি। আমরা চাই, এই অন্যায়ের বিচার হোক।’
এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কারণ বলতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি শাহীন রেজা নূর বলেন, ‘দুটি কারণে এই অনুষ্ঠান। প্রথমত, চল্লিশ বছর ধরে দেশবাসী স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। কিন্তু স্বজনহারার বেদনা যাদের মধ্যে আছে তারাই জানে, কী কষ্ট তাদের বুকের ভেতর আছে। জীবনের শেষবেলায় এসে শহীদদের স্ত্রীরা প্রতীক্ষায় আছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। দ্বিতীয়ত, শহীদদের স্ত্রীরা চল্লিশ বছর ধরে অবিরাম সংগ্রাম করে চলেছেন। কিন্তু তাঁদের সেই সংগ্রামের কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাই আমরা এই অনুষ্ঠান শুরু করলাম। আমরা মনে করি, শহীদজায়াদের সম্মানিত করার মধ্য দিয়ে এ জাতি গৌরবান্বিত হবে।’
প্রজন্ম ’৭১-এর সহসভাপতি নাদিম কাদির বলেন, ‘আমরা একাত্তরে যাঁরা বাবাকে হারিয়েছি, আমাদের প্রত্যেকের মায়েরা যুদ্ধের পর আরেকটি যুদ্ধ করেছেন। আজ যে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা তাঁদের এখানে আনতে পেরেছি, সেটি আমাদের জন্য সম্মানের।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম হামিদ বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও এই মায়েদের যুদ্ধ শেষ হয়নি। কিন্তু এত কষ্ট করার পরও আমরা তাঁদের শান্তি দিতে পারিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমেই কেবল আমরা তাঁদের শান্তি দিতে পারি।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, আজকে শহীদজায়াদের সম্মাননা জানানোর যে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো, সেটি যেন অব্যাহত থাকে।
গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আপনাদের মতো মায়েদের সালাম। আপনারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলেই আমরা একটি দেশ পেয়েছি।’
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের উপদেষ্টা নূরন্নবী খান বলেন, জাতীয়ভাবে এমন অনুষ্ঠান করার দরকার ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা তা করতে পারিনি।
No comments