ফিরে দেখা ২০১১-টেনিসে জোকোভিচ-রাজ

টেনিসে ২০১১ সালটি কার? উত্তর দিতে একদণ্ড সময় লাগাও উচিত নয়। বিদায়ী এই বছরটায় বিশ্ব টেনিসে ছড়ি ঘুরিয়েছেন সার্বিয়ান তারকা নোভাক জোকোভিচ। তিন-তিনটি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন, মাস্টার্স সিরিজের শিরোপা পাঁচটি। ৭৬টি ম্যাচের ৭০টিতেই জয়ী জোকোভিচ কামিয়েছেন ১ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার! উঠে এসেছেন র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। জোকোভিচের সাফল্যে মোড়ানো বছরে মহিলা টেনিসের চিত্রটা ঠিক উল্টো।


একক আধিপত্য দেখা যায়নি। বড় উন্মুক্ত হয়ে পড়া মহিলা টেনিসে একেকজন নতুন তারকা জিতেছেন একেকটি গ্র্যান্ড স্লাম। গত বছর সার্বিয়াকে ডেভিস কাপ এনে দেওয়ার মধ্য দিয়েই শুরু ২৪ বছর বয়সী জোকোভিচের স্বপ্নযাত্রা। অপরাজিত থেকেছেন এ বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। সংখ্যায় ৪৩ ম্যাচ। জানুয়ারিতে অ্যান্ডি মারেকে হারিয়ে জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। রাফায়েল নাদালকে হারিয়ে উইম্বলডন। নাদালকে হারিয়ে ইউএস ওপেন জয়ের আগেই হাতের মুঠোয় পুরেছেন র‌্যাঙ্কিং-শ্রেষ্ঠত্ব। কোর্টে জোকোভিচ এ বছর কতটা দুর্দান্ত ছিলেন, তা বলে দেয় এই পরিসংখ্যানই। নাদালের বিপক্ষে ছয় ম্যাচের ৬টিতেই জিতেছেন, রজার ফেদেরারের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের চারটিতে, র‌্যাঙ্কিংয়ের চারে থাকা মারেকে তিনবারের মধ্যে হারিয়েছেন দুবারই। জোকোভিচও মানছেন, বছরটা কাটিয়েছেন স্বপ্নের মতোই, ‘অবিশ্বাস্য রকম একটা বছর কাটল আমার। কোনো কিছুতেই এই কৃতিত্ব হারিয়ে যাওয়ার নয়। আমার ক্যারিয়ারের সেরা বছর হিসেবে সব সময় এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমার কাছে।’
জোকোভিচের এমন ঈর্ষণীয় সাফল্যের বছরটা ফেদেরারের জন্য মলিন। আট বছরের মধ্যে এই প্রথম গ্র্যান্ড স্লামশূন্য থাকলেন ১৬টি গ্র্যান্ড স্লামের মালিক। তবে সুইস তারকার ‘সান্ত্বনা’ হতে পারে বছরের শেষ এটিপি টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়। র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট তারকাকে নিয়ে লন্ডনে হওয়া ওয়ার্ল্ড ট্যুরস ফাইনালসের শিরোপা জিতেছেন ফ্রান্সের জো-উইলফ্রায়েড সোঙ্গাকে হারিয়ে। এই টুর্নামেন্ট জেতায় টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থেকে নতুন বছর শুরু করবেন সাবেক টেনিস-শ্রেষ্ঠ।
বছরটি খুব ভালো কাটেনি আরেক সাবেক এক নম্বর নাদালের জন্যও। ফ্রেঞ্চ ওপেন জেতা নাদালকে চোটের সঙ্গে লড়তে হয়েছে। র‌্যাঙ্কিং-শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়েছেন জোকোভিচের কাছে। সান্ত্বনা, দেশের হয়ে ডেভিস কাপ জয়।
মহিলা টেনিসে ছিল নতুনের জয়জয়কার। শুধু অস্ট্রেলিয়ান ওপেন বাদ দিলে বাকি তিনটি গ্র্যান্ড স্লামে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন নতুন তিনজন। ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে প্রথম এশীয় হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের কীর্তি গড়েছেন চীনের লি না। উইম্বলডন জিতেছেন চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভা। আর অস্ট্রেলীয়দের ৩১ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ইউএস ওপেনে চ্যাম্পিয়ন সামান্থা স্টোসুর। টেনিসের ২৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একই বছরের তিনটি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা উঠল নতুন তিন চ্যাম্পিয়নের হাতে। মহিলা টেনিসের দলগত শিরোপাও জিতেছে কেভিতোভার চেক প্রজাতন্ত্র।
পড়তি ফর্ম আর চোট মিলিয়ে একরকম আড়ালেই থেকেছেন দুই দুই বোন ভেনাস ও সেরেনা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে এবারও ভালো কিছু করার আভাস দিয়েছিলেন কিম ক্লাইস্টার্স। কিন্তু বন্ধুর বিয়ের পার্টিতে নাচতে গিয়ে পড়লেন পায়ের ইনজুরিতে। এরপর বাইরেই থাকলেন ‘কামব্যাক কুইন’। এক নম্বর হিসেবে ক্যারোলিন ওজনিয়াকি কাটিয়ে দিলেন আরেকটি বছর, কিন্তু গ্র্যান্ড স্লাম তাঁর অধরাই থেকে গেছে। বছরটি ভালো কাটেনি মারিয়া শারাপোভারও। কিন্তু সাফল্য-খরা তাঁর আয়ে একটুও প্রভাব ফেলেনি। ২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার আয় করে যথারীতি এ বছরও তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ উপার্জনশীল মহিলা ক্রীড়াবিদ। এএফপি ও ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.