জ্বালানির ভর্তুকি তুলে দিতে চায় সরকার by অরুণ কর্মকার ও মামুন আবদুল্লাহ
জ্বালানির দাম পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে এই খাতের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে দিতে চায় সরকার। তবে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহূত জ্বালানির জন্য আলাদাভাবে ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখা হবে। অর্থ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সব ধরনের জ্বালানি তেলের বর্ধিত দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিগগিরই সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দামও বাড়ানো হবে। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জ্বালানির ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে দেওয়া সরকারের একটি অতি উচ্চাভিলাষী নীতি। কৃষিতে আলাদাভাবে ভর্তুকি দেওয়ার পদক্ষেপ যতই নেওয়া হোক, তা দিয়ে সামগ্রিক মূল্য-পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে। এখন কিছুদিন পরপর জ্বালানির দাম বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজেল ও ফার্নেস তেলের চাহিদা বেড়েছে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য। সরকার যদি বিদ্যুৎ খাতে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আশানুরূপ অগ্রসর হতে পারত, তাহলে আর বেশি দিন ডিজেল-ফার্নেস তেলের ভর্তুকির বোঝা বইতে হতো না। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আগে জ্বালানি তেল লাগত প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন। আর এখন চাহিদা বেড়ে লাগছে ৬৮ লাখ মেট্রিক টন।
জ্বালানির দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, বিশেষ করে ডিজেলের ক্ষেত্রে। দেশে ব্যবহূত জ্বালানির প্রায় ৯০ শতাংশই ডিজেল। কিন্তু তার পরও বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে দ্বিমত রয়েছে।
দ্বিমতকারীদের হিসাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি ব্যারেল (১৬৮ লিটার) অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৯০ মার্কিন ডলারের নিচে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট খুললেই যেকোনো সময় যে কেউ এই দাম দেখতে পাবেন। সে হিসাবে দেশে এখন জ্বালানির দাম বাড়ার কথা নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ১২২ মার্কিন ডলার।
সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলোর মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের ক্ষেত্রে পরিশোধিত, অপরিশোধিত ছাড়া সিঙ্গাপুর, লন্ডন প্রভৃতি বাজারভেদেও দামের হেরফের হয়। তা ছাড়া বিপিসি তেল আমদানি করে কয়েকটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের নির্ধারিত দামে। এই দাম কিছুটা বেশি। নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পেতে ওই উৎসই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে বিপিসি।
দাম কত বাড়ানো দরকার: দেশে জ্বালানির দাম যতবারই বাড়ানো হয়, শোনা যায় যে এর পরও বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হবে। তাহলে জ্বালানির দাম কত টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হলে আর ভর্তুকি দিতে হবে না? এই প্রশ্ন অনেকের। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এককথায় এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়া-কমার ওপর ভর্তুকির পরিমাণ নির্ভর করে।
তবে সরকারের তথ্য বিবরণী অনুযায়ী, বর্তমান অবস্থায় প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৭২ টাকা ৩৯ পয়সা; কেরোসিন ৭২ টাকা ৩১ পয়সা; ফার্নেস তেল ৫৯ টাকা ৯৭ পয়সা নির্ধারণ করা হলে সরকারকে আর ভর্তুকি দিতে হবে না।
সরকারের হিসাবমতেই অকটেন ও পেট্রলের দাম লিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৪ টাকা কমানো যায়। কারণ, এই দুটি পণ্যে সরকার ওই পরিমাণ লাভ করছে। এর ব্যবহার অবশ্য খুবই কম, ১০ শতাংশের মতো। বিমানের জ্বালানিতেও সরকার কিছুটা লাভ করছে। এগুলো সচ্ছল ব্যক্তিরা ব্যবহার করেন বলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা লাভ করা হচ্ছে।
হিসাবে গরমিল: জ্বালানি তেলের আমদানি ও ভর্তুকির হিসাবে প্রায়ই কিছু গরমিল লক্ষ করা যায়। যেমন—দাম বাড়ানোর খবর জানিয়ে গতকাল দেওয়া সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, দেশে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির মোট চাহিদা ৬৮ লাখ মেট্রিক টন।
কিন্তু তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর ’১১) জন্য মোট জ্বালানি তেল আমদানি করা হচ্ছে ২৩ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। পরবর্তী ছয় মাসে আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ মোট ৫৩ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন, যা তথ্যবিবরণীর হিসাবের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মেট্রিক টন কম।
সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন দামে তেল কেনা হচ্ছে, তাতে স্বাভাবিকের চেয়ে দাম বেশি পড়ছে।
অর্থনীতিবিদের দৃষ্টিতে: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দাম না বাড়িয়ে বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি দিতে থাকলে সেই ভর্তুকির চাপও মূল্যস্ফীতি ঘটায়। সেই বিবেচনায় দাম বাড়ানোটা অবধারিত ছিল। তবে কতবার এবং কতটা দাম বাড়াতে হবে, তা নির্ভর করবে সরকারের কৌশলের ওপর। যেমন—সরকার যদি এখন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে জ্বালানির আমদানি কমবে। আর তা না পারলে পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি আরও নেতিবাচক হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দাম বাড়ানোর পাশাপাশি আরও দুটি বিষয়ে সতর্ক নজরদারি করতে হবে সরকারকে। এক, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীগুলো ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা এবং সম্ভব হলে তার আওতা বাড়ানো। দুই, অনেক ব্যবসায়ী, বিশেষ করে পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীরা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকে অতি মুনাফার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন। জ্বালানিতে দাম যেটুকু বাড়ে, তার তুলনায় অনেক বেশি হারে ভাড়ার বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়গুলো সরকারকে রুখতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজেল ও ফার্নেস তেলের চাহিদা বেড়েছে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য। সরকার যদি বিদ্যুৎ খাতে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আশানুরূপ অগ্রসর হতে পারত, তাহলে আর বেশি দিন ডিজেল-ফার্নেস তেলের ভর্তুকির বোঝা বইতে হতো না। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আগে জ্বালানি তেল লাগত প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন। আর এখন চাহিদা বেড়ে লাগছে ৬৮ লাখ মেট্রিক টন।
জ্বালানির দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, বিশেষ করে ডিজেলের ক্ষেত্রে। দেশে ব্যবহূত জ্বালানির প্রায় ৯০ শতাংশই ডিজেল। কিন্তু তার পরও বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে দ্বিমত রয়েছে।
দ্বিমতকারীদের হিসাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি ব্যারেল (১৬৮ লিটার) অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৯০ মার্কিন ডলারের নিচে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট খুললেই যেকোনো সময় যে কেউ এই দাম দেখতে পাবেন। সে হিসাবে দেশে এখন জ্বালানির দাম বাড়ার কথা নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ১২২ মার্কিন ডলার।
সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলোর মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের ক্ষেত্রে পরিশোধিত, অপরিশোধিত ছাড়া সিঙ্গাপুর, লন্ডন প্রভৃতি বাজারভেদেও দামের হেরফের হয়। তা ছাড়া বিপিসি তেল আমদানি করে কয়েকটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের নির্ধারিত দামে। এই দাম কিছুটা বেশি। নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পেতে ওই উৎসই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে বিপিসি।
দাম কত বাড়ানো দরকার: দেশে জ্বালানির দাম যতবারই বাড়ানো হয়, শোনা যায় যে এর পরও বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হবে। তাহলে জ্বালানির দাম কত টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হলে আর ভর্তুকি দিতে হবে না? এই প্রশ্ন অনেকের। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এককথায় এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়া-কমার ওপর ভর্তুকির পরিমাণ নির্ভর করে।
তবে সরকারের তথ্য বিবরণী অনুযায়ী, বর্তমান অবস্থায় প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৭২ টাকা ৩৯ পয়সা; কেরোসিন ৭২ টাকা ৩১ পয়সা; ফার্নেস তেল ৫৯ টাকা ৯৭ পয়সা নির্ধারণ করা হলে সরকারকে আর ভর্তুকি দিতে হবে না।
সরকারের হিসাবমতেই অকটেন ও পেট্রলের দাম লিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৪ টাকা কমানো যায়। কারণ, এই দুটি পণ্যে সরকার ওই পরিমাণ লাভ করছে। এর ব্যবহার অবশ্য খুবই কম, ১০ শতাংশের মতো। বিমানের জ্বালানিতেও সরকার কিছুটা লাভ করছে। এগুলো সচ্ছল ব্যক্তিরা ব্যবহার করেন বলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা লাভ করা হচ্ছে।
হিসাবে গরমিল: জ্বালানি তেলের আমদানি ও ভর্তুকির হিসাবে প্রায়ই কিছু গরমিল লক্ষ করা যায়। যেমন—দাম বাড়ানোর খবর জানিয়ে গতকাল দেওয়া সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, দেশে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির মোট চাহিদা ৬৮ লাখ মেট্রিক টন।
কিন্তু তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর ’১১) জন্য মোট জ্বালানি তেল আমদানি করা হচ্ছে ২৩ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। পরবর্তী ছয় মাসে আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ মোট ৫৩ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন, যা তথ্যবিবরণীর হিসাবের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মেট্রিক টন কম।
সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন দামে তেল কেনা হচ্ছে, তাতে স্বাভাবিকের চেয়ে দাম বেশি পড়ছে।
অর্থনীতিবিদের দৃষ্টিতে: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দাম না বাড়িয়ে বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি দিতে থাকলে সেই ভর্তুকির চাপও মূল্যস্ফীতি ঘটায়। সেই বিবেচনায় দাম বাড়ানোটা অবধারিত ছিল। তবে কতবার এবং কতটা দাম বাড়াতে হবে, তা নির্ভর করবে সরকারের কৌশলের ওপর। যেমন—সরকার যদি এখন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে জ্বালানির আমদানি কমবে। আর তা না পারলে পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি আরও নেতিবাচক হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দাম বাড়ানোর পাশাপাশি আরও দুটি বিষয়ে সতর্ক নজরদারি করতে হবে সরকারকে। এক, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীগুলো ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা এবং সম্ভব হলে তার আওতা বাড়ানো। দুই, অনেক ব্যবসায়ী, বিশেষ করে পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীরা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকে অতি মুনাফার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন। জ্বালানিতে দাম যেটুকু বাড়ে, তার তুলনায় অনেক বেশি হারে ভাড়ার বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়গুলো সরকারকে রুখতে হবে।
No comments