জলবায়ু তহবিল-এনজিওগুলোর কাড়াকাড়ি স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন-টিআইবি চোখ খোলা রেখেছে by আলতাব হোসেন
জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলে দাতারা সরকারি চ্যানেলে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছেন। আরও ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এর বাইরে জলবায়ু খাতে এক বছরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার এনেছে এনজিওগুলো। সরকারও ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার একটি 'জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড' গঠন করেছে। জলবায়ু ঝুঁকির শীর্ষে থাকা বাংলাদেশে আগামী দিনগুলোতে আরও ডলার আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর এ ডলারের জন্য দেশি-বিদেশি এনজিওগুলো উন্মুখ হয়ে পড়েছে। রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে এনজিও। এনজিওগুলো জলবায়ু তহবিলের অর্থ পেতে মরিয়া হয়ে পড়েছে।
তহবিলের অর্থ নিশ্চিত করতে তারা সরকার ও দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং নানাভাবে তদবির-লবিং করে বেড়াচ্ছে। তবে শুরুতেই জলবায়ু তহবিলের অপব্যবহারের
বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তহবিল নিয়ে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে দুর্নীতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ রকম আশঙ্কা থেকে জলবায়ু তহবিল ব্যবহারের স্বচ্ছতা খতিয়ে দেখতে 'ফলো দ্য মানি' শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে টিআইবি।
জলবায়ু তহবিলের অর্থ পেতে গত দু'বছরে প্রায় ৫ হাজার নতুন এনজিও সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোও জলবায়ু তহবিল নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করেছে। সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ইউএসএ, ইউকে, নরওয়ে ও জার্মানিভিত্তিক কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও বাংলাদেশে তাদের অফিস বসিয়েছে। তহবিল পেতে শুরু করেছে দৌড়ঝাঁপ। এসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দায়ী হিসেবে তহবিলে অর্থ দিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, দাতাদের অর্থ আন্তর্জাতিক এসব এনজিওর মাধ্যমে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা থাকছে। জলবায়ু তহবিলকে 'দুর্নীতির ফাঁদ' উল্লেখ করে এ সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান এবং সব জলবায়ু তহবিল থেকে বিশ্বব্যাংককে বাইরে রেখে একটি স্বায়ত্তশাসিত বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছে দেশের ১৮টি নাগরিক সংগঠন।
এনজিওগুলো একসময় যক্ষ্মা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, আর্সেনিক, ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন, বন্যা পুনর্বাসন, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, এইডস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়াসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করলেও বর্তমানে অধিকাংশ এনজিও জলবায়ু ইস্যু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অ্যাকশন এইড, মুসলিম এইড, ইসলামিক রিলিফ, সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত এনজিও হিসেবে নিবন্ধন নিচ্ছে। জলবায়ু তহবিলের জন্য আন্তর্জাতিক এসব এনজিওর কাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন আন্তর্জাতিক এনজিও হওয়ার পরও অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ নামে তারা এখন পরিচিত। নরওয়ের ডাকুনিয়া নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে অফিস নিয়েছে। অ্যাকশন এইড জলবায়ু ইস্যু নিয়ে কাজের জন্য গুলশানে নতুন দুটি অফিস নিয়েছে। ইউএনডিপি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনও আলাদা উইং খুলেছে।
জলবায়ু তহবিলের অর্থ পেতে সম্প্রতি এনজিওবিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধন নিয়েছে ৩৫০ এনজিও। ব্যুরোর নিবন্ধনপ্রাপ্ত এনজিওর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭২টি। এ ছাড়া বড় এনজিও ও সরকারের তহবিল থেকে অর্থ পেতে সমবায় এবং সমাজসেবাসহ জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে প্রায় ৫ হাজার এনজিও নিবন্ধন নিয়েছে। সম্প্রতি সরকারি তহবিল থেকে অর্থ পেতে প্রায় ৪ হাজার নতুন গজিয়ে ওঠা এনজিও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।
এরই মধ্যে জলবায়ু ইস্যুতে বিদেশি অর্থ পেয়েছে অ্যাকশন এইড, অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেন, কোড এইড, মুসলিম এইড, ইসলামিক রিলিফ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ওয়ার্ল্ডভিশন, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডবি্লউএফপি), ইউএনডিপি, ব্র্যাক, কারিতাস, আইওসিএন, আরডিআরএস, এশিয়া ফাউন্ডেশন, পিকেএসএফ, প্রদ্দীপন, অনুশীলন, গণ উন্নয়ন, জাগরণী চক্র, বাঁচতে শেখা, ওয়াটার এইড, প্র্যাক্টিক্যাল অ্যাকশনসহ শ'দুয়েক এনজিও। আইলা ও সিডরের পর পুনর্বাসন খাতে আন্তর্জাতিক এবং দেশি এনজিওগুলো উপকূলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ করলেও ওই এলাকায় তার কোনো প্রভাব নেই। এলাকার অনেক মানুষ এ পরিমাণ অর্থ খরচের খবর জেনে প্রশ্ন করেছেন, তাহলে তারা ঘরবাড়ি, পানি এবং কাজ পাচ্ছেন না কেন?
জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও উপশম সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি ডলার বরাদ্দে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে এরই মধ্যে প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ট্রাস্ট তহবিলের ১৫ সদস্যের কমিটিতে সরকারি কর্মকর্তাদের আধিক্যের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ট্রাস্ট তহবিল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৪৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে বিভিন্ন এনজিওর জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র ১৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ৪ শতাংশ। সরকারি চ্যানেলে যুক্তরাজ্যের দেওয়া সাড়ে ৭ কোটি পাউন্ড, ইইউর সাড়ে ৮৫ লাখ ইউরো এবং ডেনমার্কের ১ কোটি মিলিয়ন ডেনিশ ক্রোনার দিয়ে তহবিলের প্রাথমিক কাজ শুরু হওয়ার কথা। এ ছাড়া সুইডেনও তহবিলে অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকার গত আগস্টে বাংলাদেশে ৩০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। স্থানীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে জলবায়ু অভিযোজনবিষয়ক ওই প্রকল্প আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ শুরু হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএইড সূত্রে জানা গেছে।
বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ তার নিজস্ব তহবিল কতটা স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে তা পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘসহ উন্নত দেশগুলো। বাংলাদেশ সফলভাবে এ তহবিল ব্যবস্থাপনা করতে পারলে ধনী দেশগুলো বাংলাদেশকে অর্থ দেওয়া শুরু করবে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, বেশ ক'টি এনজিও সরকারের চ্যানেলের অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নানা রকম কল্পিত দুর্নীতির তথ্য প্রচার করছে; যাতে ইউএনএফসিসি সরকারকে তহবিল না দিয়ে এনজিওগুলোকে সরাসরি অর্থ বরাদ্দ দেয়।
৪০০ কোটি টাকার জলবায়ু ফান্ড নিয়ে মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটি মুখোমুখি : জলবায়ু তহবিলের ৪০০ কোটি টাকা নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্নে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কার্যত মুখোমুখি। তহবিলের প্রায় ৪০০ কোটি টাকার স্বচ্ছতা নিয়ে রীতিমতো বাহাসে নেমেছে উভয় প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য প্রদান করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটি। পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) বিষয়টির স্বচ্ছতা যাচাইয়ের দেখভালের কথা বলছে। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় বরাদ্দ করা ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও নিয়মমাফিক ব্যয় তদারকিতে অন্য একটি সংসদীয় উপ-কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সরকারদলীয় সাংসদ একাব্বর হোসেনকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন_ সোহরাব আলী, মনোরঞ্জন শীল, গোলাম সবুর ও গিয়াসউদ্দিন আহমদ। কমিটির সভাপতি সমকালকে বলেন, এ খাতে পাওয়া অর্থ দেশের কোন এলাকায় কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে তা তদারক করতেই এ উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, যেসব এনজিওকে জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেসব এনজিও নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যেও সমন্বয় নেই।
জলবায়ু তহবিলে নজর রাখবে টিআইবি : টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জলবায়ু তহবিল ব্যবহারের স্বচ্ছতা খতিয়ে দেখতে 'ফলো দ্য মানি' শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে টিআইবি। এ প্রকল্পের অধীনে এ তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি নজর রাখা হবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দাতারা এরই মধ্যে জলবায়ু তহবিলের অর্থ ছাড় দিতে শুরু করেছে। এসব অর্থ ব্যবহারের ব্যাপারে কোনো নীতি বা কৌশল নেই; কিন্তু টাকাগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, সবাই আজ বিব্রত। কারণ সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হচ্ছে। রয়েছে স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতার অভাব। দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা। নীতিতে বিরাজ করছে বিরোধিতা। কোনো ক্ষেত্রেই যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে না। অভিজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে না। পরিকল্পনা গ্রহণে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। নেই সরকারের যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে লবণাক্ততা আর উত্তরাঞ্চলে বাড়ছে শুষ্কতা। একদিনে এ পরিবর্তন হয়নি। শিল্পায়নের পর থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত অর্থায়ন ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কেননা আন্তর্জাতিক মহলে এর ওপর রিপোর্ট দিতে হবে। এ রিপোর্টের ওপরই পরবর্তী তহবিল নির্ভর করবে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন দাতা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় ৩০ কোটি ডলারের ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে বাংলাদেশ। দাতারা এ অর্থ ছাড় দিতে শুরু করেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের সামগ্রিক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা দশমিক ২ শতাংশ। তাই জাতিসংঘ জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশ অর্থ বরাদ্দ চায়।
বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গঠিত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেসিলিয়েন্স ফান্ডে (বিসিসিআরএফ) এরই মধ্যে প্রায় ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে। দাতা দেশগুলো আরও ১০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডের (বিসিসিটিএফ) কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে এ তহবিলের আওতায় ৬২টি প্রকল্প অনুমোদিত ও বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ পর্যন্ত এই তহবিলের আওতায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কেবল পর্যবেক্ষক এবং তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোও প্রকল্পগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। তাই এতে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিসিসিআরএফের কার্যক্রমকে আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট সেল সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় আইনের আওতায় গঠিত একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে। সরকারের ১০ সিনিয়র মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ বিভাগের সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য ও সিভিল সোসাইটির দু'জন বিশেষজ্ঞসহ মোট ১৭ সদস্য নিয়ে এ ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত। আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থ সাহায্যে গঠিত বিসিসিআরএফ বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। যে কোনো প্রকল্প ট্রাস্টি বোর্ডে অনুমোদনের জন্য আসার আগে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ১২ সদস্যের একটি শক্তিশালী কারিগরি কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে প্রকল্প ট্রাস্টি বোর্ডে উপস্থাপন করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এ পর্যন্ত ৬২টি সরকারি প্রকল্পের অনুকূলে ৬৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো বেসরকারি সংস্থাকে ফান্ড দেওয়া হয়নি। এর আগে নীতিগতভাবে অনুমোদনকৃত বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঠিকতা ও সমতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মতামত চাওয়া এবং প্রকল্পগুলো পর্যালোচনার জন্য পিকেএসএফকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তহবিল নিয়ে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে দুর্নীতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ রকম আশঙ্কা থেকে জলবায়ু তহবিল ব্যবহারের স্বচ্ছতা খতিয়ে দেখতে 'ফলো দ্য মানি' শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে টিআইবি।
জলবায়ু তহবিলের অর্থ পেতে গত দু'বছরে প্রায় ৫ হাজার নতুন এনজিও সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোও জলবায়ু তহবিল নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করেছে। সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ইউএসএ, ইউকে, নরওয়ে ও জার্মানিভিত্তিক কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও বাংলাদেশে তাদের অফিস বসিয়েছে। তহবিল পেতে শুরু করেছে দৌড়ঝাঁপ। এসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দায়ী হিসেবে তহবিলে অর্থ দিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, দাতাদের অর্থ আন্তর্জাতিক এসব এনজিওর মাধ্যমে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা থাকছে। জলবায়ু তহবিলকে 'দুর্নীতির ফাঁদ' উল্লেখ করে এ সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান এবং সব জলবায়ু তহবিল থেকে বিশ্বব্যাংককে বাইরে রেখে একটি স্বায়ত্তশাসিত বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছে দেশের ১৮টি নাগরিক সংগঠন।
এনজিওগুলো একসময় যক্ষ্মা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, আর্সেনিক, ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন, বন্যা পুনর্বাসন, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, এইডস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়াসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করলেও বর্তমানে অধিকাংশ এনজিও জলবায়ু ইস্যু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অ্যাকশন এইড, মুসলিম এইড, ইসলামিক রিলিফ, সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত এনজিও হিসেবে নিবন্ধন নিচ্ছে। জলবায়ু তহবিলের জন্য আন্তর্জাতিক এসব এনজিওর কাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন আন্তর্জাতিক এনজিও হওয়ার পরও অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ নামে তারা এখন পরিচিত। নরওয়ের ডাকুনিয়া নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে অফিস নিয়েছে। অ্যাকশন এইড জলবায়ু ইস্যু নিয়ে কাজের জন্য গুলশানে নতুন দুটি অফিস নিয়েছে। ইউএনডিপি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনও আলাদা উইং খুলেছে।
জলবায়ু তহবিলের অর্থ পেতে সম্প্রতি এনজিওবিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধন নিয়েছে ৩৫০ এনজিও। ব্যুরোর নিবন্ধনপ্রাপ্ত এনজিওর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭২টি। এ ছাড়া বড় এনজিও ও সরকারের তহবিল থেকে অর্থ পেতে সমবায় এবং সমাজসেবাসহ জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে প্রায় ৫ হাজার এনজিও নিবন্ধন নিয়েছে। সম্প্রতি সরকারি তহবিল থেকে অর্থ পেতে প্রায় ৪ হাজার নতুন গজিয়ে ওঠা এনজিও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।
এরই মধ্যে জলবায়ু ইস্যুতে বিদেশি অর্থ পেয়েছে অ্যাকশন এইড, অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেন, কোড এইড, মুসলিম এইড, ইসলামিক রিলিফ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ওয়ার্ল্ডভিশন, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডবি্লউএফপি), ইউএনডিপি, ব্র্যাক, কারিতাস, আইওসিএন, আরডিআরএস, এশিয়া ফাউন্ডেশন, পিকেএসএফ, প্রদ্দীপন, অনুশীলন, গণ উন্নয়ন, জাগরণী চক্র, বাঁচতে শেখা, ওয়াটার এইড, প্র্যাক্টিক্যাল অ্যাকশনসহ শ'দুয়েক এনজিও। আইলা ও সিডরের পর পুনর্বাসন খাতে আন্তর্জাতিক এবং দেশি এনজিওগুলো উপকূলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ করলেও ওই এলাকায় তার কোনো প্রভাব নেই। এলাকার অনেক মানুষ এ পরিমাণ অর্থ খরচের খবর জেনে প্রশ্ন করেছেন, তাহলে তারা ঘরবাড়ি, পানি এবং কাজ পাচ্ছেন না কেন?
জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও উপশম সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি ডলার বরাদ্দে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে এরই মধ্যে প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ট্রাস্ট তহবিলের ১৫ সদস্যের কমিটিতে সরকারি কর্মকর্তাদের আধিক্যের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ট্রাস্ট তহবিল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৪৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে বিভিন্ন এনজিওর জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র ১৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ৪ শতাংশ। সরকারি চ্যানেলে যুক্তরাজ্যের দেওয়া সাড়ে ৭ কোটি পাউন্ড, ইইউর সাড়ে ৮৫ লাখ ইউরো এবং ডেনমার্কের ১ কোটি মিলিয়ন ডেনিশ ক্রোনার দিয়ে তহবিলের প্রাথমিক কাজ শুরু হওয়ার কথা। এ ছাড়া সুইডেনও তহবিলে অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকার গত আগস্টে বাংলাদেশে ৩০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। স্থানীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে জলবায়ু অভিযোজনবিষয়ক ওই প্রকল্প আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ শুরু হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএইড সূত্রে জানা গেছে।
বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ তার নিজস্ব তহবিল কতটা স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে তা পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘসহ উন্নত দেশগুলো। বাংলাদেশ সফলভাবে এ তহবিল ব্যবস্থাপনা করতে পারলে ধনী দেশগুলো বাংলাদেশকে অর্থ দেওয়া শুরু করবে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, বেশ ক'টি এনজিও সরকারের চ্যানেলের অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নানা রকম কল্পিত দুর্নীতির তথ্য প্রচার করছে; যাতে ইউএনএফসিসি সরকারকে তহবিল না দিয়ে এনজিওগুলোকে সরাসরি অর্থ বরাদ্দ দেয়।
৪০০ কোটি টাকার জলবায়ু ফান্ড নিয়ে মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটি মুখোমুখি : জলবায়ু তহবিলের ৪০০ কোটি টাকা নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্নে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কার্যত মুখোমুখি। তহবিলের প্রায় ৪০০ কোটি টাকার স্বচ্ছতা নিয়ে রীতিমতো বাহাসে নেমেছে উভয় প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য প্রদান করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটি। পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) বিষয়টির স্বচ্ছতা যাচাইয়ের দেখভালের কথা বলছে। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় বরাদ্দ করা ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও নিয়মমাফিক ব্যয় তদারকিতে অন্য একটি সংসদীয় উপ-কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সরকারদলীয় সাংসদ একাব্বর হোসেনকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন_ সোহরাব আলী, মনোরঞ্জন শীল, গোলাম সবুর ও গিয়াসউদ্দিন আহমদ। কমিটির সভাপতি সমকালকে বলেন, এ খাতে পাওয়া অর্থ দেশের কোন এলাকায় কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে তা তদারক করতেই এ উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, যেসব এনজিওকে জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেসব এনজিও নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যেও সমন্বয় নেই।
জলবায়ু তহবিলে নজর রাখবে টিআইবি : টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জলবায়ু তহবিল ব্যবহারের স্বচ্ছতা খতিয়ে দেখতে 'ফলো দ্য মানি' শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে টিআইবি। এ প্রকল্পের অধীনে এ তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি নজর রাখা হবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দাতারা এরই মধ্যে জলবায়ু তহবিলের অর্থ ছাড় দিতে শুরু করেছে। এসব অর্থ ব্যবহারের ব্যাপারে কোনো নীতি বা কৌশল নেই; কিন্তু টাকাগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, সবাই আজ বিব্রত। কারণ সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হচ্ছে। রয়েছে স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতার অভাব। দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা। নীতিতে বিরাজ করছে বিরোধিতা। কোনো ক্ষেত্রেই যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে না। অভিজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে না। পরিকল্পনা গ্রহণে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। নেই সরকারের যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে লবণাক্ততা আর উত্তরাঞ্চলে বাড়ছে শুষ্কতা। একদিনে এ পরিবর্তন হয়নি। শিল্পায়নের পর থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত অর্থায়ন ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কেননা আন্তর্জাতিক মহলে এর ওপর রিপোর্ট দিতে হবে। এ রিপোর্টের ওপরই পরবর্তী তহবিল নির্ভর করবে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন দাতা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় ৩০ কোটি ডলারের ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে বাংলাদেশ। দাতারা এ অর্থ ছাড় দিতে শুরু করেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের সামগ্রিক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা দশমিক ২ শতাংশ। তাই জাতিসংঘ জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশ অর্থ বরাদ্দ চায়।
বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গঠিত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেসিলিয়েন্স ফান্ডে (বিসিসিআরএফ) এরই মধ্যে প্রায় ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে। দাতা দেশগুলো আরও ১০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডের (বিসিসিটিএফ) কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে এ তহবিলের আওতায় ৬২টি প্রকল্প অনুমোদিত ও বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ পর্যন্ত এই তহবিলের আওতায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কেবল পর্যবেক্ষক এবং তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোও প্রকল্পগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। তাই এতে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিসিসিআরএফের কার্যক্রমকে আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট সেল সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় আইনের আওতায় গঠিত একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে। সরকারের ১০ সিনিয়র মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ বিভাগের সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য ও সিভিল সোসাইটির দু'জন বিশেষজ্ঞসহ মোট ১৭ সদস্য নিয়ে এ ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত। আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থ সাহায্যে গঠিত বিসিসিআরএফ বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। যে কোনো প্রকল্প ট্রাস্টি বোর্ডে অনুমোদনের জন্য আসার আগে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ১২ সদস্যের একটি শক্তিশালী কারিগরি কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে প্রকল্প ট্রাস্টি বোর্ডে উপস্থাপন করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এ পর্যন্ত ৬২টি সরকারি প্রকল্পের অনুকূলে ৬৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো বেসরকারি সংস্থাকে ফান্ড দেওয়া হয়নি। এর আগে নীতিগতভাবে অনুমোদনকৃত বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঠিকতা ও সমতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মতামত চাওয়া এবং প্রকল্পগুলো পর্যালোচনার জন্য পিকেএসএফকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
No comments