কোচই নিষেধ করছেন আশা করতে

খনো তাঁর মুখে নিরাশার কথা শোনা যায়নি। বাস্তবের জমিনে যাই হোক, স্বপ্নে তিনি ইরাক-সৌদি আরবকেও হারাতে পারেন। প্রতিপক্ষ রিয়াল-বার্সা হলেও যেন বল মাঠে গড়ানোর আগ পর্যন্ত তিনি কাটাতে চান ওই স্বপ্নের ঘোরে! এত দিনের এমন ইতিবাচক ইলিয়েভস্কির মুখে এই প্রথম শোনা গেল নৈরাশ্যের গল্প। বাংলাদেশ দলকে নিয়ে এ মেসিডোনিয়ান কোচের বড় কোনো আশা নেই সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে।কিছুদিন আগেও শেখ জামালের বিপক্ষে প্র্যাকটিস ম্যাচের পর তিনি ইতিবাচক ছিলেন এ সিনিয়র দল নিয়ে। বলেছিলেন, যেটুকু সময় হাতে আছে তাতেই দলটাকে পরিণত করে তোলা যাবে।


গতকাল এই কোচের গলায় শোনা গেল ভিন্ন সুর, 'আমি এখন ডিফেন্স নিয়ে কাজ করছি যেন গোল না খাই। একটা গোল হয়ে গেলেই তো ম্যাচ শেষ। আমার দলে তো গোল দেওয়ার লোক নেই।' স্পষ্টতই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন স্ট্রাইকারদের। এমিলি, তৌহিদ, ওয়াহেদ ও মালেকের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না কোচ। সেটা অবশ্য সরাসরিই তিনি বলে দিয়েছেন, 'এই দলে ভালো স্ট্রাইকারের সংকট আছে। ওয়াহেদ-মালেক তরুণ, এমিলির ফিটনেসে সমস্যা।' জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান বাদল রায় অবশ্য অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন বাংলাদেশ দলে ক্যারিশম্যাটিক স্ট্রাইকারের অভাবের কথা। ঘরোয়া লিগে 'অতিমাত্রায় বিদেশি ফরোয়ার্ডের' দৌরা@ে@@@্য দেশ স্ট্রাইকারদের মান নিম্নমুখী হচ্ছে বলে বাদলের বিশ্বাস।
কোচের চোখে এই দলের মূল সমস্যা হলো ফিটনেসে। বিশেষ করে সিনিয়র ফুটবলারদের ফিটনেসের ঘাটতিটাই তাঁকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এর দায় চাপিয়েছেন কোচ ফেডারেশনের ঘাড়ে, 'দীর্ঘদিন ধরে লিগ নেই, ফলে খেলোয়াড়রা প্র্যাকটিসের বাইরে। এ রকম হলে তো সমস্যা হবেই।' সেই জুনে বাংলাদেশ লিগ শেষ হওয়ার পর পাঁচ মাস হয়ে গেছে, এখনো ঘরোয়া মৌসুম শুরু হয়নি। মাঝে জুলাইয়ে লেবাননের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলার পর থেকে বিশ্রামে ছিলেন জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা। সেটাই হয়ে গেছে এখন কোচের স্বপ্নভঙ্গের কারণ, 'এই দল নিয়ে আমি সাফে বড় কোনো আশা করি না।' আগামী ২ ডিসেম্বর দিলি্লতে শুরু হওয়া সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের এই কোচ ফেভারিট মানছেন স্বাগতিক ভারতকে। জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান বাদল রায় যদিও অত নিরাশার কিছু দেখছেন না, 'আমাদের ঘরোয়া মৌসুমে একটা লম্বা বিরতি পড়েছে, এটা ঠিক। আমাদের পরিকল্পনার অভাবের কারণে এটা হয়েছে। তাতে ফুটবলারদের ফিটনেসে একটু ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তাই বলে সাফে আমাদের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে, এটা ঠিক নয়।' তাঁর ধারণা এটা কোচের নতুন কৌশল। অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়ে কোচ প্রথমে প্রত্যাশার বেলুন ফুলিয়ে শেষে খেয়েছেন ধাক্কা। সে জন্যই এবার স্বপ্নে লাগাম দিয়ে আগে থেকেই রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছেন নিকোলা ইলিয়েভস্কি। সঙ্গে বাদল আবার এটাও বলে রেখেছেন, 'কোচের চাহিদা অনুযায়ী সবই দেওয়া হয়েছে। তার প্ল্যান-প্রোগ্রাম অনুযায়ীই প্র্যাকটিস শুরু করে দেওয়া হয়েছিল আগে থেকেই।'
কোচের চাহিদায় তো শক্তিশালী বিদেশি দলের সঙ্গে প্র্যাকটিস ম্যাচও ছিল। তার ব্যবস্থা এখনো করতে পারেনি ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটির চেয়ারম্যানের হার-না-মানা জবাব, 'সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।' অর্থাৎ চেষ্টা চলছে, হয়ে যেতেও পারে। আজ অবশ্য জাতীয় দলের বড় একটা পরীক্ষা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি ফুটবলারদের বিপক্ষে। ইলিয়েভস্কি অবশ্য এ ম্যাচ নিয়ে তেমন ভাবিত নন, 'ট্যুরিস্ট ফুটবলারদের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে। এটা আর এমন কী।' যাচাই-বাছাইয়ের পর যে প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়েছে তাতে দলটিকে বলা যায় অফ্রিকান একাদশ। তারা বাংলাদেশ দলের কোচের মুখে গুরুত্ব না পেলেও বাস্তবতা হলো, এদের দলে ভিড়িয়েই শক্তিশালী হয়ে ওঠে আমাদের ক্লাব দলগুলো। সুতরাং এসব বিদেশি মিলে একটা হয়ে গেলে ভয়ংকর প্রতিপক্ষ বলেই মানতে হবে। তার চেয়ে ভয়ংকর হলো কোচের নাম কামাল বাবু, যিনি প্র্যাকটিস ম্যাচে জাতীয় দলের কাছে কখনো হারেননি। সব সময় যে বিদেশিদের নিয়ে খেলেছেন তা নয়, দেশি ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়েও তাঁর জেতার রেকর্ড আছে। তিন ম্যাচ খেলে তাঁর দল পেয়েছে দুটি জয় এবং একটি ড্র। আজকের প্র্যাকটিস ম্যাচেও এই দেশি কোচ নিশ্চয়ই নিজের অজেয় রেকর্ড সমুন্নত রাখতে চাইবেন, 'ম্যাচটা আসলে সাফের জাতীয় দলকে সাহায্য করার জন্যই। তাই বলে প্রীতি ম্যাচ হবে না, লড়াকু ম্যাচ হবে বলে মনে হচ্ছে। বিদেশিরা যদি চিন্তা করে বাংলাদেশের কাছে হারব না, তখনই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে জাতীয় দল।'
বিদেশি কোচের অধীনে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন আফ্রিকান একাদশের বাংলাদেশি কোচ!

No comments

Powered by Blogger.