বাংলা একাডেমী-লোকজ সংস্কৃতি রক্ষায় প্রকাশনা by নওশাদ জামিল
দেশজ সংস্কৃতি রক্ষা এবং জাতির সামনে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য তুলে ধরার তাগিদ থেকে ৬৪ জেলার লোকজ উপাদান সংগ্রহ করে ৬৪টি বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলা একাডেমী। এ লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে লোকজ উপাদান খুঁজে বের করে শ্রেণীবিন্যস্ত করে সংরক্ষণ করা হবে। সংগৃহীত উপাদান যাচাই-বাছাইয়ের পর সেসব নিয়ে প্রকাশিত হবে ৬৪টি বই। একাডেমী সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা হবে ৪২০ থেকে ৪৫০।চৌষট্টিটি জেলার আদি লোক-সাংস্কৃতিক উপাদান, উৎসব-পার্বণ প্রভৃতি যথাযথ চর্চা ও সংরক্ষণের অভাবে এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিলুপ্তপ্রায়।
পল্লী অঞ্চলের এক সময়ের জনপ্রিয় পুঁথি পাঠের আসর ও ঢোলনৃত্য এখন আর তেমন নেই। পুতুলনাচও দেখা যায় না তেমন। বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনে হারিয়ে যেতে বসেছে লোকজ সংস্কৃতি। এ পটভূমিতে নতুন প্রজন্মের সামনে জাতির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার লক্ষ্যেই একাডেমী 'লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বইগুলো প্রকাশ করবে।
সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের জন্য প্রথম দফায় (২০১০-১১ অর্থবছরে) ৭৬ লাখ এবং দ্বিতীয় দফায় (২০১১_১২ অর্থবছরে) এক কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় প্রতি জেলার জন্য একজন প্রধান সমন্বয়কারী, সমন্বয়কারী এবং জেলার আয়তন ও লোকসংখ্যা ভেদে চার থেকে ১০ জন সংগ্রাহক নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রধান সমন্বয়কারী/সমন্বয়কারীর সম্মানী এককালীন ৫০ হাজার টাকা এবং সংগ্রাহকের সম্মানী এককালীন ৩০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, অর্থ বরাদ্দ হলেও এখনো প্রতি জেলায় প্রধান সমন্বয়কারী নিয়োগ হয়নি। এ পর্যন্ত ৩৯ জন প্রধান সমন্বয়কারী এবং ১৫২ জন সংগ্রাহক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে সমন্বয়কারী ও সংগ্রাহকদের নিয়ে দুই দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা করেছে একাডেমী। গত ১ ও ২ জুন এবং ২১ ও ২২ জুন দুই দফায় এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয় একাডেমীতেই। প্রথম দফা কর্মশালায় দেশের ২২ জেলা থেকে মনোনীত ১৮ জন প্রধান সমন্বয়কারী ও ৫১ জন সংগ্রাহক অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় দফায় ২৩ জেলা থেকে মনোনীত ১৬ জন প্রধান সমন্বয়কারী, পাঁচজন সমন্বয়কারী ও ৭৮ জন সংগ্রাহক অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের একটি করে গাইডলাইন ও হ্যান্ডনোট দেওয়া হয়েছে এবং কিভাবে সরেজমিনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে, তা শেখানো হয়েছে।
একাডেমীর মহাপরিচালক এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি শামসুজ্জামান খান বলেন, 'বাংলাদেশের সংস্কৃতি মূলত লোকজ সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য বিকশিত হয়ে আছে কৃষিভিত্তিক গ্রাম্য সমাজে। এ সংস্কৃতি সামাজিক সংহতি ও সৌহার্দ্য সৃষ্টিতে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।'
মহাপরিচালক বলেন, 'বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন, এর মূলে রয়েছে গ্রামবাংলার এই সমন্বয়বাদী সংস্কৃতির প্রভাব। কিন্তু সাম্প্রতিককালে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং প্রযুক্তির বিকাশের ফলে লোকজ সংস্কৃতি থেকে মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে। এ জন্যই সামাজিক সচেতনতা এবং মানবিক সহমর্মিতার জায়গায় ব্যক্তিগত স্বার্থ ও লোভ-লালসার বিস্তার ঘটছে সমাজে।'
একাডেমীর ফোকলোর বিভাগের উপপরিচালক ও লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ প্রকল্পের কর্মকর্তা আমিনুর রহমান সুলতান কালের কণ্ঠকে জানান, লোকজ সংস্কৃতির বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও নথিবদ্ধকরণ এবং সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ সংস্কৃতির কী ধরনের রূপান্তর ঘটছে, তা চিহ্নিত করেই সমন্বয়কারী ও সংগ্রাহকরা কাজ করবেন। সংগ্রাহকরা নিজ এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত লিপিবদ্ধ করবেন। একই সঙ্গে তাঁরা কথোপকথন ভিডিও করে রাখবেন। তাঁরা এসব তথ্য-উপাত্ত জেলার প্রধান সমন্বয়কারীর কাছে জমা দেবেন। প্রধান সমন্বয়কারী সংগ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে মূল পাণ্ডুলিপি রচনা করবেন। এরপর তাঁরা সেসব পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমী কর্তৃক গঠিত ছয় সদস্যের কমিটির কাছে জমা দেবেন। কমিটির সভাপতি একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অতঃপর ৬৪ জেলার ৬৪টি লোকজ সংস্কৃতির গ্রন্থ ছাপানো হবে।
কমিটির সদস্যরা চলতি মাস থেকেই এ কাজের তদারকি করবেন বলে জানা গেছে।
প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলা একাডেমীর সচিব মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন তাঁদের কর্মপরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, 'অধিকাংশ জেলায় ইতিমধ্যে আমরা লোকজ সংস্কৃতি সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছি। প্রায় প্রত্যেক জেলার জন্য প্রধান সমন্বয়কারী, সমন্বয়কারী ও সংগ্রাহক নিয়োগ করা হয়েছে। সেসব জেলায় শুরু হয়নি, সেসব জায়গায় শিগগির কাজ শুরু করা হবে।'
একাডেমীর কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রতিটি জেলার ঐতিহ্য, লোক-ইতিহাস, লোকগাথাসহ লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান জাতির সামনে তুলে ধরা সম্ভব হবে।
সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের জন্য প্রথম দফায় (২০১০-১১ অর্থবছরে) ৭৬ লাখ এবং দ্বিতীয় দফায় (২০১১_১২ অর্থবছরে) এক কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় প্রতি জেলার জন্য একজন প্রধান সমন্বয়কারী, সমন্বয়কারী এবং জেলার আয়তন ও লোকসংখ্যা ভেদে চার থেকে ১০ জন সংগ্রাহক নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রধান সমন্বয়কারী/সমন্বয়কারীর সম্মানী এককালীন ৫০ হাজার টাকা এবং সংগ্রাহকের সম্মানী এককালীন ৩০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, অর্থ বরাদ্দ হলেও এখনো প্রতি জেলায় প্রধান সমন্বয়কারী নিয়োগ হয়নি। এ পর্যন্ত ৩৯ জন প্রধান সমন্বয়কারী এবং ১৫২ জন সংগ্রাহক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে সমন্বয়কারী ও সংগ্রাহকদের নিয়ে দুই দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা করেছে একাডেমী। গত ১ ও ২ জুন এবং ২১ ও ২২ জুন দুই দফায় এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয় একাডেমীতেই। প্রথম দফা কর্মশালায় দেশের ২২ জেলা থেকে মনোনীত ১৮ জন প্রধান সমন্বয়কারী ও ৫১ জন সংগ্রাহক অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় দফায় ২৩ জেলা থেকে মনোনীত ১৬ জন প্রধান সমন্বয়কারী, পাঁচজন সমন্বয়কারী ও ৭৮ জন সংগ্রাহক অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের একটি করে গাইডলাইন ও হ্যান্ডনোট দেওয়া হয়েছে এবং কিভাবে সরেজমিনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে, তা শেখানো হয়েছে।
একাডেমীর মহাপরিচালক এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি শামসুজ্জামান খান বলেন, 'বাংলাদেশের সংস্কৃতি মূলত লোকজ সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য বিকশিত হয়ে আছে কৃষিভিত্তিক গ্রাম্য সমাজে। এ সংস্কৃতি সামাজিক সংহতি ও সৌহার্দ্য সৃষ্টিতে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।'
মহাপরিচালক বলেন, 'বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন, এর মূলে রয়েছে গ্রামবাংলার এই সমন্বয়বাদী সংস্কৃতির প্রভাব। কিন্তু সাম্প্রতিককালে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং প্রযুক্তির বিকাশের ফলে লোকজ সংস্কৃতি থেকে মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে। এ জন্যই সামাজিক সচেতনতা এবং মানবিক সহমর্মিতার জায়গায় ব্যক্তিগত স্বার্থ ও লোভ-লালসার বিস্তার ঘটছে সমাজে।'
একাডেমীর ফোকলোর বিভাগের উপপরিচালক ও লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ প্রকল্পের কর্মকর্তা আমিনুর রহমান সুলতান কালের কণ্ঠকে জানান, লোকজ সংস্কৃতির বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও নথিবদ্ধকরণ এবং সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ সংস্কৃতির কী ধরনের রূপান্তর ঘটছে, তা চিহ্নিত করেই সমন্বয়কারী ও সংগ্রাহকরা কাজ করবেন। সংগ্রাহকরা নিজ এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত লিপিবদ্ধ করবেন। একই সঙ্গে তাঁরা কথোপকথন ভিডিও করে রাখবেন। তাঁরা এসব তথ্য-উপাত্ত জেলার প্রধান সমন্বয়কারীর কাছে জমা দেবেন। প্রধান সমন্বয়কারী সংগ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে মূল পাণ্ডুলিপি রচনা করবেন। এরপর তাঁরা সেসব পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমী কর্তৃক গঠিত ছয় সদস্যের কমিটির কাছে জমা দেবেন। কমিটির সভাপতি একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অতঃপর ৬৪ জেলার ৬৪টি লোকজ সংস্কৃতির গ্রন্থ ছাপানো হবে।
কমিটির সদস্যরা চলতি মাস থেকেই এ কাজের তদারকি করবেন বলে জানা গেছে।
প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলা একাডেমীর সচিব মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন তাঁদের কর্মপরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, 'অধিকাংশ জেলায় ইতিমধ্যে আমরা লোকজ সংস্কৃতি সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছি। প্রায় প্রত্যেক জেলার জন্য প্রধান সমন্বয়কারী, সমন্বয়কারী ও সংগ্রাহক নিয়োগ করা হয়েছে। সেসব জেলায় শুরু হয়নি, সেসব জায়গায় শিগগির কাজ শুরু করা হবে।'
একাডেমীর কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রতিটি জেলার ঐতিহ্য, লোক-ইতিহাস, লোকগাথাসহ লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান জাতির সামনে তুলে ধরা সম্ভব হবে।
No comments