এশিয়ার বন্যায় বিশ্বে চাল সংকটের আশঙ্কা-আপাতত নিরাপদ বাংলাদেশ by রাজীব আহমেদ
ভয়াবহ বন্যায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চাল রপ্তানিকারক দেশ থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ব্যাপক ফসলহানি ঘটেছে। আবার ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো এশিয়ার বড় চাল আমদানিকারক দেশেও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে বন্যায়। ফলে একদিকে এশিয়ায় যেমন চালের রপ্তানি বাজার সংকুচিত হবে, তেমনি আমদানির চাহিদাও এ বছর বেড়ে যাবে। এতে বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ২০০৮ সালের মতো চাল না পাওয়া যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
তবে সরকারের মজুদ পরিস্থিতি ও ফলনের পূর্বাভাস বিবেচনা করে বিশ্লেষকরা বলছেন, চাল নিয়ে বাংলাদেশের আপাতত দুশ্চিন্তার কারণ নেই। গত কয়েক মৌসুমে দেশে ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি করেও গুদাম ভর্তি করে রেখেছে সরকার। আবহাওয়া ভালো থাকায় আসছে আমন মৌসুমে ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখনই আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব পড়ার কারণ দেখছেন না বিশ্লেষকরা। অবশ্য চাল নিয়ে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সরকারকে তাঁরা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চাল রপ্তানি করে থাইল্যান্ড। এর পরেই আছে ভিয়েতনামের অবস্থান। বাংলাদেশ চাল আমদানির জন্য ভিয়েতনামের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। কারণ ওই দেশের চাল বাংলাদেশের চালের মতোই। ২০১০ সালের হিসাবে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম বিশ্ববাজারে দেড় কোটি টন চাল রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ড করেছে ৮৫ লাখ টন। আর ভিয়েতনাম করেছে ৬৫ লাখ টন। শীর্ষ রপ্তানিকারকদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তানের রপ্তানি ভিয়েতনামের অর্ধেক।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২১ অক্টোবর প্রকাশিত এক পূর্বাভাসে বলা হয়, চলমান ভয়াবহ বন্যায় থাইল্যান্ডে প্রায় ১৬ লাখ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা ওই দেশের মোট আবাদি জমির ১২ শতাংশ। এ ছাড়া ভিয়েতনামে সাড়ে ৭ শতাংশ ও কম্বোডিয়ার ১২ শতাংশ জমির ধান বন্যায় তলিয়ে গেছে।
বিশ্বে এ বছর চাল বাণিজ্যের আকার তিন কোটি ৪২ লাখ টন হবে বলে প্রাক্কলন করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে এক কোটি পাঁচ লাখ টন থাইল্যান্ড থেকে আশা করা হয়েছিল, যা বিশ্বের মোট রপ্তানির ৩১ শতাংশ। কিন্তু থাইল্যান্ডের সরকার ৬০ লাখ টন চাল কম উৎপাদনের আশঙ্কা করছে। গত সপ্তাহে দেশটি মালয়েশিয়া থেকে জরুরি ভিত্তিতে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
আমদানিকারক দেশেও দুরবস্থা : চাল আমদানিকারক দেশের তালিকায় শীর্ষে ফিলিপাইন। ওই দেশের উৎপাদনও এ বছর খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যায় ফিলিপাইনের ৬ শতাংশ জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি আরেক বড় আমদানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন পরিস্থিতিও খারাপ। ইন্দোনেশিয়ায় এ বছর ছয় কোটি ৫৩ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে, যা আগের বছরের চেয়ে ১ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.৯ শতাংশ কম। ওই দেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো গত সোমবার এ কথা জানিয়েছে।
বিকল্প উৎস খুঁজছেন আমদানিকারকরা : একদিকে রপ্তানিকারক দেশগুলোয় ফলন কমে যাওয়া, অন্যদিকে আমদানিকারক দেশে ফলন কম হওয়ায় আমদানির চাপ_দুই মিলিয়ে বিশ্ববাজারে চালের দাম ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় থাইল্যান্ডে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের টনপ্রতি দর ২০ শতাংশ বেড়ে ৬০০ ডলার হয়েছে। এটা বছর শেষে ৮০০ ডলারে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
আমদানিকারক দেশগুলো ইতিমধ্যে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ কয়েক মাস ভারত থেকে বেসরকারিভাবে কিছু চাল আমদানি করেছে; কিন্তু সেখানে এখন নজর দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। থাইল্যান্ডের কাছে চাল না পাওয়ার আশঙ্কায় তারা ইতিমধ্যেই ভারত থেকে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া চালের জন্য ভারতের দিকে ঝুঁকলে বাংলাদেশের আমদানির সুযোগ কমে যাবে। কারণ ভারত এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ লাখ টন চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। ভারতে চলতি বছর আট কোটি ৬০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে আগের বছরের তুলনায় সেখানে প্রায় ৫৬ লাখ টন চাল বেশি উৎপাদিত হবে।
আপাতত নিরাপদ বাংলাদেশ : বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে চালের দাম কমছে। গত এক মাসে প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা কমে মোটা চাল এখন ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা ও সরু চাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে মোটা জাতের চাল আমদানি ও আমন মৌসুম ঘনিয়ে আসায় দেশে দাম কমছে বলে জানান বিক্রেতারা। সব মিলিয়ে আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বর্তমানে সরকারের গুদামে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভালো আবহাওয়া ও সুষম বৃষ্টিপাতের কারণে আসছে আমন মৌসুমেও ভালো ফলন হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর কর্মকর্তারা জানান, এ বছর সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। কোথাও রোগ-বালাইয়ের বড় আক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। অন্য কোনো দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর ফলন গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। আমন বাংলাদেশের ধানের দ্বিতীয় প্রধান ফসল। দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ চাল এ মৌসুমে উৎপাদিত হয়। আর মাসখানেক পরই আমন ধান বাজারে আসতে শুরু করবে। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৫২ লাখ ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবহাওয়া ভালো হওয়ার কারণে চাষ হয়েছে ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। গত বছর আমনে ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ৩২ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে, এ বছর জমি কম হলেও উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে বেশি হবে। গত বোরোতে এক কোটি ৮৬ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছিল।
সতর্ক থাকার পরামর্শ : অর্থনীতিবিদ ড. এম আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশে আমন ধান উঠতে শুরু করবে। এ ছাড়া সরকারের কাছেও বিপুল খাদ্য মজুদ আছে। পাইপলাইনেও যথেষ্ট খাদ্য আছে। তাই এখন তেমন কোনো সংকটের আশঙ্কা নেই। তবে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজার পর্যক্ষেণ করতে হবে। ভবিষ্যতে বাজারে চালের দাম কী দাঁড়াচ্ছে, তা খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, 'প্রত্যেক দিন সকালে খাদ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর টেবিলে আগের দিন আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দামের কী অবস্থা ছিল_সে সম্পর্কে প্রতিবেদন আসা উচিত, যাতে বাজার সম্পর্কে তাঁদের আপডেটেড ধারণা থাকে। আমি জানি না, এখন সেটা হচ্ছে কি না।' চাল উৎপাদনের পাশাপাশি গমের উৎপাদন কোনো কারণে খারাপ হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন তিনি। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ২০০৭-০৮ অর্থবছরের মতো হতে পারে বলে উল্লেখ করে ওই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশের বাজারে বিশ্ববাজারের প্রভাব পড়তে পারে আগামী জুন-জুলাই মাসে। তখন সরকার তার মজুদ থেকে চাল বিক্রি করে বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও এফএওর পরামর্শক ড. তারিক হাসানও মনে করেন বাংলাদেশ এখন নিরাপদ অবস্থানে আছে। ভালো ফলন ও সরকারের কাছে ভালো মজুদকে তিনি এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে তিনিও সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চাল রপ্তানি করে থাইল্যান্ড। এর পরেই আছে ভিয়েতনামের অবস্থান। বাংলাদেশ চাল আমদানির জন্য ভিয়েতনামের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। কারণ ওই দেশের চাল বাংলাদেশের চালের মতোই। ২০১০ সালের হিসাবে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম বিশ্ববাজারে দেড় কোটি টন চাল রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ড করেছে ৮৫ লাখ টন। আর ভিয়েতনাম করেছে ৬৫ লাখ টন। শীর্ষ রপ্তানিকারকদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তানের রপ্তানি ভিয়েতনামের অর্ধেক।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২১ অক্টোবর প্রকাশিত এক পূর্বাভাসে বলা হয়, চলমান ভয়াবহ বন্যায় থাইল্যান্ডে প্রায় ১৬ লাখ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা ওই দেশের মোট আবাদি জমির ১২ শতাংশ। এ ছাড়া ভিয়েতনামে সাড়ে ৭ শতাংশ ও কম্বোডিয়ার ১২ শতাংশ জমির ধান বন্যায় তলিয়ে গেছে।
বিশ্বে এ বছর চাল বাণিজ্যের আকার তিন কোটি ৪২ লাখ টন হবে বলে প্রাক্কলন করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে এক কোটি পাঁচ লাখ টন থাইল্যান্ড থেকে আশা করা হয়েছিল, যা বিশ্বের মোট রপ্তানির ৩১ শতাংশ। কিন্তু থাইল্যান্ডের সরকার ৬০ লাখ টন চাল কম উৎপাদনের আশঙ্কা করছে। গত সপ্তাহে দেশটি মালয়েশিয়া থেকে জরুরি ভিত্তিতে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
আমদানিকারক দেশেও দুরবস্থা : চাল আমদানিকারক দেশের তালিকায় শীর্ষে ফিলিপাইন। ওই দেশের উৎপাদনও এ বছর খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যায় ফিলিপাইনের ৬ শতাংশ জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি আরেক বড় আমদানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন পরিস্থিতিও খারাপ। ইন্দোনেশিয়ায় এ বছর ছয় কোটি ৫৩ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে, যা আগের বছরের চেয়ে ১ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.৯ শতাংশ কম। ওই দেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো গত সোমবার এ কথা জানিয়েছে।
বিকল্প উৎস খুঁজছেন আমদানিকারকরা : একদিকে রপ্তানিকারক দেশগুলোয় ফলন কমে যাওয়া, অন্যদিকে আমদানিকারক দেশে ফলন কম হওয়ায় আমদানির চাপ_দুই মিলিয়ে বিশ্ববাজারে চালের দাম ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় থাইল্যান্ডে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের টনপ্রতি দর ২০ শতাংশ বেড়ে ৬০০ ডলার হয়েছে। এটা বছর শেষে ৮০০ ডলারে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
আমদানিকারক দেশগুলো ইতিমধ্যে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ কয়েক মাস ভারত থেকে বেসরকারিভাবে কিছু চাল আমদানি করেছে; কিন্তু সেখানে এখন নজর দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। থাইল্যান্ডের কাছে চাল না পাওয়ার আশঙ্কায় তারা ইতিমধ্যেই ভারত থেকে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া চালের জন্য ভারতের দিকে ঝুঁকলে বাংলাদেশের আমদানির সুযোগ কমে যাবে। কারণ ভারত এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ লাখ টন চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। ভারতে চলতি বছর আট কোটি ৬০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে আগের বছরের তুলনায় সেখানে প্রায় ৫৬ লাখ টন চাল বেশি উৎপাদিত হবে।
আপাতত নিরাপদ বাংলাদেশ : বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে চালের দাম কমছে। গত এক মাসে প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা কমে মোটা চাল এখন ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা ও সরু চাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে মোটা জাতের চাল আমদানি ও আমন মৌসুম ঘনিয়ে আসায় দেশে দাম কমছে বলে জানান বিক্রেতারা। সব মিলিয়ে আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বর্তমানে সরকারের গুদামে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভালো আবহাওয়া ও সুষম বৃষ্টিপাতের কারণে আসছে আমন মৌসুমেও ভালো ফলন হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর কর্মকর্তারা জানান, এ বছর সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। কোথাও রোগ-বালাইয়ের বড় আক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। অন্য কোনো দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর ফলন গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। আমন বাংলাদেশের ধানের দ্বিতীয় প্রধান ফসল। দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ চাল এ মৌসুমে উৎপাদিত হয়। আর মাসখানেক পরই আমন ধান বাজারে আসতে শুরু করবে। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৫২ লাখ ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবহাওয়া ভালো হওয়ার কারণে চাষ হয়েছে ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। গত বছর আমনে ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ৩২ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে, এ বছর জমি কম হলেও উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে বেশি হবে। গত বোরোতে এক কোটি ৮৬ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছিল।
সতর্ক থাকার পরামর্শ : অর্থনীতিবিদ ড. এম আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশে আমন ধান উঠতে শুরু করবে। এ ছাড়া সরকারের কাছেও বিপুল খাদ্য মজুদ আছে। পাইপলাইনেও যথেষ্ট খাদ্য আছে। তাই এখন তেমন কোনো সংকটের আশঙ্কা নেই। তবে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজার পর্যক্ষেণ করতে হবে। ভবিষ্যতে বাজারে চালের দাম কী দাঁড়াচ্ছে, তা খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, 'প্রত্যেক দিন সকালে খাদ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর টেবিলে আগের দিন আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দামের কী অবস্থা ছিল_সে সম্পর্কে প্রতিবেদন আসা উচিত, যাতে বাজার সম্পর্কে তাঁদের আপডেটেড ধারণা থাকে। আমি জানি না, এখন সেটা হচ্ছে কি না।' চাল উৎপাদনের পাশাপাশি গমের উৎপাদন কোনো কারণে খারাপ হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন তিনি। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ২০০৭-০৮ অর্থবছরের মতো হতে পারে বলে উল্লেখ করে ওই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশের বাজারে বিশ্ববাজারের প্রভাব পড়তে পারে আগামী জুন-জুলাই মাসে। তখন সরকার তার মজুদ থেকে চাল বিক্রি করে বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও এফএওর পরামর্শক ড. তারিক হাসানও মনে করেন বাংলাদেশ এখন নিরাপদ অবস্থানে আছে। ভালো ফলন ও সরকারের কাছে ভালো মজুদকে তিনি এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে তিনিও সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
No comments