সার্ক শীর্ষ সম্মেলন সমাপ্ত-সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সমন্বিত উদ্যোগসহ ২০ দফা ঘোষণা

ব উৎসমুখ বন্ধ করে সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার অঙ্গীকারসহ ২০ দফা ঘোষণার মাধ্যমে মালদ্বীপের আড্ডু সিটিতে গতকাল শেষ হয়েছে দু'দিনব্যাপী সপ্তদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। ঘোষণায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জলদস্যুতার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু, সাফটার পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা, বাণিজ্যপণ্যের স্পর্শকাতর তালিকা হ্রাস, অশুল্ক বাধা দূর করা এবং দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।


এ ছাড়া ২০ দফা ঘোষণায় আঞ্চলিক রেলওয়ে চুক্তি সম্পাদনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল রুটে দ্রুত
পরীক্ষামূলক কনটেইনার ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ঘোষণায় জ্বালানি সহযোগিতার জন্য আন্তঃসরকার কাঠামো চুক্তি সম্পাদন ও আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিনিময় প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বাগতিক মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ও সার্কের নতুন চেয়ারপারসন মোহাম্মদ নাশিদ সার্ক সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ২০ দফা ঘোষণা পড়ে শোনান। এর আগে সার্কভুক্ত আটটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা গতকাল সকালে মালদ্বীপের ভিলিংগিলি দ্বীপের সাংরিলা রিসোর্টে অবকাশ কাটান। এ সময় নেতৃবৃন্দ পৃথক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এ ছাড়া সার্ক নেতারা পরস্পরের কাছে নিজেদের জীবনকাহিনী বর্ণনা করেন। কেউ কেউ তাদের জেলজীবনের কাহিনীও তুলে ধরেন। স্থানীয় সময় বিকেলে সার্ক নেতারা মালদ্বীপের আড্ডু সিটির ইকুইটোরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে সমাপনী অধিবেশনে মিলিত হন। সমাপনী অধিবেশনে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রগুলো তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। অস্ট্রেলিয়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মরিশাস, মিয়ানমার ও যুক্তরাষ্ট্র সার্কের পর্যবেক্ষক। এবারই প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে পর্যবেক্ষক দেশগুলো। সমাপনী অধিবেশনে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরস্পরকে সহযোগিতা, সার্ক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ চারটি চুক্তিতে সই করেন আটটি সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সমাপনী অধিবেশনে ২০ দফা আড্ডু ঘোষণা গৃহীত হয় এবং আগামী সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করা হয় নেপালকে। সমাপনী অধিবেশনের আলোচনায় সার্ক নেতারা দক্ষিণ এশীয় অবাধ বাণিজ্য চুক্তি সাফটার পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এবারের সার্ক সম্মেলনের আলোচনায় আঞ্চলিক বাণিজ্যে অগ্রগতির বিষয়টি প্রাধান্য পায়। যদিও সার্কভুক্ত আটটি দেশের মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্যের হার ৫ শতাংশেরও কম।
দু'দিনের এ শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সার্ককে আরও গতিশীল করতে সর্বক্ষেত্রে আঞ্চলিক যোগাযোগ সম্প্রসারণ, সম্মিলিতভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, দারিদ্র্য ও আয়ের অসমতা হ্রাস, পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে অধিক বিনিয়োগ, জলদস্যুতা রোধ এবং সংবাদ মাধ্যম ও সুশীল সমাজের কার্যক্রমের সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হন। সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ১৭তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ মালদ্বীপ এবং সার্কের নতুন চেয়ারপারসন মোহাম্মদ নাশিদ। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে অংশ নেন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সম্মেলন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে জরুরি কাজে তিনি দেশে ফিরে যান। সমাপনী অধিবেশন শেষে আড্ডু সিটিতে নৈশভোজে যোগ দেন সার্ক নেতারা। এর আগে ঐক্য জোরদার করতে সেতুবন্ধ রচনার স্লোগান দিয়ে বৃহস্পতিবার আড্ডু সিটিতে শুরু হয় সপ্তদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। সেতুবন্ধ রচনার মূল প্রতিপাদ্যকে অর্থবহ করতে বিধিনিষেধ শিথিল করে জনগণ ও শ্রমিকের অবাধ যাতায়াতের প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে মালদ্বীপের আড্ডু সিটিতে দু'দিনব্যাপী সপ্তদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। মূল প্রতিপাদ্য সেতুবন্ধ রচনাকে অর্থবহ করতে সার্ক নেতারা নানা বৈচিত্র্যের বন্ধন, ভালো বোঝাপড়া তৈরি, বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক স্বার্থের উন্নয়ন এবং সামগ্রিক সহযোগিতার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেন। আর এসবের জন্য আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যাপক অর্থে জনগণের চলাচলের জন্য কানেক্টিভিটি এবং কার্যকর যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন শীর্ষ নেতারা ।
শান্তি, আস্থা তৈরি, স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা, গণতন্ত্র, পারস্পরিক স্বার্থ, সুশাসন ও মানবাধিকারের প্রতি সার্ক নেতারা তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। শীর্ষ নেতারা নতুন করে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সমাজে আয়ের বৈষম্য কমানোর অঙ্গীকার করেন। তারা জনগণকেন্দ্রিক টেকসই উন্নয়নের মধ্য দিয়ে নিজ নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ ও জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সার্ক নেতারা নারীদের (মেয়ে ও মহিলা) মৌলিক অধিকার ভোগের বিষয়টি স্বীকৃতি দেন। তারা বলেন, এটা বিশ্বজনীন মানবাধিকারের অবিচ্ছেদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় অধিকার। তারা মনে করেন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও বৈষম্য চর্চা মৌলিক অধিকার খর্বের শামিল। এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে আন্তঃসাংস্কৃতিক সহাবস্থান সম্ভব। এর জন্য এ অঞ্চলের সংস্কৃতির বহুত্ব ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে একে অন্যের জানা প্রয়োজন বলে মনে করেন সার্ক নেতারা।
সার্ক অঞ্চলে নানা ধরনের সন্ত্রাসবাদের হুমকি থেকে যাওয়ায় শীর্ষ নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সংঘবদ্ধ অপরাধ এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়া, মাদক বিশেষ করে তামাক জাতীয় নেশাদ্রব্য, মানব পাচার, ক্ষুদ্রাস্ত্রের ব্যবহার এবং জলদস্যুতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসব অপরাধ প্রতিরোধে শীর্ষ নেতারা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
শীর্ষ নেতারা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল। তারা আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং তা জোরাল করতে সার্কের প্রাতিষ্ঠানিক মেকানিজমকে সংহত করার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেন। এ ছাড়া এ অঞ্চলে একটি সক্ষম অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরির জন্য সাফটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেন সার্ক নেতারা। দক্ষিণ এশীয় ফোরামের প্রথম বৈঠকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারস্পরিক নির্ভরশীলতার যুক্তিকে গ্রহণ করে সার্কের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এ সুপারিশসহ প্রতিবেদনের সব সুপারিশকে আমলে নেন সার্ক নেতারা। সপ্তদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, চীন, ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউকে ধন্যবাদ জানান সার্ক নেতারা।
২০ দফা আড্ডু ঘোষণা
শীর্ষ সম্মেলন শেষে প্রকাশ করা ২০ দফা সার্ক ঘোষণায় বলা হয়_
এক. পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকরভাবে সাফটার বাস্তবায়নের চেষ্টাকে গতিশীল করতে সাফটা মিনিস্ট্রিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশনা দিতে একমত হয়েছেন সার্ক নেতারা। শুল্কবিধি ও পণ্যের মান সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রক্রিয়াকে বেগবান করা এবং দ্রুত অশুল্ক বাধা দূর করা ও স্পর্শকাতর তালিকা ছোট করতে কাজ করার জন্যও মিনিস্ট্রিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশ দেন সার্ক নেতারা।
দুই. আন্তঃঅঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ এবং আর্থিক পুঁজির বৃহত্তর প্রবাহকে অনুমোদন দিতে একটি প্রস্তাবনা তৈরির জন্য সার্ক অর্থমন্ত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিন. ২০১২ সালে মালদ্বীপের কোলহুফুসিতে সার্ক ভ্রমণ ও পর্যটন মেলাসহ দশম সার্ক বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হবে। বিশ্বে এ অঞ্চলকে 'ডেসটিনেশন সাউথ এশিয়া' হিসেবে তুলে ধরতে এ ধরনের মেলা আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রাইভেট সেক্টরকে কীভাবে যুক্ত করা যায় তার জন্য মডালিটিজ তৈরি করতে হবে।
চার. আঞ্চলিক রেলওয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করা এবং পরবর্তী সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের (কাউন্সিল অব মিনিস্টারস) আগে মোটরযান চুক্তি (মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্ট) করার জন্য বিশেষজ্ঞ গ্রুপ বৈঠক আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগির বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের মধ্যে পরীক্ষামূলক কনটেইনার ট্রেন চলাচল শুরুর ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাঁচ. ভারত মহাসাগরে কার্গো ও প্যাসেঞ্জার ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য এ বছরের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করতে সার্ক মহাসচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ছয়. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা বিষয়ে গত বছরে ভুটানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যে 'থিম্পু স্টেটমেন্ট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ' গৃহীত হয়েছে তার সুপারিশ ও সিদ্ধান্তগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কথা বলেন সার্ক নেতারা।
সাত. সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জাতীয় আয়ের দুই শতাংশের কম নয়_ এমন পরিমাণ অর্থ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে একমত হন সার্ক নেতারা। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে আরও অর্থ-সম্পদ কাজে লাগাতে একমত হন তারা।
আট. জ্বালানি সহযোগিতা বিষয়ে আন্তঃসরকার ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সম্পাদন, আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিনিময় ধারণার ওপর সমীক্ষা এবং সার্ক বিদ্যুৎ বাজার সংক্রান্ত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নয়. সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আগামী বৈঠকের আগে সার্ক ফুড ব্যাংক কার্যকরভাবে যাত্রা শুরু করার জন্য যেসব কাজ বাকি রয়েছে তা শেষ করতে হবে।
দশ. উৎসমুখ বন্ধ করে সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটনে ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন সার্ক নেতারা। সন্ত্রাসবাদের উৎসমুখগুলোর মধ্যে মাদক বিশেষ করে তামাক জাতীয় নেশাদ্রব্য, ক্ষুদ্রাস্ত্র ইত্যাদির পাচার বন্ধের বিষয়টি জড়িত। প্রস্তাবিত 'ইউনাইটেড নেশনস কম্প্রিহেনসিভ কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিজম' দ্রুত স্বাক্ষর এবং 'সার্ক কনভেনশন অন মিউচুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স ইন ক্রিমিনাল ম্যাটারস' অনুমোদনের কাজ শেষ করে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এগার. এ অঞ্চলে সামুদ্রিক বা জলদস্যুতা দমনে কাজ শুরু করতে একমত হয়েছেন সার্ক নেতারা।
বার. এ অঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসাম্যতা নিশ্চিতকরণে একটি আঞ্চলিক মেকানিজম তৈরি করতে আলোচনার জন্য আন্তঃসরকার বিশেষজ্ঞ গ্রুপের বৈঠক আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তের. পতিতাবৃত্তির জন্য নারী ও শিশু পাচার দমন এবং রোধ বিষয়ক সার্ক আঞ্চলিক কনভেনশন বাস্তবায়নের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরতে হবে।
চৌদ্দ. এ অঞ্চলে নিরাপদ সুপেয় পানিপ্রাপ্তি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি কার্যকর অবকাঠামো তৈরির কথা বলা হয়েছে।
পনের. এ অঞ্চলের থিঙ্ক ট্যাংক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, একাডেমিক মানের সামঞ্জস্য বজায় এবং পরস্পরের একাডেমিক ও প্রফেশনাল ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ দ্রুত করার কথা বলা হয়েছে।
ষোল. দক্ষিণ এশিয়ার জন্য 'ভিশন স্টেটমেন্ট' তৈরি করতে দক্ষিণ এশীয় ফোরামকে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাসহ সার্কের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণে এ ফোরামকে কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সতের. আন্তঃসরকার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সচিবালয় ও আঞ্চলিক কেন্দ্রসহ সার্ক মেকানিজমকে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে।
আঠার. উপযুক্ত ও সম্মত ক্ষেত্রগুলোতে নেওয়া আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে সার্ক মেকানিজম ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উনিশ. ২০১২ সালে অনুষ্ঠেয় সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে সার্কে 'ডায়ালগ পার্টনারশিপ'-এর প্রশ্নসহ পর্যবেক্ষক ইস্যু সংক্রান্ত সব বিষয়ের ওপর পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে।
বিশ. সার্ক মিডিয়া ডে (সার্ক গণমাধ্যম দিবস) নির্ধারণ করা এবং এ প্রেক্ষাপটে একটি আঞ্চলিক গণমাধ্যম সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অবকাশযাপন
এর আগে গতকাল সকালে মালদ্বীপের ভিলিংগিলি দ্বীপের সাংরিলা রিসোর্টে অবকাশ কাটান সার্ক নেতারা। স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ অবকাশে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন তারা। সার্কের মহাসচিব ফাতিমাত দিয়ানা সায়িদ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে, আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে থিনলে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকাকে নিয়ে ১৯৮৫ সালে সার্কের যাত্রা শুরু হয়। পরে এ জোটে যোগ দেয় আফগানিস্তান।

No comments

Powered by Blogger.