প্রস্তুতি ম্যাচ : জাতীয় দল-বিদেশি একাদশ মুখোমুখি আজ by কামাল হোসেন

ঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ বিকাল ৩টায় সাফ ফুটবলের প্রস্তুতিরত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ও বিদেশি একাদশ মুখোমুখি হচ্ছে। ৪ নভেম্বর সাফ ফুটবলের জন্য জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হয়। ঈদের জন্য মাঝে তিনদিন ছুটি থাকায় সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল এক সপ্তাহের মতো অনুশীলন করেছে। জুলাই-আগস্টে কোটি টাকার সুপার কাপের পর ঘরোয়া ফুটবল ৫ মাস বন্ধ। মাঝে জাতীয় দল বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইয়ে লেবাননের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছে। তারপর জাতীয় দলের ফুটবলাররা প্রায় বিশ্রামেই আছেন। এছাড়া মেসিডোনিয়ান কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কি জাতীয় দলে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন।


ফলে লেবাননের ম্যাচের আগে ক্যাম্পে থাকা জাতীয় ফুটবলারদের অনেকেই দলে নেই। প্রায় নতুন একটি দল আসন্ন সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। প্রথম সপ্তাহের অনুশীলনের মাঝেই জাতীয় দল নেপালে খেলতে যাওয়া শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে। সে ম্যাচে প্রথমে পিছিয়ে পড়ে পরে ১-১ গোলে সমতা আনে জাতীয় দল। কিন্তু জাতীয় দলের আনফিট ফুটবলারদের হতশ্রী পারফরম্যান্স সবাইকে হতাশ করেছে চরমভাবে। এমনকি সেদিন মাঠে হাজির থাকা বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এ দল নিয়ে সাফ ফুটবলে শিরোপা জেতার ব্যাপারে বাফুফে সভাপতি আশাবাদী নন। এমনকি কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কিও সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে নিরাশাই প্রকাশ করেছেন। মাত্র ৫-৬ দিনের অনুশীলনের পরই বাংলাদেশ ফুটবল দল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ বিদেশি একাদশের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে। এ ম্যাচের পারফরম্যান্সের ওপরই জাতীয় দলের শক্তি-সামর্থ্য অনেকটা পরখ করা যাবে। আগামী ২ থেকে ১১ ডিসেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে বসছে নবম সাফ ফুটবলের আসর। এ টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে সাফে খেলা সবকটি দলই দু’তিন মাস আগে থেকেই অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। এমনকি নেপাল, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ—এ দলগুলো এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই বিদেশি দলের বিপক্ষে একের পর এক অনুশীলন ম্যাচ খেলছে। আর বাফুফে তথা জাতীয় দল ম্যানেজমেন্ট কমিটির ব্যর্থতায় বাংলাদেশ দল কোনো বিদেশি দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। এ মাসে শেষ হওয়া এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ যুব ফুটবলের আগেও কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কি বিদেশি দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে চেয়েছেন। কিন্তু বাফুফে তথা ম্যানেজমেন্ট কমিটি নানা অজুহাতে বিদেশি দলের বিপক্ষে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচের আয়োজন করেনি। বাদল রায়ের নেতৃত্বাধীন জাতীয় দল ম্যানেজমেন্ট কমিটি জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও একইরকম টালবাহানা করছে। কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কির চাহিদামত কোনো বিদেশি দল জোগাড় করতে পারছে না প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য। আর বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের ভূমিকাও ইতিবাচক নয়। জাতীয় দলের অনুশীলনের জন্য বাফুফে সভাপতিও কোনো বিদেশি দল জোগাড় করতে পারেননি। উপরন্তু দল জোগাড়ের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা কু-যুক্তি তুলে ধরছেন মিডিয়ার কাছে। জাতীয় দলের জন্য কোনো বিদেশি দল জোগাড় করতে পারে না বাফুফে অথচ গত সেপ্টেম্বরে প্রায় ৪০ কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করে ঢাকায় আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হয়। এ ম্যাচ দেশের ফুটবলে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখেনি। শুধু চমক সৃষ্টি করাই ছিল বাফুফের মুখ্য উদ্দেশ্য। অথচ জাতীয় দলের স্বার্থ তাদের কাছে গৌণ। ম্যানেজমেন্ট কমিটি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতেই বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে জাতীয় দলের এমন প্রস্তুতি ম্যাচের আয়োজন করেছে। সাফ ফুটবলের তারিখ অনেক আগে ঘোষিত হলেও বাদল রায়ের নেতৃত্বাধীন জাতীয় দল ম্যানেজমেন্ট কমিটি ছিল এতদিন শীতনিদ্রায়। এ কমিটির অযোগ্যতায় সাফ ফুটবলে সবার পরে প্রস্তুতি শুরু করে বাংলাদেশ। তিন সপ্তাহের কম সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে জাতীয় দল সাফে খেলতে যাবে। সাফে অন্য দেশের প্রস্তুতির সঙ্গে তুলনা করলে বাফুফের লজ্জা পাওয়া উচিত।
সাফ ফুটবলে ‘বি’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশ খেলবে পাকিস্তান, নেপাল ও মালদ্বীপের সঙ্গে। ২ ডিসেম্বর পাকিস্তান, ৪ ডিসেম্বর নেপাল এবং ৬ ডিসেম্বর মালদ্বীপের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। নেপালে সাফাল পোখরা গোল্ডকাপ খেলতে যাওয়া শেখ জামালের সঙ্গে জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা দুই ফুটবলার মিশু ও কোমলও গেছেন। তাদের জায়গায় কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কি মিডফিল্ডার আলমগীর কবির রানা ও গোলকিপার সুলতানকে ক্যাম্পে ডেকেছেন। জাতীয় দলের ক্যাম্পে বর্তমানে ২৬ ফুটবলার গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কির অধীনে অনুশীলন করছেন। আজকের ম্যাচে কোচ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে জাতীয় দলের সব ফুটবলারকেই মাঠে নামাতে চান। যদিও প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও ভালো ফুটবল খেলে এ ম্যাচে জেতার প্রত্যাশা করছেন নিকোলা ইলিয়েভস্কি। স্বল্প সময়েই দল নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন বাংলাদেশ কোচ। ফলে বাংলাদেশ দলের শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে দারুণভাবে। দল গঠনের ব্যাপারেও মেসিডোনিয়ান এ কোচ দ্বৈতনীতি গ্রহণ করেছেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য জাতীয় দল থেকে বাদপড়া তিন অভিযুক্ত ফুটবলারের মধ্যে শুধু এমিলিকে দলে নিয়েছেন ইলিয়েভস্কি। অথচ ভালো ফর্মে থাকা সত্ত্বেও স্ট্রাইকার মিঠুন চৌধুরী ও মিডফিল্ডার জাহিদ তার অনুকম্পা পাননি। কোচের একচোখা ও বিমাতাসুলভ মনোভাব মিঠুন ও জাহিদকে চরমভাবে হতাশ করেছে। ২০০৯ সালে ঢাকায় সাফ ফুটবলের আগে ব্রাজিলিয়ান কোচ ডিডো শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য জাতীয় দলের ৮ ফুটবলারকে বাদ দিয়েছিলেন। সে সময় বাদল রায়ের নেতৃত্বাধীন ম্যানেজমেন্ট কমিটি জোর করে ওই ৮ ফুটবলারকে অন্তর্ভুক্ত করায় কোচ ডিডো চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। অথচ এবার অভিযুক্ত দুই কুশলী ফুটবলার মিঠুন চৌধুরী ও জাহিদকে দলভুক্ত করার ব্যাপারে ম্যানেজমেন্ট কমিটি সাক্ষী-গোপালের ভূমিকা নিয়েছে। আজকের ম্যাচকে সামনে রেখে গতকাল সকালে কোচ কামাল বাবুর অধীনে বিদেশি একাদশের ফুটবলাররা বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠে অনুশীলন করেছেন। আজ জাতীয় দলের বিপক্ষে ম্যাচটি জিততে আশাবাদী এ কোচ। এর আগে জাতীয় দলের বিপক্ষে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে দুটিতে জয় এবং একটি ম্যাচ ড্র করেছিল কোচ কামাল বাবুর দল। ভারতে নেহরু কাপ খেলতে যাওয়ার আগে কোচ নাঈমুদ্দিনের বাংলাদেশ জাতীয় দল কামাল বাবুর ঢাকা একাদশের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে। মালয়েশিয়ায় মারদেকা কাপ খেলতে যাওয়ার আগে কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকের দলকে কামাল বাবুর ঢাকা একাদশ ২-০ গোলে হারিয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে এশিয়া কাপ প্রাক-বাছাইয়ে কোচ আবু ইউসুফের বাংলাদেশ দলকেও কামাল বাবুর শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র ১-০ গোলে হারিয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.