শ্রীলঙ্কার ইসলামফোবিয়া অগ্রাহ্য করায় আরো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায় by তাসনিম নাজির
লাস্ট আপডেট- ২৭ জুলাই ২০১৯: নৃশংস
ইস্টার বোমা হামলার পর সম্প্রতি আমি শ্রীলঙ্কা সফর করে ফিরেছি।
শ্রীলঙ্কান মা-বাবার ব্রিটিশ মুসলিম নারী হিসেবে শ্রীলঙ্কা সফর আমাদের
জীবনে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আমিও সবসময় এই সফরের অপেক্ষায় থাকি।
তবে এবার সবকিছু ছিল ভিন্ন। আইএসের সাথে সম্পৃক্ত স্বল্প পরিচিত একটি সংগঠনের ইস্টার বোমা হামলায় ২৫৩ জনের প্রাণহানি ও ৫০০ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় সবাই কেঁপে ওঠে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে সবাই একত্রে দাঁড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়। কিন্তু এবারের সফরের সময় প্রথমবারের মতো আমি দৃশ্যমান মুসলিম নারী হিসেবে সেখানে মুসলিমবিরোধী বদ্ধমূল ধারণার মুখোমুখি হই।
মুসলিমবিরোধী প্রত্যাঘাতের কারণেই পরিবারের সদস্যরা শ্রীলঙ্কায় না যাওয়ার অনুরোধ করেছিল। ইস্টার হামলার পর থেকে মুসলিমবিরোধী মনোভাব বেড়েছে, অনেক মুসলিম নারী এমনকি তাদের বাড়িঘর থেকে বের হতেও ভয় পায়।
স্পষ্টভাবেই বলা যায়, স্থিতিশীলতা ও শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের প্রয়োজন সব সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময় করতে সক্ষম হওয়া, দৃশ্যপটের বাইরে নিজেদের লুকিয়ে রাখা ঠিক হবে না তাদের জন্য। এসব চরমপন্থীর কার্যক্রম শান্তি ও ঐক্যের পতাকাবাহী ইসলামের শিক্ষার বিপরীত।
মুসলিমরা যেন না ভাবে যে তাদের পরিচয় গোপন করা উচিত। তারা যেন এমনটাও না ভাবে যে কাজ তারা করেনি, সেই কাজের জন্য তাদের সম্মিলিতভাবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
দুঃখজনকভাবে শ্রীলঙ্কার অনেক মুসলিম তাদের বিশ্বাসের আলোকে তৈরী পোশাক পরে রাস্তায় বের হতে ভয় পায়। হিজাব পরা অনেক নারীর সাথে আমি কথা বলেছি, তারা এখন নিজেদের ঘরে আটকে রেখেছেন, তারা এখন হিজাব ছাড়া বাইরে বের হতে চান না।
বিমানবন্দরে এক শ্রীলঙ্কান নারী আমার প্রতি চিৎকার করতে লাগলেন। তিনি আমাকে আমার হেডস্কার্ফ খুলে ফেলতে বললেন। তিনি বললেন, এমন পোশাক পরা নিষিদ্ধ। বাস্তবে এমনটি নিষিদ্ধ নয়, নিষিদ্ধ হলো মুখ ঢেকে রাখা।
কষ্ট পেয়ে আমি বিনীতভাবে বললাম যে আমি আইন লঙ্ঘন করছি না। আর তিনি অপছন্দ করছেন বলেই আমি আমার হিজাব খুলব না।
তিনি তখন অদ্ভূতভাবে দাবি করলেন যে কালো হিজাব অনুমোদিত নয়, কেবল রঙিনগুলোই অনুমোদন করা হয়। আমার পরিবার পরে আমাকে জানিয়েছিল যে ইসলামিক সংস্থা নারীদেরকে কালোর বদলে রঙিন পোশাক পরতে উৎসাহিত করে। কারণ কালো রঙের ইসলামি পোশাক নিয়ে অনেক সময় নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়।
আমার ব্রিটিশ উচ্চারণ বুঝতে পেরে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি বিদেশী কিনা। আমি হ্যাঁ বললে তিনি শান্ত হন। শ্রীলঙ্কান লোকদের জন্য এখন কঠিন সময়, মুসলিম নারী পরিচিতি সহজ টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
আমাদের লাগেজ সংগ্রহের লাইনে থাকার সময় একটি শ্রীলঙ্কান মেয়ে আমার দুই বছরের ছেলেটিকে ধরার জন্য এগিয়ে আসছিল। কিন্তু আমাকে দেখে তার বাবা তাকে নিয়ে সরে যায়।
আমাকে আগেই বিদ্যমান উত্তেজনা সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা দেখব, তা ভাবিনি। আমি কষ্ট পেয়েছি। বুঝতে পেরেছি যে ইসলামফোবিয়া মোকাবিলা করা ও আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আরো অনেক কিছু করতে হবে।
আমি খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলিম- সবার সাথে কথা বলেছি। আমি দেখেছি, এখনো এসব সম্প্রদায়ের মধ্যে উষ্ণতা রয়েছে। ইসলামফোবিয়া বাড়লেও এখনো বন্ধুত্বও রয়েছে।
মুসলিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের ব্যবসা হ্রাস পাচ্ছে, ইস্টার হামলার পর থেকে অনেক দোকান এখনো বন্ধ রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে অন্যান্য ধর্মের লোকজন মুসলিমদের দোকানপাটে ফিরছে, শুরুতে তাদের মুসলিম মালিকানাধীন দোকানে কেনাকাটা করতে বারণ করা হয়েছিল।
শ্রীলঙ্কান মুসলিম ও সফরকারীদের প্রতি ইসলামফোবিয়া সত্য ঘটনা এবং শ্রীলঙ্কা সরকারকে তা সমাধান করতে হবে।
ইস্টার হামলার পর মুসলিমবিরোধী উত্তেজনার সময় সহিংসতা দমন করতে সরকার কারফিউ জারি করেছিল। তবে অনেক মুসলিম পরিবার তাদের বাড়িঘরে নিরাপদ বোধ করেনি, কারণ কারফিউ উপেক্ষা করেই দাঙ্গাবাজেরা হামলা চালিয়েছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা হয়েছে সামান্যই।
শ্রীলঙ্কায় মুসলিমদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শ্রীলঙ্কা সরকার ও পুলিশকে অভিযুক্ত করেছে।
হামলার পর বোরকা পরার ওপর শ্রীলঙ্কা সরকারের নিষেধাজ্ঞাও উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। মুসলিম নারীরা টার্গেট হচ্ছে, নিঃসঙ্গ বোধ করছে।
শ্রীলঙ্কান সরকারের দায়িত্ব সব নাগরিককে রক্ষা করা, মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উত্তেজনা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করা।
প্রথমেই কর্তৃপক্ষকে দাঙ্গাবাজদের দমন করতে হবে। কেউ যাতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ছড়াতে না পারে, হুমকি দিতে না পারে, বৈষম্য প্রদর্শন করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ইস্টার বোমা হামলার পর শ্রীলঙ্কা সরকারের উচিত ছিল মুসলিম নারীদের রক্ষা করা। কিন্তু এর বদলে কর্মকর্তাদের অনেকে জাতীয়বাদী উপাদানর সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে, মুসলিম এমপিদের পদত্যাগ করার দাবিকে সমর্থন করেছে।
তারা যদি মুসলিমদেরকে দ্রুততার সাথে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তবে মুসলিম সম্প্রদায় আরো বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। এতে সমাজের মধ্যে বিভক্তি আরো বাড়বে। অথচ অন্যদের মতো মুসলিমদেরও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করার অধিকার আছে।
>>>লেখক: পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক, লেখক, ইউনিভার্স্যাল পিস ফেডারেশন অ্যাম্বাসেডর
তবে এবার সবকিছু ছিল ভিন্ন। আইএসের সাথে সম্পৃক্ত স্বল্প পরিচিত একটি সংগঠনের ইস্টার বোমা হামলায় ২৫৩ জনের প্রাণহানি ও ৫০০ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় সবাই কেঁপে ওঠে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে সবাই একত্রে দাঁড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়। কিন্তু এবারের সফরের সময় প্রথমবারের মতো আমি দৃশ্যমান মুসলিম নারী হিসেবে সেখানে মুসলিমবিরোধী বদ্ধমূল ধারণার মুখোমুখি হই।
মুসলিমবিরোধী প্রত্যাঘাতের কারণেই পরিবারের সদস্যরা শ্রীলঙ্কায় না যাওয়ার অনুরোধ করেছিল। ইস্টার হামলার পর থেকে মুসলিমবিরোধী মনোভাব বেড়েছে, অনেক মুসলিম নারী এমনকি তাদের বাড়িঘর থেকে বের হতেও ভয় পায়।
স্পষ্টভাবেই বলা যায়, স্থিতিশীলতা ও শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের প্রয়োজন সব সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময় করতে সক্ষম হওয়া, দৃশ্যপটের বাইরে নিজেদের লুকিয়ে রাখা ঠিক হবে না তাদের জন্য। এসব চরমপন্থীর কার্যক্রম শান্তি ও ঐক্যের পতাকাবাহী ইসলামের শিক্ষার বিপরীত।
মুসলিমরা যেন না ভাবে যে তাদের পরিচয় গোপন করা উচিত। তারা যেন এমনটাও না ভাবে যে কাজ তারা করেনি, সেই কাজের জন্য তাদের সম্মিলিতভাবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
দুঃখজনকভাবে শ্রীলঙ্কার অনেক মুসলিম তাদের বিশ্বাসের আলোকে তৈরী পোশাক পরে রাস্তায় বের হতে ভয় পায়। হিজাব পরা অনেক নারীর সাথে আমি কথা বলেছি, তারা এখন নিজেদের ঘরে আটকে রেখেছেন, তারা এখন হিজাব ছাড়া বাইরে বের হতে চান না।
বিমানবন্দরে এক শ্রীলঙ্কান নারী আমার প্রতি চিৎকার করতে লাগলেন। তিনি আমাকে আমার হেডস্কার্ফ খুলে ফেলতে বললেন। তিনি বললেন, এমন পোশাক পরা নিষিদ্ধ। বাস্তবে এমনটি নিষিদ্ধ নয়, নিষিদ্ধ হলো মুখ ঢেকে রাখা।
কষ্ট পেয়ে আমি বিনীতভাবে বললাম যে আমি আইন লঙ্ঘন করছি না। আর তিনি অপছন্দ করছেন বলেই আমি আমার হিজাব খুলব না।
তিনি তখন অদ্ভূতভাবে দাবি করলেন যে কালো হিজাব অনুমোদিত নয়, কেবল রঙিনগুলোই অনুমোদন করা হয়। আমার পরিবার পরে আমাকে জানিয়েছিল যে ইসলামিক সংস্থা নারীদেরকে কালোর বদলে রঙিন পোশাক পরতে উৎসাহিত করে। কারণ কালো রঙের ইসলামি পোশাক নিয়ে অনেক সময় নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়।
আমার ব্রিটিশ উচ্চারণ বুঝতে পেরে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি বিদেশী কিনা। আমি হ্যাঁ বললে তিনি শান্ত হন। শ্রীলঙ্কান লোকদের জন্য এখন কঠিন সময়, মুসলিম নারী পরিচিতি সহজ টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
আমাদের লাগেজ সংগ্রহের লাইনে থাকার সময় একটি শ্রীলঙ্কান মেয়ে আমার দুই বছরের ছেলেটিকে ধরার জন্য এগিয়ে আসছিল। কিন্তু আমাকে দেখে তার বাবা তাকে নিয়ে সরে যায়।
আমাকে আগেই বিদ্যমান উত্তেজনা সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা দেখব, তা ভাবিনি। আমি কষ্ট পেয়েছি। বুঝতে পেরেছি যে ইসলামফোবিয়া মোকাবিলা করা ও আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আরো অনেক কিছু করতে হবে।
আমি খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলিম- সবার সাথে কথা বলেছি। আমি দেখেছি, এখনো এসব সম্প্রদায়ের মধ্যে উষ্ণতা রয়েছে। ইসলামফোবিয়া বাড়লেও এখনো বন্ধুত্বও রয়েছে।
মুসলিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের ব্যবসা হ্রাস পাচ্ছে, ইস্টার হামলার পর থেকে অনেক দোকান এখনো বন্ধ রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে অন্যান্য ধর্মের লোকজন মুসলিমদের দোকানপাটে ফিরছে, শুরুতে তাদের মুসলিম মালিকানাধীন দোকানে কেনাকাটা করতে বারণ করা হয়েছিল।
শ্রীলঙ্কান মুসলিম ও সফরকারীদের প্রতি ইসলামফোবিয়া সত্য ঘটনা এবং শ্রীলঙ্কা সরকারকে তা সমাধান করতে হবে।
ইস্টার হামলার পর মুসলিমবিরোধী উত্তেজনার সময় সহিংসতা দমন করতে সরকার কারফিউ জারি করেছিল। তবে অনেক মুসলিম পরিবার তাদের বাড়িঘরে নিরাপদ বোধ করেনি, কারণ কারফিউ উপেক্ষা করেই দাঙ্গাবাজেরা হামলা চালিয়েছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা হয়েছে সামান্যই।
শ্রীলঙ্কায় মুসলিমদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শ্রীলঙ্কা সরকার ও পুলিশকে অভিযুক্ত করেছে।
হামলার পর বোরকা পরার ওপর শ্রীলঙ্কা সরকারের নিষেধাজ্ঞাও উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। মুসলিম নারীরা টার্গেট হচ্ছে, নিঃসঙ্গ বোধ করছে।
শ্রীলঙ্কান সরকারের দায়িত্ব সব নাগরিককে রক্ষা করা, মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উত্তেজনা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করা।
প্রথমেই কর্তৃপক্ষকে দাঙ্গাবাজদের দমন করতে হবে। কেউ যাতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ছড়াতে না পারে, হুমকি দিতে না পারে, বৈষম্য প্রদর্শন করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ইস্টার বোমা হামলার পর শ্রীলঙ্কা সরকারের উচিত ছিল মুসলিম নারীদের রক্ষা করা। কিন্তু এর বদলে কর্মকর্তাদের অনেকে জাতীয়বাদী উপাদানর সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে, মুসলিম এমপিদের পদত্যাগ করার দাবিকে সমর্থন করেছে।
তারা যদি মুসলিমদেরকে দ্রুততার সাথে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তবে মুসলিম সম্প্রদায় আরো বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। এতে সমাজের মধ্যে বিভক্তি আরো বাড়বে। অথচ অন্যদের মতো মুসলিমদেরও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করার অধিকার আছে।
>>>লেখক: পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক, লেখক, ইউনিভার্স্যাল পিস ফেডারেশন অ্যাম্বাসেডর
No comments