যানজট, দুর্ভোগ এবারো সঙ্গী
ভোগান্তি
সঙ্গী করে ঈদযাত্রা পাড়ি দিচ্ছেন মানুষ। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরায় এমন
ভোগান্তিতে মানুষ ক্ষুব্ধ। সড়কপথে দীর্ঘ যানজটের কারণে ঘরমুখো মানুষ
গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বেশি।
রেলপথেও ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে। গতকাল কমলাপুর থেকে ছেড়ে
যাওয়া প্রত্যেকটি ট্রেনই সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। এছাড়া
বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস
ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে করে উত্তর বঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেলযোগাযোগ
বন্ধ হয়ে যায়। যদিও সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ওই রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। নদী উত্তাল থাকায় সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চও ধীরগতিতে চলছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসূত্রে জানাগেছে, কোরবানির ঈদের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি পাশাপাশি হওয়াতে গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি। পশ্চিমাঞ্চল বিভাগের প্রতিটা ট্রেন দেরি করে ছাড়াতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও এটি প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি প্রায় তিন ঘন্টা দেরি করে ছেড়েছে। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও ট্রেনটি ৫ ঘন্টা দেরি করে ছেড়ে যায়। চিলহাটী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি চার ঘন্টা দেরি করে দুপুর সাড়ে ১২টায় ছেড়ে গেছে। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার নিধারিত সময় ছিল। এই ট্রেনটিও অন্তত ছয় ঘন্টা দেরি করে ছেড়ে গেছে। এছাড়া রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি, পদ্মা এক্সপ্রেস খুলনাগামী চিত্রা ট্রেনও নির্ধারিক সময়ের কয়েক ঘন্টা পরে ছেড়ে গেছে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটের ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল দুপুর পৌনে একটার দিকে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এতে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় যায়। ট্রেনটি সেতুর পূর্বপাড় দিয়ে ওঠার সময় একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ওই রুট দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের যাত্রীদের দীর্ঘ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে ওই ট্রেনটি ফের খুলনার উদ্ধেশ্য ছেড়ে গেছে।
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় নিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিটি ট্রেনকে বঙ্গবন্ধু সেতু অতিক্রম করে যেতে হয়। সেতু অতিক্রম করতে প্রতিটি ট্রেনের ৩০ থেকে ৪০ মিনিট করে সময় লাগে। এভাবে প্রতিদিন ৩২টি ট্রেন চলাচল করছে। তাই আর শিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। তবে যমুনার উপর ২০২৩ সালের মধ্যে আরেকটি সেতু নির্মাণ হলে এই সমস্যার সমাধান হবে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময় যাত্রীদের চাহিদা বেশি ছিল ৯ তারিখের টিকিটের। তখনই বুঝেছিলাম শুক্রবার খুব বেশি চাপ পড়বে। অতিরিক্ত যাত্রী যখন ট্রেনে উঠে তখন স্টেশনে যাত্রী নামাতে বেশি সময় লাগে। একারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। তারপরও ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রা সম্পুন্ন করতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে ধীর গতিতে চলছে যানবাহন। গতকাল এই মহাসড়কে ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট চিল। যদিও দুপুরে তা ৩০ কিলোমিটারে এসে ঠেকে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম ও পূর্বপ্রান্তে যানবাহনের চাপ বেশি ছিল। গাজীপুর জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের চাপের পাশাপাশি যানজটও বেড়েছে। চালকরা জানিয়েছেন, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক জুড়েই চলছে একটি প্রজেক্টের কাজ। তাই এই ১৩ কিলোমিটার সড়কই খানাখন্দে ভরা। দ্রুত গতির বাসগুলো ধীরে ধীরে চলছে। দিনভর সাভারের তিনি সড়কে দীর্ঘ যানজটের অবসান ঘটে বিকাল চারটার পর। প্রায় পাঁচ ঘন্টা যানজট থাকার পরে বিকালে চলাচল স্বাভাবিক হওয়াতে স্বস্তি ফিরেছে ঘরমুখো মানুষের মধ্যে। এর আগে সকাল থেকেই ঢাকা- আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে ২১ কিলোমিটার যানজট ছিল।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপে দক্ষিণ বঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে এমন চাপ বাড়ছে। সহস্রাধিক যানবাহন নদী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। নদী উত্তাল থাকায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো ধীরে ধীরে চলছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড়ে ট্রেন লাইনচ্যুত, সোয়া ৩ ঘণ্টা উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুতে উঠার ঠিক আগ মুহূর্তে একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে দেশের উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল সোয়া ৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। গতকাল দুপুর সোয়া ১টায় লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সাড়ে চারটার দিকে উদ্ধার কাজ শেষ হলে ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। তবে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশনে দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার মাসুম আলী খান জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ছ’ বগির সামনের দুইটি চাকা সোয়া ১টায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব টোল প্লাজার কাছে লাইনচ্যুত হয়। স্থানীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করে বগিটি লাইনে তোলা হয়। পরে সাড়ে ৪টায় ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হওয়ায় সেতু পূর্ব স্টেশনে ধূমকেতু এক্সপ্রেস, টাঙ্গাইল স্টেশনে একতা এক্সপ্রেস, মহেড়া স্টেশনে নীল সাগর ও জয়দেবপুর স্টেশনে বনলতা ট্রেন আটকা পড়ে। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় প্রায় ৫০ মিটার লাইন কিছুটা বেঁকে যায়। সে বেঁকে যাওয়া অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রথমে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাগবে বঙ্গবন্ধু সেনানীবাসের পক্ষ থেকে যাত্রীদের পানি ও খাবার সরবরাহ করা হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে যাত্রীদের মাঝে।
রূপগঞ্জে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে যানজট
ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এ সড়কের কাঞ্চন সেতু থেকে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন গরুবোঝাই ট্রাক, দূরপাল্লার বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনসহ ঈদে ঘরমুখো যাত্রী সাধারণ।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলার এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের গোলাকান্দাইল থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এ সড়কের পাশে শিমুলিয়া ও পলখান এলাকায় গরুরহাট বসায়, কুশাবো এলাকায় পণ্যবাহী একটি ট্রাক সড়কে বিকল হয়ে থাকায়, কাঞ্চন সেতুর টোল প্লাজায় টোল আদায়ে ধীর গতি, গন্তব্যস্থলে বিভিন্ন যানবাহন প্রতিযোগিতা করে আগে যাওয়ার জন্য ওভারটেকিং করায় কেন্দুয়া মায়ারবাড়ী, চান টেক্সটাইল, চরপাড়া ও কালাদী এলাকায় সংযোগ সড়ক থাকায় সেখানে গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় সেসব স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ও চট্টগ্রাম থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনআসা যাওয়ার পথে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ভোগান্তির শিকার হয়েছে গরু বোঝাই ট্রাক, দূরপাল্লার বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন ও ঈদগামী যাত্রী সাধারণ। অপরদিকে এ সড়কের গোলাকান্দাইল এলাকায় ফ্লাইওভারে উভয় দিকে যানবাহন থামিয়ে কমিউনিটি পুলিশের সদস্য ও ট্রাফিক পুলিশের কতিপয় সদস্য টাকা আদায়ের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সড়কে বিভিন্ন যানবাহন ও গরু বোঝাই ট্রাকের চাপ অনেকটা বেশি। এছাড়া প্রায় সময় এসড়কে গাড়ি বিকল হয়ে সড়কে পড়ে থাকায় যাজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদে সড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম তৈরি করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থানে যানজট নিরসনে কাজ করছে।
সাভারে ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধিতে যানজটে চরম দুর্ভোগ
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাভারে মহা-সড়কগুলোতে ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অতিরিক্ত চাপ সামলে নিতে হিমসিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একযোগে নাড়ির টানে ঈদ করতে বাড়ি ফেরার জন্য কর্মজীবী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। তবে রাস্তায় এসে যানবাহন সংকট ও মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন মহাসড়কে কোনো যানজট নেই তবে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে যানবাহনগুলো কিছুটা ধীরগতিতে চলাচল করছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সড়কেই যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। এতে করে গাড়ি চলাচলে কিছুটা ধীরগতির পাশাপাশি কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র যানজটও লক্ষ্য করা গেছে। এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষ। সকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, ফুলবাড়িয়া, উলাইল, গেন্ডা, সাভার রেডিওকলোনী, সিএন্ডবি, বিশমাইল, নবীনগর, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল, ইপিজেড, ভলিভদ্র বাজার, জিরানী ও চন্দ্রা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের ইউনিক জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবো এবং আশুলিয়ার বাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রতিটি পয়েন্টেই যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে অতিরিক্ত চাপের কারণে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা নিয়ম না মেনে চলাচল করায় কোথাও কোথাও তীব্র যানজটেরও সৃষ্টি হয়। চালক ও যাত্রীরা জানান, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই মহাসড়কগুলো যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ঘরমুখো মানুষের চাপও তত বাড়ছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যাওয়ায় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। এসব জায়গায় খালি পায়ে চলাচল করাটা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) আবুল হোসেন বলেন, ঈদে একটু গাড়ির চাপ বেশি হবেই। কিন্তু এবার আগেভাগেই গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। তা ছাড়া পল্লি বিদ্যুতের কাজের জন্য রাস্তার পাশে একটু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সে গর্তে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় আরো একটু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে বৃষ্টির মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন। খুব দ্রুতই যানজট নিরসন করার আশা ব্যক্ত করেন এই ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা। এদিকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পরিবার পরিজন ও ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদেরও গণপরিবহনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। পরিবহন সংকটের এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু অসাধু চালক ও তার সহযোগীরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সাইদুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটি পেয়ে পোশাক শ্রমিকরা বাড়িতে যেতে শুরু করেছেন। শুক্রবার হওয়ায় গাড়ির চাপ একটু বেশি। বৃহস্পতিবার রাতে সড়কে যে যানজট হয়েছিল শুক্রবার ভোরে তা ঠিক হয়ে গেছে। তবে সকাল থেকে আবারও গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। পুলিশ যানজট নিরসনে ২৪ ঘণ্টা সড়কে কাজ করছেন। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সড়কগুলো যানজট মুক্ত হবে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। নদী উত্তাল থাকায় সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চও ধীরগতিতে চলছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসূত্রে জানাগেছে, কোরবানির ঈদের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি পাশাপাশি হওয়াতে গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি। পশ্চিমাঞ্চল বিভাগের প্রতিটা ট্রেন দেরি করে ছাড়াতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও এটি প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি প্রায় তিন ঘন্টা দেরি করে ছেড়েছে। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও ট্রেনটি ৫ ঘন্টা দেরি করে ছেড়ে যায়। চিলহাটী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি চার ঘন্টা দেরি করে দুপুর সাড়ে ১২টায় ছেড়ে গেছে। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার নিধারিত সময় ছিল। এই ট্রেনটিও অন্তত ছয় ঘন্টা দেরি করে ছেড়ে গেছে। এছাড়া রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি, পদ্মা এক্সপ্রেস খুলনাগামী চিত্রা ট্রেনও নির্ধারিক সময়ের কয়েক ঘন্টা পরে ছেড়ে গেছে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটের ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল দুপুর পৌনে একটার দিকে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এতে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় যায়। ট্রেনটি সেতুর পূর্বপাড় দিয়ে ওঠার সময় একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ওই রুট দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের যাত্রীদের দীর্ঘ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে ওই ট্রেনটি ফের খুলনার উদ্ধেশ্য ছেড়ে গেছে।
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় নিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিটি ট্রেনকে বঙ্গবন্ধু সেতু অতিক্রম করে যেতে হয়। সেতু অতিক্রম করতে প্রতিটি ট্রেনের ৩০ থেকে ৪০ মিনিট করে সময় লাগে। এভাবে প্রতিদিন ৩২টি ট্রেন চলাচল করছে। তাই আর শিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। তবে যমুনার উপর ২০২৩ সালের মধ্যে আরেকটি সেতু নির্মাণ হলে এই সমস্যার সমাধান হবে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময় যাত্রীদের চাহিদা বেশি ছিল ৯ তারিখের টিকিটের। তখনই বুঝেছিলাম শুক্রবার খুব বেশি চাপ পড়বে। অতিরিক্ত যাত্রী যখন ট্রেনে উঠে তখন স্টেশনে যাত্রী নামাতে বেশি সময় লাগে। একারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। তারপরও ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রা সম্পুন্ন করতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে ধীর গতিতে চলছে যানবাহন। গতকাল এই মহাসড়কে ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট চিল। যদিও দুপুরে তা ৩০ কিলোমিটারে এসে ঠেকে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম ও পূর্বপ্রান্তে যানবাহনের চাপ বেশি ছিল। গাজীপুর জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের চাপের পাশাপাশি যানজটও বেড়েছে। চালকরা জানিয়েছেন, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক জুড়েই চলছে একটি প্রজেক্টের কাজ। তাই এই ১৩ কিলোমিটার সড়কই খানাখন্দে ভরা। দ্রুত গতির বাসগুলো ধীরে ধীরে চলছে। দিনভর সাভারের তিনি সড়কে দীর্ঘ যানজটের অবসান ঘটে বিকাল চারটার পর। প্রায় পাঁচ ঘন্টা যানজট থাকার পরে বিকালে চলাচল স্বাভাবিক হওয়াতে স্বস্তি ফিরেছে ঘরমুখো মানুষের মধ্যে। এর আগে সকাল থেকেই ঢাকা- আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে ২১ কিলোমিটার যানজট ছিল।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপে দক্ষিণ বঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে এমন চাপ বাড়ছে। সহস্রাধিক যানবাহন নদী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। নদী উত্তাল থাকায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো ধীরে ধীরে চলছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড়ে ট্রেন লাইনচ্যুত, সোয়া ৩ ঘণ্টা উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুতে উঠার ঠিক আগ মুহূর্তে একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে দেশের উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল সোয়া ৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। গতকাল দুপুর সোয়া ১টায় লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সাড়ে চারটার দিকে উদ্ধার কাজ শেষ হলে ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। তবে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশনে দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার মাসুম আলী খান জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ছ’ বগির সামনের দুইটি চাকা সোয়া ১টায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব টোল প্লাজার কাছে লাইনচ্যুত হয়। স্থানীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করে বগিটি লাইনে তোলা হয়। পরে সাড়ে ৪টায় ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হওয়ায় সেতু পূর্ব স্টেশনে ধূমকেতু এক্সপ্রেস, টাঙ্গাইল স্টেশনে একতা এক্সপ্রেস, মহেড়া স্টেশনে নীল সাগর ও জয়দেবপুর স্টেশনে বনলতা ট্রেন আটকা পড়ে। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় প্রায় ৫০ মিটার লাইন কিছুটা বেঁকে যায়। সে বেঁকে যাওয়া অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রথমে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাগবে বঙ্গবন্ধু সেনানীবাসের পক্ষ থেকে যাত্রীদের পানি ও খাবার সরবরাহ করা হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে যাত্রীদের মাঝে।
রূপগঞ্জে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে যানজট
ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এ সড়কের কাঞ্চন সেতু থেকে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন গরুবোঝাই ট্রাক, দূরপাল্লার বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনসহ ঈদে ঘরমুখো যাত্রী সাধারণ।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলার এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের গোলাকান্দাইল থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এ সড়কের পাশে শিমুলিয়া ও পলখান এলাকায় গরুরহাট বসায়, কুশাবো এলাকায় পণ্যবাহী একটি ট্রাক সড়কে বিকল হয়ে থাকায়, কাঞ্চন সেতুর টোল প্লাজায় টোল আদায়ে ধীর গতি, গন্তব্যস্থলে বিভিন্ন যানবাহন প্রতিযোগিতা করে আগে যাওয়ার জন্য ওভারটেকিং করায় কেন্দুয়া মায়ারবাড়ী, চান টেক্সটাইল, চরপাড়া ও কালাদী এলাকায় সংযোগ সড়ক থাকায় সেখানে গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় সেসব স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ও চট্টগ্রাম থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনআসা যাওয়ার পথে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ভোগান্তির শিকার হয়েছে গরু বোঝাই ট্রাক, দূরপাল্লার বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন ও ঈদগামী যাত্রী সাধারণ। অপরদিকে এ সড়কের গোলাকান্দাইল এলাকায় ফ্লাইওভারে উভয় দিকে যানবাহন থামিয়ে কমিউনিটি পুলিশের সদস্য ও ট্রাফিক পুলিশের কতিপয় সদস্য টাকা আদায়ের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সড়কে বিভিন্ন যানবাহন ও গরু বোঝাই ট্রাকের চাপ অনেকটা বেশি। এছাড়া প্রায় সময় এসড়কে গাড়ি বিকল হয়ে সড়কে পড়ে থাকায় যাজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদে সড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম তৈরি করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থানে যানজট নিরসনে কাজ করছে।
সাভারে ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধিতে যানজটে চরম দুর্ভোগ
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাভারে মহা-সড়কগুলোতে ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অতিরিক্ত চাপ সামলে নিতে হিমসিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একযোগে নাড়ির টানে ঈদ করতে বাড়ি ফেরার জন্য কর্মজীবী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। তবে রাস্তায় এসে যানবাহন সংকট ও মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন মহাসড়কে কোনো যানজট নেই তবে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে যানবাহনগুলো কিছুটা ধীরগতিতে চলাচল করছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সড়কেই যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। এতে করে গাড়ি চলাচলে কিছুটা ধীরগতির পাশাপাশি কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র যানজটও লক্ষ্য করা গেছে। এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষ। সকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, ফুলবাড়িয়া, উলাইল, গেন্ডা, সাভার রেডিওকলোনী, সিএন্ডবি, বিশমাইল, নবীনগর, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল, ইপিজেড, ভলিভদ্র বাজার, জিরানী ও চন্দ্রা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের ইউনিক জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবো এবং আশুলিয়ার বাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রতিটি পয়েন্টেই যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে অতিরিক্ত চাপের কারণে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা নিয়ম না মেনে চলাচল করায় কোথাও কোথাও তীব্র যানজটেরও সৃষ্টি হয়। চালক ও যাত্রীরা জানান, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই মহাসড়কগুলো যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ঘরমুখো মানুষের চাপও তত বাড়ছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যাওয়ায় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। এসব জায়গায় খালি পায়ে চলাচল করাটা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) আবুল হোসেন বলেন, ঈদে একটু গাড়ির চাপ বেশি হবেই। কিন্তু এবার আগেভাগেই গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। তা ছাড়া পল্লি বিদ্যুতের কাজের জন্য রাস্তার পাশে একটু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সে গর্তে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় আরো একটু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে বৃষ্টির মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন। খুব দ্রুতই যানজট নিরসন করার আশা ব্যক্ত করেন এই ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা। এদিকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পরিবার পরিজন ও ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদেরও গণপরিবহনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। পরিবহন সংকটের এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু অসাধু চালক ও তার সহযোগীরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সাইদুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটি পেয়ে পোশাক শ্রমিকরা বাড়িতে যেতে শুরু করেছেন। শুক্রবার হওয়ায় গাড়ির চাপ একটু বেশি। বৃহস্পতিবার রাতে সড়কে যে যানজট হয়েছিল শুক্রবার ভোরে তা ঠিক হয়ে গেছে। তবে সকাল থেকে আবারও গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। পুলিশ যানজট নিরসনে ২৪ ঘণ্টা সড়কে কাজ করছেন। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সড়কগুলো যানজট মুক্ত হবে।
No comments