মন্ত্রিপরিষদ নয়, মন্ত্রিসভা
রাষ্ট্রপতি
পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা ও সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা- দুটিই
গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতি বা ব্যবস্থা। রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায়
রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাহী এবং তাকে দায়িত্ব পালনে ‘সহায়তা ও পরামর্শদানের
জন্য’ একটি ‘মন্ত্রিপরিষদ’ থাকে। আমাদের সংবিধানের বাংলা ভার্সনে এটিকে
‘মন্ত্রিপরিষদ’ এবং ইংরেজি ভার্সনে ‘কাউন্সিল অব মিনিস্টার্স’ (council of
ministers) নামে অভিহিত করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ‘মন্ত্রিপরিষদ’ বা মন্ত্রীরা
রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ বা জবাবদিহি করে থাকেন এবং রাষ্ট্রপতি তার ইচ্ছা
অনুযায়ী মন্ত্রীদের নিয়োগ করে থাকেন। অন্যদিকে, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার
ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী প্রধান নির্বাহী। তার পরামর্শে রাষ্ট্রপতি
মন্ত্রীদের নিয়োগ করে থাকেন। মন্ত্রিসভা যৌথভাবে (প্রধানমন্ত্রীসহ) সংসদের
কাছে দায়বদ্ধ বা জবাবদিহি করে থাকেন। আমাদের সংবিধানের বাংলা ভার্সনে এটিকে
‘প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা’ এবং ইংরেজি ভার্সনে ‘প্রাইম মিনিস্টার
অ্যান্ড দ্য কেবিনেট’ (Prime Minister and the cabinet) নামে অভিহিত করা
হয়েছে। দুই পদ্ধতিতেই সংসদের যে সদস্যের প্রতি অধিকাংশ সদস্যের আস্থা রয়েছে
বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবে, তিনি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ
করবেন। বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছে রাষ্ট্রপতি সরকার পদ্ধতি দিয়ে।
’৭২
সালের সংবিধানের মাধ্যমে (মূল সংবিধান) সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা
প্রবর্তন করা হয়। এরপর সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে আবার রাষ্ট্রপতি
পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। দীর্ঘদিন পর দেশ আবার সংসদীয়
পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় ফিরে আসে এরশাদ শাসনামলের পর শেখ হাসিনার দাবির
কারণে, ৫ম জাতীয় সংসদে সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সর্বসম্মতভাবে সংবিধানের
দ্বাদশ সংশোধনী আইন পাস হওয়ার মাধ্যমে। এর মধ্যে যতবারই রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি ও
সংসদীয় পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে, ততবারই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। যেমন
রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার আলোকে ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ’ এবং সংসদীয়
পদ্ধতির আলোকে ‘মন্ত্রিসভা বিভাগ’ নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এখনও
সংবিধানের সংশোধনীর আলোকে অন্যত্র পরিবর্তন না এনে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির
সরকার ব্যবস্থার আদলে ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ’ নামকরণ নিয়েই চলেছে। অথচ
কেবিনেট ফাংশন করে যে আইন বা বিধিতে সেই রুলস অব বিজনেসেও সংসদীয় পদ্ধতির
আদলের ‘কেবিনেট’ (cabinet) নামকরণ করা আছে। কিন্তু সরকারিভাবে এখনও
রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির ‘মন্ত্রিপরিষদ’ (council of ministers) নাম নিয়েই চলছে
সবকিছু। cabinet (মন্ত্রিসভা) আর council of ministers (মন্ত্রিপরিষদ) কি
এক? সংবিধানেই তো দুই পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থায় দুটিকে পৃথক করে রাখা হয়েছে
এবং এর অর্থ আর ফাংশনও তো ভিন্ন। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এ লেখা।
সংবিধানের আলোকে ‘মন্ত্রিপরিষদ’ আর ‘মন্ত্রিসভার’ অর্থ যে এক নয়, তা
বোঝানোর জন্যই ‘ছকের মাধ্যমে’ পুরো বিষয়টি তুলে ধরা হল- মন্ত্রিপরিষদ ও
মন্ত্রিসভার মধ্যে পার্থক্য।
No comments