চীনে নিহত হয়েছিল ১০ হাজার বিক্ষোভকারী
তিয়েনআনমেন
স্কয়ারে ১৯৮৯ সালের জুনে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর চীনের
সেনাবাহিনীর অভিযানে অন্তত ১০ হাজার লোক নিহত হয়েছিল বলে ব্রিটিশ সরকারের
গোপন কূটনৈতিক তারবার্তায় বলা হয়েছে। সদ্য প্রকাশিত ওই তারবার্তায় বেইজিংয়ে
ওই ঘটনার ভয়াবহ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। খবর এএফপির। লন্ডনে পাঠানো এক
টেলিগ্রামে তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অ্যালান ডোনাল্ড লিখেছিলেন, ‘অন্তত
১০ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হচ্ছে।’ ওই ঘটনার
২৮ বছর পর তারবার্তাটি প্রকাশ করা হল। ব্রিটেনের ন্যাশনাল আর্কাইভে এটি
দেখতে পেয়েছে এএফপি। ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ক্রাউন ডাউন
চালানোর পরদিন এই হিসাব দেন অ্যালান। সে সময় বলা হয়েছিল অভিযানে কয়েকশ’
থেকে সহস্রাধিক লোক নিহত হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু অ্যালানের তথ্য বলছে
নিহতের সংখ্যা তার অন্তত দশগুণ। ফ্রান্সের চীনা বিশেষজ্ঞ জঁ-পিয়ের
ক্যাবেস্টান বলেন, ব্রিটেনের এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য। সম্প্রতি অবমুক্ত করা
যুক্তরাষ্ট্রের দলিলপত্রেও একই পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে।
হংকং ব্যাপটিস্ট
ইউনিভার্সিটির এই অধ্যাপক বলেন, দুটি নিরপেক্ষ সূত্র থেকেই একই তথ্য পাওয়া
গেছে। তিনি বলেন, ব্রিটেনের এই তথ্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অভিযানের সময়
ক্যাবেস্টান বেইজিংয়ে অবস্থান করছিলেন। কমিউনিস্টদের ক্ষমতার প্রতীকী
প্রাণকেন্দ্র তিয়েনআনমেন স্কয়ারে সাত সপ্তাহ ধরে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ
করেন ছাত্ররা। পরে ৩ থেকে ৪ জুন সেনাবাহিনী সেই বিক্ষোভ দমনে সেখানে
প্রবেশ করে। রাষ্ট্রদূত অ্যালান লিখেছেন, সাঁজোয়া যানে চড়ে ভিড়ের ওপর গুলি
চালানো হয়। এরপর তাদের ওপর এপিসি (উভচর সামরিক যান) উঠিয়ে দেয়া হয়। স্টেট
কাউন্সিলের একজন সদস্য তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে এ তথ্য জানান। আর তিনিই
অ্যালানকে দেন সেই তথ্য। সেনারা তিয়েনআনমেন স্কয়ারে এসে জায়গা ছেড়ে দেয়ার
জন্য ছাত্রদের এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। কিন্তু ৫ মিনিট পরই এপিসি দিয়ে
হামলা শুরু করে। অ্যালান লিখেছেন, সেনাবাহিনী একাধিকবার মরদেহের ওপর এপিসি
উঠিয়ে দিয়ে তাদের মরদেহ পাই বানিয়ে ফেলে। এর বুলডোজার দিয়ে মরদেহ সংগ্রহ
করা হয়। পরে মরদেহ ছিন্নভিন্ন করে ড্রেনে নিক্ষেপ করা হয়। ১৯৮৯ সালের জুনের
শেষে চীন সরকার দাবি করে যে, ‘প্রতিবিপ্লবী দাঙ্গাবাজদের’ ওপর অভিযানে
প্রায় ২০০ বেসামরিক নিহত এবং কয়েক ডজন পুলিশ ও সেনা মারা গেছেন। ওই ঘটনার
তিন দশক পরও চীনের কমিউনিস্ট সরকার এই ইস্যুতে কোনো বিতর্ক নিষিদ্ধ করে
রেখেছে। পাঠ্যবই ও গণমাধ্যমেও এই বিষয়ের উল্লেখ নেই। ইন্টারনেটেও সেন্সর
করা হয়।
No comments