অতিরিক্ত লবণে কী সমস্যা হতে পারে

মানবদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লবণ। এই লবণ আমরা নানা খাদ্য থেকে গ্রহণ করি। আবার সরাসরিও গ্রহণ করি। তরকারি রান্না করতে লবণ ব্যবহার করা হয়। আর এই তরকারি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা লবণ গ্রহণ করি। আবার নানা সালাত বা টকজাতীয় খাবার খাওয়ার সময় লবণ দিয়ে খাই। আমরা যেভাবেই খাইনা কেন লবণ খেতে হবে পরিমিত, অতিরিক্ত নয়। অতিরিক্ত লবণ আমাদের শরীরে নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করে। তাই লবণ খাওয়ার ব্যাপারে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
দৈনিক চাহিদা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ৬ গ্রাম বা ১ চা চামচ বা তার কম লবণ গ্রহণ করতে হবে। এ সংস্থার নির্দেশনা মতে সুস্থ থাকতে হলে খাবার টেবিলে কোনো লবণ বা লবণদানি রাখা যাবে না। এমনকি রান্নায়ও অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের দৈনিক সোডিয়ামের দরকার ১০০০-৩০০ মিলি গ্রাম। বিশেষজ্ঞরা বলেন তা ২৪০০ মিলিগ্রামের বেশি নয়। সোডিয়ামের এ চাহিদা পূরণের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন প্রায় ৬ গ্রাম, ৭-১০ বছর বয়সী শিশুদের ৫ গ্রাম, ৪-৬ বছর বয়সীদের ৩ গ্রাম, ১-৩ বছর বয়সীদের ২ গ্রাম, ৬ মাস বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ১ গ্রাম লবণ খাওয়া উচিত। ছোট শিশুদের কিডনি বেশি লবণ সহ্য করতে পারে না। তাই শিশুদের আরো কম পরিমাণ লবণ খাওয়া উচিত।
উপকারিতা
পরিমিত লবণ দেহের সোডিয়ামের অভাব পূরণ করে। দেহের হাড়ও মজবুত করে। হজমের সহায়তা করে ও রক্ত পরিষ্কার করে। জিহ্বায় স্বাদ বাড়ায় , খাদ্য দ্রব্যে পচনের হাত থেকে রক্ষা করে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, লবণ রক্ত ও শরীরের তরল রসের ঘন হয়ে যাওয়া বা দানা বাঁধা রোধ করে সেইগুলোকে তরল বা দ্রবণীয় অবস্থার রাখে।
অপকারিতা
সুস্থ শরীরের জন্য লবণ অবশ্যই প্রয়োজন তা তা পরিমিত খেতে হবে। আবার চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে, শরীরের নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করে লবণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, লবণের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি পর্যাপ্ত পানি ধারণ করতে পারে। এ কারণে রক্তে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে রক্তনালীতে পানি জমে রক্তে স্বাভাবিক চাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানবদেহে উচ্চ রক্ত চাপ সৃষ্টি হয় বা হাইপ্রেসার রোগ জন্ম নেয়। এতে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ দেখা দেয়। একইভাবে উচ্চরক্ত চাপ ফুসফুস ও মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ রোগ এবং শ্বাসযন্ত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। তা ছাড়া অতিরিক্ত লবণ খেলে প্রস্রাবের সাথে ক্যালসিয়াম শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে প্রস্রাবের সাথে ক্যালসিয়াম শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে হাড়ের অস্টিও পোরোসিস রোগ দেখা দেয়। অতিরিক্ত লবণ সেবনে লিভারের কার্যকারিতার অসুবিধা দেখা দেয়। কিডনি বা মূত্র তলির নানা জটিলতা দেখা দেয়। ফলে বৃক্কের বা কিডনি ছাকন কাজে সমস্য সৃষ্টি হয়। অনেক দিন ধরে অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরের বিভিন্ন সন্ধিতে বা জোড়কৃত স্থানে জমা হয়ে বৃদ্ধ বয়সে অনেক রকম অসুখ দেখা দেয়।
যেভাবে বেশি লবণ গ্রহণ করা হয়
খাদ্যরান্না করার সময় অতিরিক্ত লবণ দিয়ে রান্না, কাঁচা, সালাত বা বর্তা চাটনি তৈরি করতে লবণ ব্যবহারে করা হয়। প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণ বেশি থাকে। যেমন বোতল জাত খাবার স্যুপ, বোতলজাত জুস, ফাস্ট ফুড, চিজ, ব্রেড, চায়নিজ খাবার, লবণাক্ত মাছ, চিপস ক্রোকাস, লবণাক্ত বিস্কুট বড়ই, তেঁতুল, আমলকি, আমড়া, জলপাই, জাম্বুরা, আনারস, কামরাঙ্গা এ জাতীয় টক ফল লবণ দিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে বেশি লবণ নিজের অজান্তেই বেশি ঢুকছে।
কম খাওয়ার উপায়
প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যে তরিতরকারি ও নানা খাবার খাই। এগুলোয়ও লবণ থাকে। সুতরাং খাবারের সময় আলাদ লবণ খাবেন না। রান্নার সময় যত কম সম্ভব লবণ দিয়ে রান্না করুন। প্যাকেটজাত খাবার প্রক্রিয়াজাত মাছ মাংস কম খান। ফাস্ট ফুড, হোটেল, ক্যান্টিনের খাবারে প্রচুর লবণ থাকে। তাই এসব খাবার পরিহার করুন।a

No comments

Powered by Blogger.