‘নতুন মাওয়ের’ পথে চীন
২০১৩
সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গেলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
বারাক ওবামার খামারবাড়িতে। এ সময় ক্যালিফোর্নিয়ায় দুই প্রেসিডেন্টের
পাশাপাশি হাঁটার একটি ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এর সঙ্গে সাদৃশ্য পাওয়া
যায় দুটি পরিচিত কার্টুন চরিত্র, পু আর তার বন্ধু টিগার নামের বাঘের
পাশাপাশি হাঁটার দৃশ্যের। পু স্থূলকায় আর টিগার ছিমছাম এবং লম্বা। এ তুলনা
নিয়ে মার্কিন ও চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা কম রসিকতা
করেননি। সর্বশেষ গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এশিয়া
সফরের অংশ হিসেবে চীনে গেলেন। এবার খোদ মার্কিন সংবাদমাধ্যমই স্বীকার করে
নিল, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ট্রাম্পের তুলনায় সি বেশি যোগ্য। ট্রাম্পের আমলে
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বনেতৃত্ব হারাচ্ছে। আর সির আমলে উত্থান ঘটছে চীনের। মাত্র
কয়েক বছরের ব্যবধান। এর মধ্যেই নিজের কাল্ট তৈরি করে ফেলেছেন চিন পিং। গেল
অক্টোবরে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কংগ্রেসে তা আরও পাকাপোক্ত
করেছেন। হয়ে উঠেছেন চীনের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এই কংগ্রেসেই চীনের
গঠনতন্ত্রে কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাওয়ের নামের পাশে দলটির বর্তমান
সাধারণ সম্পাদক চিন পিংয়ের নাম ঠাঁই পায়। চিন পিংয়ের চিন্তাধারার পাঠ শুরু
করতে চলেছে দেশটির শিক্ষাঙ্গনগুলো। ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে
ক্রমাগতভাবে ক্ষমতা সুসংহত করছেন চিন পিং।
গঠনতন্ত্রে তাঁর নাম যুক্ত করার
ফলে ২০২২ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও
‘শীর্ষ নেতা’ই থাকবেন তিনি। বিশ্বনেতা হতে গিয়ে নিজের দেশকে ভুলে যাননি চিন
পিং। অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশে ব্যাপক আকারে
দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়েছেন। উচ্চপর্যায়ের ‘বাঘ’ এবং নিম্ন পর্যায়ের
‘মাছি’র বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে। জনসমক্ষে উপস্থিতির ক্ষেত্রে
তাঁর পরিমিতিবোধ বেশ প্রশংসিত। তবে চিন পিংয়ের আমলে দেশটির ক্রমাবনতিশীল
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। প্রায়ই
মানবাধিকারকর্মীদের আটক ও হয়রানির খবর পাওয়া যায়। অনলাইন পরিসরের ওপর কড়া
নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বৈশ্বিক পরিসরে চীনের উত্থান এমন একটা সময় হচ্ছে যখন
অন্য বিশ্ব মোড়লেরা হাঁটছে উল্টো পথে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নিয়ে সামনে এগোতে চাইছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র মূলত
একঘরে হয়ে যাচ্ছে। আর যুক্তরাজ্যও বেরিয়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড়
জোট থেকে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে নতুন
নেতৃত্ব ঠিক করার পাশাপাশি দেশের জন্য পরবর্তী করণীয় বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি
করা হয়। এবারের পার্টির কংগ্রেসের উদ্বোধনীতে সি বলেন, ২০৫০ সালে মধ্যে
‘বিশ্বের নেতা’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চীন ‘নতুন যুগে’ প্রবেশ করেছে।
No comments