শিশুটি নিভে যাবে অন্যের প্রদীপ জ্বেলে
গর্ভে
আছে মেয়েশিশু। কিন্তু জন্মের পর সে বাঁচবে না। মরে যাবে পৃথিবীতে আসার
কয়েক মিনিট পরই, কিংবা ভূমিষ্ঠ হওয়ার মুহূর্তেও থেমে যেতে পারে তার প্রাণের
স্পন্দন। কারণ, গর্ভের ওই শিশুটির বিরল জিনগত সমস্যা রয়েছে। পরীক্ষা করে
চিকিৎসকেরা হবু মাকে জানিয়ে দিয়েছেন এ কথা। এরপরও গর্ভপাতে অনিচ্ছুক হেলি
মার্টিন। মরলে মরুক, এ শিশুর জন্ম দেবেন তিনি। তার হৃদ্যন্ত্রের টিস্যু
কাজে লাগাবেন অন্য কোনো শিশুর প্রাণ রক্ষায়। মার্টিনের তিন সন্তান।
গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহে স্ক্যান করার পর মার্টিন ও তাঁর স্বামী স্কট জানতে
পারেন, গর্ভের শিশুটির বাইল্যাটারাল রেনাল এজেনেসিস রয়েছে। অর্থাৎ শিশুটির
দুটি কিডনির একটিও নেই এবং গর্ভের অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণও কম। যে
কারণে শিশুটির ফুসফুসও সঠিকভাবে গঠিত হয়নি। ওই দম্পতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের
সঙ্গে কথা বলেন। গর্ভপাত ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিতে ওই দম্পতিকে এক সপ্তাহের
সময় দেওয়া হয়। পরে মার্টিন সিদ্ধান্ত নেন, তিনি গর্ভপাত ঘটাবেন না। মার্টিন
বলেন, ‘আমি তাকে এভাবে যেতে দিতে পারি না।’ ওই দম্পতি জানান, তাঁরা এরই
মধ্যে শিশুটির নামও রেখেছেন। শিশুটির নাম আভা-জয়।
অঙ্গ প্রতিস্থাপন
প্রয়োজন—এমন শিশুকে সহায়তা করতে তাঁরা মেয়েশিশুটিকে জন্ম দিতে চান। তাঁদের
শিশুর হৃদ্যন্ত্রের ভালভ গুরুতর অসুস্থ অন্য শিশু ব্যবহার করতে পারবে।
মার্টিন বলেন, ‘কিছুই না থাকার চেয়ে কিছু একটা থাকা ভালো। আমি জানি, আমার
মেয়েটি উপযুক্ত কোনো অঙ্গ দিতে পারবে না। কিন্তু টিস্যু তো মূল্যবান।’
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপনবিষয়ক নার্স
অ্যানজি স্কেলস বলেন, প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫টি পরিবার এ রকম পরিস্থিতিতে
অঙ্গদান করতে চায়। যদিও প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া জটিল হওয়ার কারণে এ ধরনের
ক্ষেত্রে প্রকৃত অঙ্গদানের ঘটনা বিরল। অ্যানজি স্কেলস জানান, যুক্তরাজ্যে
দৈনিক অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমাণ শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু ঘটে।
মার্টিন বলেন, গর্ভে থাকা শিশু মারাত্মক রোগে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হওয়ার
পরও যেসব পরিবার গর্ভাবস্থার মেয়াদ পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেবে বা শিশুকে
জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে, তাদের সহায়তা দিতে এবং আভা-জয়ের স্মৃতি
রক্ষার্থে তাঁরা একটি দাতব্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। মার্টিন বলেন, ‘এটা
কোনো সহজ সিদ্ধান্ত নয়। তবে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। আমি যে মর্মবেদনায় রয়েছি, এ
সিদ্ধান্ত আমাকে তা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করছে। মেয়েটির একটি অংশ বেঁচে
থাকবে। সে পুরোপুরি চলে যাবে না। অন্য কারও শরীরে সে বেঁচে থাকবে।’
No comments