কেন এই নৈতিক অবক্ষয় by শামীমুল হক
বদলে
গেছে সমাজ। বদলে গেছে রীতিনীতি। পরিবার ভেঙে হচ্ছে টুকরো টুকরো। ভালোবাসার
বন্ধনও ছিঁড়ে খান খান। যৌথ পরিবার এখন সবার কাছে ঝামেলা। ছোট্ট সংসার
পাততে উদগ্রীব সবাই। শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্র একই অবস্থা। আদব-কায়দা উবে
গেছে অনেক আগেই। সমাজ বদলের সঙ্গে ভাষারও পরিবর্তন হয়েছে অনেক। আব্বা থেকে
হয়েছে ড্যাড। আম্মা থেকে মম। আর মামা, কাকা, ফুফা, খালু সবাই এখন আঙ্কেল।
দরদি ডাক হারিয়ে গেছে সমাজ থেকে। কেউ কেউ এসবকে আধুনিকতার ছোঁয়া হিসাবে
আখ্যা দেন। কিন্তু কখনো চিন্তা করেন না এ আধুনিকতা সমাজকে কোথায় নিয়ে
যাচ্ছে? শিশু জন্মের পরই দেখছে পিতা-মাতা আর নিজেকে। যে বয়সে আলাদা বিছানায়
থাকা দরকার সে বয়সেও পিতা-মাতার সঙ্গে ঘুমাচ্ছে একই বিছানায়। দাদা-দাদি,
কাকা, ফুফুকে কালেভদ্রে দেখলেও তাদের আপন করে নিতে পারে না। আর এই শিশুর
ছোট হাতে খেলনা হিসাবে তুলে দিচ্ছে অস্ত্র। খেলনা পিস্তল দিয়ে গুলি করা
শেখে শিশু বয়সেই। কখনো পিতা-মাতার সঙ্গে মরণ মরণ খেলা করে। শিশু গুলি করে
পিতা কিংবা মাতা মারা যাওয়ার ভান করে। এ বয়সেই তুলে দেয়া হচ্ছে খেলনা রোবট।
পাশাপাশি টিভি চ্যানেলের কার্টুন দেখে সময় কাটে তার। আর এনড্রয়েড মোবাইল
ফোনে নানা কিছু দেখার সুযোগতো রয়েছেই। শিশু বয়সেই মোবাইল ফোনের আদ্যোপান্ত
তার মুখস্থ। আধুনিকতার পাল্লায় পড়ে প্রেম বলে যে একটা কিছু আছে তাও শিখে
নেয় শিশু কালেই। স্কুলে যাওয়ার বয়স হলে শুরু হয় আরেক প্রতিযোগিতা। আমার
সন্তান প্রথম হতে হবেই এই মনমানসিকতা নিয়ে শুরু হয় মা-বাবার পথচলা।
পড়ালেখায় ডিস্টার্ব হবে তাই বাসায় গেস্ট এলাও বন্ধ। গ্রাম থেকে দাদা-দাদি
এলেও যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায় ততই মঙ্গল মনোভাব দেখায়। আর এসব দেখে
দাদা-দাদিও পুত্রের বাসা ছাড়তে পারলে হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচেন। মনে কষ্ট নিয়ে
ফিরে যান। একে একে সন্তান উপরের ক্লাসে উঠতে থাকে। কিন্তু বন্ধুর তালিকায়
কারা আছে সেদিকে খেয়াল নেই। বরং গর্ববোধ করে। আমার ছেলে কিংবা মেয়ের এত
বন্ধু। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেতো আর কথাই নেই। সেই সন্তানই চালায়
পিতা-মাতাকে। রাত জেগে বাসায় ফিরলে জিজ্ঞেসও করার প্রয়োজনবোধ করে না তারা।
রাতের পার্টি হয়ে পড়ে নিত্যসঙ্গী। সন্তান যা বলে সেটাই ঠিক। এভাবে একেক
সন্তানকে বেয়ারায় পরিণত করছে তার পিতা-মাতাই। পুত্র কোনো অপরাধ করলেও তার
পক্ষ নিচ্ছে। এক সময় পুত্রের কাছে হয়ে পড়ে জিম্মি। হাতের মোবাইল ফোনে রাত
জেগে কি করছে সেটা দেখার সাহস হারিয়ে ফেলে। ব্যবসায়ী পুত্র ইভানের কথাই ধরা
যাক। একই ফ্ল্যাটের এক রুমে মা-বাবা ঘুমিয়ে আছে। অথচ পাশের রুমে সন্তান
বাইরের এক মেয়েকে নিয়ে ধর্ষণ করছে। কিছুই বলতে পারেন না তারা। অবাক করা
কাণ্ড। এমনটাও কি বিশ্বাস করা যায়? দুই তরুণী ধর্ষণের পর আপন জুয়েলার্সের
মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম পুত্র সাফাত আহমেদের পক্ষ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে
বলেছিলেন, এ বয়সে এমন একটু আধটু হয়ই। তাতে দোষের কি? যে পিতা ধর্ষক পুত্র
পক্ষ নিয়ে কথা বলতে পারে বলা যায় সে পিতাই হয়তো পুত্রকে ধর্ষক বানিয়েছে। আর
রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, মেয়েদের দেখে নানা অঙ্গভঙ্গি হরহামেশাই দেখা যায়।
প্রকাশ্যে মানুষের সামনে এসব ঘটনায় ওই সব বেয়ারা পুত্ররা লজ্জাবোধ করে না।
আসলে ওদের লাজলজ্জা হারিয়ে ফেলেছে শিশু বয়সেই। পিতা-মাতাই তাকে একটু একটু
করে বেয়ারা বানিয়েছে। এভাবেই ওইসব সন্তান নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে। আর নৈতিক
অবক্ষয়ে সমাজে ঘটছে একের পর এক ঘটনা। যা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দেয়। তারপরও
সমাজে এমন অনেক পরিবার রয়েছেন যারা সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করছেন। ওই
সব সন্তান তাদের কর্মকাণ্ডে পিতা-মাতার মুখ উজ্জ্বল করছেন। দেশের মুখ
উজ্জ্বল করছেন।
No comments