‘গাড়ি ও বাসায় ধর্ষণের ভিডিও করে ইভান’ by মহিউদ্দিন অদুল
বনানীর
নিজ বাসায় শুধু নয়। ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণ করেছে গাড়িতেও। সেই ধর্ষণের
ভিডিওচিত্র ধারণ করে ইভান। আর সে ভিডিও ক্লিপস্ দিয়েই ওই নারীকে
ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল বলে দাবি ভিকটিমের। গতকাল বারিধারার ভাড়া বাসায়
মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপে এসব তথ্য দেন ধর্ষণের শিকার ওই অভিনেত্রী।
এদিকে গত শনিবার বনানী থানায় দু’জনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তারপর ওইদিন সন্ধ্যায় ভিকটিমকে তার পিতা ও চাচার হাতে তুলে দেয়া হয়। এরপর তিনি বারিধারার সেই ভাড়া বাসায় ওঠেন।
ওই তরুণী বলেন, ইভানের দুই নারী বন্ধুর মাধ্যমে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। এর মধ্যে একজন আমার দুর সম্পর্কের কাজিন। সে আজিমপুরে থাকে। সেও একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কাজ করে। এক বছর আগে একদিন কাজিনের মোবাইলে ইভানের ফোন আসে। আমি তখন সঙ্গে ছিলাম। কার ফোন জানতে চাইলে বলে, ইভান নামে তার এক বন্ধুর ফোন। তখন সে বলে আমাকেও তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। এরপর একদিন ওরা গুলশানের নান্দুস রেস্তোরাঁয় আমার সঙ্গে ইভানের পরিচয় করিয়ে দেয়। তখন আমিসহ তিন বান্ধবী সেখানে ছিলাম। তারপর এক বছর ধরে ফেসবুকে, ফোনে তার সঙ্গে আমার কথা হতো। দেখা হতো। ঘুরতাম-ফিরতাম। এখানে ওখানে যেতাম। তবে তার স্ত্রীর বিষয়ে কিছুই জানতাম না। জানতাম না তার দু’সন্তানের বিষয়েও। অনেক সময় ইভানের মোবাইলে স্ত্রী টুম্পার ফোন কল আসতো। তখন টুম্পাকে তার বড় বোন পরিচয় দিতো। আমরা অনেক সময় তার গাড়িতে করে তিনশ’ফুট, উত্তরা ও নিকুঞ্জের দিকে ঘুরতে যেতাম। বনানীতে তাদের বাসার পাশের পার্কেও ঘুরাঘুরি করেছি। আমাকে তার বন্ধুদের কাছে সে তাদের ভাবী বলে পরিচয় করিয়ে দিতো। চার-পাঁচজনের সঙ্গে এভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আর গত জানুয়ারির মাঝামাঝিতে আমাদের বন্ধুত্ব প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়।
ইতিপূর্বে আর কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত মাসের শেষের দিকে আমাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। একদিন সে আমার এই বাসায় আসে। ওইদিন তার এক বন্ধুও সঙ্গে আসে। সে নেশা জাতীয় দ্রব্য নিয়ে আসে। আমাকে তা খাইয়ে দেয়। আমি রাত ১টা থেকে ভোর পর্যন্ত সেন্সলেস ছিলাম। তখনও জানতাম না আমার সঙ্গে খারাপ কিছু একটা করেছে। সকালে তা বুঝতে পারি। ওই ধর্ষণের ভিডিও চিত্র সে ধারণ করে। তাতে তার আর আমার ক্লোজ মুভমেন্টগুলো আছে। তারপর থেকে আমি তার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ বন্ধ করি। এড়িয়ে চলি।
তারপর সে আমার বাসার কাছে এসে চিল্লাচিল্লি করতো। আমাদের ওই ভিডিও ক্লিপস্ সে আমার মোবাইলেও পাঠায়। প্রকাশ করে দেয়ার হুমকি দেয়। তাতে আমি ভয়ে ভয়ে থাকতাম। ওই ভিডিও‘র কথা বলে সে আমাকে জিম্মি করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে পরেও আমাকে তার সঙ্গে নিয়ে গেছে। তার কাছে ছুরি ও রিভলবার আছে। একদিন ছুরি নিয়ে এসে আত্মহত্যা করার হুমকি দেয়। পরে একদিন বাসার পাশে গাড়ি রেখে এসব করলে বাসার দারোয়ান তাকে নিষেধ করে। তখন আমি আমার আত্মীয়ের গাড়ি বলে পরিচয় দিই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তার গাড়িতে চড়ে ঘুরতে বের হই। সে আমাকে নিকুঞ্জের দিকে নিয়ে যায়। ওই দিন ইফতারের পর সে গাড়িতেই আমাকে জোর করে ধর্ষণ করে। তখন তার কাছে কেউ না থাকলেও হয়তো গোপন ক্যামেরা দিয়ে সে ভিডিও করে।
বনানীর ন্যাম ভিলেজে ইভানের বাসার এই ঘটনার আগে এক সপ্তাহ ধরে আমি শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। দু’টি বেসরকারি টেলিভিশনে কাজ করছি। এরই মধ্যে সে ফোন দিয়ে আমাকে বলে, যদি তুমি মুখ না খোল, কথা না বল, আমার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখ, তাহলে ধরে রেখ ভিডিওগুলো সামাজিক মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যাবে। এরপর ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় সে আমার বাসায় আসে। আমাকে জোর করে গাড়িতে ওঠায়। হাতজোড় করে অনুনয় বিনয় করে। পা ধরে মাপ চায়। কান্নাকাটি করে। আমার কথামতো চলার অঙ্গীকার করে। তারপর বলে আগামী কাল তার জন্মদিন। তা বাসায় পালন করা হবে। অবশ্যই যেতে হবে।
এরপর ঘটনার দিন সন্ধ্যায়ও আমাকে ফোন করে একই অনুরোধ করতে থাকে। রাত ৮টার দিকে আবার ফোন দেয়। তখন মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। তখন বলি আমি যেতে পারবো না। বারিধারার গেট তো রাত ১২ টায় বন্ধ হয়ে যায়, গেলে ফিরবো কী করে। আর কাল আমার শুটিং আছে বলে জানাই। তখন তার মা বলে, রাতে এখানে তাদের সঙ্গে থাকতে। সবাই মিলে মজা করবে। তিনি আরও বলেন, এখান থেকে কাল শুটিংয়ে যেয়ো। ইভান তোমাকে দিয়ে আসবে।
এরপর আমি বাসা থেকে বের হই। একটা রিকশা নিয়ে বারিধারা ডিওএইচএস পার হয়ে নদ্দা পর্যন্ত যাই। অপর একটি রিকশায় চড়ে তাদের বাসার উদ্দেশে রওনা দিই। রাত ৯টার পর তাদের বাসার কাছে পৌঁছি। তখন ইভান ফোন করে বলে যে, একটু পরে এসো। এখনও প্রস্তুত হতে পারিনি। রিকশা নিয়ে ঘুরাঘুরি করে সময় কাটাও। এরপর ২ ঘণ্টা মতো রিকশায় এ রাস্তায় সে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করেছি। ৪৮০ টাকা রিকশা ভাড়া পরিশোধ করেছি। রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আমাকে সে বাসায় ঢুকায়। আমাকে বাসায় ডিনার করতে বলা হয়েছিল। সে জন্য খেয়ে যায়নি। তাই প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত ছিলাম। আমি ঢুকেই খেতে চাই। তখন ইভান আমাকে ডাল, মুরগি ও ভাত খেতে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করি আঙ্কেল-আন্টি কোথায়? আমি তাদের রুমে গিয়ে বসি। তখন ইভান বলে যে, না- তাদেরকে এ রুমে ডেকে আনবো।
কিন্তু তারা আর আসেননি। ছয়-সাত মিনিট পর তার দু’বন্ধুকে ডেকে নেয়। তারা একটা প্যাকেট তাকে দিয়ে যায়। তারপর ইভান বলে তোরা নিচে অপেক্ষা কর। আমি ফোন করলে আসবি। তারা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে জোর করে ধরে বাথরুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন বলে, বাবা আসছে। তোমার আসার বিষয়টি বাবা জানে না। বাবা জানলে রাগ করবে। তুমি কিছুক্ষণ এখানে থাক। তখন আমি জোরে জোরে বাথরুমের দরজা চাপড়াতে থাকি। চিল্লাচিল্লি করি। সে ততই টেলিভিশনের শব্দের মাত্রা বাড়াতে থাকে। যাতে আমার আওয়াজ কেউ শুনতে না পায়। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দিলে আমি বের হয়ে তার রুমে আসি। তার বাবা চলে গেছে বলে জানায়। এরপর আমাকে নেশা খাইয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে।
একপর্যায়ে সে ও তার দুই ফ্রেন্ডসহ তিনজনে মিলে আমাকে টানা-হেঁচড়া করে রুম থেকে বের করে দেয়। বাসার দরজার বাইরে আমি এক ঘণ্টা ধরে কান্নাকাটি করেছি। একপর্যায়ে দারোয়ানসহ আমাকে বাড়ির গেটের বাইরে বের করে দেয়। শেষের দিকে ভোরে তার আরও এক বন্ধু সেখানে আসে। সে আবার দো’টানায়। একবার আমার পক্ষে কথা বলে তো, আবার ইভানের পক্ষে কথা বলে। একপর্যায়ে সে আমাকে বলে আপনি কী বিপদে পড়েছেন। হ্যাঁ বলে জানালে সে হেল্প করতে এগিয়ে আসে। থানা চিনিয়ে দেয়। আমি ব্যাগ তার হাতে দিয়ে থানায় ঢুকি। পরে ইভান এসে তাকে মারধর করে আমার ব্যাগটি তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে।
নির্যাতিতা তরুণী বলেন, নেশা করার জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা বলে সে আমার কাছে টাকার জন্য বার বার চাপ দিত। গত মাসের ২৩ বা ২৪ তারিখ আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় ৫ হাজার, ১০ হাজার, ১৫ হাজার টাকা করে বিভিন্ন অংকে দু’লাখ টাকা মতো নিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় ঘোরাঘুরির পর হোটেলের খাওয়ার বিলও আমি দিতাম। তাকে অনেক কিছু কিনে দিয়েছি। গত ঈদের দিনও আমি তার সঙ্গে ঘুরেছি। সেদিন আমি তাকে সালাম করলেও উল্টো সেই আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা সালামি নিয়েছে।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি থানায় গিয়ে ঘটনা খুলে বললেও মামলা করতে চাইনি। সমাধান চেয়ে ছিলাম। আমার ভিডিওগুলো ফেরত নিয়ে ডিলিট করতে চেয়েছি। আমার মোবাইল, পোশাক, ব্যাগ ও টাকাগুলো ফেরত পেতে চেয়েছি। আর চেয়েছি সে যাতে আমার কোনো ক্ষতি না করতে পারে। তার ছায়াও যাতে আর আমাকে মাড়াতে না হয় সেজন্য একটি লিখিত মুচলেকা নিতে। পুলিশের মাধ্যমেও তার বাবাকে সে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু ইভান পুলিশের কাছে ধর্ষণের কথা স্বীকার করলেও তার কাছে ভিডিও ক্লিপস থাকার কথা অস্বীকার করে যাচ্ছে। আর তার বাবা বলেছেন যে, মা আমি তোমার ক্ষতিপূরণ দিতে পারবো। কিন্তু কারাগার থেকে বের হয়ে সে যে তোমার কাছে আর যাবে না- তার গ্যারান্টি আমি দিতে পারবো না।
ইভানের শাস্তি চেয়ে নির্যাতিতা বলেন, বনানীতে কিছু দিন আগে সাফাত ও নাঈমের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ইভান কীভাবে একই কাণ্ড ঘটাতে পারলো। আমি তার অপরাধের বিচার চাই। যাতে আর কোনো নারী তার শিকারে পরিণত না হয়।
এদিকে গত শনিবার বনানী থানায় দু’জনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তারপর ওইদিন সন্ধ্যায় ভিকটিমকে তার পিতা ও চাচার হাতে তুলে দেয়া হয়। এরপর তিনি বারিধারার সেই ভাড়া বাসায় ওঠেন।
ওই তরুণী বলেন, ইভানের দুই নারী বন্ধুর মাধ্যমে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। এর মধ্যে একজন আমার দুর সম্পর্কের কাজিন। সে আজিমপুরে থাকে। সেও একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কাজ করে। এক বছর আগে একদিন কাজিনের মোবাইলে ইভানের ফোন আসে। আমি তখন সঙ্গে ছিলাম। কার ফোন জানতে চাইলে বলে, ইভান নামে তার এক বন্ধুর ফোন। তখন সে বলে আমাকেও তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। এরপর একদিন ওরা গুলশানের নান্দুস রেস্তোরাঁয় আমার সঙ্গে ইভানের পরিচয় করিয়ে দেয়। তখন আমিসহ তিন বান্ধবী সেখানে ছিলাম। তারপর এক বছর ধরে ফেসবুকে, ফোনে তার সঙ্গে আমার কথা হতো। দেখা হতো। ঘুরতাম-ফিরতাম। এখানে ওখানে যেতাম। তবে তার স্ত্রীর বিষয়ে কিছুই জানতাম না। জানতাম না তার দু’সন্তানের বিষয়েও। অনেক সময় ইভানের মোবাইলে স্ত্রী টুম্পার ফোন কল আসতো। তখন টুম্পাকে তার বড় বোন পরিচয় দিতো। আমরা অনেক সময় তার গাড়িতে করে তিনশ’ফুট, উত্তরা ও নিকুঞ্জের দিকে ঘুরতে যেতাম। বনানীতে তাদের বাসার পাশের পার্কেও ঘুরাঘুরি করেছি। আমাকে তার বন্ধুদের কাছে সে তাদের ভাবী বলে পরিচয় করিয়ে দিতো। চার-পাঁচজনের সঙ্গে এভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আর গত জানুয়ারির মাঝামাঝিতে আমাদের বন্ধুত্ব প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়।
ইতিপূর্বে আর কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত মাসের শেষের দিকে আমাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। একদিন সে আমার এই বাসায় আসে। ওইদিন তার এক বন্ধুও সঙ্গে আসে। সে নেশা জাতীয় দ্রব্য নিয়ে আসে। আমাকে তা খাইয়ে দেয়। আমি রাত ১টা থেকে ভোর পর্যন্ত সেন্সলেস ছিলাম। তখনও জানতাম না আমার সঙ্গে খারাপ কিছু একটা করেছে। সকালে তা বুঝতে পারি। ওই ধর্ষণের ভিডিও চিত্র সে ধারণ করে। তাতে তার আর আমার ক্লোজ মুভমেন্টগুলো আছে। তারপর থেকে আমি তার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ বন্ধ করি। এড়িয়ে চলি।
তারপর সে আমার বাসার কাছে এসে চিল্লাচিল্লি করতো। আমাদের ওই ভিডিও ক্লিপস্ সে আমার মোবাইলেও পাঠায়। প্রকাশ করে দেয়ার হুমকি দেয়। তাতে আমি ভয়ে ভয়ে থাকতাম। ওই ভিডিও‘র কথা বলে সে আমাকে জিম্মি করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে পরেও আমাকে তার সঙ্গে নিয়ে গেছে। তার কাছে ছুরি ও রিভলবার আছে। একদিন ছুরি নিয়ে এসে আত্মহত্যা করার হুমকি দেয়। পরে একদিন বাসার পাশে গাড়ি রেখে এসব করলে বাসার দারোয়ান তাকে নিষেধ করে। তখন আমি আমার আত্মীয়ের গাড়ি বলে পরিচয় দিই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তার গাড়িতে চড়ে ঘুরতে বের হই। সে আমাকে নিকুঞ্জের দিকে নিয়ে যায়। ওই দিন ইফতারের পর সে গাড়িতেই আমাকে জোর করে ধর্ষণ করে। তখন তার কাছে কেউ না থাকলেও হয়তো গোপন ক্যামেরা দিয়ে সে ভিডিও করে।
বনানীর ন্যাম ভিলেজে ইভানের বাসার এই ঘটনার আগে এক সপ্তাহ ধরে আমি শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। দু’টি বেসরকারি টেলিভিশনে কাজ করছি। এরই মধ্যে সে ফোন দিয়ে আমাকে বলে, যদি তুমি মুখ না খোল, কথা না বল, আমার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখ, তাহলে ধরে রেখ ভিডিওগুলো সামাজিক মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যাবে। এরপর ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় সে আমার বাসায় আসে। আমাকে জোর করে গাড়িতে ওঠায়। হাতজোড় করে অনুনয় বিনয় করে। পা ধরে মাপ চায়। কান্নাকাটি করে। আমার কথামতো চলার অঙ্গীকার করে। তারপর বলে আগামী কাল তার জন্মদিন। তা বাসায় পালন করা হবে। অবশ্যই যেতে হবে।
এরপর ঘটনার দিন সন্ধ্যায়ও আমাকে ফোন করে একই অনুরোধ করতে থাকে। রাত ৮টার দিকে আবার ফোন দেয়। তখন মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। তখন বলি আমি যেতে পারবো না। বারিধারার গেট তো রাত ১২ টায় বন্ধ হয়ে যায়, গেলে ফিরবো কী করে। আর কাল আমার শুটিং আছে বলে জানাই। তখন তার মা বলে, রাতে এখানে তাদের সঙ্গে থাকতে। সবাই মিলে মজা করবে। তিনি আরও বলেন, এখান থেকে কাল শুটিংয়ে যেয়ো। ইভান তোমাকে দিয়ে আসবে।
এরপর আমি বাসা থেকে বের হই। একটা রিকশা নিয়ে বারিধারা ডিওএইচএস পার হয়ে নদ্দা পর্যন্ত যাই। অপর একটি রিকশায় চড়ে তাদের বাসার উদ্দেশে রওনা দিই। রাত ৯টার পর তাদের বাসার কাছে পৌঁছি। তখন ইভান ফোন করে বলে যে, একটু পরে এসো। এখনও প্রস্তুত হতে পারিনি। রিকশা নিয়ে ঘুরাঘুরি করে সময় কাটাও। এরপর ২ ঘণ্টা মতো রিকশায় এ রাস্তায় সে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করেছি। ৪৮০ টাকা রিকশা ভাড়া পরিশোধ করেছি। রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আমাকে সে বাসায় ঢুকায়। আমাকে বাসায় ডিনার করতে বলা হয়েছিল। সে জন্য খেয়ে যায়নি। তাই প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত ছিলাম। আমি ঢুকেই খেতে চাই। তখন ইভান আমাকে ডাল, মুরগি ও ভাত খেতে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করি আঙ্কেল-আন্টি কোথায়? আমি তাদের রুমে গিয়ে বসি। তখন ইভান বলে যে, না- তাদেরকে এ রুমে ডেকে আনবো।
কিন্তু তারা আর আসেননি। ছয়-সাত মিনিট পর তার দু’বন্ধুকে ডেকে নেয়। তারা একটা প্যাকেট তাকে দিয়ে যায়। তারপর ইভান বলে তোরা নিচে অপেক্ষা কর। আমি ফোন করলে আসবি। তারা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে জোর করে ধরে বাথরুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন বলে, বাবা আসছে। তোমার আসার বিষয়টি বাবা জানে না। বাবা জানলে রাগ করবে। তুমি কিছুক্ষণ এখানে থাক। তখন আমি জোরে জোরে বাথরুমের দরজা চাপড়াতে থাকি। চিল্লাচিল্লি করি। সে ততই টেলিভিশনের শব্দের মাত্রা বাড়াতে থাকে। যাতে আমার আওয়াজ কেউ শুনতে না পায়। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দিলে আমি বের হয়ে তার রুমে আসি। তার বাবা চলে গেছে বলে জানায়। এরপর আমাকে নেশা খাইয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে।
একপর্যায়ে সে ও তার দুই ফ্রেন্ডসহ তিনজনে মিলে আমাকে টানা-হেঁচড়া করে রুম থেকে বের করে দেয়। বাসার দরজার বাইরে আমি এক ঘণ্টা ধরে কান্নাকাটি করেছি। একপর্যায়ে দারোয়ানসহ আমাকে বাড়ির গেটের বাইরে বের করে দেয়। শেষের দিকে ভোরে তার আরও এক বন্ধু সেখানে আসে। সে আবার দো’টানায়। একবার আমার পক্ষে কথা বলে তো, আবার ইভানের পক্ষে কথা বলে। একপর্যায়ে সে আমাকে বলে আপনি কী বিপদে পড়েছেন। হ্যাঁ বলে জানালে সে হেল্প করতে এগিয়ে আসে। থানা চিনিয়ে দেয়। আমি ব্যাগ তার হাতে দিয়ে থানায় ঢুকি। পরে ইভান এসে তাকে মারধর করে আমার ব্যাগটি তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে।
নির্যাতিতা তরুণী বলেন, নেশা করার জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা বলে সে আমার কাছে টাকার জন্য বার বার চাপ দিত। গত মাসের ২৩ বা ২৪ তারিখ আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় ৫ হাজার, ১০ হাজার, ১৫ হাজার টাকা করে বিভিন্ন অংকে দু’লাখ টাকা মতো নিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় ঘোরাঘুরির পর হোটেলের খাওয়ার বিলও আমি দিতাম। তাকে অনেক কিছু কিনে দিয়েছি। গত ঈদের দিনও আমি তার সঙ্গে ঘুরেছি। সেদিন আমি তাকে সালাম করলেও উল্টো সেই আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা সালামি নিয়েছে।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি থানায় গিয়ে ঘটনা খুলে বললেও মামলা করতে চাইনি। সমাধান চেয়ে ছিলাম। আমার ভিডিওগুলো ফেরত নিয়ে ডিলিট করতে চেয়েছি। আমার মোবাইল, পোশাক, ব্যাগ ও টাকাগুলো ফেরত পেতে চেয়েছি। আর চেয়েছি সে যাতে আমার কোনো ক্ষতি না করতে পারে। তার ছায়াও যাতে আর আমাকে মাড়াতে না হয় সেজন্য একটি লিখিত মুচলেকা নিতে। পুলিশের মাধ্যমেও তার বাবাকে সে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু ইভান পুলিশের কাছে ধর্ষণের কথা স্বীকার করলেও তার কাছে ভিডিও ক্লিপস থাকার কথা অস্বীকার করে যাচ্ছে। আর তার বাবা বলেছেন যে, মা আমি তোমার ক্ষতিপূরণ দিতে পারবো। কিন্তু কারাগার থেকে বের হয়ে সে যে তোমার কাছে আর যাবে না- তার গ্যারান্টি আমি দিতে পারবো না।
ইভানের শাস্তি চেয়ে নির্যাতিতা বলেন, বনানীতে কিছু দিন আগে সাফাত ও নাঈমের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ইভান কীভাবে একই কাণ্ড ঘটাতে পারলো। আমি তার অপরাধের বিচার চাই। যাতে আর কোনো নারী তার শিকারে পরিণত না হয়।
No comments