‘মশার নগর’ ইফাকারা
আফ্রিকায় প্রতি মিনিটে ম্যালেরিয়ায় ভুগেই মারা যায় অন্তত দু’জন শিশু। তাই মশার কামড় থেকে মানুষকে বাঁচাতে দিনরাত কাজ করছে তাঞ্জানিয়ার ছোট্ট শহর ইফাকারা। ইফাকার শব্দের অর্থ ‘যেখানে আমি মৃত্যুবরণ করি’। নামেই বোঝা যায়, বসবাসের জন্য শহরটি আসলে কেমন। মানুষ যেন সেখানে জীবন উপভোগের কথা কিংবা সুখে-স্বাচ্ছ্যন্দে কিছুদিন বাঁচার কথা ভাবতেই পারে না, জন্মের পর থেকে আসল কাজই যেন মশার কামড়ে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করা। এ কারণেই শহরটিকে বলা হচ্ছে ‘সিটি অব মসকিটো’ অর্থাৎ ‘মশার নগর’। শহরটিতে মশার কবল থেকে মানুষকে বাঁচাতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ইফাকারা হেল্থ ইন্সটিটিউট (আইএইচআই)। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মশা এবং মশাবাহিত রোগে মৃত্যুহার অনেক কমেছে। আইএইচআই-এর গবেষকের ভাষায়, ‘আমি যখন এখানে কাজ শুরু করি, তখন আলোর ফাঁদ পেতে যে মশাগুলো ধরা হতো, সেগুলো গুনে শেষ করা যেত না। প্রতিদিন ওজন করা হতো। কোনো কোনো রাতে মশা সংগ্রহের ব্যাগ ভরে মশা উপচে পড়ত।’ ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইফাকারায় মশানিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি মশা এবং ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণাও চলছে জোরশোরে।
এছাড়া ইফাকারার অধিকাংশ মানুষই খুব গরিব। তাদের ঘরগুলোও খুব ছোট ছোট। বেশিরভাগ মানুষই বাস করেন এমন ঘরে, যেখানে একটি বা দুটি বিছানা করার পর আর জায়গা থাকে না। ফলে ঘুমানো ছাড়া বাকি সব কাজই করতে হয় ঘরের বাইরে। আইএইচআই তাই মশা ধরতেও মানুষকে কাজে লাগায়। অল্প পারিশ্রমিকে অনেকেই ঘরের বাইরে বিশেষ ধরনের মশারির নিচে বসে থাকেন। মশারির সঙ্গে এক ধরনের মশা ধরার ফাঁদের সংযোগ থাকে। ফলে মানুষের রক্তের লোভে মশারিতে বসতে গিয়েই ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। টাকার বিনিময়ে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘরের বাইরে মশারির নিচে বসিয়ে রেখেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হলো বিষ মাখানো মশারি। এক সময় মশারি যে মরণফাঁদ তা-ও টের পেয়ে গেল মশা। তাই মানুষ যখন ঘুমাতে যায়, তার ঠিক আগে এবং ভোরে যখন ঘুম থেকে ওঠে, তখন রক্তক্ষুধা মেটানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ল তারা। অবস্থা সামাল দিতে তাই এবার আনা হলো ‘মসকিটো ল্যান্ডিং বক্স’। কাঠের তৈরি কালো রঙের এ এমন এক বাক্স, যা আসলে মশা মারার নতুন ধরনের ফাঁদ। বাক্সে যাতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা এসে বসে, সে ব্যবস্থা করতে অভিনব উপায়ে বাতাসে ছড়ানো হল মানুষের ঘামের গন্ধ। সেই গন্ধ পেলেই মশারা ছুটে আসে। বাক্সে এসে বসামাত্রই তাদের জীবনাবসান ঘটে।
No comments