ঈদ রাজনীতিতে মন্ত্রী-এমপিরা
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ঈদরাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। তাই মন্ত্রী-এমপিদের আর ঢাকায় বসে থাকার সুযোগ নেই। ছুটছেন গ্রামেগঞ্জে আর নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায়। পাড়ায়-মহল্লায় চলছে ইফতার মাহফিল, আলোচনা সভা, কর্মিসভা ও শুভেচ্ছা বিনিময়। এসব অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে গাঁয়ের মেঠোপথ আর অলিগলিতে চলছে গণসংযোগ। এর মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছেন মন্ত্রী-এমপিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসেছেন সতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিরা। বিশেষ করে ‘এবার কঠিন নির্বাচন হবে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো কারো দায়িত্ব আমি নিতে পারব না’Ñ সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সতর্কতামূলক এমন বক্তব্যের পর এলাকার জনগণ ও তৃণমূল নেতাদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। একটু সময় বের করতে পারলেই গ্রামেগঞ্জে ছুটছেন তারা। রুটিন করে সময় দিচ্ছেন নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায়। আবার কোনো কারণে এলাকায় যেতে না পারলে জাতীয় সংসদে নিজ কার্যালয়ে এলাকার মানুষকে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন অনেকেই। এলাকার মানুষের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন জনবিচ্ছিন্ন থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপি জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। তাদের কর্মকাণ্ডে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। মন্ত্রী-এমপিদের পারিবারিক বলয় এবং তাদের পাশে থাকা সুবিধাভোগীদের অরাজনৈতিক আচরণে ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক নেতাকর্মী রাজনীতিবিমুখ হয়েছেন। অভিমান করে নিজেকে রাজনীতি থেকে দূরেও সরিয়ে নিয়েছেন অনেকে। সামনে নির্বাচন। এখন অভিমানী নেতাকর্মীদের কাছে পাওয়া বড়ই প্রয়োজন মন্ত্রী- এমপিদের। সেজন্য দূরত্ব ঘোচাতে এই রমজান এবং ঈদকেই বড় উপলক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা। রমজানে নিজ নিজ এলাকায় নানা সংগঠনের মাধ্যমে ইফতার মাহফিল, আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করছেন মন্ত্রী- এমপি ও তাদের অনুসারীরা। এতে ুব্ধ নেতাকর্মীদের বিশেষভাবে দাওয়াত করা হয়। সেখানে মন্ত্রী-এমপিরা বিুব্ধ ও অভিমানী নেতাকর্মীদের গায়ে হাত বুলাচ্ছেন। অতীতের ভুলের আর পুনরাবৃত্তি হবে নাÑ এমন আশ্বাস দিয়ে তৃণমূলপর্যায়ে দলকে ফের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন তারা। এ সময় কেউ কেউ আবার পরিবারকে নিয়ে ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করার জন্য অভিমানী নেতাকর্মীদের হাতে ঈদ সালামি এবং শাড়ি, পাঞ্জাবিসহ নানা উপহার-উপঢৌকন তুলে দিচ্ছেন। একইসাথে সামনের নির্বাচনের জন্য নতুন করে তৈরি হওয়ার আহবান জানাচ্ছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সংসদের বৈঠকের পরই প্রায় দুই শতাধিক এমপি-মন্ত্রী নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন।
শুক্র ও শনিবার এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রোববার ঢাকায় ফিরবেন তারা। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় রাজধানীতে জাতীয় কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হচ্ছে না এমপি-মন্ত্রীদের। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ এলাকায় সময় দিচ্ছেন তারা। রোববার বা সোমবার অনেকে ঢাকায় ফিরলেও আবার ঈদের আগেই চলে যাবেন নিজ নিজ এলাকায়। সেখানে নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ করবেন তারা। আর ঈদকে কেন্দ্র করে গণসংযোগসহ নানা ধরনের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড সেরে ফেলবেন মন্ত্রী-এমপিরা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ সারা বছরই নিয়মিত সময় দেন নিজ এলাকা কুষ্টিয়ায়। কেন্দ্রীয় বড় পদধারী নেতা হয়েও এলাকায় গিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নানা ধরনের সমস্যা এবং চাওয়া-পাওয়ার সমাধানে কাজ করেন তিনি। পার্বত্য এলাকায় জাতীয় ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সেখান থেকেই বৃহস্পতিবার চলে যান নিজ এলাকা কুষ্টিয়ায়। সেখানে একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রোববার ঢাকায় ফিরবেন বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। ঈদুল ফিতর ঢাকায় করার চিন্তা থাকলেও ঈদের আগে আবারো এলাকায় যাবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে বরাবরের মতো ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন কুষ্টিয়াতেই। ঈদরাজনীতি নিয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, এটি রাজনীতি নয়, আমাদের নিয়মিত কর্মকাণ্ড মাত্র। আমরা কেন্দ্রীয় নেতা হলেও এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি সারা বছর। তবে হ্যাঁ, দলের কোনো কোনো নেতা বা এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এলাকায় জনবিচ্ছিন্ন থাকার কথা শোনা যায়। তারা হয়তো ঈদকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সেরে ফেলছেন। দলের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাথে নিজ এলাকা দিনাজপুরের মানুষের যোগাযোগ রয়েছে নিয়মিত। প্রত্যেক সপ্তাহে ছুটির দিনগুলো তিনি দিনাজপুরের মানুষের সাথেই কাটান। নিজ এলাকার মানুষের দুঃখ, দুর্দশায় পাশে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। রমজানে ইতোমধ্যেই একাধিকবার ঘুরে এসেছেন নিজ সংসদীয় এলাকা। ঢাকায় ঈদ না করলে এবারো নিজ এলাকাতেই ঈদ উদযাপন করবেন তিনি। ঈদরাজনীতি নিয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা সারা বছরই রাজনীতি করি, এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। এলাকার প্রতি আমাদের নাড়ির টান রয়েছে সব সময়। দলের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, আমি সারা বছরই নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক রাখি এবং তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করি। কোনো নির্দেশ বা দিবসের অপোয় বসে থাকার সুযোগ নেই। এলাকার জনগণের সাথে সব সময় যোগাযোগ ছিল এবং বর্তমানেও তা বজায় আছে।
No comments