বেতার কেন্দ্রে ডালিম ছুটে এসে তাহেরকে সালাম করেন
বাংলাদেশ
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) আবু তাহের
ভোর পাঁচটায় তার বাবুর্চি মোতালেবকে আদেশ দেন গাড়িচালক গিয়াস উদ্দিনকে তার
নারায়ণগঞ্জের বাসায় ডেকে আনতে। গিয়াস উদ্দিন আসার পর নারায়ণগঞ্জের ডিসি
অফিস সংলগ্ন একটি সেনা ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর গাড়ি ও লোকজন নিয়ে তাহের
ঢাকা রওনা হন। পথে পুরনো ঢাকার একটি বাড়ি থেকে তার সহকর্মী হাসানুল হক
ইনুকে সঙ্গে নেন। বেতার কেন্দ্রে আসার পর মেজর ডালিম ছুটে এসে তাকে সালাম
করেন এবং বেতারে কিছু বলার জন্য অনুরোধ কনে। গণবাহিনীর ঢাকা নগরের কমান্ডার
আনোয়ার হোসেনও বেতার কেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার লেখা ‘রক্তাক্ত আগস্ট’ শীর্ষক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছেন। প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যায় লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটি আওয়ামী লীগের ইতিহাস নিয়ে লেখা বইয়ের তৃতীয় পর্বের একটি অধ্যায়ের অংশবিশেষ।
মহিউদ্দিন আহমদ আরো লিখেছেন, ডালিমের ভাষ্য অনুযায়ী, বামপন্থি অনেক রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে জাসদ চাচ্ছিল একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করে তাদের দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু অভ্যুত্থানকারীরা তাতে সায় দেয়নি। ১৫ই আগস্ট সকালে আবু তাহের নিজেই খোন্দকার মোশতাক আহমদকে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল অবিলম্বে সামরিক আইন জারি করা, সংবিধান বাতিল করা, রাজবন্দিদের মুক্তি দেয়া এবং বাকশালকে বাদ দিয়ে একটি সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠন করা।
সেনাবাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ মারুফ রশীদ ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন পান। ১৫ই আগস্ট রাতের ট্রেনে ছুটিতে সিলেটে তার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। ১৪ তারিখ রাতে ঢাকার মগবাজারের দিলু রোডে তার বন্ধু ফাইসন্সের কর্মকর্তা আবদুল মুনিম ফারুকের ভাড়া বাড়িতে তিনি তাস খেলছিলেন। সঙ্গে আরো ছিলেন ব্যবসায়ী ইফতেখার হোসেন শামীম, ফাইসন্সের কর্মকর্তা আবদুর রহমান এবং সিলেটের জাসদ নেতা শওকত। তারা প্রায়ই এরকম আড্ডা দিতেন। মারুফ রশীদ ওই রাতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে:
আমরা সারা রাত তাস খেলি। হঠাৎ গোলাগুলির আওয়াজ। ভাবলাম বঙ্গবন্ধু ইউনিভার্সিটিতে যাবেন, ছেলেরা হয়তো আনন্দে পটকা ফাটাচ্ছে। পরে জেনেছিলাম ইস্কাটনে মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় গুলি চলছিল। মুনিম ফারুকের সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার কথা। তখনো গাড়ি আসেনি দেখে সে মেইন রোডে গেল গাড়ির খোঁজে। রাস্তার ধারে লোকজন রেডিও শুনছেন। খবরটা শুনে বাসায় ফিরে মুনিম বললো, ‘ঘরে থাকেন।’ আমি আইডি কার্ডটা পকেটে নিয়ে বের হলাম। হাঁটতে হাঁটতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ভেতরে গিয়ে দেখি বিদেশি কয়েকজন সুইমিংপুলে সাঁতার কাটছে। বেরিয়ে রাস্তার মোড়ে এসে দেখলাম ট্যাংক যাচ্ছে রেডিও স্টেশনের দিকে। আমি এগোলাম। ওখানে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট কিসমত হাশেম এবং আনসারকে দেখলাম। মেজর শাহরিয়ার রশিদ সিভিল ড্রেসে কাঁধে স্টেনগান ঝুলিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন। আমাকে দেখেই ধমকে উঠলেন, ‘সিভিল ড্রেসে কেন, ইউনিফর্ম পরে আসো।’ উনি বিএমএতে ফিজিক্যাল ট্রেনিং স্টাফ অফিসার ছিলেন, আমাকে চিনতেন। ভেবেছিলেন, আমি তাদের গ্রুপেরই লোক। আমি ভেতরে ঢুকতেই করিডরে দেখলাম খোন্দকার মোশতাক। আমাকে দেখেই বললেন, ‘ওয়েল ডান মাই বয়।’ তিনিও ভেবেছিলেন আমি ওই দলেরই একজন।
মহিউদ্দিন আহমদ আরো লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনেককেই নেতা বানিয়েছিলেন। কিন্তু বিপদের সময় তারা কেউ কাজে আসেননি। তার অবর্তমানে সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অক্ষম আহাজারি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উপ-পরিচালক সারোয়ার হোসেন মোল্লা ১৫ই আগস্ট তার সারা দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন এভাবে:
জেনারেল সফিউল্লাহর কাছে আমরা অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে উনি কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন এবং আমাদের কী করা উচিত সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দিতে পারেন কিনা। উত্তরে সফিউল্লাহ বললেন, ‘আমি কর্নেল শাফায়াত জামিলকে পাচ্ছি না।’...‘আমি একটু পরে তোমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো’। পরে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।....
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার লেখা ‘রক্তাক্ত আগস্ট’ শীর্ষক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছেন। প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যায় লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটি আওয়ামী লীগের ইতিহাস নিয়ে লেখা বইয়ের তৃতীয় পর্বের একটি অধ্যায়ের অংশবিশেষ।
মহিউদ্দিন আহমদ আরো লিখেছেন, ডালিমের ভাষ্য অনুযায়ী, বামপন্থি অনেক রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে জাসদ চাচ্ছিল একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করে তাদের দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু অভ্যুত্থানকারীরা তাতে সায় দেয়নি। ১৫ই আগস্ট সকালে আবু তাহের নিজেই খোন্দকার মোশতাক আহমদকে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল অবিলম্বে সামরিক আইন জারি করা, সংবিধান বাতিল করা, রাজবন্দিদের মুক্তি দেয়া এবং বাকশালকে বাদ দিয়ে একটি সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠন করা।
সেনাবাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ মারুফ রশীদ ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন পান। ১৫ই আগস্ট রাতের ট্রেনে ছুটিতে সিলেটে তার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। ১৪ তারিখ রাতে ঢাকার মগবাজারের দিলু রোডে তার বন্ধু ফাইসন্সের কর্মকর্তা আবদুল মুনিম ফারুকের ভাড়া বাড়িতে তিনি তাস খেলছিলেন। সঙ্গে আরো ছিলেন ব্যবসায়ী ইফতেখার হোসেন শামীম, ফাইসন্সের কর্মকর্তা আবদুর রহমান এবং সিলেটের জাসদ নেতা শওকত। তারা প্রায়ই এরকম আড্ডা দিতেন। মারুফ রশীদ ওই রাতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে:
আমরা সারা রাত তাস খেলি। হঠাৎ গোলাগুলির আওয়াজ। ভাবলাম বঙ্গবন্ধু ইউনিভার্সিটিতে যাবেন, ছেলেরা হয়তো আনন্দে পটকা ফাটাচ্ছে। পরে জেনেছিলাম ইস্কাটনে মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় গুলি চলছিল। মুনিম ফারুকের সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার কথা। তখনো গাড়ি আসেনি দেখে সে মেইন রোডে গেল গাড়ির খোঁজে। রাস্তার ধারে লোকজন রেডিও শুনছেন। খবরটা শুনে বাসায় ফিরে মুনিম বললো, ‘ঘরে থাকেন।’ আমি আইডি কার্ডটা পকেটে নিয়ে বের হলাম। হাঁটতে হাঁটতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ভেতরে গিয়ে দেখি বিদেশি কয়েকজন সুইমিংপুলে সাঁতার কাটছে। বেরিয়ে রাস্তার মোড়ে এসে দেখলাম ট্যাংক যাচ্ছে রেডিও স্টেশনের দিকে। আমি এগোলাম। ওখানে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট কিসমত হাশেম এবং আনসারকে দেখলাম। মেজর শাহরিয়ার রশিদ সিভিল ড্রেসে কাঁধে স্টেনগান ঝুলিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন। আমাকে দেখেই ধমকে উঠলেন, ‘সিভিল ড্রেসে কেন, ইউনিফর্ম পরে আসো।’ উনি বিএমএতে ফিজিক্যাল ট্রেনিং স্টাফ অফিসার ছিলেন, আমাকে চিনতেন। ভেবেছিলেন, আমি তাদের গ্রুপেরই লোক। আমি ভেতরে ঢুকতেই করিডরে দেখলাম খোন্দকার মোশতাক। আমাকে দেখেই বললেন, ‘ওয়েল ডান মাই বয়।’ তিনিও ভেবেছিলেন আমি ওই দলেরই একজন।
মহিউদ্দিন আহমদ আরো লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনেককেই নেতা বানিয়েছিলেন। কিন্তু বিপদের সময় তারা কেউ কাজে আসেননি। তার অবর্তমানে সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অক্ষম আহাজারি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উপ-পরিচালক সারোয়ার হোসেন মোল্লা ১৫ই আগস্ট তার সারা দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন এভাবে:
জেনারেল সফিউল্লাহর কাছে আমরা অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে উনি কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন এবং আমাদের কী করা উচিত সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দিতে পারেন কিনা। উত্তরে সফিউল্লাহ বললেন, ‘আমি কর্নেল শাফায়াত জামিলকে পাচ্ছি না।’...‘আমি একটু পরে তোমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো’। পরে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।....
No comments