ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
ঈদ উপলক্ষে বাড়ি বা বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যেতে ভ্রমণ শুধু আরামদায়ক নয়, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যপ্রদও হতে হয়। ভেবেচিনে্ত ভ্রমণ না করলে বিভিন্ন বিপদ হওয়ার আশংকা থাকে। এজন্য প্রথমেই প্রি-জার্নি প্লানিং করে নিতে হয়।
প্রি-জার্নি প্লানিংয়ে যা করতে হবে তা হল-
* জার্নি শর্ট না লং ডিসটেন্স হবে। সাধারণত ৪-৬ ঘণ্টার বেশি সময়ের জার্নি লং ডিসটেন্স ধরা যায়।
* কী ধরনের খাবার জার্নিতে সঙ্গে নিতে হয়? পানি বা পানীয়ও কেমন হওয়া উচিত?
* পোশাকের ধরন কেমন হবে?
* হঠাত্ বা তাত্ক্ষণিক স্বাস্থ্য সমসা মোকাবেলায় কী করণীয়?
* সুখকর ভ্রমণের জন্য কী করা যায়?
* রোগীরা জার্নি করলে কোনো বিশেষ দিক লক্ষ্য রাখতে হয় কি? এসব প্রশ্নের সমাধান জেনেই জার্নি শুরু করতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে, জার্নির স্ট্রেস বা স্ট্রেন যেন শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণের জন্য
৪-৬ ঘণ্টার বেশি জার্নির জন্য অন্তত ৩০ মিনিট ব্রেক দরকার। এ সময় ৫-১০ মিনিট হালকা হাঁটাচলা করা উত্তম, এতে দেহে রক্তসঞ্চালন ভালো হবে। শুধু তাই নয়, এ সময় ডায়াবেটিক রোগীরা গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তের সুগার চেক করে নিতে পারেন। যদি সুগার ২ মিলি মোল/লিটার বা এর কম আসে তবে সঙ্গে রাখা লজেন্স বা চিনি বা মিষ্টি বিস্কুট জাতীয় কিছু খেয়ে নিতে হবে। এছাড়া সুগার চেক করে প্রয়োজনমতো ইনসুলিনও নেয়া যায়। যারা হার্ট ডিজিজের রোগী তারা এ ফাঁকে হালকা কিছু খেয়ে অ্যাসপিরিন জাতীয় ট্যাবলেট খেতে পারেন। অনেক সময় ধরে ভ্রমণে পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এসি বাস বা প্লেনে ঠাণ্ডা থেকে এ ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশংকা বেশি। তাই মিনারেল ওয়াটার বা ক্যান বা বোতলের কোল্ডড্রিংস খাওয়া যেতে পারে। এ অবসরে টয়লেটও সেরে নেয়া যায়। দীর্ঘ সময়ের জার্নি অনেক সময় বিরক্তিকরও বটে। তাই প্রিয় ম্যাগাজিন বা বইটি সঙ্গে নিতে পারেন। অন্যের বা পাশের কারও যেন ডিস্টার্ব না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে হেড ফোন, আইপড, এমপিথ্রি দিয়ে গানও শুনতে পারেন।
হোমমেড খাবার সঙ্গে রাখুন
জার্নির শুরুতে হালকা খাবার খেয়ে নিতে পারেন। শুকনো খাবার যেমন প্যাকেট বিস্কুট জার্নিতে নিয়ে রাখুন। যেসব ফল ছিলে খাওয়া যায় যেমন কমলা, কলা ইত্যাদি ভ্রমণে খাওয়া হেলদি। এ থেকে জীবাণু সংক্রমণের সুযোগ কম। অন্য ফল খেলে মিনারেল ওয়াটার দিয়ে ধুয়ে খেতে পারেন। পথের খাবার একদমই খাওয়া যাবে না। আরেকটি দিক লক্ষ্য রাখবেন, অপরিচিতজন থেকে কোনো খাবার আপনি অবশ্যই খাবেন না। আমাদের দেশে খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে যাত্রীর মালপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। পাশে যে বসল, তার দিকেও আপনি লক্ষ্য রাখুন। বাচ্চারা যে কোনো যাতায়াতে ঘন ঘন খেতে চায়। তাদের জন্য প্যাকেট করা চিপস, বিস্কুট নিতে পারেন, যদি ড্রিংকস খেতে চায় তবে ক্যান বা বোতলেরটা খাবে। শিশু এবং বড়রা কুলি করা, ব্রাশ করা এমনকি মুখ ধোয়ার সময়ও মিনারেল ওয়াটার ব্যবহার করুন। বয়স্ক এবং মহিলারা যে কোনো জার্নিতে বেশি করে পানি বা পানীয় পান করুন। ঢিলেঢালা, সুতির কাপড়ই ভ্রমণে পরা উচিত। আন্ডারগার্মেন্ট যথষ্টে থাকতে হবে, কারণ নোংরা, ময়লা, ঘর্মাক্ত এ কাপড় থেকেই ইনফেকশন হতে পারে। জুতাও যেন লুজ থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। লম্বা জার্নির ক্ষেত্রে মোজা চেঞ্জ করুন।
জার্নিতে প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ
এ সময় ডিহাইড্রেশন, ট্রাভেলারস ডায়রিয়া এবং হেপাটাইটিস বা লিভারে প্রদাহ সাধারণত অপর্যাপ্ত পানি বা অনিরাপদ খাবার ও পানীয় থেকে হতে পারে। এছাড়া হার্ট ডিজিজ বা যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে তাদের স্ট্রেসজনিত জটিলতা হতে পারে। তাত্ক্ষণিক প্রতিষেধকের জন্য কিছু ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি ড্রাগ সঙ্গে রাখতে পারেন। এগুলো হল জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল গ্রুপ, এন্টি ডায়রিয়া জাতীয় ওষুধ, ওরস্যালাইন এবং এন্টি অ্যালার্জি জাতীয় ওষুধ। পেট খুব খারাপ হলে একটি সিপ্রোফ্লকাসিন জাতীয় ওষুধ ভালো কাজ দেয়। কেউ কেউ পুরো কোর্স খাওয়ারও পরামর্শ দেন। এছাড়া অ্যাজিথ্রোমাইসিন জাতীয় ওষুধও একটি খাওয়া যায়। এ ওষুধগুলো শ্বাসনালির ওপরের অংশের প্রদাহে যা ধুলোবালি থেকে হয় তাতে ভালো কাজ দেয়। মেডিকেল হেলপ পাওয়ার আগ পর্যন্ত এ ওষুধগুলো সেলফ হেলপ করে। যাদের মোশন সিকনেস অর্থাৎ গাড়িতে উঠলে বমি বা বমি বমি ভাব হয় তারা জার্নির ৩০ মিনিট আগে স্টিমেটিল বা ম্যাকলিজিন গ্রুপের ওষুধ একটি খেয়ে নিতে পারেন। এ ওষুধ প্রায় ৮-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করে।
আনন্দদায়ক ভ্রমণের জন্য
আপনার প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড থাকলে তা গলায় ঝুলিয়ে রাখুন বা শরীরের কোথাও ডিসপ্লে করুন। এটি আপনাকে অনেক বিপদ থেকে বাঁচাবে। মূল্যবান জিনিসপত্র ব্যাগে তালা মেরে চাবি হ্যান্ডব্যাগে রাখুন। এ ব্যাগে জরুরি ডকুমেন্টসগুলোও রাখুন। এছাড়া হ্যান্ডব্যাগে থাকবে আপনার প্রতিদিনের ব্যবহারের ওষুধপত্র। প্রি-জার্নি লিস্ট করার সময় এগুলো খেয়াল রাখতে হবে।
* যাদের গ্লুকোমা আছে, তারা আই গ্লাস পরে ভ্রমণ করুন।
* চোখের ইমার্জেন্সি ড্রপ নিতে ভুলবেন না। চোখে যারা লেন্স পরেন তারা ধুলাবালি থেকে বাঁচতে লেন্স ক্লিনার সঙ্গে নিন। অনেকে সানগ্লাসও পরতে পারেন।
* ক্যাপ বা হ্যাট পরতে পারেন সূর্যের আলো থেকে রক্ষার জন্য, বিশেষ করে যেখানে এসি নেই।
* বাস-কোস্টার বা ট্রেনের বাইরে যেন বাচ্চা বা কেউ হাত বা মুখ না দেয় সেদিকে নজর রাখুন।
* সিটবল্টে বেঁধে ভ্রমণ করা উত্তম। খুব ছোট বাচ্চার জন্য স্পেশাল কট ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বিদেশের কিছু কিছু জায়গায় যাওয়ার আগে ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস ও টাইফয়েডের ভ্যাকসিন নিয়ে নেয়া উচিত। ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলারস গাইড থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
রোগীদের নিরাপদ জার্নি
প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে তারা যে ওষুধগুলো নিয়মিত খাচ্ছে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে সঙ্গে নিচ্ছে কিনা। এছাড়া ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের ফটোকপি বা তার শর্ট মেডিকেল হিস্ট্রি সঙ্গে থাকা ভালো। কোনো অসুবিধা হলে আশপাশের মানুষ এ কাগজ পড়ে রোগীকে উপকার করতে পারেন। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট ডিজিজ, বাতরোগের ওষুধ, অ্যাজমা বা অ্যালার্জির ওষুধ সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। ইনহেলার, ইনসুলিন ইত্যাদিও সঙ্গে রাখবেন। ডায়াবেটিস রোগীরা লজেন্স, সুগার কিউব নেবেন। প্রেগনেন্ট যারা তাদের প্রথম ছয় মাস জার্নি করা মোটামুটি নিরাপদ। তবে যাদের অ্যাবরশনের ইতিহাস আছে তাদের গর্ভাবস্থায় জার্নি করা উচিত নয়। বিশেষ করে শেষ তিন মাস যে কোনো গর্ভবতীর জার্নি নিষেধ। যে কোনো ধরনের জার্নিতে তারা প্রচুর পানি খাবেন। প্লেনে জার্নি করলে ঘন ঘন পা ম্যাসাজ করতে হবে, না হলে পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা ডিভিটি হতে পারে। তারা পায়ে রক্তজমা প্রতিরোধকারী মোজা পরতে পারেন। যাদের ওজন বেশি তারাও এ কাজটি করতে পারেন।
লেখক : মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রি-জার্নি প্লানিংয়ে যা করতে হবে তা হল-
* জার্নি শর্ট না লং ডিসটেন্স হবে। সাধারণত ৪-৬ ঘণ্টার বেশি সময়ের জার্নি লং ডিসটেন্স ধরা যায়।
* কী ধরনের খাবার জার্নিতে সঙ্গে নিতে হয়? পানি বা পানীয়ও কেমন হওয়া উচিত?
* পোশাকের ধরন কেমন হবে?
* হঠাত্ বা তাত্ক্ষণিক স্বাস্থ্য সমসা মোকাবেলায় কী করণীয়?
* সুখকর ভ্রমণের জন্য কী করা যায়?
* রোগীরা জার্নি করলে কোনো বিশেষ দিক লক্ষ্য রাখতে হয় কি? এসব প্রশ্নের সমাধান জেনেই জার্নি শুরু করতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে, জার্নির স্ট্রেস বা স্ট্রেন যেন শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণের জন্য
৪-৬ ঘণ্টার বেশি জার্নির জন্য অন্তত ৩০ মিনিট ব্রেক দরকার। এ সময় ৫-১০ মিনিট হালকা হাঁটাচলা করা উত্তম, এতে দেহে রক্তসঞ্চালন ভালো হবে। শুধু তাই নয়, এ সময় ডায়াবেটিক রোগীরা গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তের সুগার চেক করে নিতে পারেন। যদি সুগার ২ মিলি মোল/লিটার বা এর কম আসে তবে সঙ্গে রাখা লজেন্স বা চিনি বা মিষ্টি বিস্কুট জাতীয় কিছু খেয়ে নিতে হবে। এছাড়া সুগার চেক করে প্রয়োজনমতো ইনসুলিনও নেয়া যায়। যারা হার্ট ডিজিজের রোগী তারা এ ফাঁকে হালকা কিছু খেয়ে অ্যাসপিরিন জাতীয় ট্যাবলেট খেতে পারেন। অনেক সময় ধরে ভ্রমণে পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এসি বাস বা প্লেনে ঠাণ্ডা থেকে এ ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশংকা বেশি। তাই মিনারেল ওয়াটার বা ক্যান বা বোতলের কোল্ডড্রিংস খাওয়া যেতে পারে। এ অবসরে টয়লেটও সেরে নেয়া যায়। দীর্ঘ সময়ের জার্নি অনেক সময় বিরক্তিকরও বটে। তাই প্রিয় ম্যাগাজিন বা বইটি সঙ্গে নিতে পারেন। অন্যের বা পাশের কারও যেন ডিস্টার্ব না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে হেড ফোন, আইপড, এমপিথ্রি দিয়ে গানও শুনতে পারেন।
হোমমেড খাবার সঙ্গে রাখুন
জার্নির শুরুতে হালকা খাবার খেয়ে নিতে পারেন। শুকনো খাবার যেমন প্যাকেট বিস্কুট জার্নিতে নিয়ে রাখুন। যেসব ফল ছিলে খাওয়া যায় যেমন কমলা, কলা ইত্যাদি ভ্রমণে খাওয়া হেলদি। এ থেকে জীবাণু সংক্রমণের সুযোগ কম। অন্য ফল খেলে মিনারেল ওয়াটার দিয়ে ধুয়ে খেতে পারেন। পথের খাবার একদমই খাওয়া যাবে না। আরেকটি দিক লক্ষ্য রাখবেন, অপরিচিতজন থেকে কোনো খাবার আপনি অবশ্যই খাবেন না। আমাদের দেশে খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে যাত্রীর মালপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। পাশে যে বসল, তার দিকেও আপনি লক্ষ্য রাখুন। বাচ্চারা যে কোনো যাতায়াতে ঘন ঘন খেতে চায়। তাদের জন্য প্যাকেট করা চিপস, বিস্কুট নিতে পারেন, যদি ড্রিংকস খেতে চায় তবে ক্যান বা বোতলেরটা খাবে। শিশু এবং বড়রা কুলি করা, ব্রাশ করা এমনকি মুখ ধোয়ার সময়ও মিনারেল ওয়াটার ব্যবহার করুন। বয়স্ক এবং মহিলারা যে কোনো জার্নিতে বেশি করে পানি বা পানীয় পান করুন। ঢিলেঢালা, সুতির কাপড়ই ভ্রমণে পরা উচিত। আন্ডারগার্মেন্ট যথষ্টে থাকতে হবে, কারণ নোংরা, ময়লা, ঘর্মাক্ত এ কাপড় থেকেই ইনফেকশন হতে পারে। জুতাও যেন লুজ থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। লম্বা জার্নির ক্ষেত্রে মোজা চেঞ্জ করুন।
জার্নিতে প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ
এ সময় ডিহাইড্রেশন, ট্রাভেলারস ডায়রিয়া এবং হেপাটাইটিস বা লিভারে প্রদাহ সাধারণত অপর্যাপ্ত পানি বা অনিরাপদ খাবার ও পানীয় থেকে হতে পারে। এছাড়া হার্ট ডিজিজ বা যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে তাদের স্ট্রেসজনিত জটিলতা হতে পারে। তাত্ক্ষণিক প্রতিষেধকের জন্য কিছু ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি ড্রাগ সঙ্গে রাখতে পারেন। এগুলো হল জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল গ্রুপ, এন্টি ডায়রিয়া জাতীয় ওষুধ, ওরস্যালাইন এবং এন্টি অ্যালার্জি জাতীয় ওষুধ। পেট খুব খারাপ হলে একটি সিপ্রোফ্লকাসিন জাতীয় ওষুধ ভালো কাজ দেয়। কেউ কেউ পুরো কোর্স খাওয়ারও পরামর্শ দেন। এছাড়া অ্যাজিথ্রোমাইসিন জাতীয় ওষুধও একটি খাওয়া যায়। এ ওষুধগুলো শ্বাসনালির ওপরের অংশের প্রদাহে যা ধুলোবালি থেকে হয় তাতে ভালো কাজ দেয়। মেডিকেল হেলপ পাওয়ার আগ পর্যন্ত এ ওষুধগুলো সেলফ হেলপ করে। যাদের মোশন সিকনেস অর্থাৎ গাড়িতে উঠলে বমি বা বমি বমি ভাব হয় তারা জার্নির ৩০ মিনিট আগে স্টিমেটিল বা ম্যাকলিজিন গ্রুপের ওষুধ একটি খেয়ে নিতে পারেন। এ ওষুধ প্রায় ৮-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করে।
আনন্দদায়ক ভ্রমণের জন্য
আপনার প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড থাকলে তা গলায় ঝুলিয়ে রাখুন বা শরীরের কোথাও ডিসপ্লে করুন। এটি আপনাকে অনেক বিপদ থেকে বাঁচাবে। মূল্যবান জিনিসপত্র ব্যাগে তালা মেরে চাবি হ্যান্ডব্যাগে রাখুন। এ ব্যাগে জরুরি ডকুমেন্টসগুলোও রাখুন। এছাড়া হ্যান্ডব্যাগে থাকবে আপনার প্রতিদিনের ব্যবহারের ওষুধপত্র। প্রি-জার্নি লিস্ট করার সময় এগুলো খেয়াল রাখতে হবে।
* যাদের গ্লুকোমা আছে, তারা আই গ্লাস পরে ভ্রমণ করুন।
* চোখের ইমার্জেন্সি ড্রপ নিতে ভুলবেন না। চোখে যারা লেন্স পরেন তারা ধুলাবালি থেকে বাঁচতে লেন্স ক্লিনার সঙ্গে নিন। অনেকে সানগ্লাসও পরতে পারেন।
* ক্যাপ বা হ্যাট পরতে পারেন সূর্যের আলো থেকে রক্ষার জন্য, বিশেষ করে যেখানে এসি নেই।
* বাস-কোস্টার বা ট্রেনের বাইরে যেন বাচ্চা বা কেউ হাত বা মুখ না দেয় সেদিকে নজর রাখুন।
* সিটবল্টে বেঁধে ভ্রমণ করা উত্তম। খুব ছোট বাচ্চার জন্য স্পেশাল কট ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বিদেশের কিছু কিছু জায়গায় যাওয়ার আগে ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস ও টাইফয়েডের ভ্যাকসিন নিয়ে নেয়া উচিত। ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলারস গাইড থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
রোগীদের নিরাপদ জার্নি
প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে তারা যে ওষুধগুলো নিয়মিত খাচ্ছে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে সঙ্গে নিচ্ছে কিনা। এছাড়া ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের ফটোকপি বা তার শর্ট মেডিকেল হিস্ট্রি সঙ্গে থাকা ভালো। কোনো অসুবিধা হলে আশপাশের মানুষ এ কাগজ পড়ে রোগীকে উপকার করতে পারেন। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট ডিজিজ, বাতরোগের ওষুধ, অ্যাজমা বা অ্যালার্জির ওষুধ সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। ইনহেলার, ইনসুলিন ইত্যাদিও সঙ্গে রাখবেন। ডায়াবেটিস রোগীরা লজেন্স, সুগার কিউব নেবেন। প্রেগনেন্ট যারা তাদের প্রথম ছয় মাস জার্নি করা মোটামুটি নিরাপদ। তবে যাদের অ্যাবরশনের ইতিহাস আছে তাদের গর্ভাবস্থায় জার্নি করা উচিত নয়। বিশেষ করে শেষ তিন মাস যে কোনো গর্ভবতীর জার্নি নিষেধ। যে কোনো ধরনের জার্নিতে তারা প্রচুর পানি খাবেন। প্লেনে জার্নি করলে ঘন ঘন পা ম্যাসাজ করতে হবে, না হলে পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা ডিভিটি হতে পারে। তারা পায়ে রক্তজমা প্রতিরোধকারী মোজা পরতে পারেন। যাদের ওজন বেশি তারাও এ কাজটি করতে পারেন।
লেখক : মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
No comments