ওমরা করে ঘুরে দেখি নয়নাভিরাম মক্কা
হলুদ রঙের দোতালা বাড়ি। বাড়ির জানালাগুলো কাঠের তৈরি। বর্তমানে এটি মক্কা লাইব্রেরি। কাবা শরিফের পাশে সাফা-মারওয়া পাহাড়ের সাঈর স্থান থেকে পূর্ব দিকে এর অবস্থান। অনেকেই মনে করেন এ বাড়ির পবিত্র ভিটিতে জন্মেছেন রাসূল (সা.)। হজ করতে আসা মানুষ এ বাড়িকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। আমরাও কিছুটা সময় দাঁড়াই এ বাড়ি বা মক্কা লাইব্রেরির সামনে। সৌদি সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় এ লাইব্রেরির তত্ত্বাবধায়ন করছে। এখানে অনেক মূল্যবান বই, পাণ্ডুলিপি ও ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। লাইব্রেরির প্রসপেক্টাস থেকে জানা যায়, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে শায়খ আব্বাস কাত্তান বাড়িটি নির্মাণ করেন। লাইব্রেরির কিছুটা দূরে গাজ্জা সেবা আমির বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে হজরত আয়েশা মসজিদে যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাসে উঠি। উদ্দেশ্য আবার ওমরা হজ করা। আসা-যাওয়ার ভাড়া দশ রিয়াল। দুইদিন আগে মক্কা এলেও মক্কার বাইরে এটাই আমাদের প্রথম বের হওয়া। গাজ্জা সেবা আমির এলাকা পার হয়ে গাড়ি যখন পাহাড়ের এক সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করল, মনে হল কোনো গুহায় প্রবেশ করছি। পাহাড়ের ভেতর দিয়ে পাথর কেটে তৈরি এ পথ অনেকটা গুহার মতোই। কয়েক মিনিটে পার হই গা ছমছম করা গুহার এ পথ। তারপর প্রায় ৩০ মিনিটের মাথায় পৌঁছে যাই আয়েশা মসজিদ। মক্কায় অবস্থান করে যারা ওমরা হজ করেন, তারা সাধারণত হজরত আয়েশা মসজিদ থেকেই নিয়ত করেন। মসজিদটি বেশ বড় এবং দৃষ্টিনন্দন।
এখানে দু'রাকাত নামাজ পড়ে আবার গাড়িতে উঠি। সন্ধ্যার আগে আসি গাজ্জা সেবা আমির। তারপর যথারীতি শেষ করি ওমরার যাবতীয় কাজ। দুই সপ্তাহের সেৌদি সফরে অধিকাংশ সময় থাকি মক্কায়। এর মধ্যে ওমরার জন্য অনেকবারই আসি হজরত আয়েশা মসজিদে। গাজ্জা সেবা আমির ছাড়া মাঝেমধ্যে মিসফালা ব্রিজের কাছ থেকেও মাইক্রোবাস বা ট্যাক্সিতে আসি আয়েশা মসজিদে। আমাদের হোটেল জহরত আল মিসফালা-২ কাবা শরিফের পাশে এবং মিসফালা ব্রিজের কাছে। তাই প্রায় প্রতিদিনই ওমরা করি। আর মাঝেমধ্যে ঘুরে দেখি মক্কার আশপাশ। মিসফালা ব্রিজের পাশে দারুসসালাম এলাকায় ঢাকা হোটেল। হোটেলটি বাংলাদেশিদের। এখানকার খাবারও বাংলাদেশি। ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, রুটি, মিষ্টি সবই বাংলাদেশি। তাই খাওয়া নিয়ে খুব একটা ঝামেলা হয়নি আমাদের। এ হোটেল থেকেই খাবার কিনে খেয়েছি প্রতিদিন। সকাল, দুপুর বা রাতে খাবাব আনতে আসা-যাওয়ার সময় প্রায় প্রতিদিনই দেখি মিসফালা ব্রিজের নিচে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণের দৃশ্য। মূলত হাজীদের সম্মানেই এ খাবার বিতরণ করা হয়। মসজিদে হারাম শরিফে একটি লাইব্রেরি আছে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। কাবা শরিফ বা মসজিদে হারাম শরিফ এলে মাঝেমধ্যে এ লাইব্রেরিতে বসি। নানা রকম গ্রন্থে সাজানো লাইব্রেরিটি বেশ সমৃদ্ধ। সেইসঙ্গে প্রযুক্তি বান্ধবও। অর্থাত্ ডিজিটাল পদ্ধতিতেও পড়ার সুযোগ আছে। জহরত আল মিসফালা-২ হোটেলের পাশেই আছে ছোট্ট মাঠের মতো খোলা জায়গা। সে জায়গায় দিনের বেলা প্রায় সব সময় অসংখ্য কবুতর থাকে। কাবা শরিফে আসা-যাওয়া করা হাজীরা এ কবুতরগুলোকে গম বা খাবার কিনে ছিটিয়ে দেন। আবার দেখি কিছু মানুষ এখান থেকে কবুতরকে দেয়া উচ্ছিষ্ট গম কুড়িয়ে নিচ্ছেন। হয়তো তারা ভাবছেন পবিত্র জায়গার কবুতরের উচ্ছষ্টি খাবারও পবিত্র। মক্কা শহরটি ঘুরলে দিন-রাত সমান মনে হয়। কারণ কাবা শরিফ তাওয়াফ বা সাফা-মারওয়া সাঈর জন্য যখনই আসি, তখনই দেখি মানুষের ভিড়। অর্থাত্ এখানে কখনোই ভিড় কমে না। শুধু কাবা শরিফ বা সাফা-মারওয়া নয়, মিসফালাসহ পুরো এলাকাই মনে হয় দিন রাত সমান। তাই যখনই রাস্তায় নামি, তখনই দেখি দলে দলে মানুষ আসছেন বা যাচ্ছেন কাবা শরিফের দিকে। এখানকার দোকান বা রেস্টুরেন্টও খোলা থাকে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা। একইভাবে হজরত আয়েশা মসজিদে যখনই আসি, তখনই দেখি অসংখ্য মানুষের ভিড়। ফলে পুরো নগরই সব সময় থাকে পুণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখর। এ যেন এক আলোকিত নগরী। ছবি : লেখক
No comments