অগ্নিনিরাপত্তার যন্ত্র শুল্কমুক্ত আমদানির দাবি
বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ রপ্তানিমুখী শিল্পমালিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে গতকাল প্রাক্–বাজেট আলোচনায় বক্তব্য দিচ্ছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান |
কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় অগ্নিনিরাপত্তার বা প্রতিরোধক যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির সুযোগ চেয়েছেন রপ্তানিমুখী তিনটি শিল্প খাতের মালিকেরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চলমান প্রাক্-বাজেট আলোচনায় গতকাল মঙ্গলবার প্রথমে দাবিটি তুলে ধরেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। পরে একই দাবি করে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এবং সরঞ্জাম শিল্পের সংগঠন বিজিএপিএমইএ। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। সিদ্দিকুর রহমান জানান, পোশাকশিল্পের জন্য অগ্নি প্রতিরোধক দরজা (ফায়ার ডোর), স্প্রিংকলার ও ভবন থেকে বের হওয়ার নির্দেশকসহ জরুরি বাতি এই তিনটি পণ্য আমদানিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। তবে পরের বছরেই সুবিধাটি তুলে নিয়ে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। তিনি বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব খাতকেই শুল্কমুক্ত সুবিধায় অগ্নিনিরাপত্তার সব ধরনের যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ দেওয়া উচিত। বিজিএমইএর সভাপতি পোশাকশিল্প বর্তমানে ‘কঠিন সময়’ পার করছে দাবি করে দু-তিন বছরের জন্য কয়েকটি সুবিধা চান। সেগুলো হচ্ছে পোশাক রপ্তানির জাহাজীকরণ বা এফওবি মূল্যের ওপর উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৩০ শতাংশ ও কর দায় চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা। উৎসে করের অতিরিক্ত নিট মুনাফার ক্ষেত্রেও ১০ শতাংশ হারে কর নিষ্পত্তির সুযোগ। ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত সুবিধাটি ছিল। এদিকে পোশাক রপ্তানির কাটিং অ্যান্ড মেকিং (সিএম) মূল্যের ওপর উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ করার দাবি করেছে বিকেএমইএ। সংগঠনটির সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাকের একটি ক্রয়াদেশের ৭৫-৮০ শতাংশ অর্থের কাঁচামাল কিনতে হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে হয়। তখন কাঁচামাল সরবরাহ প্রতিষ্ঠানকে আবার একই হারে উৎসে কর দিতে হয়। তার মানে একই পোশাক রপ্তানির জন্য একাধিকবার উৎসে কর দিতে হচ্ছে। এটি বন্ধ হওয়া দরকার। তিনি নগদ সহায়তা প্রাপ্তির জন্য ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধে এনবিআরকে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দাবি করেছে। বর্তমানে ১ শতাংশ শুল্ক দিয়ে বস্ত্রকলের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সংগঠনটির যুক্তি, একটি বস্ত্রকল স্থাপনে ২০০-৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। ফলে যন্ত্রপাতি আমদানিতে কোটি কোটি টাকা শুল্ক দিতে হয়। সেটি দিতে না হলে বাড়তি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। সংগঠনটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি ফজলুল হক ও মহাসচিব ফিরোজ আহমেদ। বিজিএমইএর মতো রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর দশমিক ৩০ শতাংশ দিতে চায় প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি। উৎসে কর কমানোর বিষয়ে একই দাবি বিজিএপিএমইএর। আগামী তিন বছরের জন্য উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ এবং নগদ সহায়তার অর্থ করমুক্ত করার দাবি করেছে টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএমএমইএ)। সিল্ক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি সিল্কের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে। এ ছাড়া ডাইং ও প্রিন্টিং কারখানাকে মূসকমুক্ত রাখার দাবি জানান বাংলাদেশ টেক্সটাইল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন। এদিকে উৎসে কর কমানো নয়, বরং পাটশিল্পের দুরবস্থার কারণ দেখিয়ে উৎসে কর দেওয়া থেকে মুক্তি চেয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন। তবে উৎসে কর দশমিক ৩০ শতাংশ করার দাবি করেন পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান এস আহমেদ মজুমদার। প্রাক্-বাজেট আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহ্মাদ, এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর হোসেন, পারভেজ ইকবাল প্রমুখ।
No comments