এলিটা কিংসলের আগে যাঁরা
ফুটবল মাঠে একটা দলের পাঁচ গোলের জয় খুব বিশাল কিছু নয়। তবে এক ম্যাচে একজন খেলোয়াড়ের পাঁচ গোল করা দুর্দান্ত ব্যাপারই। তেমন এক ঘটনাই পরশু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দেখা গেল এলিটা কিংসলের সৌজন্যে। বিজেএমসির এই নাইজেরিয়ার স্ট্রাইকার পাঁচ গোল করেছেন ফেনী সকারের বিপক্ষে। ঢাকার মাঠে নিকট অতীতে পাঁচ গোল আছে মিঠুন চৌধুরীর। বর্তমানে শেখ রাসেলের এই ফরোয়ার্ড পাঁচ গোলের আনন্দে মেতে উঠেছিলেন ২০১৪ সালে সপ্তম পেশাদার লিগে। ওই বছরের ১৪ অক্টোবর উত্তর বারিধারার বিপক্ষে শেখ রাসেলের ৭-১ জয়ে তাঁর পাঁচ গোল। পেশাদার লিগে এক ম্যাচে পাঁচ গোল এসেছে এনামুল হকের পা থেকেও। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় পেশাদার লিগে খুলনা আবাহনীকে ৭-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ফরাশগঞ্জ, যার পাঁচটিই স্ট্রাইকার এনামুলের। তবে এখন পর্যন্ত আটটি পেশাদার লিগে এক ম্যাচে ডাবল হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব আছে শুধু একজনের। মোহামেডানের জার্সি গায়ে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ৭-১ জয়ে ছয় গোল করেছিলেন নাইজেরিয়ার স্ট্রাইকার নোয়ানচাওয়া পল। সেটিও ২০০৭ সালের ১৩ এপ্রিল। ১৯৮৪ সালে এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের ক্লাবের বিপক্ষে পাঁচ গোলের আনন্দ নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন শেখ মোহাম্মদ আসলাম। তবে ঢাকায় নয়, আসলামের পাঁচ গোল শ্রীলঙ্কার মাঠে।
ঢাকার মাঠে আরেকজনের গোল উৎসবের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ১৯৭৫ সালে মোহামেডানের জার্সি গায়ে অভিষেক ম্যাচেই একটা টুর্নামেন্টে দিলকুশার বিপক্ষে পাঁচ গোল করার সুখস্মৃতি আছে সাবেক স্ট্রাইকার নওশেরুজ্জামানের। সেই স্মৃতিচারণায় কাল নওশের বলছিলেন, ‘মাঠে গোল করার আনন্দই ছিল আলাদা। আজও সেসব গোলের কথা মনে পড়ে।’ তবে ঢাকার ফুটবলে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত গোলের কথা উঠলেই ফিরে আসে সেই ১৯৭৪ লিগ। সেবার কয়েক দিনের ব্যবধানে গোল উৎসবে মেতে উঠেছেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও কাজী সালাউদ্দিন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ফুটবলে প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিক করে হাফিজ ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি লিখে রেখেছেন আলাদা করে। ফায়ার সার্ভিসের বিপক্ষে ৬-১ জয়ে মোহামেডানের সব কটি গোলই তাঁর। কিছুদিন আগে ওই ডাবল হ্যাটট্রিকের স্মৃতিচারণায় এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘নেমেই হেলাফেলায় দুটি গোল হয়ে গেছে। ভাবলাম, এবার তো হ্যাটট্রিক করা যায়। সেই হ্যাটট্রিকও হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ফুলব্যাক ছিল দুলাল। সে বলছিল, হাফিজ ভাই, প্লিজ আর আমাদের বক্সের আশপাশে আসবেন না। আমিও ঠিক করলাম আর গোলটোল দেব না। কিন্তু সেদিন গোল হয়ে গেছে একের পর এক।’ ওই ডাবল হ্যাটট্রিকের কদিন পরই দিলকুশার জালে একাই সাত গোল দিলেন সালাউদ্দিন। তাঁর রুদ্রমূর্তিতে আবাহনীর জয় ১০-০ গোলে। প্রথম সাত গোলই সালাউদ্দিনের। আবাহনীর বাকি তিন গোল স্কুটার গফুর, অমলেশ ও টিপুর। সালাউদ্দিন ফিরে যান ৪২ বছর পেছনে,‘তখন তো সুপার ফিট ছিলাম। যেখান থেকেই চেষ্টা করতাম, গোল হয়ে যেত।’
No comments