নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পরিবারে আমেজহীন ঈদ by আক্তার আহমদ শাহেদ
মুসলমানদের
জন্য ঘরে ঘরে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ঈদ। ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা থাকে পুরো
দেশ। প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর
প্রান্তে ছুটে চলে মানুষ নাড়ির টানে। শত ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারের সঙ্গে
ঈদের সময়টুকু কাটাবেন এমনটাই প্রত্যাশা। প্রিয়জনরাও পথ চেয়ে বসে থাকেন
প্রিয় মানুষটির জন্য, কখন ফিরবে সে। কিন্তু দীর্ঘ ৩ বছরের বেশি সময় ধরে
নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। একই সঙ্গে নিখোঁজ
রয়েছেন গাড়ি চালক আনসার আলী। এরই মধ্যে কেটে গেছে ৬টি ঈদ। এখনও প্রিয়
মানুষটির সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। র্যাব-পুলিশ কেউ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি।
থেমে গেছে উদ্ধার তৎপরতা। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আত্মীয়স্বজন, পরিবারের
সদস্য কেউ জানেন না। কোথায় আছেন এম ইলিয়াস আলী। তিনি জীবিত না মৃত এ তথ্য
দিতে পারেনি রাষ্ট্র বা সরকার। দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এলো আরেকটি ঈদ। আর মাত্র
কয়েক দিন পর সারা দেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে উদযাপিত হবে মুসলমাদের
সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু ঈদের আমেজ নেই নিখোঁজ
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর
পরিবারে। পরিবারের প্রিয় মানুষটিকে ছাড়া এ পরিবারের সকল সদস্যকে ৭ম বারের
মতো পালন করতে হবে ঈদ উৎসব। এ যেন ইলিয়াস পরিবারের নিয়ম রক্ষার ঈদ। ইলিয়াস
আলী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার পরিবার শুধু নিয়ম রক্ষার খাতিরেই ইলিয়াসের
গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে ঈদ উদযাপন করতে আসেন। এমনটি জানিয়েছেন
ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। ঈদকে ঘিরে ইলিয়াস পরিবারের এখন কোন
আনন্দ অনুভূতি নেই। ইলিয়াস আলীকে ঘিরেই তাদের ঈদের সব আনন্দ, যা এখন কেবলই
স্মৃতি। ইলিয়াস আলীর পথ চেয়ে তার জনম দুঃখী মা, স্ত্রী সন্তানেরা। এ নিয়ে
ছয়টি ঈদ কাটিয়েছেন কিন্তু অসহনীয় এ প্রতীক্ষার অবসান কবে হবে তা জানে না
ইলিয়াসের পরিবার। ৩ বছর আগেও এ পরিবারের সদস্যদের কাছে ঈদ ছিল রঙিন। আজ যা
বর্ণহীন। আপনজন ছাড়া ঈদ যে কতটা নিরানন্দের তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানেন।
প্রতি বছর ২০-২২ রোজার দিকে ইলিয়াস আলী ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঢাকার কোন অভিজাত
শপিং মহলে ঈদের কেনাকাটা করতে যেতেন। কখনও সন্তানদের পছন্দে আবার কখনও
নিজের পছন্দে পোশাক কিনে দিতেন নিজ হাতে। ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়ির
ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করতেন ইলিয়াস আলী। আজ এগুলো শুধু স্মৃতি। প্রিয়
বাবার অনুপস্থিতিতে অনেকটাই শান্ত ও নিশ্চুপ হয়ে পড়েছে ইলিয়াস কন্যা
সাইয়ারা। গত রোজার ঈদেও সাইয়ারার বিশ্বাস ছিলো তার বাবা ফিরে আসবেন। হয়তো
সে বিশ্বাস এ ঈদেও ছোট মেয়েটির মধ্যে কাজ করছে। কথা হলে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী
তাহসিনা রুশদীর লুনার সাথে। তিনি বলেন, সত্যি বলতে কি আমাদের এখন আর ঈদের
আনন্দ বলতে কিছু নেই। শুধু শাশুড়িকে সঙ্গ দেয়ার জন্যই নিয়ম রক্ষা করতেই ঈদে
বিশ্বনাথে আসা হয়। সেখানে খুব সীমিতভাবে কিছু দুস্থ পরিবারের মাঝে যাকাতের
কাপড় বণ্টন করি। আমরা ভালো নেই। কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকবে না। তাই
আমরাও কোন রকমে জীবন পার করছি।
No comments