মামলা তদন্তে ডিবি এসআই প্রত্যাহার by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
সিলেটে
নির্মম নির্যাতনে নিহত শিশু রাজন হত্যার ঘটনায় জনতাই এখন অগ্রণী ভূমিকা
পালন করছে। লাশ উদ্ধার, একের পর এক আসামি আটক, ভিডিও ফুটেজ মিডিয়ায় সরবরাহ
সবই হচ্ছে জনতার স্বতঃস্ফূর্ততায়। গতকাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৩৪টি দেশের
টেলিভিশনে রাজনের ওপর নির্মম নির্যাতনের ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। গতকাল
বিকালে এ মামলার অন্যতম আসামি দুলালকে এবং মঙ্গলবার রাতে এজাহারভুক্ত
আসামি চৌকিদার ময়নাকে জনতা আটক করে পুলিশে দেয়। ময়নাকে আটকে তার মা
ছায়ারুননেসা পুলিশ-জনতাকে সহায়তা করেন। এদিকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য
প্রত্যাহার করা হয়েছে জালালাবাদ থানার এসআই আমিনুল ইসলামকে। এ ছাড়া থানা
পুলিশের কাছ থেকে মামলা সরিয়ে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে তদন্তের
দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাকে গতকাল আদালতে হাজির করে ৭ দিনের
রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি ও আর্থিক
লেনদেনের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠনের পরপরই থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
গ্রহণ শুরু হয়। জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে
কর্তব্যে গাফিলতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ থাকায় তাকে তদন্তের দায়িত্ব
থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। কমিটি গঠনের ৪ ঘণ্টার মাথায় সিলেট মহানগর পুলিশ
কমিশনার আমিনুলকে জালালাবাদ থানা থেকে প্রত্যাহার ও ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার
আগেই থানা পুলিশের কাছ থেকে মামলা সরিয়ে গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব
দেয়ার নির্দেশনা জারি করেন।
গতকাল বিকালে এ মামলার অন্যতম আসামি দুলালকে কুমারগাঁও শেখপাড়া থেকে জনতা আটক করে পুলিশের কাছে দেয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে এজাহারভুক্ত আসামি চৌকিদার ময়নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ময়নাকে তার মা ছায়ারুননেসা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তুলে দেন। ময়নাকে আটকের সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের হাত থেকে ময়নাকে ছিনিয়ে নিতে চায়। সিলেট মেট্রোপলিটান পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ মানবজমিনকে জানান, এলাকাবাসী লাঠিসোটা নিয়ে ঘেরাও করে ফেলে, কেউবা জুতা ছুড়ে মারে। অনেক জুতা আমার শরীরেও পড়েছে। তিনি বলেন, উপায় না পেয়ে ময়নাকে জনরোষ থেকে বাঁচাতে জালালাবাদ থানায় নেয়া নিরাপদ মনে না হওয়ায় কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসি।
শিশু রাজন হত্যার ঘটনায় গতকাল বিকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয় আটজন। এদের মধ্যে মুহিত আলম, ময়না, দুলাল এবং সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের হাতে আটক কামরুল ইসলাম সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। এ ছাড়া ফিরোজ আলী ও আজমত আলী ঘটনার দুই প্রত্যক্ষদর্শী। আটক আছে মুহিতের তালতো ভাই ইসমাইল হোসেন আবলুস ও রিমান্ডে থাকা প্রধান আসামি মুহিতের স্ত্রী লিপি বেগম। লিপি বেগমকে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় জালালাবাদ থানা পুলিশ গোপন সূত্রের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার গোবিন্দগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আটক করে। কামরুলের সৌদি গমন এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে ইসমাইল হোসেন আবলুস ও মুহিতের স্ত্রী লিপি বেগমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন মানবজমিনকে জানিয়েছেন। এদিকে সোমবার থেকে মুহিত আলম ও মঙ্গলবার থেকে ইসমাইল হোসেন আবলুসকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে জালালাবাদ থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষ বর্ণনা দিয়েছেন ফিরোজ আলী ও আজমত আলী। গতকাল চৌকিদার ময়নাকে জালালাবাদ থানা পুলিশ আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মঙ্গলবার বিকাল থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তদন্তে গঠিত ৩ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এলাকাবাসীর বক্তব্য শুনেছেন।
নিহত রাজনের বাবা আজিজুর রহমান মঙ্গলবার অভিযোগ করেন, ৮ই জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় এসআই আমিনুলের মোবাইল ফোনে রাজনের লাশের ছবি দেখেন। এরপর হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করে থানায় যান মামলা করতে। কিন্তু রাজনের বাবা থানায় পৌঁছার আগেই এসআই আমিনুল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে মুহিত আলম ও চৌকিদার ময়নাকে আসামি করে মামলা রুজু করে ফেলেন। রাজনের বাবা তার সন্তান রাজন হত্যায় সংশ্লিষ্ট সব আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা করতে চাইলে এসআই আমিনুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে রাজনের বাবাকে গলাধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন। রাজনের বাবা অভিযোগ করে আরও বলেন, মামলার পরও পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে কোন উদ্যোগ নেয়নি। চার দিন পর পত্রিকায় খবর বের হলে পুলিশ তৎপর হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ মানবজমিনকে জানান, মঙ্গলবার বিকাল থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তদন্তে গঠিত ৩ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এলাকাবাসীর বক্তব্য শুনেছেন। জালালাবাদ থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন- কথা বলেছেন নিহত রাজনের বাবা আজিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজনের হত্যা মামলা তদন্ত তদারকিতে গঠিত কমিটিও কাজ শুরু করেছে। মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, পুলিশ দিন-রাত এ মামলার পেছনে কাজ করে যাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে তদন্ত তদারকিতে গঠিত কমিটির সদস্যরা ময়নাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। রাজন হত্যার মোটিভ ‘শুধু চুরি’ না অন্য কিছু- এমন প্রশ্নের জবাবে সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, বিষয়টি আমদেরও তাড়া করছে। বলাৎকারের একটি বিষয় সামনে এসেছিল, এ নিয়ে ময়নাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মানবজমিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলার অভিযোগকারী জালালাবাদ থানার এসআই আমিনুল ইসলাম প্রধান আসামি করেন মুহিত আলমকে। যে পেশায় একজন মাইক্রোবাসের চালক এবং রাজনের লাশ তার গাড়িতে করে নদীতে ফেলে দেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। অপরজন চৌকিদার ময়না চোর সন্দেহে যে রাজনকে আটকে রেখেছিল। মাইক্রোবাসে রাজনের মৃতদেহ তুলে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুপুর ১২টায় মুহিত-কামরুলকে ধরে এলাকাবাসী এসআই আমিনুলের কাছে হস্তান্তর করে। গাড়ির চালক মুহিত আলম রাজনকে চিনতো। ভাল করে চিনত তার বাবাকেও। এমনকি মুহিত আলম থানায় এসআই আমিনুলকে ঘটনা খুলে বলার পরও এসআই আমিনুল থানা থেকে কামরুলকে ছেড়ে দেন এবং বেওয়ারিশ হিসেবে রাজনের লাশ ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠিয়ে দেন। এ ছাড়া ১০ই জুলাই মুহিতের বড় ভাই ছাত্রলীগ নেতা আলী আহমদকে থানায় এনে কথাবার্তা বলে ছেড়ে দেয় জালালাবাদ থানা পুলিশ। অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন ও এসআই আমিনুলের সঙ্গে বৈঠক করে কামরুল ও মুহিত। জালালাবাদ থানা চত্বরে রাখা রাজনের লাশ বহনকারী মাইক্রোবাসের পেছনের খালি জায়গায় এ বৈঠকটি হয়। ওই বৈঠকেই চুক্তি হয় ১২ লাখ টাকার। ৬ লাখ টাকা হাতে পেয়ে জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন ও এসআই আমিনুল মামলার প্রধান আসামি কামরুলকে সৌদি আরব পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। বাকি ৬ লাখ টাকা হাতে পেলে জনতার হাতে আটকের পর গ্রেপ্তার হওয়া কামরুলের বড় ভাই মুহিত আলমকেও ছেড়ে দেবে বলে কথা দেয় পুলিশ। এ সময় রাজনকে নির্যাতনের ভিডিও দেখেন পুলিশের এ দুই কর্মকর্তা। পুলিশ তখনই জানতে পারে এ ভিডিওটি কামরুলের মোবাইল ফোনে ধারণ করে সাইফুল নামে কামরুলের এক বন্ধু। ১০ই জুলাই বিজি ৪০৪-যোগে সিলেট বিমানবন্দর ছাড়ে কামরুল। নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিতের দায়িত্ব পালন করেন ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুহিত-কামরুল পরিবারের অন্ধকার অধ্যায়ের কিছু অংশ। মুহিত-কামরুলের অন্ধকার জীবনের শুরু নগরীর লালবাজার থেকে। এখানে থেকেই তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়ায়। তাদের বাবা শেখপাড়া গ্রামের আবদুল মালিক ৭-৮ বছর আগেও নগরীর লালবাজারের তৃষ্ণা হোটেল রমজান মাসে দিনের বেলা পরিচালনার জন্য ভাড়া নিতেন। মুহিত-কামরুল পরিবারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী দুবার আবদুল মালিকের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
রাজন হত্যাই এখন গোটা নগরবাসীর আলোচনার প্রধান বিষয়। শুধু সিলেট নয় গোটা দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলোচনায় স্থান পেয়েছে রাজন হত্যা। ১৩৪টি দেশের টেলিভিশনে রাজনের ওপর নির্মম নির্যাতনের ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। আলোচনার টেবিলে বলাবলি হচ্ছে, রাজন হত্যার ঘটনা ঠিকই পুলিশ চাপা দিয়ে দিতো-রাজনের বাবার সাধ্য ছিল না মুহিত-কামরুল পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে লড়ার। কিন্তু মোবাইল ফোনে নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করে নিজেরা ধরা পড়েছে।
গতকাল বিকালে এ মামলার অন্যতম আসামি দুলালকে কুমারগাঁও শেখপাড়া থেকে জনতা আটক করে পুলিশের কাছে দেয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে এজাহারভুক্ত আসামি চৌকিদার ময়নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ময়নাকে তার মা ছায়ারুননেসা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তুলে দেন। ময়নাকে আটকের সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের হাত থেকে ময়নাকে ছিনিয়ে নিতে চায়। সিলেট মেট্রোপলিটান পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ মানবজমিনকে জানান, এলাকাবাসী লাঠিসোটা নিয়ে ঘেরাও করে ফেলে, কেউবা জুতা ছুড়ে মারে। অনেক জুতা আমার শরীরেও পড়েছে। তিনি বলেন, উপায় না পেয়ে ময়নাকে জনরোষ থেকে বাঁচাতে জালালাবাদ থানায় নেয়া নিরাপদ মনে না হওয়ায় কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসি।
শিশু রাজন হত্যার ঘটনায় গতকাল বিকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয় আটজন। এদের মধ্যে মুহিত আলম, ময়না, দুলাল এবং সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের হাতে আটক কামরুল ইসলাম সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। এ ছাড়া ফিরোজ আলী ও আজমত আলী ঘটনার দুই প্রত্যক্ষদর্শী। আটক আছে মুহিতের তালতো ভাই ইসমাইল হোসেন আবলুস ও রিমান্ডে থাকা প্রধান আসামি মুহিতের স্ত্রী লিপি বেগম। লিপি বেগমকে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় জালালাবাদ থানা পুলিশ গোপন সূত্রের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার গোবিন্দগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আটক করে। কামরুলের সৌদি গমন এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে ইসমাইল হোসেন আবলুস ও মুহিতের স্ত্রী লিপি বেগমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন মানবজমিনকে জানিয়েছেন। এদিকে সোমবার থেকে মুহিত আলম ও মঙ্গলবার থেকে ইসমাইল হোসেন আবলুসকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে জালালাবাদ থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষ বর্ণনা দিয়েছেন ফিরোজ আলী ও আজমত আলী। গতকাল চৌকিদার ময়নাকে জালালাবাদ থানা পুলিশ আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মঙ্গলবার বিকাল থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তদন্তে গঠিত ৩ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এলাকাবাসীর বক্তব্য শুনেছেন।
নিহত রাজনের বাবা আজিজুর রহমান মঙ্গলবার অভিযোগ করেন, ৮ই জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় এসআই আমিনুলের মোবাইল ফোনে রাজনের লাশের ছবি দেখেন। এরপর হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করে থানায় যান মামলা করতে। কিন্তু রাজনের বাবা থানায় পৌঁছার আগেই এসআই আমিনুল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে মুহিত আলম ও চৌকিদার ময়নাকে আসামি করে মামলা রুজু করে ফেলেন। রাজনের বাবা তার সন্তান রাজন হত্যায় সংশ্লিষ্ট সব আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা করতে চাইলে এসআই আমিনুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে রাজনের বাবাকে গলাধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন। রাজনের বাবা অভিযোগ করে আরও বলেন, মামলার পরও পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে কোন উদ্যোগ নেয়নি। চার দিন পর পত্রিকায় খবর বের হলে পুলিশ তৎপর হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ মানবজমিনকে জানান, মঙ্গলবার বিকাল থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তদন্তে গঠিত ৩ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এলাকাবাসীর বক্তব্য শুনেছেন। জালালাবাদ থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন- কথা বলেছেন নিহত রাজনের বাবা আজিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজনের হত্যা মামলা তদন্ত তদারকিতে গঠিত কমিটিও কাজ শুরু করেছে। মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, পুলিশ দিন-রাত এ মামলার পেছনে কাজ করে যাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে তদন্ত তদারকিতে গঠিত কমিটির সদস্যরা ময়নাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। রাজন হত্যার মোটিভ ‘শুধু চুরি’ না অন্য কিছু- এমন প্রশ্নের জবাবে সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, বিষয়টি আমদেরও তাড়া করছে। বলাৎকারের একটি বিষয় সামনে এসেছিল, এ নিয়ে ময়নাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মানবজমিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলার অভিযোগকারী জালালাবাদ থানার এসআই আমিনুল ইসলাম প্রধান আসামি করেন মুহিত আলমকে। যে পেশায় একজন মাইক্রোবাসের চালক এবং রাজনের লাশ তার গাড়িতে করে নদীতে ফেলে দেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। অপরজন চৌকিদার ময়না চোর সন্দেহে যে রাজনকে আটকে রেখেছিল। মাইক্রোবাসে রাজনের মৃতদেহ তুলে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুপুর ১২টায় মুহিত-কামরুলকে ধরে এলাকাবাসী এসআই আমিনুলের কাছে হস্তান্তর করে। গাড়ির চালক মুহিত আলম রাজনকে চিনতো। ভাল করে চিনত তার বাবাকেও। এমনকি মুহিত আলম থানায় এসআই আমিনুলকে ঘটনা খুলে বলার পরও এসআই আমিনুল থানা থেকে কামরুলকে ছেড়ে দেন এবং বেওয়ারিশ হিসেবে রাজনের লাশ ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠিয়ে দেন। এ ছাড়া ১০ই জুলাই মুহিতের বড় ভাই ছাত্রলীগ নেতা আলী আহমদকে থানায় এনে কথাবার্তা বলে ছেড়ে দেয় জালালাবাদ থানা পুলিশ। অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন ও এসআই আমিনুলের সঙ্গে বৈঠক করে কামরুল ও মুহিত। জালালাবাদ থানা চত্বরে রাখা রাজনের লাশ বহনকারী মাইক্রোবাসের পেছনের খালি জায়গায় এ বৈঠকটি হয়। ওই বৈঠকেই চুক্তি হয় ১২ লাখ টাকার। ৬ লাখ টাকা হাতে পেয়ে জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন ও এসআই আমিনুল মামলার প্রধান আসামি কামরুলকে সৌদি আরব পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। বাকি ৬ লাখ টাকা হাতে পেলে জনতার হাতে আটকের পর গ্রেপ্তার হওয়া কামরুলের বড় ভাই মুহিত আলমকেও ছেড়ে দেবে বলে কথা দেয় পুলিশ। এ সময় রাজনকে নির্যাতনের ভিডিও দেখেন পুলিশের এ দুই কর্মকর্তা। পুলিশ তখনই জানতে পারে এ ভিডিওটি কামরুলের মোবাইল ফোনে ধারণ করে সাইফুল নামে কামরুলের এক বন্ধু। ১০ই জুলাই বিজি ৪০৪-যোগে সিলেট বিমানবন্দর ছাড়ে কামরুল। নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিতের দায়িত্ব পালন করেন ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুহিত-কামরুল পরিবারের অন্ধকার অধ্যায়ের কিছু অংশ। মুহিত-কামরুলের অন্ধকার জীবনের শুরু নগরীর লালবাজার থেকে। এখানে থেকেই তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়ায়। তাদের বাবা শেখপাড়া গ্রামের আবদুল মালিক ৭-৮ বছর আগেও নগরীর লালবাজারের তৃষ্ণা হোটেল রমজান মাসে দিনের বেলা পরিচালনার জন্য ভাড়া নিতেন। মুহিত-কামরুল পরিবারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী দুবার আবদুল মালিকের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
রাজন হত্যাই এখন গোটা নগরবাসীর আলোচনার প্রধান বিষয়। শুধু সিলেট নয় গোটা দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলোচনায় স্থান পেয়েছে রাজন হত্যা। ১৩৪টি দেশের টেলিভিশনে রাজনের ওপর নির্মম নির্যাতনের ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। আলোচনার টেবিলে বলাবলি হচ্ছে, রাজন হত্যার ঘটনা ঠিকই পুলিশ চাপা দিয়ে দিতো-রাজনের বাবার সাধ্য ছিল না মুহিত-কামরুল পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে লড়ার। কিন্তু মোবাইল ফোনে নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করে নিজেরা ধরা পড়েছে।
No comments