বিজিবির জিম্মায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দুই সদস্য

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির জিম্মায় রয়েছেন মিয়ানমারের দুই সেনাবাহিনীর সদস্য। বিজিবির দাবি, বান্দরবানের সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। মিয়ানমারের কোন একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তাদের অপহরণ করেছিল। সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিজিবি যৌথভাবে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে চার দফা পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসছিল। সর্বশেষ অভিযান চলে গত ৫ থেকে ১৪ই জুলাই পর্যন্ত। এ অভিযানের সময় বান্দরবানের ৬৭ নম্বর পিলারের কাছে তিন দেশের সীমান্তের কাছে দুই সেনাসদস্যকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে ঢাকায় আনা হয়। দুই সেনাসদস্যের একজন অসুস্থ ছিলেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। উদ্ধারকৃত দুই সেনাসদস্য সাদা পোশাকে ছিলেন। তাদের শরীরে সেনাবাহিনীর কোন পোশাক ছিল না। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সেনাসদস্য বলে জানিয়েছেন। এরই মধ্যে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তরের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির উপমহাপরিচালক খোন্দকার ফরিদ হাসান এসব তথ্য জানান। দুদেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কারণে উদ্ধারকৃত সেনাসদস্যের নাম ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তবে নিজস্ব অনুসন্ধানে উদ্ধার হওয়া দুই সেনাসদস্যের নাম জানা গেছে। তারা হলো করপোরাল ডুল টাক ও র‌্যা ব্যান। তাদের দুজনের বয়সই ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
খোন্দকার ফরিদ হাসান জানান, তারা ধারণা করছেন, যৌথ অভিযান দেখে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পালিয়ে গিয়েছিল। এরপর দুজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরণ করেছিল। উদ্ধারকৃত দুজন কর্মকর্তা নন। উদ্ধারের পরই মিয়ানমারের সরকারকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে। শিগগিরই তাদের হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যেন বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় না পায় সে ব্যাপারে আগে থেকেই মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। ফরিদ হাসান বলেন, প্রতিবেশী দেশের অনুরোধে এবং নিজস্ব ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অরক্ষিত দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিজিবি কখনও এককভাবে আবার কখনও সেনাবাহিনী ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবান সীমান্তে কয়েকটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত ৮ থেকে ১৮ই ফেব্রুয়ারি ১০ দিন বান্দরবানের থানচির বলিপাড়া এলাকায় ৪টি দল অভিযান চালায়। গত ১২ থেকে ১৫ই মে নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় ৪ দিনব্যাপী ১৫টি দল অভিযান চালায়। ২ থেকে ৬ই জুন থানচির বলিপাড়া এলাকায় ৫ দিনব্যাপী ৩টি দল অভিযান চালায়। সর্বশেষ গত ৫ থেকে ১৪ই জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী বিজিবির ১৬টি দল ও সেনাবাহিনীর ৫টি দল এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে অভিযান চালানো হয়। ফরিদ হাসান জানান, সর্বশেষ অভিযানের সময় বান্দরবানের সীমান্তে মেইন পিলার ৬৭ থেকে ট্রাইজংশন পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালে ১৪ই জুলই দুজন মিয়ানমারের নাগরিককে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্য। এদের মধ্যে একজন অসুস্থ থাকায় তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দুজনই সুস্থ রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির এই উপমহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তে কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী ক্যাম্প নেই। অভিযানের সময় কোন ক্যাম্পও তারা পাননি বলে দাবি করেন তিনি। তবে তিনি জানান, বলিপাড়ায় একটি জুমঘর তারা পেয়েছিলেন। তাদের কাছে জুমচাষি কেউ এ ঘরে থাকতে পারে। তারা ঘরটি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এদিকে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ডেপুটি সার্জেন্ট নাইং টুন এবং প্রাইভেট খিন ল্যাটকে কিছুদিন আগে একটি আরাকানী মিলিশিয়া গ্রুপ অপহরণ করে। তাদের বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তাদের কাছে খবর ছিল। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকেও জানান। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে গত ১৭ই জুন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে নাফ নদীতে বিজিবির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির গোলাগুলি হয়। এতে এক বিজিবি সদস্য গুলিবিদ্ধ হন, আবদুর রাজ্জাক নামে বিজিবির এক নায়েককে ধরে নিয়ে যায় বিজিপি। এক সপ্তাহ ‘টালবাহানার’ পর গত ২৬শে জুন নায়েক রাজ্জাককে দেশে ফিরিয়ে আনে বিজিবি।

No comments

Powered by Blogger.