গাবতলী-বাবুবাজার সড়ক: সমস্যা সোয়ারীঘাটের যানজট by ইমরান আহম্মেদ

মিটফোর্ড এলাকায় বাবুবাজা​েরর কাছে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর
পাশের রাস্তায় দিনের বেলাতেই চলছে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান।
এ কারণে এ এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় l মনিরুল আলম
রাজধানীর সদরঘাট ও এর আশপাশের এলাকা থেকে সহজে অল্প সময়ে গাবতলী যেতে বেড়িবাঁধ সড়কটি চালু করা হয়। এই পথ চালুর অন্যতম লক্ষ্য ছিল রাজধানীর বিভিন্ন ট্রাফিক সংকেত ও যানজট এড়ানো। কিন্তু সড়কটিতে এখন যানজটই প্রধান সমস্যা।
গত সপ্তাহে সরেজমিনে ওই সড়কে দেখা যায়, বাবুবাজারের বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর নিচ থেকে যাত্রী নিয়ে গাবতলীর উদ্দেশে দুটি বাস ছেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সেই দুটি বাস সোয়ারীঘাট এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে।
ওই রুটে চলাচলকারী প্রত্যয় ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের বাসের চালকের সহকারী তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘এই ঘাটগুলার জ্যামই যত সমস্যা। গাবতলী পর্যন্ত পৌনে এক ঘণ্টার পথ। জ্যামে পড়লে যাইতে তিন ঘণ্টাও লাগে।’
যানজাবিল পরিবহনের একটি বাসে করে গাবতলী থেকে সোয়ারীঘাটে এসে নামলেন জায়েদ হোসেন নামের এক যাত্রী। আসতে কতক্ষণ লেগেছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশি সময় লাগে নাই। দেড় ঘণ্টার মতো লাগছে। গাবতলী থেকে সেকশন পর্যন্ত রাস্তায় জ্যাম নাই। ইমামগঞ্জ ঘাট থেকেই জ্যাম শুরু হয়। আর সোয়ারীঘাটের তো কথাই নাই!’
বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর নিচে বাবুবাজার থেকে গাবতলী রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর লাইনম্যান মো. আনসারের ভাষ্য, এই পথে চারটি বাস কোম্পানির ৮০টি মতো বাস চলাচল করে। সড়কে যানজট না থাকলে বাবুবাজার থেকে গাবতলী যেতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু ইমামগঞ্জ ঘাট, সোয়ারীঘাট, ছোট কাটারা ঘাট, নলগলা ঘাট, মিটফোর্ড ঘাট ও পানঘাটে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান থেকে মালামাল তোলা-নামানো ও মানুষের চলাচলের কারণে প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে। এতে বাসগুলোকে কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়।
আনসারের অভিযোগ, এই পথটিতে যেতে কোনো ট্রাফিক সংকেতে পড়তে হয় না। কিন্তু যানজটের কারণে এই পথে চলাচলকারী হানিফ পরিবহন ও এম সিনা পরিবহন তাদের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। যানজট না থাকলে এই পথে যাত্রীসংখ্যা বাড়ত বলেও দাবি করেন তিনি।
ব্রাদার্স পরিবহনের মো. আলী নামের এক বাসচালক বলেন, এই ঘাটগুলোতে রাস্তার ওপর মালবাহী ট্রাক রেখে তা থেকে ঠেলাগাড়িতে মালামাল তোলা হয়। সড়কটি এক লেনের। এমনভাবে ট্রাক রাখা হয়, অন্যান্য যানবাহন যাওয়ার আর কোনো উপায় থাকে না। শুধু ওই ঘাটগুলোর যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আর সমস্যা থাকবে না।
বেড়িবাঁধ ও এর আশপাশের এলাকায় পাঁচ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন জয়নাল আবদিন। তিনি বলেন, এই সড়কের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঘাটগুলোর ঠেলাগাড়ি। ওই গাড়িগুলোতে ট্রাক থেকে ঘাটে ও দোকানে মালামাল আনা-নেওয়া করা হয়। সড়কটির ঘাটের অংশগুলো তেমন প্রশস্ত নয়। এ কারণে যানজট হয়।
সরেজমিনে সোয়ারীঘাটে দেখা যায়, অনেক লোক নৌকা দিয়ে ঘাটটি পার হচ্ছে। ঘাটের ও ইসলামপুর সড়কের প্রবেশমুখে রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ট্রাক থামিয়ে রাখা হয়েছে। সড়ক বন্ধ করেই এক কয়েকজন শ্রমিক ঠেলাগাড়িতে গাছের গুঁড়ি তুলছেন।
সড়ক বন্ধ করে মালামাল তুলছেন কেন—এ প্রশ্নের জবাবে আবদুল হক নামের এক ঠেলাগাড়ি-শ্রমিক বললেন, ‘আর তো জায়গা নাই। মালামাল নিমু ক্যামনে। এমনেই তো সবাই কাম করে।’
ওই ঘাটের একটু পশ্চিম পাশেই রাস্তার ওপর ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে। এতে রাস্তাটির প্রস্থ অর্ধেকটা সংকুচিত হয়ে গেছে। সোয়ারীঘাট থেকে ইমামগঞ্জ ঘাটের দিকে সড়কের ওপর ডাস্টবিন রেখে দেওয়া হয়েছে। রাস্তার পাশের ভাঙারির দোকানগুলো বড় বড় বস্তায় মালামাল ভরে সড়ক দখল করে রেখেছে। একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে সড়ক দখল করে ট্রাক থামিয়ে রাখা হয়েছে।
সোয়ারীঘাটে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শাকিল বলেন, মালামাল ওঠানো-নামানোর কারণে সোয়ারীঘাটে যানজট হয়। দেখা যায়, সড়কের ওপর ঠেলাগাড়ি, ভ্যান, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রাখা হয়েছে। এতেই যানজট হয়। ওই এলাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ আছে কি না—প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, আসলে ওই ঘাটগুলোতে ওভাবে পুলিশ ডিউটি দেওয়া হয় না। তবে কোনো সমস্যা হলে পুলিশ দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.