গোলাপবাগ মাঠজুড়ে নির্মাণসামগ্রী: মাঠটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর by সামছুর রহমান

রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ২০০৬ সাল থেকে মেয়র মোহাম্মদ
হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। এলাকাবাসী
মাঠটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন l প্রথম আলো
রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠটি ২০০৬ সাল থেকে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের (উড়ালসড়ক) নির্মাণসামগ্রী রাখার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে মাঠটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু নয় বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুনরায় মাঠ ব্যবহারের সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা গেছে, গোলাপবাগ মাঠটির আয়তন ৪ দশমিক ৫২ একর। পুরো মাঠটিতে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ২০০৬ সাল থেকে উড়ালসড়কের নির্মাণসামগ্রী রাখছে। উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলেও এর নিচের ছোটখাটো কিছু কাজ বাকি আছে।
গত শুক্রবার গোলাপবাগ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে উড়ালসড়ক বানানোর কাজে ব্যবহৃত ক্রেন, মাটি কাটার যন্ত্রসহ বিভিন্ন ভারী যন্ত্রপাতি ও যানবাহন রাখা হয়েছে। মাঠের এক পাশে আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টিন দিয়ে বানানো কার্যালয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ইয়ামিন আহমেদ বলেন, এমন জনবহুল এলাকায় কোনো খেলার মাঠ নেই। আগে এ মাঠে ঈদের নামাজ পড়ানো হতো। এ ছাড়া নানান সামাজিক কাজেও এটি ব্যবহার করা হতো। মাঠটি নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন।
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরিয়ন গ্রুপের মাঠ ব্যবহারের সময় শেষ হয়েছে এ বছরের ৩০ জুন। তাদেরকে নির্মাণসামগ্রীগুলো সরিয়ে নিতে বলেছি। কিন্তু তারা সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে।’
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, গোলাপবাগ মাঠ থেকে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার জন্য ওরিয়ন এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। আবেদনটির বিষয়ে মতামত জানানোর জন্য সিটি করপোরেশনের আইন বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এবার সময় বাড়ানো হলেও সেপ্টেম্বরের মধ্যে মাঠ খালি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ওরিয়নের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শাহ্জাহান আলী পাটোয়ারী বলেন, ‘প্রকল্পের বিদেশি ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিতে বলা ছিল, কিছু নির্মাণসামগ্রী তারা ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা হয়েছিল। সে কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। এখন সেসব জটিলতার সমাধান হওয়ায় তারা নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিতে শুরু করেছে।’
তবে ওরিয়ন নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিলেও সিটি করপোরেশন মাঠের পুরো অংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে না বলে জানিয়েছে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ৪ দশমিক ৫২ একরের গোলাপবাগ মাঠের দুই একর জায়গাজুড়ে সিটি করপোরেশন সড়কে ব্যবহৃত বিটুমিন রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট (পুনর্ব্যবহার করার) গড়ে তুলবে। আর বাকি ২ দশমিক ৫২ একর মাঠ জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
গোলাপবাগ মাঠটি ডিএসসিসির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মাঠটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার এলাকাবাসীর দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কাউন্সিলর বাদল সরকার গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঠ থাকলে এলাকার কিশোর-তরুণেরা খেলাধুলা করতে পারে। সামাজিক কাজেও ব্যবহার করা যায়। নাগরিক সেবার অংশ হিসেবে অবিলম্বে মাঠটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে মেয়রকে জানিয়েছি।’

No comments

Powered by Blogger.