ইরানের সঙ্গে ছয় দেশের ‘সমঝোতা’
অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় আলোচনার টেবিলে কূটনীতিকেরা। -রয়টার্স |
ইরানের
পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে আজ মঙ্গলবার তেহরানের সঙ্গে একটি সমঝোতায়
পৌঁছেছে ছয় বিশ্বশক্তি। কূটনীতিকদের উদ্ধৃতির বরাত দিয়ে আজ মঙ্গলবার বিবিসি
অনলাইনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায়
ইরান এবং ছয় বিশ্বশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও
জার্মানির মধ্যে এই সমঝোতা হয়। নাম প্রকাশ না করে এক পশ্চিমা কূটনীতিক
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শেষ বাধা দূর হয়েছে। নাম প্রকাশ না
করে ইরানের দুজন কূটনীতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, একটি চুক্তিতে
পৌঁছানো গেছে।
গত সোমবার মধ্যরাতের আগেই পাশ্চাত্যের সঙ্গে তেহরানের একটি চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে এই সময়সীমা আজ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সমঝোতায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টেনে ধরার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। চুক্তিটির মধ্য দিয়ে ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পাশ্চাত্যের গত ১৩ বছর ধরে চলা বিরোধের অবসান ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশ্চাত্যের সন্দেহ, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। ইরান বরাবরই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
গত সোমবার মধ্যরাতের আগেই পাশ্চাত্যের সঙ্গে তেহরানের একটি চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে এই সময়সীমা আজ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সমঝোতায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টেনে ধরার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। চুক্তিটির মধ্য দিয়ে ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পাশ্চাত্যের গত ১৩ বছর ধরে চলা বিরোধের অবসান ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশ্চাত্যের সন্দেহ, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। ইরান বরাবরই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ইরান–পাশ্চাত্য বিরোধের কালপঞ্জি
২০০২-২০০৪: গোপন রাখা পরমাণু স্থাপনার তথ্য প্রকাশ
২০০২ সালের আগস্ট মাসে একটি ইরানি নির্বাসিত গোষ্ঠী দেশটির গোপন রাখা পরমাণু স্থাপনার তথ্য প্রকাশ করে। ইরান তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) আমন্ত্রণ জানায়। পাশাপাশি বলে, তার কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
২০০৩ সালে ইরান যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে সন্দেহভাজন কর্মসূচি স্থগিত করতে একমত হয়। তবে পরের বছর প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যায়।
২০০৪ সালে আইএইএ বলে, তারা ইরানের গোপন অস্ত্র কর্মসূচির কোনো প্রমাণ পায়নি। তবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি এমন কোনো উপকরণ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্যারিসে আলোচনায় ইরান আবারও কিছু কার্যক্রম স্থগিত করতে সম্মত হয়।
২০০৫-২০০৮: উত্তেজনা ও সমৃদ্ধকরণ
২০০৫ সালের আগস্টে কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমদিনেজাদের আমলে তেহরান ইউরেনিয়াম গ্যাস উৎপাদন করে। এটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার আগের ধাপ। সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পরমাণু বোমার মূল উপকরণ। ইউরোপীয় দেশগুলো আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।
২০০৬ সালে ইরান তার নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় আইএইএর বসানো সিল ভেঙে সমৃদ্ধকরণ শুরু করে। আইএইএ ইরানের বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে। জুলাই মাসে নিরাপত্তা পরিষদ ছয়টি প্রস্তাবের প্রথমটি পাস করে।
আগস্ট মাসে আহমদিনেজাদ আরাকে একটি হেভি ওয়াটার প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেন। এতে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়, ইরান হয়তো অস্ত্র তৈরির উপযোগী মানের প্লুটোনিয়াম তৈরির চেষ্টা করছে। ডিসেম্বরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দ্বিতীয় প্রস্তাবের মাধ্যমে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়।
২০০৭ সালের নভেম্বর নাগাদ ইরান বলে, তার কাছে সমৃদ্ধ করার জন্য অন্তত তিন হাজার সেন্ট্রিফিউজ আছে। তত্ত্বগতভাবে এ দিয়ে এক বছরের কম সময়ের মধ্যে পরমাণু বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করা সম্ভব। এখন ইরানের হাতে সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এর অর্ধেক সক্রিয়।
২০০৭ সালে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান ২০০৩ সালে পরমাণু অস্ত্র তৈরির উদ্যোগ বাদ দিয়েছে। তবে আবার কর্মসূচি শুরু করার পথ খোলা রেখেছে।
২০০৯-২০১২: অগ্রগতির চেষ্টা ও অভিযোগ
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন, ফরাসি ও ব্রিটিশ নেতারা ঘোষণা করেন, ইরান ফোর্দোতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা তৈরি করছে আগে যার ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
অক্টোবরে ইরান চুল্লির জ্বালানির বিনিময়ে কম সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বদলাতে রাজি হয়। কিন্তু সমঝোতাটি ঝুলে যায়। ২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে ইরান প্রায় বোমার মাত্রায় সমৃদ্ধকরণ শুরু করে। তবে দেশটি দাবি করে, পরমাণু চিকিৎসার জন্যই তা করা হচ্ছে। আরেকটি জ্বালানি বদলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ২০১১ সালে বুশেহর পরমাণু জ্বালানি চুল্লি কাজ শুরু করে। ২০১১ সালের নভেম্বরে আইএইএ দাবি করে, ইরান অন্তত ২০০৩ সাল পর্যন্ত পরমাণু বোমা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপ চালিয়েছে। পরের মাসে মার্কিন কংগ্রেস ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করা ঋণদাতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জানুয়ারি মাসে ইইউ-এর সব সদস্য দেশের ওপর ইরানের তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
২০১৩-২০১৫: গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
নবনির্বাচিত ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ২০১৩ সালে অঙ্গীকার করে বলেন, তিনি ‘আন্তরিক’ আলোচনার জন্য তৈরি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর নজিরবিহীন ফোনালাপ হয়। নভেম্বর মাসে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে কিছু ছোটখাটো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান কিছু পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত করে। চূড়ান্ত চুক্তির জন্য দুটি সময়সীমা (জুলাই ও নভেম্বর ২০১৪) হাতে নিয়েও পূরণে ব্যর্থ হন আলোচকেরা
২০১৫ সালের এপ্রিলে সুইজারল্যান্ডের আলোচনায় ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তি একটি চূড়ান্ত চুক্তির রূপরেখার বিষয়ে একমত হন। জুনের শেষ দিকে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়। তবে টানা ১৮ দিনের আলোচনার মধ্যে কয়েকবার সময়সীমা স্থির করেও তা রাখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত সাফল্য আসে গতকাল মঙ্গলবার।
সূত্র: এএফপি
২০০২ সালের আগস্ট মাসে একটি ইরানি নির্বাসিত গোষ্ঠী দেশটির গোপন রাখা পরমাণু স্থাপনার তথ্য প্রকাশ করে। ইরান তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) আমন্ত্রণ জানায়। পাশাপাশি বলে, তার কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
২০০৩ সালে ইরান যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে সন্দেহভাজন কর্মসূচি স্থগিত করতে একমত হয়। তবে পরের বছর প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যায়।
২০০৪ সালে আইএইএ বলে, তারা ইরানের গোপন অস্ত্র কর্মসূচির কোনো প্রমাণ পায়নি। তবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি এমন কোনো উপকরণ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্যারিসে আলোচনায় ইরান আবারও কিছু কার্যক্রম স্থগিত করতে সম্মত হয়।
২০০৫-২০০৮: উত্তেজনা ও সমৃদ্ধকরণ
২০০৫ সালের আগস্টে কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমদিনেজাদের আমলে তেহরান ইউরেনিয়াম গ্যাস উৎপাদন করে। এটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার আগের ধাপ। সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পরমাণু বোমার মূল উপকরণ। ইউরোপীয় দেশগুলো আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।
২০০৬ সালে ইরান তার নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় আইএইএর বসানো সিল ভেঙে সমৃদ্ধকরণ শুরু করে। আইএইএ ইরানের বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে। জুলাই মাসে নিরাপত্তা পরিষদ ছয়টি প্রস্তাবের প্রথমটি পাস করে।
আগস্ট মাসে আহমদিনেজাদ আরাকে একটি হেভি ওয়াটার প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেন। এতে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়, ইরান হয়তো অস্ত্র তৈরির উপযোগী মানের প্লুটোনিয়াম তৈরির চেষ্টা করছে। ডিসেম্বরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দ্বিতীয় প্রস্তাবের মাধ্যমে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়।
২০০৭ সালের নভেম্বর নাগাদ ইরান বলে, তার কাছে সমৃদ্ধ করার জন্য অন্তত তিন হাজার সেন্ট্রিফিউজ আছে। তত্ত্বগতভাবে এ দিয়ে এক বছরের কম সময়ের মধ্যে পরমাণু বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করা সম্ভব। এখন ইরানের হাতে সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এর অর্ধেক সক্রিয়।
২০০৭ সালে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান ২০০৩ সালে পরমাণু অস্ত্র তৈরির উদ্যোগ বাদ দিয়েছে। তবে আবার কর্মসূচি শুরু করার পথ খোলা রেখেছে।
২০০৯-২০১২: অগ্রগতির চেষ্টা ও অভিযোগ
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন, ফরাসি ও ব্রিটিশ নেতারা ঘোষণা করেন, ইরান ফোর্দোতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা তৈরি করছে আগে যার ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
অক্টোবরে ইরান চুল্লির জ্বালানির বিনিময়ে কম সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বদলাতে রাজি হয়। কিন্তু সমঝোতাটি ঝুলে যায়। ২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে ইরান প্রায় বোমার মাত্রায় সমৃদ্ধকরণ শুরু করে। তবে দেশটি দাবি করে, পরমাণু চিকিৎসার জন্যই তা করা হচ্ছে। আরেকটি জ্বালানি বদলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ২০১১ সালে বুশেহর পরমাণু জ্বালানি চুল্লি কাজ শুরু করে। ২০১১ সালের নভেম্বরে আইএইএ দাবি করে, ইরান অন্তত ২০০৩ সাল পর্যন্ত পরমাণু বোমা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপ চালিয়েছে। পরের মাসে মার্কিন কংগ্রেস ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করা ঋণদাতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জানুয়ারি মাসে ইইউ-এর সব সদস্য দেশের ওপর ইরানের তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
২০১৩-২০১৫: গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
নবনির্বাচিত ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ২০১৩ সালে অঙ্গীকার করে বলেন, তিনি ‘আন্তরিক’ আলোচনার জন্য তৈরি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর নজিরবিহীন ফোনালাপ হয়। নভেম্বর মাসে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে কিছু ছোটখাটো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান কিছু পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত করে। চূড়ান্ত চুক্তির জন্য দুটি সময়সীমা (জুলাই ও নভেম্বর ২০১৪) হাতে নিয়েও পূরণে ব্যর্থ হন আলোচকেরা
২০১৫ সালের এপ্রিলে সুইজারল্যান্ডের আলোচনায় ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তি একটি চূড়ান্ত চুক্তির রূপরেখার বিষয়ে একমত হন। জুনের শেষ দিকে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়। তবে টানা ১৮ দিনের আলোচনার মধ্যে কয়েকবার সময়সীমা স্থির করেও তা রাখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত সাফল্য আসে গতকাল মঙ্গলবার।
সূত্র: এএফপি
No comments