শিশু পরিবারের দুই শিক্ষার্থীকে পিটুনি, কম্পাউন্ডার বরখাস্ত

১০ বছর বয়সী ডালিয়া থাকে বরিশাল সরকারি শিশু পরিবার বালিকা (উত্তর) শাখায়। ৪ জুলাই মা এসেছিল তার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু এখানে থাকতে মন চায় না ডালিয়ার। তাই বায়না ধরেছিল মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাওয়ার। কিন্তু মা নিয়ে না যাওয়ায় শিশু পরিবার থেকে কাউকে কিছু না বলেই বের হয়ে যায় ডালিয়া। সঙ্গে তার আরেক বান্ধবী আঁখি। এই কারণে এই দুজনকে পিটুনি দেন শিশু পরিবারের কম্পাউন্ডার মো. দুলাল।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কম্পাউন্ডার মো. দুলাল মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যর কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মুঠোফোনের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান কম্পাউন্ডার দুলালকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন।
শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ইসমত আরা খানম জানান, ঘটনার দিন সকাল ৯টায় ডালিয়ার মা বিউটি বেগম মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। চলে যাওয়ার সময় ডালিয়া মায়ের সঙ্গে যেতে চায়। এর পর কাউকে কিছু না বলেই বের হয়ে যায় ডালিয়া। কম্পাউন্ডার মো. দুলাল ডালিয়াকে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে দেখতে পেয়ে সদনে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু সদনে এসে ডালিয়াকে না পেয়ে খুঁজতে থাকেন। পরে ডালিয়ার সঙ্গে আঁখিকে সাগরদী বাজারের একটি মুঠোফোনের দোকানে দেখতে পাওয়া যায়। তাদের দুজনকে ডেকে এনে দুলাল মিয়া ভয় দেখানোর জন্য শাসিয়েছেন এমন কথা বলেছে দুই শিশু। একই কথা জানান, নিবন্ধন কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেনও।
গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর দুপুর একটায় জেলা প্রশাসক গাজী সাইফুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। শরীরে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও নির্যাতনের শিকার দুই শিশু তাদের লাঠি দিয়ে শাসানো হয়েছে এমন তথ্য দিয়েছে। কিন্তু ভিডিওচিত্রে মারধর করা এবং মারধরের হাত থেকে বাঁচার জন্য শিশু দুটির আর্তনাদ শোনা গেছে।
তবে আজ জেলা প্রশাসক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশু পরিবারের দুই শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে। এর প্রমাণ পাওয়ার পর কম্পাউন্ডার মো. দুলাল মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গতকাল (মঙ্গলবার) সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ফ্যাক্স বার্তায় সাময়িক বরখাস্তের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করে তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
সমাজসেবা অধিদপ্তর বরিশাল কার্যালয় জানায়, কমিটির সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল কালাম আজাদ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সুখময় সরকার, সমাজসেবা অধিদপ্তর বরিশালের প্রভিশন কর্মকর্তা সাজ্জাত পারভেজ, সরকারি শিশু পরিবার (উত্তর) উপ-তত্ত্বাবধায়ক ইসমত আরা খানম, নিবাসের খণ্ডকালীন চিকিৎসক মো. রশিদ।
কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। নিবাসের সব কর্মকর্তাদের নোটিশ করা হয়েছে। কাল বৃহস্পতিবার সাড়ে ১০টায় সদনের কর্মকর্তা ও নিবাসীদের সঙ্গে কথা বলা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

No comments

Powered by Blogger.