ঈদযাত্রা এখনো নির্বিঘ্নঃ বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে আগের মতোই

কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া অনেক
ট্রেনের ছাদেও গতকাল যাত্রী ছিল পূর্ণl প্রথম আলো
রাজধানী ঢাকা ফাঁকা হতে শুরু করেছে। টানা কয়েক দিনের যানজট গতকাল কিছুটা হলেও কমে এসেছে। আন্তনগর ট্রেনের বেশির ভাগই গতকাল সময় মেনে চলেছে। দূরপাল্লার পথে এখনো বড় ধরনের যানজট হয়নি। তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আগের মতোই।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামের একটি সংগঠন অভিযোগ করেছে, এবার সড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। কাল জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের মুখোমুখি যাত্রীরা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই অভিযোগ করা হয়।
গতকাল সকাল থেকেই গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ভিড় দেখা যায়। সন্ধ্যায় মানুষের স্রোত আরও বাড়ে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতেও যাত্রী পূর্ণ ছিল।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত ৫০টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। আন্তনগর ট্রেন চলেছে ২৩টি। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরিতে ছেড়ে যায়। এই ট্রেনটি গত সোমবারও তিন ঘণ্টা দেরিতে গেছে। নীলফামারীর পথে নীলসাগর এক্সপ্রেস গেছে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরিতে।
কাল বেলা তিনটার দিতে রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেনে চড়ে ঈদযাত্রীদের সঙ্গে বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত যান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। এ সময় রেলের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে কল্যাণপুরে গিয়ে শ্যামলী ও এস আর পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের সামনে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের সামনে বসে ছিলেন একটি শিপিং কোম্পানির প্রকৌশলী মোকসেদুল হক ও তাঁর ভাই মনোয়ারুল হক। মোকসেদুল জানান, তিনি জাপান থেকে কালই এসেছেন। ছোট ভাই টিকিট কেটে রেখেছিলেন। এখন বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। মনোয়ারুল জানান, গাইবান্ধার টিকিট ৫২০ টাকা করে কেটেছেন। অন্য সময় এই পথে ভাড়া সাড়ে ৪০০ টাকা। এখন সড়কপথে যানজট নেই বলে তিনি জানান।
বাড়তি ভাড়া: যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে ১১টি দল গঠন করা হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঈদের আগে-পরের ১৫ দিনে সড়কপথে ৬ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ সময় নৌপথে বাড়তি ভাড়া আদায়ের পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকা।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, লাইন দিয়ে সাধারণ মানুষ ট্রেনের টিকিট পায়নি। এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কালোবাজারিরা টিকিট হাতিয়ে নিয়ে বেশি দামে তা যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছে। এর ফলে ৭৭৫ কোটি টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। সব মিলিয়ে তিন পথের যাত্রীদের ঈদের ১৫ দিনে ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে।
এই সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ভাড়া-নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে এবং দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এটা বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে এবং যাত্রীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.