ভারতে ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি ও চাতক পাখির ব্রডব্যান্ড by মুনির হাসান
বাংলাদেশে
এখন অনেক কিছুই উদ্বৃত্ত। এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন ইন্টারনেট
ব্যান্ডউইডথ। গত ৭ জুন ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় ব্যান্ডউইডথ
রপ্তানির একটি চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন
কেব্ল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন এবং ভারতের ভারত সঞ্চর
নিগম লিমিটেডের (ভিএসএলএন) চেয়ারম্যান অনুপম শ্রীবাস্তব এই চুক্তি স্বাক্ষর
করেন (ডেইলি স্টার, ৭ জুন ২০১৫)। সংবাদে বলা হয়েছে, এই ব্যান্ডউইডথের দাম
সেকেন্ডে প্রতি মেগাবিটের (এমবিপিএস) জন্য ১০ ডলার (কমবেশি ৭৯০ টাকা) এবং
প্রতি তিন মাসের টাকা ভারতীয় সংস্থা অগ্রিম হিসাবে দিয়ে দেবে। প্রতিবছর
সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি ৯ দশমিক ৬ কোটি টাকা আয় করবে এই খাতে। ভবিষ্যতে এর
পরিমাণ প্রতি সেকেন্ডে ৪০ গিগাবাইট পর্যন্ত হতে পারে।
সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানির বর্তমানে মোট ক্ষমতা প্রতি সেকেন্ডে ২০০ গিগাবাইট (জিবিপিএস), যার মধ্যে ৩৩ জিবিপিএস দেশে ব্যবহৃত হয়। অবশ্য এই ৩৩ গিগাবাইটের মধ্যে মাত্র ১৫ গিগাবাইট ব্যবহৃত হয় ইন্টারনেটের জন্য, বাকিটা ভয়েস ও অন্যান্য কাজে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এই কেবলের আয়ু শেষ হয়ে যাবে, তাই পড়ে থাকা এই বিশাল ব্যান্ডউইডথ রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পড়ে থাকা কোনো কিছু রপ্তানি করে যদি কিছু আয়-বরকত হয়, তাহলে সেটা নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কোনো কারণ নেই। আমারও নেই। তবে প্রশ্ন উঠেছে রপ্তানিমূল্য নিয়ে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট যুক্ত হয় ২০০৫ সালে। সে সময় এতে খরচ হয়েছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি পরের তিন বছরে আয় করে ফেলে। কাজেই তারপর থেকে এই খাতে তার আয়ের বড় অংশই মুনাফা। তারপরও সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি তার ব্যান্ডউইডথের দাম বেশি কমিয়েছে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যদি আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে তুলনা করি। ২০০৫ সালে প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথের বিক্রয়মূল্য ছিল ৭৫ হাজার টাকা। গত ১১ বছরে এই মূল্য কমে হয়েছে ১ হাজার ৯৬৯ টাকা। (সূত্র: সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানির ওয়েবসাইট)।
সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি দুই ধরনের গ্রাহকের কাছে তাদের ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করে। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে বা আইআইজি যারা কিনা আবার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) কাছে ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করে। আর আইএসপিগুলো সাধারণ গ্রাহকদের কাছে তার বা তারবিহীন পদ্ধতিতে ব্যান্ডউইডথ পৌঁছে দেয়। সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি আইআইজির কাছে প্রতি মেগাবিট ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করে ১ হাজার ৩৩৬ টাকা হিসাবে এবং আইএসপিদের কাছে বিক্রি করে ১ হাজার ৯৬৯ টাকা করে। আইএসপিরা এই টাকায় ব্যান্ডউইডথ কিনতে পারে ঢাকার তেজগাঁও থেকে। এখন তেজগাঁও থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত এই ব্যান্ডউইডথ নিতে হলে এনটিটিএন লাইসেন্স আছে এমন কোনো সংস্থাকে মেগাবিট-প্রতি দিতে হয় কমবেশি ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ ঢাকার বাইরে প্রতি মেগাবিটের ক্রয়মূল্য দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৩১৯ টাকা। ঢাকা থেকে ব্যান্ডউইডথ টেনে নিয়ে যাওয়ার এই খরচ কেবল বেশি ব্যান্ডউইডথের বেলায় প্রযোজ্য। এমনিতে ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে ব্যান্ডউইডথ টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য কখনো কখনো প্রতি মেগাবিটের ছয় হাজার টাকাও গুনতে হয় স্থানীয় আইএসপিদের।
অথচ ত্রিপুরাকে সেটি দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৭৯০ টাকায়। শুধু তাই নয়, সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি নিজের খরচে ঢাকা থেকে সেই ব্যান্ডউইডথ পৌঁছে দেবে ত্রিপুরা সীমান্তে। অর্থাৎ ওই সীমান্তের কাছে বাংলাদেশি কোনো আইএসপি যে ব্যান্ডউইডথ কিনত ২ হাজার ৩১৯ টাকায়, সেটা সীমান্তের ওপারের সংস্থাটি পেয়ে যাচ্ছে ৭৯০ টাকায়।
এর একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে, সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি ৮০০ টাকায় ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করলেও তার প্রাপ্য মুনাফা ঠিক থাকে। যদি তাই-ই হবে, তাহলে আমার একটাই দাবি সেটি হলো, সারা দেশে দেশীয় সব কোম্পানির জন্য এই ব্যান্ডউইডথের দাম ৭৯০ টাকা করে দেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে দ্রুত কিন্তু আমাদের ব্যান্ডউইডথের চাহিদা বাড়বে।
দেশে বর্তমানে ব্যান্ডউইডথের চাহিদা সেকেন্ডে ১১৫ গিগাবাইটের বেশি। এর মাত্র ১৫ জিবিপিএস সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি দেয়। বাকি ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করে ছয়টি আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেব্ল) কোম্পানি, যারা কিনা ওই ব্যান্ডউইডথ আমদানি করে আনে ভারতের মুম্বাই থেকে। এই আমদানি করা ব্যান্ডউইডথের পর লাভ এবং রাজস্ব শেয়ারিংয়ের পর তার বিক্রয়মূল্য হয় সেকেন্ডে প্রতি মেগাবিট ৭০০-৮০০ টাকা! এ কারণে আইএসপিগুলো আইটিসির কাছ থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনছে বেশি, সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানিকে বাদ দিয়ে।
এখন দেখা যাচ্ছে সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানিও একই দামে ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করতে পারে। যদি তাই-ই করে, তাহলে ব্রডব্যান্ডের প্রসার আরও বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার নিজের ধারণা, এই দাম কমানোর ফলে রাতারাতি ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাবে। কারণ, আইএসপিগুলো তখন তাদের বর্তমান বাজেটেই এখনকার চেয়ে তিন গুণ বেশি ব্যান্ডউইডথ পাবে।
এর পাশাপাশি দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের প্রসার ঘটানোর জন্য আরও অনেক উদ্যোগ দরকার। কারণ, ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ আসলে একটি ব্রডব্যান্ড গ্রাম। কোথাও নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই একটি বড় উদ্যোগ নিতে হবে। একটি দুই বছর মেয়াদি উদ্যোগ হতে পারে, দেশের সব জেলা ও উপজেলা সদরে ৫০০ থেকে ৬০০ বিনা তারেরও বিনা মূল্যের ব্রডব্যান্ড সেবা চালু করা। সরকারের কাজ হবে এই সেবাগুলো চালু করে সেখানে দুই বছরের জন্য ব্যান্ডউইডথ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দেওয়া। তবে এই সেবাগুলো নামকাওয়াস্তে চালু করলে হবে না। কমপক্ষে সেকেন্ডে ১০ মেগাবিট ব্যান্ডউইডথের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই এই সেবা চালু রাখার জন্য তা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে তারাই এটি চালু রাখবে। অন্যদিকে, এই কার্যক্রমের ফলে প্রতিটি স্থানে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। ফলে ইন্টারনেট সেবাদানকারী সংস্থাও বাণিজ্যিকভাবে সেবা দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই কার্যক্রম সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য সরকারকে কোনো দাতা সংস্থার কাছে হাত পাততে হবে না। দেশের মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী অপারেটররা সোশ্যাল অবলিগেটরি সার্ভিস ফান্ডে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার মতো জমা দেন। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এই টাকা নিয়ে বসে আছে। গত কয়েক বছরে এই খাতে কমপক্ষে কয়েক শ কোটি টাকা জমা হয়েছে, কিন্তু কোনো টাকা খরচ হয়নি। এই টাকা থেকেই সারা দেশের এই হট স্পটগুলো তৈরি করে ফেলা সম্ভব। পাবলিক স্পটের পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় কলেজগুলোতেও এই বিনা মূল্যের ব্রডব্যান্ড সেবা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
কাজেই রপ্তানিযোগ্য হলে রপ্তানি করা হোক, তবে তার পাশাপাশি দেশের সবখানে সাধারণের নাগাল মূল্যে ব্রডব্যান্ড ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগটাও আমরা দেখতে চাই।
নতুবা নতুন প্রজন্মের ব্রডব্যান্ডের জন্য কেবল চাতক পাখির মতো অপেক্ষা অপেক্ষাই থেকে যাবে।
মুনির হাসান: যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক, প্রথম আলো।
সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানির বর্তমানে মোট ক্ষমতা প্রতি সেকেন্ডে ২০০ গিগাবাইট (জিবিপিএস), যার মধ্যে ৩৩ জিবিপিএস দেশে ব্যবহৃত হয়। অবশ্য এই ৩৩ গিগাবাইটের মধ্যে মাত্র ১৫ গিগাবাইট ব্যবহৃত হয় ইন্টারনেটের জন্য, বাকিটা ভয়েস ও অন্যান্য কাজে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এই কেবলের আয়ু শেষ হয়ে যাবে, তাই পড়ে থাকা এই বিশাল ব্যান্ডউইডথ রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পড়ে থাকা কোনো কিছু রপ্তানি করে যদি কিছু আয়-বরকত হয়, তাহলে সেটা নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কোনো কারণ নেই। আমারও নেই। তবে প্রশ্ন উঠেছে রপ্তানিমূল্য নিয়ে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট যুক্ত হয় ২০০৫ সালে। সে সময় এতে খরচ হয়েছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি পরের তিন বছরে আয় করে ফেলে। কাজেই তারপর থেকে এই খাতে তার আয়ের বড় অংশই মুনাফা। তারপরও সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি তার ব্যান্ডউইডথের দাম বেশি কমিয়েছে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যদি আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে তুলনা করি। ২০০৫ সালে প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথের বিক্রয়মূল্য ছিল ৭৫ হাজার টাকা। গত ১১ বছরে এই মূল্য কমে হয়েছে ১ হাজার ৯৬৯ টাকা। (সূত্র: সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানির ওয়েবসাইট)।
সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি দুই ধরনের গ্রাহকের কাছে তাদের ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করে। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে বা আইআইজি যারা কিনা আবার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) কাছে ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করে। আর আইএসপিগুলো সাধারণ গ্রাহকদের কাছে তার বা তারবিহীন পদ্ধতিতে ব্যান্ডউইডথ পৌঁছে দেয়। সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি আইআইজির কাছে প্রতি মেগাবিট ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করে ১ হাজার ৩৩৬ টাকা হিসাবে এবং আইএসপিদের কাছে বিক্রি করে ১ হাজার ৯৬৯ টাকা করে। আইএসপিরা এই টাকায় ব্যান্ডউইডথ কিনতে পারে ঢাকার তেজগাঁও থেকে। এখন তেজগাঁও থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত এই ব্যান্ডউইডথ নিতে হলে এনটিটিএন লাইসেন্স আছে এমন কোনো সংস্থাকে মেগাবিট-প্রতি দিতে হয় কমবেশি ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ ঢাকার বাইরে প্রতি মেগাবিটের ক্রয়মূল্য দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৩১৯ টাকা। ঢাকা থেকে ব্যান্ডউইডথ টেনে নিয়ে যাওয়ার এই খরচ কেবল বেশি ব্যান্ডউইডথের বেলায় প্রযোজ্য। এমনিতে ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে ব্যান্ডউইডথ টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য কখনো কখনো প্রতি মেগাবিটের ছয় হাজার টাকাও গুনতে হয় স্থানীয় আইএসপিদের।
অথচ ত্রিপুরাকে সেটি দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৭৯০ টাকায়। শুধু তাই নয়, সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি নিজের খরচে ঢাকা থেকে সেই ব্যান্ডউইডথ পৌঁছে দেবে ত্রিপুরা সীমান্তে। অর্থাৎ ওই সীমান্তের কাছে বাংলাদেশি কোনো আইএসপি যে ব্যান্ডউইডথ কিনত ২ হাজার ৩১৯ টাকায়, সেটা সীমান্তের ওপারের সংস্থাটি পেয়ে যাচ্ছে ৭৯০ টাকায়।
এর একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে, সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি ৮০০ টাকায় ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করলেও তার প্রাপ্য মুনাফা ঠিক থাকে। যদি তাই-ই হবে, তাহলে আমার একটাই দাবি সেটি হলো, সারা দেশে দেশীয় সব কোম্পানির জন্য এই ব্যান্ডউইডথের দাম ৭৯০ টাকা করে দেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে দ্রুত কিন্তু আমাদের ব্যান্ডউইডথের চাহিদা বাড়বে।
দেশে বর্তমানে ব্যান্ডউইডথের চাহিদা সেকেন্ডে ১১৫ গিগাবাইটের বেশি। এর মাত্র ১৫ জিবিপিএস সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি দেয়। বাকি ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করে ছয়টি আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেব্ল) কোম্পানি, যারা কিনা ওই ব্যান্ডউইডথ আমদানি করে আনে ভারতের মুম্বাই থেকে। এই আমদানি করা ব্যান্ডউইডথের পর লাভ এবং রাজস্ব শেয়ারিংয়ের পর তার বিক্রয়মূল্য হয় সেকেন্ডে প্রতি মেগাবিট ৭০০-৮০০ টাকা! এ কারণে আইএসপিগুলো আইটিসির কাছ থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনছে বেশি, সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানিকে বাদ দিয়ে।
এখন দেখা যাচ্ছে সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানিও একই দামে ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করতে পারে। যদি তাই-ই করে, তাহলে ব্রডব্যান্ডের প্রসার আরও বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার নিজের ধারণা, এই দাম কমানোর ফলে রাতারাতি ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাবে। কারণ, আইএসপিগুলো তখন তাদের বর্তমান বাজেটেই এখনকার চেয়ে তিন গুণ বেশি ব্যান্ডউইডথ পাবে।
এর পাশাপাশি দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের প্রসার ঘটানোর জন্য আরও অনেক উদ্যোগ দরকার। কারণ, ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ আসলে একটি ব্রডব্যান্ড গ্রাম। কোথাও নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই একটি বড় উদ্যোগ নিতে হবে। একটি দুই বছর মেয়াদি উদ্যোগ হতে পারে, দেশের সব জেলা ও উপজেলা সদরে ৫০০ থেকে ৬০০ বিনা তারেরও বিনা মূল্যের ব্রডব্যান্ড সেবা চালু করা। সরকারের কাজ হবে এই সেবাগুলো চালু করে সেখানে দুই বছরের জন্য ব্যান্ডউইডথ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দেওয়া। তবে এই সেবাগুলো নামকাওয়াস্তে চালু করলে হবে না। কমপক্ষে সেকেন্ডে ১০ মেগাবিট ব্যান্ডউইডথের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই এই সেবা চালু রাখার জন্য তা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে তারাই এটি চালু রাখবে। অন্যদিকে, এই কার্যক্রমের ফলে প্রতিটি স্থানে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। ফলে ইন্টারনেট সেবাদানকারী সংস্থাও বাণিজ্যিকভাবে সেবা দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই কার্যক্রম সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য সরকারকে কোনো দাতা সংস্থার কাছে হাত পাততে হবে না। দেশের মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী অপারেটররা সোশ্যাল অবলিগেটরি সার্ভিস ফান্ডে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার মতো জমা দেন। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এই টাকা নিয়ে বসে আছে। গত কয়েক বছরে এই খাতে কমপক্ষে কয়েক শ কোটি টাকা জমা হয়েছে, কিন্তু কোনো টাকা খরচ হয়নি। এই টাকা থেকেই সারা দেশের এই হট স্পটগুলো তৈরি করে ফেলা সম্ভব। পাবলিক স্পটের পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় কলেজগুলোতেও এই বিনা মূল্যের ব্রডব্যান্ড সেবা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
কাজেই রপ্তানিযোগ্য হলে রপ্তানি করা হোক, তবে তার পাশাপাশি দেশের সবখানে সাধারণের নাগাল মূল্যে ব্রডব্যান্ড ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগটাও আমরা দেখতে চাই।
নতুবা নতুন প্রজন্মের ব্রডব্যান্ডের জন্য কেবল চাতক পাখির মতো অপেক্ষা অপেক্ষাই থেকে যাবে।
মুনির হাসান: যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক, প্রথম আলো।
No comments