সংসদ ভবনের খেজুরবাগান কি ‘উন্মুক্ত টয়লেট’? by রাফাত জামিল

সংসদ ভবনের সামনের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের
শেষ মাথা থেকে বি. রোড পর্যন্ত অংশে কোনো
নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। ছবি: প্রথম আলো
সম্পূর্ণ উন্মুক্ত আর বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার খেজুর বাগান অংশ। সংসদ ভবনের সামনের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের শেষ মাথা থেকে সংসদ ভবনের বি. রোড সড়ক পর্যন্ত এ অংশে কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী বা লোহার রেলিং নেই। ফলে সাধারণ লোকজন অবাধে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছে। এমনকি এই অংশের ফুটপাত জুড়ে বসেছে কয়েকটি অস্থায়ী দোকান।
গত মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, খেজুর বাগানের কয়েকটি গাছে অস্থায়ী দোকানগুলোর চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এলোমেলোভাবে ছড়ানো আছে পানির জার। লোকজন আসছে, খেজুরবাগানের ভেতরে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক কাজ সারছে।
সেখানকার এখানে ওখানে পড়ে আছে মনুষ্য বর্জ্য। পিলার বসানোর গর্তগুলোয় ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। প্রায় তিন ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পথচারীদের অনেকেই সেখানে মূত্র ত্যাগ করছেন। যদিও, খামারবাড়ি এলাকায় আনোয়ারা পার্কের পাশেই রয়েছে একটি পাবলিক টয়লেট।
খেজুরবাগানের ভেতরে কয়েকটি গাছে অস্থায়ী
দোকানের চেয়ার-টেবিল শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতে
দেখা গেছে। ছবিটি মঙ্গলবার তোলা। ছবি: প্রথম আলো
শুধু খেজুরবাগান নয়, সংসদ ভবনের সামনের দুপাশে (সরাসরি ভবনের সামনের অংশ ছাড়া) হরহামেশাই চলছে এসব কাজ। এদের মধ্যে আছেন রিকশাচালক, ছাত্র, কর্মজীবী এবং সাধারণ লোকজন।
সেখানে মূত্রত্যাগ করা একজন শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন ‘না, এটা ঠিক হয়নি। আর এমন কাজ করব না। খুব চাপ ছিল, তাই কিছু না বুঝেই করেছি। সরি।’
রিকশাচালক আবদুল আজিজ বললেন, ‘ভাই আমারে বলে কি করবেন! কত ভদ্রলোকই তো এখানে বইসা পিসসাব করে। আমার রিকশা রাইখা যাইতে পারি না দেখে রাস্তার পাশেই বসে পড়ি। তয় আর করুম না।’
এ ছাড়াও এই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় উদ্বাস্তু মানুষের চলাফেরাও চোখে পড়ে। যাদের অধিকাংশই মাদকসেবী। কেউ বোতল-কাগজ কুড়ানোর কাজ করেন। যাদের অনেকেই এখানে রাতে থাকেন।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সংসদ ভবনের সামনে ও আশপাশের কিছু জায়গায় সংসদ ভবনের নিরাপত্তাবেষ্টনী হিসেবে দেওয়া লোহার রেলিংও হেলে পড়েছে।
খেজুরবাগানের ভেতরে প্রবেশ করে অনেকেই
সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করেন। ছবি: প্রথম আলো
সংসদ ভবনের চারপাশের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসদ ভবনের এলাকাগুলোতে আমরা মাঝেমধ্যেই অভিযান চালাই। আমাদের কিছু প্রসিডিউর আছে। মূত্রত্যাগ করা অবস্থায় কাউকে পেলে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর, দেয়াল নির্মাণ এবং রেলিং বসানোর কাজও চলছে। অলরেডি গণভবনের ওখান থেকে কাজ শুরু হয়েছে। খুব দ্রুতই এ কাজ শেষ হবে।’
অস্থায়ী দোকান প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘এগুলো থানার আওতাধীন, আমরা তাদের জানিয়েছি। তারপরও, আমরা প্রায়ই ঝটিকা অভিযান চালাই। পুরো সংসদ ভবন এলাকাটি আসলে তিন থানার (মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, আগারগাঁও) তিন পাশে আছে। তিন থানা যদি একত্রে কাজ করে তাহলে সমস্যাগুলোর সমাধান কঠিন কিছু হবে না।’
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুটপাতে দোকান থাকলে সেটা সরানোর কাজ কিন্তু পুলিশের না, এটা সিটি করপোরেশন ও সংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাজ। দোকান উচ্ছেদ কাজে সিটি করপোরেশন যদি আমাদের সাহায্য চায় তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব। যদিও ওখানে কোনো দোকান থাকার কথা না। আমি নিজে গিয়ে খোঁজ নিব, দোকান থাকলে সেগুলো সরিয়ে দেব।’

No comments

Powered by Blogger.