রাশিয়ার সহযোগিতা ছাড়া পরমাণু সমঝোতা সম্ভব ছিল না: ওবামা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ইরানের সঙ্গে দীর্ঘ পরমাণু আলোচনা শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সহায়তা করেছেন। ইউক্রেন নিয়ে ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপড়েন তুঙ্গে থাকা সত্ত্বেও এ সহায়তা করেন পুতিন। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মঙ্গলবার এসব কথা বলেন ওবামা।   মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, পরমাণু সমঝোতার ক্ষেত্রে রাশিয়া সহায়তা করেছে। ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তীব্র মতপার্থক্য বজায় থাকা সত্ত্বেও ভূমিকা রেখেছে মস্কো। পুতিন এবং রুশ সরকারের সহায়তায় বিস্মিত হওয়ার কথা স্বীকার ওবামা বলেন, রাশিয়া যদি আমেরিকাসহ ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে না থাকতো তাহলে হয়ত এ সমঝোতা সম্ভব হতো না। তবে রাশিয়া এ আলোচনার ঠিক কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের সহযোগিতা করেছে তা জানাননি বারাক ওবামা।
ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে দেব না: হিলারি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে ইরানকে কখনো পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে দেবেন না হিলারি ক্লিনটন। গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসে এ কথা জোর দিয়ে বলেন সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে লড়ার আশা করছেন তিনি।
আজ বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, ইরানকে সন্দেহকারী যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মতো হিলারিও মনে করেন, হিলারি ক্লিনটন বলেন, ‘ইরানের জন্য এটা জোরালো আর পরিষ্কার বার্তা যে, তাদেরকে কখনো একটি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেব না।’
এই সমঝোতার সমালোচনা করে হিলারি বলেন, এই চুক্তি ইরানকে বরং পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথকে মসৃণ করে দেবে। ওই অস্ত্র বাগাতে তাদের একটু দেরি হবে—এই যা।
হিলারি বলেন, প্রেসিডেন্ট হলে নাছোড় ইরানকে বাগে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডারের সব অস্ত্র প্রয়োগ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই ফার্স্টলেডি বলেন, চুক্তির পরিকল্পনা তিনি এখনো খতিয়ে দেখছেন। তিনি অবশ্য এই চুক্তির বিষয়টিকে সমর্থন করেন বলে জানান। কারণ এটি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখবে। গতকাল মঙ্গলবার দীর্ঘ আলোচনার পর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব শক্তির পারমাণবিক সমঝোতা হয়।
পরমাণু চুক্তি মানবে না ইসরাইল: নেতানিয়াহু
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি মানবে না তেলআবিব। মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত ওই চুক্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি।   ইরান অব্যাহতভাবে ইসরাইলকে ধ্বংস করতে তৎপর উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এ চুক্তি মানবে না তেল আবিব। ভিয়েনায় জাতিসংঘ ভবনে যা ঘটছে তাকে ‘ঐতিহাসিক মহাভুল’ বলে দাবি  করে তিনি বলেন, ইরানকে যাতে নিজস্ব পথ থেকে সরে দাঁড়াতে না হয় তার সব সুযোগে এতে করে দেয়া হয়েছে। ইরান পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে তার আগের দাবিও আবারো তুলে ধরেন নেতানিয়াহু।   এর আগেও চুক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ইরানকে পরমাণু বোমা বানানো থেকে বিরত রাখার জন্য যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল তা করা হয় নি বরং সে সব ক্ষেত্রে সুদূর প্রসারী ছাড় দেয়া হয়েছে।   এ ছাড়া, এর আগে পরমাণু চুক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধমন্ত্রী মোশে ইয়ালুন। গতকাল তিনি দাবি করেছেন, তেল আবিব মনে করে  ইরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর একটি খারাপ পরমাণু চুক্তি হতে যাচ্ছে।–আইআরআইবি
‘পরমাণু চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে’ -ফেডেরিকা মোগেরিনি
ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যকার পরমাণু চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে। এ কথা বলেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি।   তিনি বলেন, “এ চুক্তি বিশ্বের জন্য আশার প্রতীক বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য যেখানে এমন আশা খুব বেশি প্রয়োজন কারণ এ অঞ্চল উগ্রবাদ ও যুদ্ধে পরিপূর্ণ।” অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় দীর্ঘ ১৮ দিন আলোচনা শেষে ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পরমাণু ইস্যুতে পূর্ণাঙ্গ চুক্তি হওয়ার পর ইরানের প্রেস টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মোগেরিনি এ কথা বলেছেন।   তিনি বলেন, “প্রকৃতপক্ষে এ চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে যদি আমরা আস্থা তৈরি করতে পারি এবং এই আস্থা মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।”   মোগেরিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সহিংসতা ও সংঘাত পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। তবে আজকের শিক্ষা হচ্ছে কূটনীতিই পারে কয়েক দশকের সংকট ও উত্তেজনাকে দূর করতে। তিনি জানান, পরমাণু আলোচনার সময় দু পক্ষের শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণেই এ চুক্তি সম্ভব হয়েছে। এই রাজনৈতিক বিনিয়োগ একটা ফলাফল আনতে যাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ ক্ষেত্রে ইরানের আলোচক দল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে জানান মোগরিনি।   ইরানের ব্যাংকিং, অর্থনৈতিক, তেল, গ্যাস, পেট্রোকেমিক্যাল, বাণিজ্য, ইন্স্যুরেন্স ও পরিবহন খাতের ওপর আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে এ চুক্তির কারণে তা উঠে যাবে। আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে ১৫৯ পৃষ্ঠার এ যৌথ পূর্ণাঙ্গ কর্ম পরিকল্পনা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হবে এবং তা আনুষ্ঠানিক দলিলে পরিণত হবে।   চুক্তির ফলে একটি পারস্পরিক সমঝোতা কাঠামোর আওতায় ইরানের ওপর থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ সব ধরনের নিষেধাজ্ঞাও  তুলে নেয়া হবে।–আইআরআইবি
(বাঁ থেকে) উচ্ছ্বসিত ইইউ কর্মকর্তা ফেদেরিকা মগেরিনি, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ, ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান আলী আকবর সালেহি, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ছবি: এএফপি

No comments

Powered by Blogger.