পিঠ ঠেকেছে কাঁটার দেয়ালে by সুরঞ্জন ঘোষ
বাংলাদেশের
ইতিহাসে মার্চ মাসের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানের
সেনাবাহিনী কর্তৃক ঢাকায় গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর বর্বর হত্যাকাণ্ড এবং
এরপর এসেছে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা। তা ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা
উত্তোলন হয়েছিল ৩ মার্চ। এসব কারণে মার্চ মাস আমাদের দেশের জন্মের আঁতুড়ঘর
হিসেবে পরিচিত। ’৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর, এই ৯ মাসের যুদ্ধে লাখো শহীদ ও
মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন দেশ।
স্বাধীনতার চার যুগেরও অধিক সময় পেরিয়ে এই মার্চেই আমরা গণতন্ত্রহীন। আমাদের পিঠ ঠেকেছে কাঁটার দেয়ালে। স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স এখন ৪৩ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও শিক্ষা অনেক দূর এগিয়েছে। এই অগ্রযাত্রা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতকেও অতিক্রম করেছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রশ্নে যদি বলি, তা হলে বলতে হয় হতাশার কথা।
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রহিত হওয়ার কারণে নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন আজ সুদূরপরাহত। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে একপাল্লায় মাপা হচ্ছে। নজিরবিহীন রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগে দমন করা হচ্ছে সরকারবিরোধী মত ও পথকে।
১৯৭১-এর মার্চে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের লোমহর্ষক হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও বাঙালি নির্মূলকরণ প্রত্যক্ষ করেছিল। তখন তারা দেশকে স্বাধীন করার জন্য অস্ত্রহাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। আর এখন এই মার্চে, আমরা কি গণতন্ত্রের জন্য কথা বলতে পারছি? পারছি না। সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আমাদের সব গণতান্ত্রিক অধিকার গিলে খাচ্ছে। মানুষের ভোটের অধিকার ও বাকস্বাধীনতা এখন ভূলুণ্ঠিত।
ভোটের মাধ্যমে জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন হওয়ার সুযোগ দেশে এখন নেই। টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে গণমাধ্যমের। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের জাঁতাকলের চাপে মৃত প্রায়। চলেছে বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার কাজ। কবির ভাষায় বলতে হয়Ñ ‘এ কোন অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে স্বদেশ।’
কোনো দেশের সরকার যদি গায়ের জোরে দেশ চালাতে চায়, তা হলে আমলাতন্ত্র, পুলিশ ও রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন জুগিয়ে চলতে হয়।
তাদের অন্যায়, ঘুষ, দুর্নীতি ও কর্তব্যে অবহেলার জন্য শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা জনবিচ্ছিন্ন সরকারের থাকে না। বর্তমান মহাজোট সরকারের অবস্থা হয়েছে সে রকমই। বর্তমান সরকার ও দেশের অবস্থা বুঝানোর জন্য ষোলো শতকের কবি জয়ানন্দের শরণাপন্ন হচ্ছি। কবি জয়ানন্দ ‘চৈতন্যমঙ্গল’ গ্রন্থের রচয়িতা। এই কাব্যগ্রন্থের কবি তৎকালীন শ্রীহট্ট (বর্তমান সিলেট) জেলার একটি দুর্ভিক্ষের বর্ণনা করেছেন।
কবির ভাষায়Ñ ‘শ্রীহট্ট দেশে অনাচার দুর্ভিক্ষ জন্মিল/ডাকা-চুরি অনাবৃষ্টি মড়ক লাগিল/উচ্ছন্ন হইল দেশ আরিষ্ট দেখিয়া/নানা দেশে সর্বলোক গেল পালাইয়া।’/আমরা কী এখন লিখিতে বাধ্য হবোÑ/‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনাচর জন্মিল/গুম-খুন, লাঠি-গুলি চলিতে লাগিল/উচ্ছন্নে গেল দেশ বিচারহীন হইয়া/প্রাণ ভয়ে সুধীজন রহে পালাইয়া।’/ না! আমরা পালিয়ে বাঁচতে চাই না। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার চাই। এসবের আগে চাই গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার।
লেখক : রাজনীতিক
স্বাধীনতার চার যুগেরও অধিক সময় পেরিয়ে এই মার্চেই আমরা গণতন্ত্রহীন। আমাদের পিঠ ঠেকেছে কাঁটার দেয়ালে। স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স এখন ৪৩ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও শিক্ষা অনেক দূর এগিয়েছে। এই অগ্রযাত্রা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতকেও অতিক্রম করেছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রশ্নে যদি বলি, তা হলে বলতে হয় হতাশার কথা।
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রহিত হওয়ার কারণে নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন আজ সুদূরপরাহত। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে একপাল্লায় মাপা হচ্ছে। নজিরবিহীন রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগে দমন করা হচ্ছে সরকারবিরোধী মত ও পথকে।
১৯৭১-এর মার্চে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের লোমহর্ষক হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও বাঙালি নির্মূলকরণ প্রত্যক্ষ করেছিল। তখন তারা দেশকে স্বাধীন করার জন্য অস্ত্রহাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। আর এখন এই মার্চে, আমরা কি গণতন্ত্রের জন্য কথা বলতে পারছি? পারছি না। সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আমাদের সব গণতান্ত্রিক অধিকার গিলে খাচ্ছে। মানুষের ভোটের অধিকার ও বাকস্বাধীনতা এখন ভূলুণ্ঠিত।
ভোটের মাধ্যমে জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন হওয়ার সুযোগ দেশে এখন নেই। টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে গণমাধ্যমের। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের জাঁতাকলের চাপে মৃত প্রায়। চলেছে বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার কাজ। কবির ভাষায় বলতে হয়Ñ ‘এ কোন অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে স্বদেশ।’
কোনো দেশের সরকার যদি গায়ের জোরে দেশ চালাতে চায়, তা হলে আমলাতন্ত্র, পুলিশ ও রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন জুগিয়ে চলতে হয়।
তাদের অন্যায়, ঘুষ, দুর্নীতি ও কর্তব্যে অবহেলার জন্য শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা জনবিচ্ছিন্ন সরকারের থাকে না। বর্তমান মহাজোট সরকারের অবস্থা হয়েছে সে রকমই। বর্তমান সরকার ও দেশের অবস্থা বুঝানোর জন্য ষোলো শতকের কবি জয়ানন্দের শরণাপন্ন হচ্ছি। কবি জয়ানন্দ ‘চৈতন্যমঙ্গল’ গ্রন্থের রচয়িতা। এই কাব্যগ্রন্থের কবি তৎকালীন শ্রীহট্ট (বর্তমান সিলেট) জেলার একটি দুর্ভিক্ষের বর্ণনা করেছেন।
কবির ভাষায়Ñ ‘শ্রীহট্ট দেশে অনাচার দুর্ভিক্ষ জন্মিল/ডাকা-চুরি অনাবৃষ্টি মড়ক লাগিল/উচ্ছন্ন হইল দেশ আরিষ্ট দেখিয়া/নানা দেশে সর্বলোক গেল পালাইয়া।’/আমরা কী এখন লিখিতে বাধ্য হবোÑ/‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনাচর জন্মিল/গুম-খুন, লাঠি-গুলি চলিতে লাগিল/উচ্ছন্নে গেল দেশ বিচারহীন হইয়া/প্রাণ ভয়ে সুধীজন রহে পালাইয়া।’/ না! আমরা পালিয়ে বাঁচতে চাই না। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার চাই। এসবের আগে চাই গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার।
লেখক : রাজনীতিক
No comments