রাজধানী ছাড়ছে কম আয়ের পরিবার, মেসগুলোয় বর্ডার কমছে : টু-লেটের ছড়াছড়ি by জিয়াউল হক মিজান
১৪
বছর বয়সী রোমেলের জন্ম ঢাকার খিলগাঁওয়ে। রাজধানীর পরিবেশেই তার বেড়ে ওঠা।
জীবনে মাত্র কয়েকবার বেড়াতে গেছে গ্রামের বাড়িতে। অর্থনৈতিক টানাপড়েনের
শিকার পরিবারের সদস্যদের সাথে গত মাসে স্থায়ীভাবে গ্রামের বাড়ি জামালপুরে
চলে যেতে হয়েছে এই কিশোরকে। গ্রামের পরিবেশের সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থতার
পাশাপাশি রোমেলের লেখাপড়ায়ও ছন্দপতন ঘটছে। এ ঘটনায় পরিবারের একমাত্র
উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে রোমেলের বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন
ভুগছেন চরম অনুশোচনায়।
রোমেলের পরিবারের মতোই আয়রোজগার কমে যাওয়ায় আট হাজার টাকার ফ্যাটবাড়ি ছেড়ে মুগদা এলাকায় টিনশেড বাড়িতে তিন হাজার টাকা ভাড়ায় এক কক্ষের বাসায় উঠতে বাধ্য হয়েছে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত শফিকুল ইসলামের পরিবার। কোনো যুক্তি ছাড়াই ব্যবসায়-বাণিজ্য কমে যাওয়ার অজুহাতে শফিকের মাসিক বেতন পাঁচ হাজার টাকা কমিয়ে দিয়েছে তার নিয়োগকর্তা। উপায়ান্তর না পেয়ে কম ভাড়ায় নিম্নমানের বাসায় উঠেছেন তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে। বললেন, ‘সন্তানদের লেখাপড়ার স্বার্থে যেকোনো উপায়ে ঢাকা শহরে টিকে থাকার চেষ্টা করছি। রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরো কিছুদিন চলতে থাকলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।’
‘গত ১২ বছরে আমার বাড়ির কোনো ফ্যাট এক দিনের জন্যও ভাড়াটিয়া ছাড়া থাকেনি। কিন্তু এ মাসে দু’টি ফ্যাট খালি।’- এ বক্তব্য মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকার ছয়তলা বাড়ির মালিক আবুল কালাম আযাদের। তিনি জানান, গত মাসে তার বাড়ি ছেড়েছে চারটি ভাড়াটিয়া পরিবার। তাদের কেউ পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে মেসে উঠেছে, আবার কেউ গেছে কম ভাড়ার বাড়িতে। খালি হওয়া দু’টি ফ্যাট ভাড়া হলেও অবিশ্বাস্যভাবে খালি রয়ে গেছে বাকি দু’টি। স্বাভাবিক কারণেই ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ, বিভিন্ন সংস্থার বিল পরিশোধ এবং দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে কষ্ট হবে বলে জানান আবুল কালাম আযাদ। তার আশঙ্কা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ভাড়াটিয়াই খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন, বেসরকারি সংস্থার কর্মী শফিকুল ইসলাম এবং বাড়ির মালিক আবুল কালাম আযাদের মতো কষ্টেসৃষ্টে দিনাতিপাত করছেন রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ মানুষ। হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না। নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা বিদ্যমান পুঁজি নিয়েও চরম ঝুঁকিতে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। প্লট-ফ্যাট বিক্রি না হওয়ায় উন্নয়নকাজ থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে স্বল্প ও নির্ধারিত আয়ের মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। বিলাসিতা দূরের কথা দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঢাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় ‘ভাড়া হবে’ এবং ‘টু-লেট’ লেখা সাইনবোর্ডের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। খরচ কমাতে গিয়ে ডিশ এন্টেনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বহু পরিবার।
এ ছাড়া পুলিশি হয়রানির ভয়ে রাজধানীর মেসগুলো এখন বর্ডারশূন্য। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চালু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় রিকশারও যাত্রী কমে গেছে। খচর তুলতে না পারায় রিকশা চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কমে গেছে হাসপাতালের রোগী। বিপণিবিতান, ফুটপাথ, এমনকি মুদি দোকানেও অস্বাভাবিক কমে গেছে বেচাবিক্রি। দিনের পর দিন কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরা, তেজগাঁও রাস্তায় বসে থেকেও শ্রম বিক্রি করতে পারছেন না দিনমজুরেরা। এমনকি দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে অনেক সচ্ছল লোকের অবস্থান।
ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকেন্দ্র মেহেরুন হোমিও হলের কর্ণধার ডা: এ জি খান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের রোগীরা সাধারণত ঢাকার বাইরে থেকে আসেন। হরতাল-অবরোধের কারণে তারা আসতে পারছেন না। রোগী কমতে কমতে এত-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। আয়-রোজগার না থাকলেও খরচ বেড়েই চলেছে।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অবস্থিত সিয়াম জেনারেল স্টোরের মালিক মাকসুদ আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, সব ঠিক থাকলেও বেচাকেনা কমে গেছে। অনেক কাস্টমারকে এখন আর দেখিই না। আবার বাকি টাকা পরিশোধ না করতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন কেউ কেউ। তিনি বলেন, কারো ব্যবসাই যে ভালো নেই সেটা বুঝতে পারি যখন দেখি অনেক কোম্পানি বাকিতে মাল দিতে চায়। আগে যাদের কাছে বারবার চেয়েও মাল পাওয়া যেত না এখন ওই সব কোম্পানির লোকেরা এসে বাকিতে মাল দিতে চায়। এই পরিস্থিতিতে মহল্লার লোকসংখ্যাও কমে গেছে বলে জানান তিনি।
একই বর্ণনা আসে ভ্যানে করে সবজি বিক্রেতা সোবহানের মুখ থেকেও। বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে পাঁচ হাজার টাকার মাল কিনলেও সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয়ে যেত। এখন প্রতিদিন তিন হাজার টাকার সবজি আনি। কেজিপ্রতি লাভও আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছি। এতেও দুপুরের আগে কোনোভাবে মাল শেষ করতে পারি না।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ঢাকা হাউজিং সংলগ্ন টিনশেড বাড়ির কেয়ারটেকার হোসেন আলী দিয়েছেন অর্থনৈতিক দুরবস্থার কঠিন চিত্র। তিনি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, তার বাড়িতে ৩০টি ঘর আছে। একটিতে নিজে থাকেন। বিনিময়ে মালিকের হয়ে সব দেখাশোনা করেন। বাকি ২৯টি ভাড়া দেয়া হয় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর কাছে। গত দুই মাস ধরে ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই বাইত্তে কোনো দিন ভাড়াইট্টার অভাব অয় না। কিন্তু অহন ১০-১২টা রুম খালি ফইড়া আছে। ভাড়াইট্টারা সব দলে দলে গেরামে চইল্লা গ্যাছে।’
রোমেলের পরিবারের মতোই আয়রোজগার কমে যাওয়ায় আট হাজার টাকার ফ্যাটবাড়ি ছেড়ে মুগদা এলাকায় টিনশেড বাড়িতে তিন হাজার টাকা ভাড়ায় এক কক্ষের বাসায় উঠতে বাধ্য হয়েছে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত শফিকুল ইসলামের পরিবার। কোনো যুক্তি ছাড়াই ব্যবসায়-বাণিজ্য কমে যাওয়ার অজুহাতে শফিকের মাসিক বেতন পাঁচ হাজার টাকা কমিয়ে দিয়েছে তার নিয়োগকর্তা। উপায়ান্তর না পেয়ে কম ভাড়ায় নিম্নমানের বাসায় উঠেছেন তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে। বললেন, ‘সন্তানদের লেখাপড়ার স্বার্থে যেকোনো উপায়ে ঢাকা শহরে টিকে থাকার চেষ্টা করছি। রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরো কিছুদিন চলতে থাকলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।’
‘গত ১২ বছরে আমার বাড়ির কোনো ফ্যাট এক দিনের জন্যও ভাড়াটিয়া ছাড়া থাকেনি। কিন্তু এ মাসে দু’টি ফ্যাট খালি।’- এ বক্তব্য মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকার ছয়তলা বাড়ির মালিক আবুল কালাম আযাদের। তিনি জানান, গত মাসে তার বাড়ি ছেড়েছে চারটি ভাড়াটিয়া পরিবার। তাদের কেউ পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে মেসে উঠেছে, আবার কেউ গেছে কম ভাড়ার বাড়িতে। খালি হওয়া দু’টি ফ্যাট ভাড়া হলেও অবিশ্বাস্যভাবে খালি রয়ে গেছে বাকি দু’টি। স্বাভাবিক কারণেই ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ, বিভিন্ন সংস্থার বিল পরিশোধ এবং দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে কষ্ট হবে বলে জানান আবুল কালাম আযাদ। তার আশঙ্কা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ভাড়াটিয়াই খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন, বেসরকারি সংস্থার কর্মী শফিকুল ইসলাম এবং বাড়ির মালিক আবুল কালাম আযাদের মতো কষ্টেসৃষ্টে দিনাতিপাত করছেন রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ মানুষ। হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না। নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা বিদ্যমান পুঁজি নিয়েও চরম ঝুঁকিতে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। প্লট-ফ্যাট বিক্রি না হওয়ায় উন্নয়নকাজ থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে স্বল্প ও নির্ধারিত আয়ের মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। বিলাসিতা দূরের কথা দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঢাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় ‘ভাড়া হবে’ এবং ‘টু-লেট’ লেখা সাইনবোর্ডের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। খরচ কমাতে গিয়ে ডিশ এন্টেনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বহু পরিবার।
এ ছাড়া পুলিশি হয়রানির ভয়ে রাজধানীর মেসগুলো এখন বর্ডারশূন্য। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চালু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় রিকশারও যাত্রী কমে গেছে। খচর তুলতে না পারায় রিকশা চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কমে গেছে হাসপাতালের রোগী। বিপণিবিতান, ফুটপাথ, এমনকি মুদি দোকানেও অস্বাভাবিক কমে গেছে বেচাবিক্রি। দিনের পর দিন কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরা, তেজগাঁও রাস্তায় বসে থেকেও শ্রম বিক্রি করতে পারছেন না দিনমজুরেরা। এমনকি দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে অনেক সচ্ছল লোকের অবস্থান।
ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকেন্দ্র মেহেরুন হোমিও হলের কর্ণধার ডা: এ জি খান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের রোগীরা সাধারণত ঢাকার বাইরে থেকে আসেন। হরতাল-অবরোধের কারণে তারা আসতে পারছেন না। রোগী কমতে কমতে এত-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। আয়-রোজগার না থাকলেও খরচ বেড়েই চলেছে।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অবস্থিত সিয়াম জেনারেল স্টোরের মালিক মাকসুদ আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, সব ঠিক থাকলেও বেচাকেনা কমে গেছে। অনেক কাস্টমারকে এখন আর দেখিই না। আবার বাকি টাকা পরিশোধ না করতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন কেউ কেউ। তিনি বলেন, কারো ব্যবসাই যে ভালো নেই সেটা বুঝতে পারি যখন দেখি অনেক কোম্পানি বাকিতে মাল দিতে চায়। আগে যাদের কাছে বারবার চেয়েও মাল পাওয়া যেত না এখন ওই সব কোম্পানির লোকেরা এসে বাকিতে মাল দিতে চায়। এই পরিস্থিতিতে মহল্লার লোকসংখ্যাও কমে গেছে বলে জানান তিনি।
একই বর্ণনা আসে ভ্যানে করে সবজি বিক্রেতা সোবহানের মুখ থেকেও। বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে পাঁচ হাজার টাকার মাল কিনলেও সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয়ে যেত। এখন প্রতিদিন তিন হাজার টাকার সবজি আনি। কেজিপ্রতি লাভও আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছি। এতেও দুপুরের আগে কোনোভাবে মাল শেষ করতে পারি না।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ঢাকা হাউজিং সংলগ্ন টিনশেড বাড়ির কেয়ারটেকার হোসেন আলী দিয়েছেন অর্থনৈতিক দুরবস্থার কঠিন চিত্র। তিনি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, তার বাড়িতে ৩০টি ঘর আছে। একটিতে নিজে থাকেন। বিনিময়ে মালিকের হয়ে সব দেখাশোনা করেন। বাকি ২৯টি ভাড়া দেয়া হয় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর কাছে। গত দুই মাস ধরে ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই বাইত্তে কোনো দিন ভাড়াইট্টার অভাব অয় না। কিন্তু অহন ১০-১২টা রুম খালি ফইড়া আছে। ভাড়াইট্টারা সব দলে দলে গেরামে চইল্লা গ্যাছে।’
No comments