‘ইন্ডিয়ারে হারাই দিমু!’ by মোছাব্বের হোসেন
বাংলাদেশ নিয়ে দর্শকদের আবেগটা এমনই। ছবি: সাজিদ হোসেন |
বাংলাদেশ নিয়ে দর্শকদের আবেগটা এমনই। ছবি: সাহাদাত পারভেজ |
ক্রিকেটপাগল
আবদুস সালাম। দেশের বাড়ি বগুড়ার গাবতলীতে। রাজধানীতে ১৮-১৯ বছর ধরে
রিকশা চালান। বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা হলেই রিকশা বন্ধ তাঁর। আগারগাঁওয়ে
রিকশার গ্যারেজে বসে খেলা দেখেন। সালামের সঙ্গে কথা হলো গ্রিন রোডে।
বললেন, ‘খেলার দিন রিকশা পুরাই বন্ধ। গ্যারেজে বইসা খেলা দেহি। একটাও মিছ
দেই নাই। বাংলাদেশ খেলব আর তা দেখমু না, তা-ই কি হয়!’ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে
ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয় নিয়েও আশাবাদী সালাম, ‘ইন্ডিয়ার লগে আমাদের
খেলা ভালো হয়। বাংলাদেশ জিতবই, এইটাই আমার বিশ্বাস। ইন্ডিয়ারে হারাই দিমু!’ সালামের
মতো সারা দেশের মানুষ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বুঁদ। ক্রিকেট-জ্বরে কাঁপছে সারা
দেশ! সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, চায়ের দোকানদার, সবজিবিক্রেতা, চাকরিজীবী,
শিক্ষার্থী, ছেলে-বুড়ো সবার আলোচনা এখন শুধু ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ
প্রসঙ্গ নিয়ে। ক্রিকেট-ঝড় বইছে ফেসবুকেও। ফেসবুকে অনেকে স্ট্যাটাস
দিচ্ছেন ১৯ তারিখ যেন সরকারি ছুটি দেওয়া হয়। অনেকে ইভেন্টও খুলেছেন। আবার
দেশের পতাকা না তোলা নিয়েও অনেকে সমালোচনা করছেন। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি
দিচ্ছেন। দেশের পক্ষে অনেকে নানা ধরনের ব্যানার তৈরি করে কাভার ও প্রোফাইল
ছবি দিচ্ছেন। আগামী বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হবে
বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। কারওয়ান বাজারের সবজি বাজারের
একপাশে বিসমিল্লাহ কনফেকশনারির পাশ দিয়ে যেতেই শোনা গেল ষাটোর্ধ্ব এক
ব্যক্তি দুই তরুণের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে বেশ কথার পিঠে কথা জুড়ে
দিচ্ছেন। কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিতেই বললেন, ‘আমার নাম আবুল কালাম।
কাপড়ের দোকানি।’ পাশেই তাঁর দোকান। বাংলাদেশের খেলা শুরু হলে নিজের
দোকান বন্ধ করে এখানেই খেলা দেখতে আসেন। দোকানটিতে ছয় ইঞ্চি সাদা-কালো
ছোট্ট একটি টেলিভিশন। কালাম বললেন, ‘খালি আমি না, বাংলাদেশের খেলার সময়
মার্কেটের সক্কলে মিইল্যা খেলা দেহি। খেলার সমু ব্যবসা করমু তা-ই কি হয়!’
কালামের কথার ফাঁকে কনফেকশনারির বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দেইখেন
বিশ্বকাপ আমাগোর ঘরেই আইব।’
খেলার সময় হলেই সাইফুলদের দোকানের চারপাশে ভিড় জমে যায়। নিজেই বলেন, ‘ছোট্ট টিভি তো, ভালা কইরা দেখা যায় না, খেলা টিভিতে দেখলেও স্কোর শুনি রেডিওতে। অন্যরাও তা-ই করে।’ ক্রিকেট খেলা কে কোথায় দেখবে, এ নিয়ে চিন্তা শুরু হয়েছে অনেকের। অনেক চাকরি করেন। সেটা বাদ দিয়ে কীভাবে খেলা দেখবেন, সেই চিন্তা এখন অনেকের মনে। রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী মোমিনুল। তরুণ মোমিনুলের ক্রিকেটে ব্যাপক আগ্রহ। সঙ্গে থাকা মোবাইল সেটে রেডিও চালু করে খেলার খবর শোনেন। বাংলাদেশের খেলা একটাও বাদ যায় না। মোমিনুল বলেন, ‘চাকরি তো করতে হইব। দাঁড়ায় দাঁড়ায় রেডিও শুনি। যখন মাহমুদউল্লাহ ছয় মারে, তখন মন চায় টেলিভিশনে গিয়া দেহি।’
বাংলাদেশের খেলার দিনও তিনি এভাবে রেডিতেই শুনবেন খেলা। বাংলাদেশের বিজয় নিয়ে তিনিও বেশ আশাবাদী। মোমিনুল বলেন, ‘বাংলাদেশকে জিততে হইলে ৩০০-এর ওপরে রান করতে হইব। আর শুরুতেই ওগো উইকেট ফেলায় দিতে হইব। তাইলেই আমাগো কেউ ঠেকাইতে পরব না।’ বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলার দিন টেলিভিশনের দোকানগুলোকেও সামলাতে হয় বাড়তি চাপ। কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে সেমিটেক গ্লোবাল ইলেকট্রনিকসে গিয়ে কথা বলতেই দোকানের কর্মী আলী আহমেদ বললেন, ‘বাংলাদেশের খেলার দিনে প্রচুর ভিড় হয় দোকানের সামনে। সরতেও বলতে পারি না। বাংলাদেশের খেলা তো আর রোজ হয় না। এই চাপ আমাদের কাছে ভালোই লাগে। আবার বাংলাদেশ জিতলে আরও ভালো লাগে। পরশুও বাংলাদেশ জিতুক এইটাই চাই আমরা।’ রাজধানীর একটি গার্মেন্টস কর্মকর্তা হাসান মাহমুদের মন খারাপ। কারণ খেলার দিনে অফিস করতে হবে। তার পরও খেলার দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলে খেলার আপডেট দেখবেন, ‘মনকে তো কাজে বসাতেই পারব না, মন পড়ে থাকবে খেলার দিকে।’ মণিপুরী পাড়ায় রাস্তায় দুই বন্ধুর মধ্যে তর্ক হচ্ছে, ‘ফুটবলের সময় দেখি নানা দেশের পতাকা উড়ে। আর ক্রিকেটের সময় বাংলাদেশের পতাকা কই?’ অপর বন্ধুর চটপট জবাব, ‘ফুটবলে আমরা নানা দেশের সাপোর্ট করি বলে নানা দেশের পতাকা থাকে। কিন্তু ক্রিকেটে আমরা সবাই বাংলাদেশের সাপোর্টার। ওটা আলাদা করে জানান দেওয়ার দরকার কী! বিয়েবাড়িতে জামাইকে কি কেউ জিজ্ঞেস করে, আপনি বরপক্ষ না কনেপক্ষ!’ ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে নানান জিনিস বিক্রি করেন মো. আকাশ। বাংলাদেশের খেলা নিয়ে বিশেষ প্রস্তুতি আছে তাঁর, ‘এমন জায়গায় বসমু, যার আশপাশে টিভি আছে। আমার মোবাইলে রেডিও আছে। হেইটাও চালু রাখমু। আর সামনে জিতলে তো কথাই নাই, বন্ধুগো বইলা দিছি, জিতলেই বিরিয়ানি খাওয়ামু।’
খেলার সময় হলেই সাইফুলদের দোকানের চারপাশে ভিড় জমে যায়। নিজেই বলেন, ‘ছোট্ট টিভি তো, ভালা কইরা দেখা যায় না, খেলা টিভিতে দেখলেও স্কোর শুনি রেডিওতে। অন্যরাও তা-ই করে।’ ক্রিকেট খেলা কে কোথায় দেখবে, এ নিয়ে চিন্তা শুরু হয়েছে অনেকের। অনেক চাকরি করেন। সেটা বাদ দিয়ে কীভাবে খেলা দেখবেন, সেই চিন্তা এখন অনেকের মনে। রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী মোমিনুল। তরুণ মোমিনুলের ক্রিকেটে ব্যাপক আগ্রহ। সঙ্গে থাকা মোবাইল সেটে রেডিও চালু করে খেলার খবর শোনেন। বাংলাদেশের খেলা একটাও বাদ যায় না। মোমিনুল বলেন, ‘চাকরি তো করতে হইব। দাঁড়ায় দাঁড়ায় রেডিও শুনি। যখন মাহমুদউল্লাহ ছয় মারে, তখন মন চায় টেলিভিশনে গিয়া দেহি।’
বাংলাদেশের খেলার দিনও তিনি এভাবে রেডিতেই শুনবেন খেলা। বাংলাদেশের বিজয় নিয়ে তিনিও বেশ আশাবাদী। মোমিনুল বলেন, ‘বাংলাদেশকে জিততে হইলে ৩০০-এর ওপরে রান করতে হইব। আর শুরুতেই ওগো উইকেট ফেলায় দিতে হইব। তাইলেই আমাগো কেউ ঠেকাইতে পরব না।’ বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলার দিন টেলিভিশনের দোকানগুলোকেও সামলাতে হয় বাড়তি চাপ। কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে সেমিটেক গ্লোবাল ইলেকট্রনিকসে গিয়ে কথা বলতেই দোকানের কর্মী আলী আহমেদ বললেন, ‘বাংলাদেশের খেলার দিনে প্রচুর ভিড় হয় দোকানের সামনে। সরতেও বলতে পারি না। বাংলাদেশের খেলা তো আর রোজ হয় না। এই চাপ আমাদের কাছে ভালোই লাগে। আবার বাংলাদেশ জিতলে আরও ভালো লাগে। পরশুও বাংলাদেশ জিতুক এইটাই চাই আমরা।’ রাজধানীর একটি গার্মেন্টস কর্মকর্তা হাসান মাহমুদের মন খারাপ। কারণ খেলার দিনে অফিস করতে হবে। তার পরও খেলার দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলে খেলার আপডেট দেখবেন, ‘মনকে তো কাজে বসাতেই পারব না, মন পড়ে থাকবে খেলার দিকে।’ মণিপুরী পাড়ায় রাস্তায় দুই বন্ধুর মধ্যে তর্ক হচ্ছে, ‘ফুটবলের সময় দেখি নানা দেশের পতাকা উড়ে। আর ক্রিকেটের সময় বাংলাদেশের পতাকা কই?’ অপর বন্ধুর চটপট জবাব, ‘ফুটবলে আমরা নানা দেশের সাপোর্ট করি বলে নানা দেশের পতাকা থাকে। কিন্তু ক্রিকেটে আমরা সবাই বাংলাদেশের সাপোর্টার। ওটা আলাদা করে জানান দেওয়ার দরকার কী! বিয়েবাড়িতে জামাইকে কি কেউ জিজ্ঞেস করে, আপনি বরপক্ষ না কনেপক্ষ!’ ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে নানান জিনিস বিক্রি করেন মো. আকাশ। বাংলাদেশের খেলা নিয়ে বিশেষ প্রস্তুতি আছে তাঁর, ‘এমন জায়গায় বসমু, যার আশপাশে টিভি আছে। আমার মোবাইলে রেডিও আছে। হেইটাও চালু রাখমু। আর সামনে জিতলে তো কথাই নাই, বন্ধুগো বইলা দিছি, জিতলেই বিরিয়ানি খাওয়ামু।’
No comments