নাগাল্যান্ডে বাংলাভাষী ইস্যুতে গাত্রদাহ -ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট
বাংলাদেশী
অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গাত্রদাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কোন অঘটনের সঙ্গে বাংলাভাষী কোন ব্যক্তি জড়িত থাকলে তার ওপর তারা চড়াও
হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে
বাংলাভাষী মুসলিম ইস্যু। তাদের ধারণা, বাংলাভাষী মুসলিমরা বাংলাদেশী। তাই
তাদের বিরুদ্ধে এমন গাত্রদাহ। এতদিন এ ইস্যুটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছিল
আসামে। এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে নাগাল্যান্ডে। সম্প্রতি এমন হামলার শিকার হয়ে
নিহত হয়েছে সৈয়দ শরিফ খান নামে একজন। গতকাল এসব কথা লিখেছে অনলাইন ইন্ডিয়ান
এক্সপ্রেস। তাতে বলা হয় বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসী ইস্যুটি ভারতের ওই অঞ্চলে
বিস্ফোরণোন্মুখ বোমার রূপ ধারণ করেছে। গত সপ্তাহে আসামের এক বাংলাভাষী
মুসলিমকে নাগাল্যান্ডের একটি জেল থেকে ১০ হাজার মানুষ বের করে এনে
নৃশংসভাবে হত্যা করে। শুধু তা-ই নয়, তাকে দিগম্বর করে এলাকা ঘোরানো হয়।
তারপর পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হামলাকারীরা দাবি করে, শরিফ একজন বাংলাদেশী।
কিন্তু এ দাবির কোনই সত্যতা মেলে নি। অভিযোগ, শরিফ খান এক নাগা যুবতীকে
ধর্ষণ করেছে। পরে বলা হয়েছে, শরিফকে ধর্ষণ মামলায় অন্যায়ভাবে জেলে নেয়া
হয়েছিল। কারণ, যে নাগা যুবতীর সঙ্গে সে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল তা
হয়েছিল দু’জনের সম্মতিতে। এর বিনিময়ে ওই যুবতীকে নগদ অর্থও দিয়েছে শরিফ।
তারা একটি হোটেলে মেলামেশা করে। কিন্তু এরপর ওই যুবতী চুক্তির অধিক অর্থ
দাবি করেন। শরিফ তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন
ওই যুবতী। ওদিকে শরিফের পরিবারে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন সুমি
নাগা নামে এক যুবতীকে বিয়ে করে দিমাপুরে বসবাস করছিলেন শরিফ। তার রয়েছে ৩
বছর বয়সী একটি মেয়ে। তিনি একটি সেনা পরিবারের সন্তান। তার এক ভাই ১৯৯৯ সালে
কারগিল যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার প্রয়াত পিতা ভারতীয় বিমান বাহিনীতে চাকরি
করেছেন। এসব খবর যখন প্রকাশ পেয়েছে তখন নাগাদের হামলায় শরিফ এ দুনিয়া থেকে
বিদায় নিয়েছেন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে,
বাংলাভাষী মুসলিমরা বাংলাদেশী। তাই তাদের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনা বাড়ছে।
শরিফকে জেল থেকে বের করে হত্যা করার পর দিমাপুরের এক হাজার মুসলিম পরিবার
ওই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছে। এমন একজন বললেন, আমরা বাংলাভাষায় কথা বলি। তাই
নাগারা আমাদেরকে বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী মনে করে। কিন্তু আমরা
নাগাল্যান্ডে গিয়েছি আসাম থেকে। আসাম কি ভারতের অংশ নয়? এ বিষয়ে রাজ্য
সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে দিমাপুরের মুসলিম কাউন্সিল। এতে তারা এ
সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, নাগাল্যান্ডের
সবচেয়ে বড় শহর ও ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হলো দিমাপুর। সেখানে বসবাসকারী মোট
জনসংখ্যার ১০ থেকে ১৫ শতাংশই হলো বাংলাভাষী মুসলিম। সেখানকার ছোটখাট ব্যবসা
পরিচালনা করেন বাংলাভাষী মুসলিমরা। ভারতের সবচেয়ে সুরক্ষিত রাজ্যগুলোর
একটি নাগাল্যান্ড। সেখানে প্রবেশ করতে হলে কোন ভারতীয় নাগরিকের প্রয়োজন
সরকারি অনুমতিপত্র ‘ইনার লাইন পারমিট’ (আইএলপি)। কিন্তু দিমাপুর সফর করতে
প্রয়োজন নেই আইএলপি। নাগাদের দাবি, এ কারণে সেখানে অভিবাসী অনুপ্রবেশ
বাড়ছে।
No comments