সিরিঞ্জ কুড়ানোই পেশা by শিপন হাবীব
মারাত্মক ঝুঁকিতে বহু পথশিশু : হাসপাতাল বর্জ্য হরহামেশা বাইরে যাচ্ছে, হচ্ছে পুনর্ব্যবহার
নাইলনের
বস্তা, টিনের প্লেট আর ভাঙা ঝুড়ি মাথায় নিয়ে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে নয়ন।
হাড্ডিসার শরীর নিয়ে খেয়ে না খেয়ে ছোটে হাসপাতালে হাসপাতালে, ক্লিনিকে
ক্লিনিকে। সন্ধ্যা অবধি ঘুরে সিরিঞ্জ, সূচ, স্যালাইনের প্লাস্টিক ব্যাগসহ
নানা বর্জ্য কুড়ায়। সন্ধ্যায় তা ‘বড় ভাই’দের হাতে জমা দিয়ে পায় ৫০ থেকে ৯০
টাকা। তাই দিয়ে দিন চলে তার।
শুধু নয়ন নয়, ‘সিরিঞ্জ কুড়ানো’ই রাজধানীর বহু শিশুর পেশা। কেউ কেউ জীবন নির্বাহ করে তা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে। এ দূষিত ও জীবাণুযুক্ত বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিষ্কার করা যে কত ভয়াবহ ঝুঁকির তারা জানে না তারা। শুধু জানে, হাত-পা আঙ্গুল পচে যায়, ঘা হয়, তাই নিয়ে পোহাতে হয় যন্ত্রণা। কিন্তু না করে উপায় কী?
অথচ চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ক্লিনিক সংশ্লিষ্টরাই বলছেন, এ জীবাণুবাহী বর্জ্য কোনোভাবেই বাইরে যাওয়ার কথা নয়। আবার তা পুড়িয়ে নষ্ট করার জন্য রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, খরচ করা হয় বিপুল অর্থও। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং অসৎ নার্স, আয়া, বয় ও কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে এসব সিরিঞ্জ ও ব্যাগ পুনর্ব্যবহারও হয় প্রকাশ্যেই।
এগার বছর বয়সী নয়ন রাজধানীর মুগদায় থাকে। ৫-৬ বছর বয়স থেকেই সে হাসপাতাল বর্জ্য কুড়ানোর পেশায় নিয়োজিত। বাবা-মা থেকেও নেই, পথশিশু হিসেবে কখনও ফুটপাতে, কখনও রেলওয়ে স্টেশনে রাত কাটায়। অথচ পড়াশোনা করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ‘সুযোগ চাই, মানুষ হব’ স্লোগানও দিতে পারেনি। বরং তীব্র মানসিক যন্ত্রণা নিয়েই বাধ্য হয়ে লাগে ভয়াবহ ঝুঁকির এ কাজে ।
একই কথা ‘সিরিঞ্জ কুড়ানো’ শিশু সুমনেরও। বলে, ‘এসব করতে একদম ভালো লাগে না। সূঁচের ঘায়ে (আঘাতে) হাত-পা পইচ্চা (পচে যায়, পুঁজ বের হয়) থাকে। শুকায় না। ওই অবস্থায় কেউই আমাদের সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করে না। কারো কাছেই কোনো আদর-স্নেহহ পাই না। কিন্তু শুধু বেঁচে থাকার জন্যই তা করতে হচ্ছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় শনিবার ব্যবহৃত সিরিঞ্জের ভেতর জমে থাকা রক্ত পরিষ্কার করছে নয়ন ও সুমন। নয়ন জানায়, আরও ১২-১৩ শিশু সিরিঞ্জ, স্যালাইনের ব্যাগ সংগ্রহ করে। কোন জায়গা থেকে? মুগদা সরকারি হাসপাতালসহ ওই এলাকায় গড়ে উঠা বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে এসব সংগ্রহ করে তারা। হাসপাতালের বয় ও আয়ারা হাসপাতালের নির্দিষ্ট জায়গায় এসব বর্জ্য জমা রাখে। পরে তারা তা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।
মাদকাসক্ত এক ‘বড় ভাই’ ফাইটিং রুবেল জানান, তার রয়েছে ৮ শিশু। সবাই এসব কুড়ায়। সিরিঞ্জ জমিয়ে রক্ত পরিষ্কার করাসহ আলাদা আলাদা ভাগ করে তারাই। প্রতিদিন তাদের প্রত্যেককে ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা দেয়া হয়।
কোথায় এসব বিক্রি করেন? উত্তরে রুবেল জানান, বংশাল, সদরঘাট, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ নানা জায়গায়। মূলত ভাঙ্গারি মালিকরাই এসব কিনেন। সিরিঞ্জ প্রতি কেজি একশ’ থেকে ১১০ টাকা, স্যালাইনের ব্যাগ ও নল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।
মতিঝিলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব সড়ক সংলগ্ন এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী জানান, কেনা সিরিঞ্জ তারা পাইকারি ধরে দু’শত থেকে আড়াইশ’ টাকা কেজি বিক্রি করেন। কারা এসব কিনেন? উত্তরে বলেন, ইসলামপুরের ৩-৪ ব্যবসায়ী।
মাদকাসক্ত সেন্টু মিয়া জানান, তিনি এ ব্যবসা প্রায় ৫-৬ বছর ধরে করছেন। নিজেও এসব সংগ্রহ করেন। শিশুদের দিয়েও করান। বললেন, তার মতো অনেকেই আছেন এ ব্যবসা করছেন। যেসব আয়া ও বয়দের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে, তাদের কিছু টাকা ধরিয়ে দেন তারা। বিনিময়ে সিরিঞ্জের সূচ অক্ষত রাখতে হয় আয়া ও বয়দের। মাদকাসক্তদের মাঝেও এ সিরিঞ্জ বিক্রি করা হয়। প্রতিটি ৩ টাকা।
চানখাঁরপুল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ট) হাসপাতাল সংলগ্ন বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় কথা হয় বেশ কয়েকজন সিরিঞ্জ কুড়ানো শিশুর সঙ্গে। বাবুবাজারে শিশু রিয়াদ জানায়, তারা শুধু এসব বর্জ্য নির্দিষ্ট হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে সংগ্রহ করে। পরে ভাইদের (মাদকাসক্ত বড় ভাই) কাছে জমা দেয়। বিনিময়ে কিছু টাকা পায়। তার সঙ্গে আরও ৭-৮ জন এ কাজ করে। চানখাঁরপুলে কথা হয় শিশু রনির সঙ্গে। রনি জানাল, তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ (ঢামেক) বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে এসব সংগ্রহ করে থাকে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বয় ও আয়াদের সঙ্গে ‘ভাইদের’ যোগাযোগ রয়েছে। প্রায় সময় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে গেলেই আয়া ও বয়রা সিরিঞ্জ ও স্যালাইনের ব্যাগ ভরা পলিথিন তাদের বস্তায় ভরে দেয়।
ঢামেক হাসপাতাল, বার্ন ইউনিট ও মিডফোর্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট ‘লাল’ ও ‘সবুজ’ রংঙের ড্রাম রয়েছে। নিয়ম অনুয়ায়ী ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও বর্জ্য লাল ড্রামে ফেলতে হয়।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, কোনো অবস্থাতেই ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও বর্জ্য বাইরে কিংবা শিশুদের হাতে যেতে পারে না। সিরিঞ্জসহ বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট লাল-সবুজ ড্রাম রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি এনজিওর সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে। মাসে দু’বার এনজিও কর্মীরা সিরিঞ্জসহ বর্জ্য তুলে নেয় এবং তা মাতুয়াইলে নিয়ে ধ্বংস করে ফেলে। তাদের মাসে ৩০ হাজার টাকাও দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ডাক্তার কিংবা নার্স ইনজেনশন দিয়েই সিরিঞ্জের সূঁচ ভেঙ্গে দেয়ার নিয়ম। তারা যদি তা না করেন তাহলে অপরাধ করছেন। যদি হাসপাতালের আয়া কিংবা বয়রা এসব বর্জ্য বাইরে ফেলে কিংবা কারও সঙ্গে যোগসাজশে বিক্রি করে তা অবশ্যই ভয়াবহ অপরাধ। দ্রুত তাদের চিহ্নিত করা হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সমাজের প্রতিটি মানুষও যেন সচেতন হয়।
মিডফোর্ট হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হোসেন বলেন, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও হাসপাতাল বর্জ্য বাইরে ও শিশুদের হাতে যাওয়া ভয়াবহ উদ্বেগের বিষয়। এ নিয়ে ব্যবসা করা ভয়াবহ অপরাধ। সিরিঞ্জসহ বর্জ্য বাইরে ফেলা কিংবা বিক্রয়ের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢামেক কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর ডা. সামন্ত লাল সেন এসব শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, এসব বিষাক্ত হাসপাতাল বর্জ্য কী করে বাইরে যায়! শিশুদের দিয়ে কুড়ানো- এটা তো আরও উদ্বেগের। এসব বর্জ্য কোনো অবস্থাতেই বাইরে যাওয়ার কথা নয়। এসব বন্ধে পুলিশ প্রশাসনেরও ভূমিকা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো দরকার।
শুধু নয়ন নয়, ‘সিরিঞ্জ কুড়ানো’ই রাজধানীর বহু শিশুর পেশা। কেউ কেউ জীবন নির্বাহ করে তা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে। এ দূষিত ও জীবাণুযুক্ত বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিষ্কার করা যে কত ভয়াবহ ঝুঁকির তারা জানে না তারা। শুধু জানে, হাত-পা আঙ্গুল পচে যায়, ঘা হয়, তাই নিয়ে পোহাতে হয় যন্ত্রণা। কিন্তু না করে উপায় কী?
অথচ চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ক্লিনিক সংশ্লিষ্টরাই বলছেন, এ জীবাণুবাহী বর্জ্য কোনোভাবেই বাইরে যাওয়ার কথা নয়। আবার তা পুড়িয়ে নষ্ট করার জন্য রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, খরচ করা হয় বিপুল অর্থও। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং অসৎ নার্স, আয়া, বয় ও কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে এসব সিরিঞ্জ ও ব্যাগ পুনর্ব্যবহারও হয় প্রকাশ্যেই।
এগার বছর বয়সী নয়ন রাজধানীর মুগদায় থাকে। ৫-৬ বছর বয়স থেকেই সে হাসপাতাল বর্জ্য কুড়ানোর পেশায় নিয়োজিত। বাবা-মা থেকেও নেই, পথশিশু হিসেবে কখনও ফুটপাতে, কখনও রেলওয়ে স্টেশনে রাত কাটায়। অথচ পড়াশোনা করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ‘সুযোগ চাই, মানুষ হব’ স্লোগানও দিতে পারেনি। বরং তীব্র মানসিক যন্ত্রণা নিয়েই বাধ্য হয়ে লাগে ভয়াবহ ঝুঁকির এ কাজে ।
একই কথা ‘সিরিঞ্জ কুড়ানো’ শিশু সুমনেরও। বলে, ‘এসব করতে একদম ভালো লাগে না। সূঁচের ঘায়ে (আঘাতে) হাত-পা পইচ্চা (পচে যায়, পুঁজ বের হয়) থাকে। শুকায় না। ওই অবস্থায় কেউই আমাদের সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করে না। কারো কাছেই কোনো আদর-স্নেহহ পাই না। কিন্তু শুধু বেঁচে থাকার জন্যই তা করতে হচ্ছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় শনিবার ব্যবহৃত সিরিঞ্জের ভেতর জমে থাকা রক্ত পরিষ্কার করছে নয়ন ও সুমন। নয়ন জানায়, আরও ১২-১৩ শিশু সিরিঞ্জ, স্যালাইনের ব্যাগ সংগ্রহ করে। কোন জায়গা থেকে? মুগদা সরকারি হাসপাতালসহ ওই এলাকায় গড়ে উঠা বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে এসব সংগ্রহ করে তারা। হাসপাতালের বয় ও আয়ারা হাসপাতালের নির্দিষ্ট জায়গায় এসব বর্জ্য জমা রাখে। পরে তারা তা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।
মাদকাসক্ত এক ‘বড় ভাই’ ফাইটিং রুবেল জানান, তার রয়েছে ৮ শিশু। সবাই এসব কুড়ায়। সিরিঞ্জ জমিয়ে রক্ত পরিষ্কার করাসহ আলাদা আলাদা ভাগ করে তারাই। প্রতিদিন তাদের প্রত্যেককে ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা দেয়া হয়।
কোথায় এসব বিক্রি করেন? উত্তরে রুবেল জানান, বংশাল, সদরঘাট, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ নানা জায়গায়। মূলত ভাঙ্গারি মালিকরাই এসব কিনেন। সিরিঞ্জ প্রতি কেজি একশ’ থেকে ১১০ টাকা, স্যালাইনের ব্যাগ ও নল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।
মতিঝিলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব সড়ক সংলগ্ন এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী জানান, কেনা সিরিঞ্জ তারা পাইকারি ধরে দু’শত থেকে আড়াইশ’ টাকা কেজি বিক্রি করেন। কারা এসব কিনেন? উত্তরে বলেন, ইসলামপুরের ৩-৪ ব্যবসায়ী।
মাদকাসক্ত সেন্টু মিয়া জানান, তিনি এ ব্যবসা প্রায় ৫-৬ বছর ধরে করছেন। নিজেও এসব সংগ্রহ করেন। শিশুদের দিয়েও করান। বললেন, তার মতো অনেকেই আছেন এ ব্যবসা করছেন। যেসব আয়া ও বয়দের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে, তাদের কিছু টাকা ধরিয়ে দেন তারা। বিনিময়ে সিরিঞ্জের সূচ অক্ষত রাখতে হয় আয়া ও বয়দের। মাদকাসক্তদের মাঝেও এ সিরিঞ্জ বিক্রি করা হয়। প্রতিটি ৩ টাকা।
চানখাঁরপুল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ট) হাসপাতাল সংলগ্ন বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় কথা হয় বেশ কয়েকজন সিরিঞ্জ কুড়ানো শিশুর সঙ্গে। বাবুবাজারে শিশু রিয়াদ জানায়, তারা শুধু এসব বর্জ্য নির্দিষ্ট হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে সংগ্রহ করে। পরে ভাইদের (মাদকাসক্ত বড় ভাই) কাছে জমা দেয়। বিনিময়ে কিছু টাকা পায়। তার সঙ্গে আরও ৭-৮ জন এ কাজ করে। চানখাঁরপুলে কথা হয় শিশু রনির সঙ্গে। রনি জানাল, তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ (ঢামেক) বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে এসব সংগ্রহ করে থাকে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বয় ও আয়াদের সঙ্গে ‘ভাইদের’ যোগাযোগ রয়েছে। প্রায় সময় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে গেলেই আয়া ও বয়রা সিরিঞ্জ ও স্যালাইনের ব্যাগ ভরা পলিথিন তাদের বস্তায় ভরে দেয়।
ঢামেক হাসপাতাল, বার্ন ইউনিট ও মিডফোর্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট ‘লাল’ ও ‘সবুজ’ রংঙের ড্রাম রয়েছে। নিয়ম অনুয়ায়ী ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও বর্জ্য লাল ড্রামে ফেলতে হয়।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, কোনো অবস্থাতেই ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও বর্জ্য বাইরে কিংবা শিশুদের হাতে যেতে পারে না। সিরিঞ্জসহ বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট লাল-সবুজ ড্রাম রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি এনজিওর সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে। মাসে দু’বার এনজিও কর্মীরা সিরিঞ্জসহ বর্জ্য তুলে নেয় এবং তা মাতুয়াইলে নিয়ে ধ্বংস করে ফেলে। তাদের মাসে ৩০ হাজার টাকাও দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ডাক্তার কিংবা নার্স ইনজেনশন দিয়েই সিরিঞ্জের সূঁচ ভেঙ্গে দেয়ার নিয়ম। তারা যদি তা না করেন তাহলে অপরাধ করছেন। যদি হাসপাতালের আয়া কিংবা বয়রা এসব বর্জ্য বাইরে ফেলে কিংবা কারও সঙ্গে যোগসাজশে বিক্রি করে তা অবশ্যই ভয়াবহ অপরাধ। দ্রুত তাদের চিহ্নিত করা হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সমাজের প্রতিটি মানুষও যেন সচেতন হয়।
মিডফোর্ট হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হোসেন বলেন, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও হাসপাতাল বর্জ্য বাইরে ও শিশুদের হাতে যাওয়া ভয়াবহ উদ্বেগের বিষয়। এ নিয়ে ব্যবসা করা ভয়াবহ অপরাধ। সিরিঞ্জসহ বর্জ্য বাইরে ফেলা কিংবা বিক্রয়ের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢামেক কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর ডা. সামন্ত লাল সেন এসব শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, এসব বিষাক্ত হাসপাতাল বর্জ্য কী করে বাইরে যায়! শিশুদের দিয়ে কুড়ানো- এটা তো আরও উদ্বেগের। এসব বর্জ্য কোনো অবস্থাতেই বাইরে যাওয়ার কথা নয়। এসব বন্ধে পুলিশ প্রশাসনেরও ভূমিকা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো দরকার।
No comments