খাদ্য উৎপাদনে রাজনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়ার আশংকা by আবদুল লতিফ মন্ডল
গত
কয়েক বছর ধরে চাল আমদানিতে নিম্নগতি পরিলক্ষিত হলেও চলতি অর্থবছরের শুরু
থেকেই চাল আমদানিতে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, গত কয়েক মাস ধরে
সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিুমুখী থাকলেও খাদ্যদ্রব্যের দাম, বিশেষ করে চালের
দাম ঊর্ধ্বমুখী। সরকার চাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের দাবি করলেও এবং
চলতি অর্থবছরে সরকারি খাতে চাল আমদানি না হলেও চালের আমদানি দ্রুত বাড়ছে
কেন, তা পর্যালোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য। সরকারি সূত্রে পাওয়া চাল
আমদানির গত ৭ বছরের তথ্যাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে
পরপর দুটি প্রলয়ংকরী বন্যা ও সাইক্লোন সিডরে আমন ফসল মারাত্মকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৩০ লাখ টনের বিপরীতে
উৎপাদিত আমনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৯৬ লাখ টনে। ওই অর্থবছরে মোট চাল
আমদানির পরিমাণ ছিল ২০ লাখ ৫৫ হাজার টন (সরকারি খাতে ৬ লাখ ২৪ হাজার টন এবং
বেসরকারি খাতে ১৪ লাখ ৩১ হাজার টন)। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বোরোর বাম্পার
উৎপাদনের ফলে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাত মিলে চাল আমদানির পরিমাণ ৬ লাখ ১৩
হাজার টনে নেমে আসে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে চাল উৎপাদনে প্রধান ফসল বোরোসহ আমন ও
আউশের উৎপাদন সন্তোষজনক হওয়ায় ওই বছর চাল আমদানির পরিমাণ নেমে আসে ৯২
হাজার টনে (সরকারি খাতে ৫৫ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ৩৭ হাজার টন)।
২০০৮-০৯ এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট চালের উৎপাদন
যথাক্রমে ২২ লাখ ২৪ হাজার টন এবং ১২ লাখ ৮৪ হাজার টন বৃদ্ধি পেলেও (২০০৮-০৯
ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত মোট চালের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ কোটি ১৩
লাখ ১৭ হাজার টন এবং ৩ কোটি ২২ লাখ ৫৭ হাজার টন, যা ২০১০-১১ অর্থবছরে
দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার টনে) ২০১০-১১ অর্থবছরে চালের আমদানি আগের
দু’বছরের তুলনায় অনেক গুণ বেড়ে যায়। ওই অর্থবছরে চালের আমদানি দাঁড়ায় ১৫
লাখ ৫৪ হাজার টনে (সরকারি খাতে ১২ লাখ ৬৪ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ২ লাখ
৯০ হাজার টন)। ওই বছর হঠাৎ এভাবে চালের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়া একটি রহস্য
হিসেবে রয়ে গেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে চালের মোট উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৩
লাখ ৪৮ হাজার টন বেড়ে যায় এবং ওই বছরে চাল আমদানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ
১৪ হাজার টনে (সরকারি খাতে ৪ লাখ ৫৫ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ৫৯ হাজার
টন)। ২০১২-১৩ অর্থবছরে চালের মোট উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় সামান্য পরিমাণে
অর্থাৎ ৭৫ হাজার টন কমে যায় এবং ওই বছর সরকারি-বেসরকারি খাত মিলে চাল
আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ২৭ হাজার টন। গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) আগের বছরের
তুলনায় মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পায় সাড়ে ৪ লাখ টন এবং ওই বছর সরকারি-বেসরকারি
খাতে চাল আমদানি হয় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬০ টন।
উপর্যুক্ত বর্ণনা থেকে দেখা যায়, বিগত ৬টি অর্থবছরের মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছর বাদ দিলে অন্য বছরগুলোয় চালের সর্বোচ্চ ও সর্বনিু আমদানি দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬ লাখ ১৩ হাজার টন ও ২৭ হাজার টন। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০১৪-১৫) ১ জুলাই-১২ ফেব্র“য়ারি সময়কালে বেসরকারি খাতে চাল আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ২০ হাজার ৫৫০ টন, যা বিগত ৬টি অর্থবছরের মধ্যে কেবল ২০১০-১১ অর্থবছর বাদে অন্য যে কোনো অর্থবছরের পুরো সময়ে আমদানিকৃত মোট চালের চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশি। বিশেষ করে ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানিকৃত চালের তুলনায় তা ৩০ গুণ বেশি (আমদানি প্রক্রিয়ায় রয়েছে এমন চাল হিসাবে নেয়া হয়নি)। চাল সরকারি নাকি বেসরকারি খাতে আমদানি হচ্ছে এটি মুখ্য বিষয় নয়; মুখ্য বিষয় হল চাল আমদানি হচ্ছে এবং তা দ্রুতগতিতে।
চাল আমদানি খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় গত অর্থবছরের শেষদিক থেকে বিষয়টি নিয়ে সরকার কিছুটা লুকোচুরির আশ্রয় নেয়। গত অর্থবছরে চাল আমদানি প্রসঙ্গে ২৫ জুন রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, বেসরকারি খাতে ভারত থেকে আমদানি করা নিুমানের চাল গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর কয়েকদিন আগে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী অনুরূপ বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভারতের খাদ্যগুদামগুলোতে চালের মেয়াদ তিন বছর পার হলে তারা তা রফতানি করে দেয়? বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গোখাদ্য হিসেবে তা আমদানি করছেন। দেশে চালের কোনো সংকট নেই। তবে চাল আমদানিকারকরা মন্ত্রীদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাদের বক্তব্যে তারা গোখাদ্য হিসেবে চাল আমদানির কথা অস্বীকার করেন এবং বলেন, এত উচ্চমূল্যে আমদানি করা চাল গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। তারা আরও বলেন, বাজারে চালের ঘাটতি রয়েছে এবং তারা মানুষের খাওয়ার জন্যই চাল আমদানি করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সার্বিক কৃষি খাতে, বিশেষ করে শস্য উপখাতে প্রবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক নয়। সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শস্য উপখাতে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ০.৫৯ ও ১.৯১ শতাংশ। এর প্রভাব পড়েছে চাল উৎপাদনের ওপর। ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৩.৯৮, ১.০৩, ০.০০ ও ১.৩৩ শতাংশ। এতে দেখা যায়, গত তিন বছর আমাদের চাল উৎপাদন বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের (১.৩৭ শতাংশ) চেয়ে কম।
কয়েক মাস আগেই দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) পূর্বাভাস মোতাবেক চলতি অর্থবছরে দেশে মোট চালের উৎপাদন প্রাক্কলিত পরিমাণের (৩ কোটি ৪৮ লাখ টন) চেয়ে কিছুটা কম হবে, কারণ চাল উৎপাদনে খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় চাষিরা অন্য শস্যের দিকে ঝুঁকছেন। ইউএসডিএ আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে মানুষের খাওয়ার জন্য ৩ কোটি ৫২ লাখ টন চালের প্রয়োজন হবে, যা গত বছরের চেয়ে ৩ লাখ টন বেশি।
এদিকে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধ এবং অবরোধকে বেগবান করতে দেয়া ঘন ঘন হরতালে জ্বালানিসহ কৃষি উপকরণের সংকটে দেশে বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে দেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলে এ সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। ডিজেলের অভাবে এ অঞ্চলের শত শত সেচযন্ত্র অচল। অবরোধে সার পরিবহনেও চলছে অচলাবস্থা। বীজ, সার ও কীটনাশকের জন্য হাহাকার চলছে বিভিন্ন এলাকায়। বীজতলা তৈরি হলেও জমি তৈরির অপেক্ষায় রয়েছেন লাখ লাখ চাষী। চলমান অবরোধ-হরতালে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে সরকার। ১৭ ফেব্র“য়ারি প্রকাশিত একটি দৈনিকের (বণিক বার্তা) রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সড়কপথে জ্বালানি তেল ও সার সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ওয়াগন সংকটে তেল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যাপ্ত ওয়াগন না পাওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে তেল পৌঁছতে পারছে না রংপুর, শ্রীমঙ্গল ও সিলেট অঞ্চলে। জ্বালানি তেল ও সার সরবরাহের বিষয়টি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। সচিব সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সব সচিবকে চিঠি দিয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে ডিজেল ও সার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সরকার ও সরকারবিরোধী দলের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা না হলে এবং চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে দেশে চাল উৎপাদনের প্রধান উৎস বোরোর আবাদ যে এ বছর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা অনেকটা জোর দিয়ে বলা যায়। এর ফলে চাল আমদানি আরও বেড়ে যাবে। এতে অর্থনীতির ওপর আসবে একটি বড় আঘাত। চাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসব আমরা।
আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক
উপর্যুক্ত বর্ণনা থেকে দেখা যায়, বিগত ৬টি অর্থবছরের মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছর বাদ দিলে অন্য বছরগুলোয় চালের সর্বোচ্চ ও সর্বনিু আমদানি দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬ লাখ ১৩ হাজার টন ও ২৭ হাজার টন। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০১৪-১৫) ১ জুলাই-১২ ফেব্র“য়ারি সময়কালে বেসরকারি খাতে চাল আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ২০ হাজার ৫৫০ টন, যা বিগত ৬টি অর্থবছরের মধ্যে কেবল ২০১০-১১ অর্থবছর বাদে অন্য যে কোনো অর্থবছরের পুরো সময়ে আমদানিকৃত মোট চালের চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশি। বিশেষ করে ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানিকৃত চালের তুলনায় তা ৩০ গুণ বেশি (আমদানি প্রক্রিয়ায় রয়েছে এমন চাল হিসাবে নেয়া হয়নি)। চাল সরকারি নাকি বেসরকারি খাতে আমদানি হচ্ছে এটি মুখ্য বিষয় নয়; মুখ্য বিষয় হল চাল আমদানি হচ্ছে এবং তা দ্রুতগতিতে।
চাল আমদানি খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় গত অর্থবছরের শেষদিক থেকে বিষয়টি নিয়ে সরকার কিছুটা লুকোচুরির আশ্রয় নেয়। গত অর্থবছরে চাল আমদানি প্রসঙ্গে ২৫ জুন রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, বেসরকারি খাতে ভারত থেকে আমদানি করা নিুমানের চাল গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর কয়েকদিন আগে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী অনুরূপ বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভারতের খাদ্যগুদামগুলোতে চালের মেয়াদ তিন বছর পার হলে তারা তা রফতানি করে দেয়? বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গোখাদ্য হিসেবে তা আমদানি করছেন। দেশে চালের কোনো সংকট নেই। তবে চাল আমদানিকারকরা মন্ত্রীদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাদের বক্তব্যে তারা গোখাদ্য হিসেবে চাল আমদানির কথা অস্বীকার করেন এবং বলেন, এত উচ্চমূল্যে আমদানি করা চাল গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। তারা আরও বলেন, বাজারে চালের ঘাটতি রয়েছে এবং তারা মানুষের খাওয়ার জন্যই চাল আমদানি করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সার্বিক কৃষি খাতে, বিশেষ করে শস্য উপখাতে প্রবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক নয়। সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শস্য উপখাতে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ০.৫৯ ও ১.৯১ শতাংশ। এর প্রভাব পড়েছে চাল উৎপাদনের ওপর। ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৩.৯৮, ১.০৩, ০.০০ ও ১.৩৩ শতাংশ। এতে দেখা যায়, গত তিন বছর আমাদের চাল উৎপাদন বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের (১.৩৭ শতাংশ) চেয়ে কম।
কয়েক মাস আগেই দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) পূর্বাভাস মোতাবেক চলতি অর্থবছরে দেশে মোট চালের উৎপাদন প্রাক্কলিত পরিমাণের (৩ কোটি ৪৮ লাখ টন) চেয়ে কিছুটা কম হবে, কারণ চাল উৎপাদনে খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় চাষিরা অন্য শস্যের দিকে ঝুঁকছেন। ইউএসডিএ আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে মানুষের খাওয়ার জন্য ৩ কোটি ৫২ লাখ টন চালের প্রয়োজন হবে, যা গত বছরের চেয়ে ৩ লাখ টন বেশি।
এদিকে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধ এবং অবরোধকে বেগবান করতে দেয়া ঘন ঘন হরতালে জ্বালানিসহ কৃষি উপকরণের সংকটে দেশে বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে দেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলে এ সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। ডিজেলের অভাবে এ অঞ্চলের শত শত সেচযন্ত্র অচল। অবরোধে সার পরিবহনেও চলছে অচলাবস্থা। বীজ, সার ও কীটনাশকের জন্য হাহাকার চলছে বিভিন্ন এলাকায়। বীজতলা তৈরি হলেও জমি তৈরির অপেক্ষায় রয়েছেন লাখ লাখ চাষী। চলমান অবরোধ-হরতালে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে সরকার। ১৭ ফেব্র“য়ারি প্রকাশিত একটি দৈনিকের (বণিক বার্তা) রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সড়কপথে জ্বালানি তেল ও সার সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ওয়াগন সংকটে তেল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যাপ্ত ওয়াগন না পাওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে তেল পৌঁছতে পারছে না রংপুর, শ্রীমঙ্গল ও সিলেট অঞ্চলে। জ্বালানি তেল ও সার সরবরাহের বিষয়টি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। সচিব সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সব সচিবকে চিঠি দিয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে ডিজেল ও সার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সরকার ও সরকারবিরোধী দলের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা না হলে এবং চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে দেশে চাল উৎপাদনের প্রধান উৎস বোরোর আবাদ যে এ বছর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা অনেকটা জোর দিয়ে বলা যায়। এর ফলে চাল আমদানি আরও বেড়ে যাবে। এতে অর্থনীতির ওপর আসবে একটি বড় আঘাত। চাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসব আমরা।
আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক
No comments