সমাধানের সদর রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে by মাসুদ মজুমদার
সবাই
জানতে চান কী হতে যাচ্ছে। যারা জানতে চান তারাও রাজনীতির বোদ্ধা মানুষ।
তার পরও আশা করেন আমরা মিডিয়ার মানুষ, বিভিন্ন তথ্যসূত্র আমাদের চোখের
সামনে থাকে। তা ছাড়া মঞ্চের নেপথ্যে কী ঘটছে তার খবরও আমরা রাখি বলে মনে
করেন। মিডিয়া জগতের মানুষ নিয়ে অন্যান্য পেশার ও সাধারণ মানুষের এমন ধারণা
অমুলক নয়। তার পরও বলব, মিডিয়ার মানুষ সবজান্তার ভাব দেখালেও বাংলাদেশের
আজকের বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ নির্মোহ অবস্থান থেকে পক্ষপাতমুক্ত হয়ে খবর
নেয়া ও দেয়ার ক্ষেত্রে মিডিয়ার লোকজন সাংঘাতিকভাবে বিভাজিত ও পক্ষপাতদুষ্ট।
একদল সাংবাদিক নিজেদের দলীয় ক্যাডারের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তারা যা দেখেন,
সরকারদলীয় চশমা চোখে লাগিয়েই দেখেন। তার ওপর তাদের বিবেক বন্ধক দেয়া আছে।
তাদের এখনকার পেশাদারিত্ব সস্তায় বিকোবার পণ্য, যা সরকার সহজেই কিনে
নিয়েছে। সরকারি আনুকূল্য যারা নিয়ে নিয়েছে, তাদের বস্তুনিষ্ঠতার জানাজা হয়ে
গেছে। একই চিত্র বিপরীত দিকেও থাকা সম্ভব। তবে বিপরীত মেরুর মিডিয়ার
লোকদের পেশাদারিত্ব লগ্নি করে দেয়ার সুযোগ এখন নেই। একে তো তারা সংখ্যায়
কাকের মতো নয়, তাই ভাত ছিটালেও হুমড়ি খেয়ে পড়ার মতো সেই পরিস্থিতি নেই। বরং
ভোল পাল্টিয়ে এই সময়ের সাথে লাগসই হওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টাও করছেন কেউ
কেউ।
তার পরও সত্যের বিলুপ্তি ঘটানো যাচ্ছে না কিংবা যাবে না দুটো কারণে। সত্য সব সময় আপন মহিমায় ভাস্বর। ফাঁকফোকর গলিয়ে জনগণের সামনে আসবেই। কখনো বিলম্বে, কখনো তাৎক্ষণিক। দ্বিতীয়ত, এই মুহূর্তে যারাই সত্য উচ্চারণ করছেন, তারা জেনেই কিছু তথ্য দিয়ে দিচ্ছেন। না জেনেও তারা অনেক সত্য তথ্যের জোগান দিচ্ছেন। কারণ সরকারি প্রচার প্রপাগান্ডা এতটা প্রবল অথচ জনগণ সে দিকে মোটেও মনোযোগী নয়। তাই দু’চারটি ভিন্নমতের শব্দও যখন পায়, জনগণ সেটা লুফে নিচ্ছে। সেই ভিন্নমতই এখন জনমত গঠন করে চলেছে। বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপটে হক কথার কাছে অন্য মিডিয়া গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছিল। গণকণ্ঠের চার পাতার দৈনিকটি মানুষ লুকিয়ে পড়ে শত হাতে পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমান সরকার ভিন্নমতের প্রতি যে আচরণ করছে, পরিস্থিতি সেই স্তরে পৌঁছে গেছে। তা ছাড়া তথ্যপ্রবাহ বন্ধ করা হলে গুজব ডালপালা মেলে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তিল তাল হয়। বন্দুকযুদ্ধ ঢাকা যায়নি। বার্ন ইউনিটের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে প্রহসন জনগণ দেখে ফেলেছে। জনগণ বুঝে নিয়েছে কেন এখন ডিসিসি নির্বাচনের প্রশ্ন উঠছে। গণতন্ত্র নিয়ে এ মায়াকান্নার কথা জনগণ কিভাবে চোখ বন্ধ করে শুনবে!
সরকার মিডিয়া দখল ও নিয়ন্ত্রণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপরও হাত বসিয়েছে। সরকার বুঝতে চাচ্ছে না, খালেদা জিয়ার ভাত বন্ধ করলে একটা বড় মাপের চাঞ্চল্যকর ও অমানবিক খবরের জন্ম দেয়। তার বাড়ির সাথে সব সংযোগ বন্ধ করে দিলেও একটা মেসেজ জনগণ পেয়ে যায়। সরকার অনুগতদের লাখো শব্দের টকশো, এই একটি মাত্র খবরের নিচে চাপা পড়ে যায়। একজন মন্ত্রী যখন খালেদা জিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছানোর মতো পুলিশি বক্তব্য দেন, তখন সরকারের জন্য নতুন কোনো শত্রুর প্রয়োজন হয় না। পুলিশের মিথ্যাচার জনগণ আমলেই নেয় না। সারা দিন মন্ত্রীরা যেসব বক্তব্য দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন, তার সবটুকু গিলে খায় একটা দুটো আসফালন। যেসব চ্যানেল ঘাম ঝরিয়ে সরকারকে নানাভাবে সার্ভিস দিতে চাচ্ছে, তার পুরোটা ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যাচ্ছে ক্রসফায়ার, গণগ্রেফতার, মিটিং মিছিলে বাধা, বাড়ি বাড়ি ও গণতল্লাশির কারণে। সরকারের লোকদের কান্নাকেও মানুষ গ্লিসারিন দিয়ে অভিনয় ভাবছে। সরকার যেন না বুঝেই গুলশান কার্যালয়কে গণতন্ত্র ভবনের মর্যাদায় উন্নীত করে দিলো। একসময় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ছিল গণতান্ত্রিক প্রেরণার উৎস। গুলশান কূটনৈতিক পাড়া, রাজনৈতিক অফিস থাকবে কি না সেই প্রশ্ন তোলা হয়। সেখানে মন্ত্রী মিছিল করেন কোন যুক্তিতে। গণতন্ত্র প্রেমের সরকারদলীয় ডুগডুগি এ জন্যই বিশ্বাসযোগ্য করা যাবে না।
এখন গণতন্ত্রের পক্ষে বললে, মিডিয়ার স্বাধীনতা চাইলে, মানবাধিকারের পক্ষ নিলেও বিরোধী দলের সাত দফার প্রতিফলন ঘটে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিটিও একই স্রোতে মিশবে। সরকার বুঝতে চাইছে না, তারা চরম পন্থায় গেলেও বিরোধী জোটের লাভ। নরম পন্থায় হাঁটলেও লাভটা বিরোধী দলের ঘরে যাবে। সরকার সব পথ বন্ধ করে দিয়ে নিজের অস্তিত্বসঙ্কট বাড়িয়ে তুলেছে। বার্ন ইউনিট আমাদের ক্ষমতার রাজনীতির দগদগে ক্ষত ও কলঙ্ক। এটা সরকার কাজে লাগাতে চেয়েছে বিরোধী জোটকে দমনের একটি প্রক্রিয়া ও কৌশল হিসেবে। রাজনীতির নামে বাড়াবাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ না করে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ ও নাশকতার ভীতি ছড়ানো হচ্ছে বিরোধী দলকে আরো কাবু এবং পশ্চিমা বিশ্বকে প্রলুব্ধ করতে। এখন সরকারের উচিত হবে এর লাভক্ষতি খতিয়ে দেখা। যারাই এর সাথে জড়িত, তারা নিশ্চিতভাবে অপরাধী। মানবতার দুশমন। এদের সরকার ধরতে না পারলে ১০ পয়েন্ট হারায়। পাইকারিভাবে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে চড়াও হলে আরো ১০ পয়েন্ট চলে যায়। ব্লেইম গেইমে হারায় অবশিষ্ট পয়েন্ট। কিছু জনগণ বিরোধী দলকে দুষতে চায় কিন্তু সরকারের ভূমিকা তাদের সন্দেহবাণে জর্জরিত করে। তাই সব ঘৃণা, রোষ ও অভিযোগের আঙুল সরকারের দিকে। এক খেটে খাওয়া দিনমজুরের মন্তব্যÑ বাবা, তুমি কেন ক্ষমতা ছাড়ছ না। ছাড়লেই তো সব লেঠা চুকে যায়! এটাই পরিবর্তনকামী মানুষের পালস।
মানুষ নিশ্চিত করে জানে খালেদা জিয়ার জোট অত্যন্ত সাফল্যের সাথে চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারহীন একদলীয় নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য করে দিয়েছে। সারা পৃথিবী এ বক্তব্যটির সাথে একমত। এই জানুয়ারিতে এসে তার জোট বিশ্ববাসী ও দেশের মানুষকে বুঝাতে পেরেছে বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সঙ্কট রয়েছে, যা থেকে উত্তরণের পথ নতুন করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সমঝোতা, নয়তো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে যাবে। রাজনৈতিক সঙ্কট ও গণতন্ত্রহীনতার অন্ধকার থেকেই জন্ম নিয়েছে সব অগণতান্ত্রিক ও নাশকতামূলক অপতৎপরতা। সরকার চেয়েছিল নাশকতার চাদরে রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখে কালো নেকাব পরিয়ে দিতে, পারেনি। ঢাকা শহরে কারফিউ দিলেও পাস নিয়ে কয়েক লাখ পেশাজীবী ঢাকার পথে থাকবে। যেকোনো চরম কর্মসূচি দিলেও পঁচিশ লাখ লোক বিভিন্ন তাড়নায় ঘর থেকে রাস্তায় বেরুবে। তাই এগুলো এখন কর্মসূচির সাফল্য ব্যর্থতার সূচক নয়। সরকারি জোরে পোশাক শিল্প শ্রমিক, স্কুলছাত্র ও টোকাই দিয়ে মিছিলের বহর বড় করা কোনো কঠিন কাজ নয়। এটা কোনোভাবেই জনমতের অংশ নয়।
হরতাল হলো কী হলো না, অবরোধ চলল কী চলল না, গুলশান অফিস অবমুক্ত হলো কী হলো না, খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলেন কি না, রাজপথে প্রতিবাদী মিছিল হলো কি নাÑ এসব এখন কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। বিবেচনা ও ভাবনার বিষয় সরকার কবে ফণা নামাবে। সঙ্কটের সুরাহা কত দ্রুত হবে। সমাধানটা রাজনৈতিক হবে না গোঁজামিলের হবে। সংলাপ নাটক হবে না ভণ্ডামি হবে। না বিলম্বে হলেও কাক্সিত সমাধান আসবে। তবে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন হাইজ্যাক করে সংলাপ সমঝোতার নামে একটি বিটিমের খেলা এখন ওপেন সিক্রেট। তার বাইরেও কোনো কোনো উদ্যোগের ভেতর নিষ্ঠার চাপ আছে। সমাধানের সূত্র আছে। হোক না একটি সমঝোতার সনদ। একটি সাংবিধানিক ভাঙা-গড়ার উদ্যোগও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে পারে। সংলাপ-সমঝোতার উদ্যোগ ব্যর্থ হলে যা চাই না তা আসতে বাধা দেয়া হবে কোন যুক্তিতে। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্য শুধু বাংলাদেশীরা নির্ধারণ করবেনÑ এমনটি হয়তো আর হবে না। কারণ জেদের দাম লাখ টাকা ধরে সরকার ক্ষমতা খামছে ধরে থাকতে চাইছে। তাই জাতিসঙ্ঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের একটি বোঝাপড়া সম্ভবত সবাই চাইবে। সরকার চাইবে শেষ রক্ষার জন্য। বিরোধী দল চাইবে সরকার হঠানোর নিশ্চয়তার জন্য। তা ছাড়া রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে সব কিছু খোলা মাঠে হবে না। আলো-আঁধারির মাঝেই রাজনৈতিক নাটকের যবনিকাপাত ঘটবে।
বড় ব্যথা ছোট ব্যথার কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। মশার কামড় যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর কিন্তু জেল-জুলুম, পুলিশি হয়রানির মুখে ঘর অফিস ও এলাকা ছেড়ে মৃত্যুভয়ে অন্ধকার কোথাও রাত যাপনের কষ্টের কাছে মশার কামড় তুচ্ছ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সেই অভিজ্ঞতা আমরা সঞ্চয় করেছি। এখন গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাহীন জীবনের কাছে ক্রসফায়ার, গুম ও অপহরণও তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায় বাণিজ্যে ঘাটতি, জনদুর্ভোগ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। তার চেয়ে বেশি অসহনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণার কারণ সরকার সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কট, যা থেকে উত্তরণের পথে চলতে না গিয়ে আমরা সামগ্রিক অর্থে দেউলিয়া হওয়ার পথে।
তার পরও সত্যের বিলুপ্তি ঘটানো যাচ্ছে না কিংবা যাবে না দুটো কারণে। সত্য সব সময় আপন মহিমায় ভাস্বর। ফাঁকফোকর গলিয়ে জনগণের সামনে আসবেই। কখনো বিলম্বে, কখনো তাৎক্ষণিক। দ্বিতীয়ত, এই মুহূর্তে যারাই সত্য উচ্চারণ করছেন, তারা জেনেই কিছু তথ্য দিয়ে দিচ্ছেন। না জেনেও তারা অনেক সত্য তথ্যের জোগান দিচ্ছেন। কারণ সরকারি প্রচার প্রপাগান্ডা এতটা প্রবল অথচ জনগণ সে দিকে মোটেও মনোযোগী নয়। তাই দু’চারটি ভিন্নমতের শব্দও যখন পায়, জনগণ সেটা লুফে নিচ্ছে। সেই ভিন্নমতই এখন জনমত গঠন করে চলেছে। বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপটে হক কথার কাছে অন্য মিডিয়া গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছিল। গণকণ্ঠের চার পাতার দৈনিকটি মানুষ লুকিয়ে পড়ে শত হাতে পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমান সরকার ভিন্নমতের প্রতি যে আচরণ করছে, পরিস্থিতি সেই স্তরে পৌঁছে গেছে। তা ছাড়া তথ্যপ্রবাহ বন্ধ করা হলে গুজব ডালপালা মেলে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তিল তাল হয়। বন্দুকযুদ্ধ ঢাকা যায়নি। বার্ন ইউনিটের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে প্রহসন জনগণ দেখে ফেলেছে। জনগণ বুঝে নিয়েছে কেন এখন ডিসিসি নির্বাচনের প্রশ্ন উঠছে। গণতন্ত্র নিয়ে এ মায়াকান্নার কথা জনগণ কিভাবে চোখ বন্ধ করে শুনবে!
সরকার মিডিয়া দখল ও নিয়ন্ত্রণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপরও হাত বসিয়েছে। সরকার বুঝতে চাচ্ছে না, খালেদা জিয়ার ভাত বন্ধ করলে একটা বড় মাপের চাঞ্চল্যকর ও অমানবিক খবরের জন্ম দেয়। তার বাড়ির সাথে সব সংযোগ বন্ধ করে দিলেও একটা মেসেজ জনগণ পেয়ে যায়। সরকার অনুগতদের লাখো শব্দের টকশো, এই একটি মাত্র খবরের নিচে চাপা পড়ে যায়। একজন মন্ত্রী যখন খালেদা জিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছানোর মতো পুলিশি বক্তব্য দেন, তখন সরকারের জন্য নতুন কোনো শত্রুর প্রয়োজন হয় না। পুলিশের মিথ্যাচার জনগণ আমলেই নেয় না। সারা দিন মন্ত্রীরা যেসব বক্তব্য দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন, তার সবটুকু গিলে খায় একটা দুটো আসফালন। যেসব চ্যানেল ঘাম ঝরিয়ে সরকারকে নানাভাবে সার্ভিস দিতে চাচ্ছে, তার পুরোটা ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যাচ্ছে ক্রসফায়ার, গণগ্রেফতার, মিটিং মিছিলে বাধা, বাড়ি বাড়ি ও গণতল্লাশির কারণে। সরকারের লোকদের কান্নাকেও মানুষ গ্লিসারিন দিয়ে অভিনয় ভাবছে। সরকার যেন না বুঝেই গুলশান কার্যালয়কে গণতন্ত্র ভবনের মর্যাদায় উন্নীত করে দিলো। একসময় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ছিল গণতান্ত্রিক প্রেরণার উৎস। গুলশান কূটনৈতিক পাড়া, রাজনৈতিক অফিস থাকবে কি না সেই প্রশ্ন তোলা হয়। সেখানে মন্ত্রী মিছিল করেন কোন যুক্তিতে। গণতন্ত্র প্রেমের সরকারদলীয় ডুগডুগি এ জন্যই বিশ্বাসযোগ্য করা যাবে না।
এখন গণতন্ত্রের পক্ষে বললে, মিডিয়ার স্বাধীনতা চাইলে, মানবাধিকারের পক্ষ নিলেও বিরোধী দলের সাত দফার প্রতিফলন ঘটে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিটিও একই স্রোতে মিশবে। সরকার বুঝতে চাইছে না, তারা চরম পন্থায় গেলেও বিরোধী জোটের লাভ। নরম পন্থায় হাঁটলেও লাভটা বিরোধী দলের ঘরে যাবে। সরকার সব পথ বন্ধ করে দিয়ে নিজের অস্তিত্বসঙ্কট বাড়িয়ে তুলেছে। বার্ন ইউনিট আমাদের ক্ষমতার রাজনীতির দগদগে ক্ষত ও কলঙ্ক। এটা সরকার কাজে লাগাতে চেয়েছে বিরোধী জোটকে দমনের একটি প্রক্রিয়া ও কৌশল হিসেবে। রাজনীতির নামে বাড়াবাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ না করে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ ও নাশকতার ভীতি ছড়ানো হচ্ছে বিরোধী দলকে আরো কাবু এবং পশ্চিমা বিশ্বকে প্রলুব্ধ করতে। এখন সরকারের উচিত হবে এর লাভক্ষতি খতিয়ে দেখা। যারাই এর সাথে জড়িত, তারা নিশ্চিতভাবে অপরাধী। মানবতার দুশমন। এদের সরকার ধরতে না পারলে ১০ পয়েন্ট হারায়। পাইকারিভাবে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে চড়াও হলে আরো ১০ পয়েন্ট চলে যায়। ব্লেইম গেইমে হারায় অবশিষ্ট পয়েন্ট। কিছু জনগণ বিরোধী দলকে দুষতে চায় কিন্তু সরকারের ভূমিকা তাদের সন্দেহবাণে জর্জরিত করে। তাই সব ঘৃণা, রোষ ও অভিযোগের আঙুল সরকারের দিকে। এক খেটে খাওয়া দিনমজুরের মন্তব্যÑ বাবা, তুমি কেন ক্ষমতা ছাড়ছ না। ছাড়লেই তো সব লেঠা চুকে যায়! এটাই পরিবর্তনকামী মানুষের পালস।
মানুষ নিশ্চিত করে জানে খালেদা জিয়ার জোট অত্যন্ত সাফল্যের সাথে চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারহীন একদলীয় নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য করে দিয়েছে। সারা পৃথিবী এ বক্তব্যটির সাথে একমত। এই জানুয়ারিতে এসে তার জোট বিশ্ববাসী ও দেশের মানুষকে বুঝাতে পেরেছে বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সঙ্কট রয়েছে, যা থেকে উত্তরণের পথ নতুন করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সমঝোতা, নয়তো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে যাবে। রাজনৈতিক সঙ্কট ও গণতন্ত্রহীনতার অন্ধকার থেকেই জন্ম নিয়েছে সব অগণতান্ত্রিক ও নাশকতামূলক অপতৎপরতা। সরকার চেয়েছিল নাশকতার চাদরে রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখে কালো নেকাব পরিয়ে দিতে, পারেনি। ঢাকা শহরে কারফিউ দিলেও পাস নিয়ে কয়েক লাখ পেশাজীবী ঢাকার পথে থাকবে। যেকোনো চরম কর্মসূচি দিলেও পঁচিশ লাখ লোক বিভিন্ন তাড়নায় ঘর থেকে রাস্তায় বেরুবে। তাই এগুলো এখন কর্মসূচির সাফল্য ব্যর্থতার সূচক নয়। সরকারি জোরে পোশাক শিল্প শ্রমিক, স্কুলছাত্র ও টোকাই দিয়ে মিছিলের বহর বড় করা কোনো কঠিন কাজ নয়। এটা কোনোভাবেই জনমতের অংশ নয়।
হরতাল হলো কী হলো না, অবরোধ চলল কী চলল না, গুলশান অফিস অবমুক্ত হলো কী হলো না, খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলেন কি না, রাজপথে প্রতিবাদী মিছিল হলো কি নাÑ এসব এখন কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। বিবেচনা ও ভাবনার বিষয় সরকার কবে ফণা নামাবে। সঙ্কটের সুরাহা কত দ্রুত হবে। সমাধানটা রাজনৈতিক হবে না গোঁজামিলের হবে। সংলাপ নাটক হবে না ভণ্ডামি হবে। না বিলম্বে হলেও কাক্সিত সমাধান আসবে। তবে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন হাইজ্যাক করে সংলাপ সমঝোতার নামে একটি বিটিমের খেলা এখন ওপেন সিক্রেট। তার বাইরেও কোনো কোনো উদ্যোগের ভেতর নিষ্ঠার চাপ আছে। সমাধানের সূত্র আছে। হোক না একটি সমঝোতার সনদ। একটি সাংবিধানিক ভাঙা-গড়ার উদ্যোগও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে পারে। সংলাপ-সমঝোতার উদ্যোগ ব্যর্থ হলে যা চাই না তা আসতে বাধা দেয়া হবে কোন যুক্তিতে। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্য শুধু বাংলাদেশীরা নির্ধারণ করবেনÑ এমনটি হয়তো আর হবে না। কারণ জেদের দাম লাখ টাকা ধরে সরকার ক্ষমতা খামছে ধরে থাকতে চাইছে। তাই জাতিসঙ্ঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের একটি বোঝাপড়া সম্ভবত সবাই চাইবে। সরকার চাইবে শেষ রক্ষার জন্য। বিরোধী দল চাইবে সরকার হঠানোর নিশ্চয়তার জন্য। তা ছাড়া রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে সব কিছু খোলা মাঠে হবে না। আলো-আঁধারির মাঝেই রাজনৈতিক নাটকের যবনিকাপাত ঘটবে।
বড় ব্যথা ছোট ব্যথার কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। মশার কামড় যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর কিন্তু জেল-জুলুম, পুলিশি হয়রানির মুখে ঘর অফিস ও এলাকা ছেড়ে মৃত্যুভয়ে অন্ধকার কোথাও রাত যাপনের কষ্টের কাছে মশার কামড় তুচ্ছ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সেই অভিজ্ঞতা আমরা সঞ্চয় করেছি। এখন গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাহীন জীবনের কাছে ক্রসফায়ার, গুম ও অপহরণও তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায় বাণিজ্যে ঘাটতি, জনদুর্ভোগ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। তার চেয়ে বেশি অসহনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণার কারণ সরকার সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কট, যা থেকে উত্তরণের পথে চলতে না গিয়ে আমরা সামগ্রিক অর্থে দেউলিয়া হওয়ার পথে।
No comments