সাগরে ট্রলারে ডাকাতি- জলদস্যুদের অভয়ারণ্য উচ্ছেদ করুন
জলদস্যুদের মধ্যে অধিকাংশই রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া পুলিশের সঙ্গে সখ্য থাকায় কেউ তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে পারছে না। ফলে অবাধে অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা। |
বরগুনার পাথরঘাটা
থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ১২টি ট্রলারে রোববার গভীর
রাতে ডাকাতি হয়েছে বলে মঙ্গলবার সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। জানা
যাচ্ছে, এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ২৫টি ট্রলারে জলদস্যুরা হামলা করে লুটপাট
চালিয়েছে। এদিকে সোমবার রাতেও জলদস্যুরা দুটি ট্রলারের চার জেলেকে অপহরণ
করে নিয়ে গেছে। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের
অপহরণ প্রায়শই ঘটে থাকে। কিন্তু গভীর সমুদ্রে গিয়ে দস্যু বাহিনীগুলোর
মোকাবেলা করা কোস্টগার্ডের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না। সাধারণত গভীর সমুদ্রে
জলদস্যুদের মোকাবেলার জন্য নৌবাহিনীর শরণাপন্ন হতে হয়। কখনও কখনও গভীর
সমুদ্রে নৌবাহিনীর অভিযান ও উপকূলীয় এলাকায় নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের
সাঁড়াশি অভিযানে জলদস্যুদের অনেককে আটক করা সম্ভব হলেও এদের ডাকাতি ও অপহরণ
বাণিজ্য বন্ধ হয় না। নতুন নতুন দলের আবির্ভাব ঘটে। জলদস্যু বাহিনীগুলোর
সঙ্গে প্রভাবশালীদের মদদ থাকার কারণে এরা এতটা বেপরোয়া হতে পারছে। সমুদ্রে
মাছ যখন বেশি ধরা পড়ে, তখন ট্রলারে লুটপাট ও জেলে অপহরণের ঘটনাও পাল্লা
দিয়ে বাড়ে। আমরা মনে করি, এ ধরনের দস্যুতাকে কোনোক্রমেই বরদাশত করা উচিত
নয়। এরা আমাদের জলসীমার নিরাপত্তাকে বিঘি্নত করছে। জেলেদের জীবন ও জীবিকাকে
হুমকিগ্রস্ত করছে। কোনো কোনো সময় জলদস্যুদের হামলায় অনেক জেলের
প্রাণপ্রদীপ পর্যন্ত নিভে যায়। কখনও কখনও জেলেদের উত্তাল সমুদ্রে নিক্ষেপ
করে এরা ট্রলারটি পর্যন্ত ছিনতাই করে নিয়ে যায়। আমরা মনে করি, বঙ্গোপসাগরে
জলদস্যুদের এই অভয়ারণ্য যে কোনো মূল্যে উচ্ছেদ করতেই হবে। এটা অবিশ্বাস্য
যে, এসব দস্যু বাহিনীর নাড়ি-নক্ষত্র প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অজানা
নয়। কারণ, ট্রলার মালিক ও বড় মাছ ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত নানা নামের দস্যু
বাহিনীর অবস্থান জানে। প্রয়োজন আসলে কার্যকর অভিযানের সদিচ্ছা। জেলেদের কাছ
থেকেও সহায়তা চাই। সর্বশেষ দস্যুতার অঘটনের পর বিলম্বে হলেও আমরা সব পক্ষ
থেকে সেই সদিচ্ছাই দেখতে চাই।
No comments