ছিটমহল ও তিস্তায় আপত্তি নেই মমতার by অমিত বসু
মেঘ
ডাকে বাংলায়, সাগর তাকায়। দেখে দেখে পাখিরাও বাংলায় গায়। ফুলেরা অবাক হয়ে
সুরভি ছড়ায়। শুরু হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন অধ্যায়। ভাষার কথা ভাবলে
বাঙালি বদলায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বদলেছেন। ভুলের ভুলভুলাইয়া থেকে
বেরিয়ে স্বপ্নময় জগতে। নিজেকে চিনছেন নতুন করে। ফুসফুসে ভরতে চাইছেন নতুন
অক্সিজেন। ঢাকা, কলকাতায় একই বাতাস। তবু বেশি শুদ্ধতার আশ্বাস বাংলাদেশে।
অগুনতি নদীতে অকৃত্রিম পবিত্রতা। দেশ থেকে দেশে বইলেও নদী শুধু সাগরের।
সেখানেই সীমা থেকে অসীমে মুক্তি। সংকীর্ণতা, তুচ্ছতার গ্গ্নানি ধুয়ে-মুছে
সাফ। তিন বছর ধরে ক্ষুদ্রতার গণ্ডিতে আটকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্ধন
ভাঙার গান এবার তার কণ্ঠে। তিনি নিজেই বলেছেন, ভাষার জন্য বাঙালি মরতে ভয়
পায় না। বাংলাদেশ সেটা দেখিয়েছে। ভাষাজয়ের থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে
জয়। সেই গরিমা আজও অম্লান। পশ্চিমবঙ্গও সেই ইতিহাস শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ
করে। ভাষাকে জাগ্রত রেখে সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত নির্দেশের দায়িত্ব বাঙালির।
বিশ্বে যেখানে যত বাঙালি আছে তারা যেন ভুলে না যায়, ভাষা হচ্ছে মা। তার
সম্মান লুণ্ঠিত হলে সন্তানেরাও পার পাবে না। সেই তাগিদে বাংলাদেশের হৃদয়ে
উঁকি মারার সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ
মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তিনি শ্রদ্ধা জানাবেন ভাষাসৈনিকদের। বাঙালির
সংহতি রক্ষায় শপথ নেবেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাষা দিবসের উৎসবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান, তিনি তা গ্রহণ করতে মুহূর্তমাত্র দেরি করেননি। মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে আলোচনার সময় নষ্ট করতে চাননি। আমন্ত্রণপত্র হাতে নিয়েই বলেছেন, আমি যাব। যত কাজই থাক, ভাষার ডাকের কাছে সেসব তুচ্ছ।
বাদ সেধেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সতীর্থরা। তারা প্রশ্ন করেছেন, আপনি যাবেন বলছেন, কিন্তু যাবেন কীভাবে। সেখানে বিরোধী আন্দোলনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থগিত। কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। হিংসার স্ফুলিঙ্গ ছড়াচ্ছে জেলাতেও। এ অবস্থায় কি আপনার নিরাপদ সফর সম্ভব? জিজ্ঞাসার জবাব না দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখে হাসি ছড়িয়েছেন। যার অর্থ একটাই, তোমরা তোমাদের মতো ভাব। আমাকে আমার মতো ভাবতে দাও। রাস্তার দুর্বার আন্দোলনেই আমার রাজনৈতিক সত্তার জন্ম। তারই জোরে সিপিএমের জগদ্দল পাথর উধাও। আমি আজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। পৃথিবীর কোনো আন্দোলনের সাধ্য আছে আমায় ওড়ানোর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মবিশ্বাসের ওপর আস্থা রেখেও কেন্দ্রীয় সরকার উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গালে হাত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছেন যান। কিন্তু অঘটন ঘটলে তখন! পাবলিক কি ছেড়ে কথা বললে। মোদিকে দায়ী করেই তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়বে। মোদির দিকে আঙুল তুলে বলবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো আপনার। তাকে যেতে দিলেন কেন? বারণ করতে পারতেন। এই অসময়ে না গিয়ে সুসময়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেই-বা কী ক্ষতি হতো।
মোদি বললেও কোনো কাজ হতো না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন একবার যাওয়ার কথা বলেছেন, তাকে ঠেকানোর সাধ্য কার! তিনি ছুটছেন বন্ধুর টানে। সেখানে সময়-অসময়ের প্রশ্ন কোথায়। দুঃসময়েই তো বন্ধুর পাশে দাঁড়ানোটা বেশি জরুরি।
মমতার সফরটা কূটনৈতিক নয়। রাস্তায় রাজনীতির জাল বিছানো নেই। পথটা হৃদয়ে কাটা। সেটা একমাত্র অন্তরে ঝুঁকি দিলে দেখা যায়। বাইরে অদৃশ্য। আবেগ মন্থনে নিমন্ত্রণ রক্ষার দৌড়। সহযোগী মন্ত্রী উদ্বেগে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, দেখলেন না, ঈশ্বরদীতে কী হলো। আন্দোলনকারীরা মৈত্রী এক্সপ্রেসে পেট্রোল বোমা ছুড়ল। তারপরও মৈত্রী রক্ষার স্বার্থে ঢাকা দৌড়াচ্ছেন কোন ভরসায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহাস্য জবাব, আমি তো বিমানে উড়ে যাব। সেটা তো বোমার রেঞ্জের বাইরে। এয়ারপোর্ট থেকে সড়কপথে যেখানেই যাই, তাও নিরাপদ থাকবে। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা এখনও শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে। সেটা তার নাগালের বাইরে যাওয়ার শঙ্কা নেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথারই পুনরাবৃত্তি করেছে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর নিয়ে তাদেরও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। দিলি্লর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যে রিপোর্ট তারা পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ছয়টি জেলায় বিরোধীদের উপদ্রব বেশি। তুলনায় ঢাকা নিরাপত্তার চাদরে এমনভাবে ঢাকা, যেখানে বিরোধীদের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানোর অবকাশ কম। নিত্যদিন হরতালে জীবনযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে ঠিকই; তবে অবস্থা আয়ত্তের বাইরে যায়নি। বরং ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন ঢাকা সফর করেছিলেন, তখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি ছিল সত্যিই অগি্নগর্ভ। জামায়াত শহরজুড়ে আগুন জ্বেলেছিল। যেই অগি্নবূ্যহ ভেদ করে প্রণব মুখার্জি ঢাকার মাটিতে পা রেখেছিলেন। নির্দিষ্ট কর্মসূচি শেষ করে নিরাপদে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনও করেছিলেন। সে তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখন অনেক ভালো। নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনী ভেদ করে সন্ত্রাসীরা সামনে আসতে পারছে না।
পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হতো তাহলেও কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেতেন। কারণ একটাই, ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার এমন সুযোগ তিনি আর পেতেন না। তিস্তা চুক্তি আটকে। ছিটমহল চুক্তি অনুমোদনে বাদ সেধে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে তিনি কাঁটা ছড়িয়েছিলেন। এতে লাভবান হয়েছিল জামায়াত। তারা বরাবরই দু'দেশের মধ্যে চীনের প্রাচীরের মতো দুর্ভেদ্য পাঁচিল তুলতে চেয়েছে। সীমান্ত সন্ত্রাস বজায় রেখে যাতায়াতের রাস্তায় ব্যারিকেড গড়েছে। প্রয়োজনীয় চুক্তিতে যদি দুটি দেশ কাছাকাছি আসত, তারা অসুবিধায় পড়ত।
বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জামায়াতের কর্মকাণ্ড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিপদে ফেলেছিল। অভিযোগের আঙুল তার দিকে উঠেছিল। প্রশ্ন ছিল, জামায়াত, সারদা, তৃণমূল এই ত্রিফলা আক্রমণে বাংলাদেশ-ভারতের কী সর্বনাশ হতে চলেছে। ত্রিশক্তির রফাতেই কি তিস্তা, ছিটমহল চুক্তি নস্যাৎ! অভিযোগের প্রমাণ এখনও মেলেনি। কিন্তু জনমনে তৃণমূল সম্পর্কে সন্দেহের বীজ ক্রমে বড় হয়ে ডালপালা মেলছে। এই গাছ যত বাড়বে, তৃণমূলের তত ক্ষতি। এর শিকড় উপড়াতে বাংলাদেশের সহযোগিতা দরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এবারের ঢাকা সফরে সেই সুযোগ আছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহস জুগিয়েছে উপনির্বাচনের সাফল্য। বনগাঁ লোকসভা আর কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের অভাবনীয় জয় তাকে শক্ত জমির ওপর দাঁড় করিয়েছে। তৃণমূলের জয়ের সঙ্গে শক্তি বৃদ্ধিও ঘটেছে। আগের চেয়ে ব্যবধান বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সিপিএম। তাদের ভোট কমছে তো কমছেই। অন্যদিকে ধাপে ধাপে বিজেপি ওপরে উঠে আসছে। বিজেপি যদি এভাবে বাড়তে থাকে ১৪ মাস পর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ইমেজে জমা জঞ্জাল সাফ করে উজ্জ্বল করতে চান। বাংলাদেশে হারানো জনপ্রিয়তা উদ্ধারও তার সংকল্পের মধ্যে পড়ে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে সে কারণেই তিনি ইতিবাচক ভূমিকা নেবেন। শেখ হাসিনাকে জানাবেন, তিস্তা, ছিটমহল চুক্তিতে তার আর আপত্তি নেই। কাজটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ফেব্রুয়ারির শেষে সংসদের বাজেট অধিবেশনে ছিটমহল চুক্তি অনুমোদনের সম্ভাবনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই সম্মতি জানিয়েছেন। তিস্তা চুক্তি নিয়ে পর্যালোচনার কাজটা এগিয়েছে। মার্চে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের কথা। শেখ হাসিনাকে তখন তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। মোদির আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথাটাই শেখ হাসিনাকে বলতে চান।
ভারতীয় সাংবাদিক
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাষা দিবসের উৎসবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান, তিনি তা গ্রহণ করতে মুহূর্তমাত্র দেরি করেননি। মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে আলোচনার সময় নষ্ট করতে চাননি। আমন্ত্রণপত্র হাতে নিয়েই বলেছেন, আমি যাব। যত কাজই থাক, ভাষার ডাকের কাছে সেসব তুচ্ছ।
বাদ সেধেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সতীর্থরা। তারা প্রশ্ন করেছেন, আপনি যাবেন বলছেন, কিন্তু যাবেন কীভাবে। সেখানে বিরোধী আন্দোলনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থগিত। কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। হিংসার স্ফুলিঙ্গ ছড়াচ্ছে জেলাতেও। এ অবস্থায় কি আপনার নিরাপদ সফর সম্ভব? জিজ্ঞাসার জবাব না দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখে হাসি ছড়িয়েছেন। যার অর্থ একটাই, তোমরা তোমাদের মতো ভাব। আমাকে আমার মতো ভাবতে দাও। রাস্তার দুর্বার আন্দোলনেই আমার রাজনৈতিক সত্তার জন্ম। তারই জোরে সিপিএমের জগদ্দল পাথর উধাও। আমি আজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। পৃথিবীর কোনো আন্দোলনের সাধ্য আছে আমায় ওড়ানোর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মবিশ্বাসের ওপর আস্থা রেখেও কেন্দ্রীয় সরকার উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গালে হাত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছেন যান। কিন্তু অঘটন ঘটলে তখন! পাবলিক কি ছেড়ে কথা বললে। মোদিকে দায়ী করেই তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়বে। মোদির দিকে আঙুল তুলে বলবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো আপনার। তাকে যেতে দিলেন কেন? বারণ করতে পারতেন। এই অসময়ে না গিয়ে সুসময়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেই-বা কী ক্ষতি হতো।
মোদি বললেও কোনো কাজ হতো না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন একবার যাওয়ার কথা বলেছেন, তাকে ঠেকানোর সাধ্য কার! তিনি ছুটছেন বন্ধুর টানে। সেখানে সময়-অসময়ের প্রশ্ন কোথায়। দুঃসময়েই তো বন্ধুর পাশে দাঁড়ানোটা বেশি জরুরি।
মমতার সফরটা কূটনৈতিক নয়। রাস্তায় রাজনীতির জাল বিছানো নেই। পথটা হৃদয়ে কাটা। সেটা একমাত্র অন্তরে ঝুঁকি দিলে দেখা যায়। বাইরে অদৃশ্য। আবেগ মন্থনে নিমন্ত্রণ রক্ষার দৌড়। সহযোগী মন্ত্রী উদ্বেগে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, দেখলেন না, ঈশ্বরদীতে কী হলো। আন্দোলনকারীরা মৈত্রী এক্সপ্রেসে পেট্রোল বোমা ছুড়ল। তারপরও মৈত্রী রক্ষার স্বার্থে ঢাকা দৌড়াচ্ছেন কোন ভরসায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহাস্য জবাব, আমি তো বিমানে উড়ে যাব। সেটা তো বোমার রেঞ্জের বাইরে। এয়ারপোর্ট থেকে সড়কপথে যেখানেই যাই, তাও নিরাপদ থাকবে। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা এখনও শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে। সেটা তার নাগালের বাইরে যাওয়ার শঙ্কা নেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথারই পুনরাবৃত্তি করেছে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর নিয়ে তাদেরও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। দিলি্লর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যে রিপোর্ট তারা পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ছয়টি জেলায় বিরোধীদের উপদ্রব বেশি। তুলনায় ঢাকা নিরাপত্তার চাদরে এমনভাবে ঢাকা, যেখানে বিরোধীদের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানোর অবকাশ কম। নিত্যদিন হরতালে জীবনযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে ঠিকই; তবে অবস্থা আয়ত্তের বাইরে যায়নি। বরং ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন ঢাকা সফর করেছিলেন, তখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি ছিল সত্যিই অগি্নগর্ভ। জামায়াত শহরজুড়ে আগুন জ্বেলেছিল। যেই অগি্নবূ্যহ ভেদ করে প্রণব মুখার্জি ঢাকার মাটিতে পা রেখেছিলেন। নির্দিষ্ট কর্মসূচি শেষ করে নিরাপদে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনও করেছিলেন। সে তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখন অনেক ভালো। নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনী ভেদ করে সন্ত্রাসীরা সামনে আসতে পারছে না।
পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হতো তাহলেও কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেতেন। কারণ একটাই, ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার এমন সুযোগ তিনি আর পেতেন না। তিস্তা চুক্তি আটকে। ছিটমহল চুক্তি অনুমোদনে বাদ সেধে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে তিনি কাঁটা ছড়িয়েছিলেন। এতে লাভবান হয়েছিল জামায়াত। তারা বরাবরই দু'দেশের মধ্যে চীনের প্রাচীরের মতো দুর্ভেদ্য পাঁচিল তুলতে চেয়েছে। সীমান্ত সন্ত্রাস বজায় রেখে যাতায়াতের রাস্তায় ব্যারিকেড গড়েছে। প্রয়োজনীয় চুক্তিতে যদি দুটি দেশ কাছাকাছি আসত, তারা অসুবিধায় পড়ত।
বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জামায়াতের কর্মকাণ্ড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিপদে ফেলেছিল। অভিযোগের আঙুল তার দিকে উঠেছিল। প্রশ্ন ছিল, জামায়াত, সারদা, তৃণমূল এই ত্রিফলা আক্রমণে বাংলাদেশ-ভারতের কী সর্বনাশ হতে চলেছে। ত্রিশক্তির রফাতেই কি তিস্তা, ছিটমহল চুক্তি নস্যাৎ! অভিযোগের প্রমাণ এখনও মেলেনি। কিন্তু জনমনে তৃণমূল সম্পর্কে সন্দেহের বীজ ক্রমে বড় হয়ে ডালপালা মেলছে। এই গাছ যত বাড়বে, তৃণমূলের তত ক্ষতি। এর শিকড় উপড়াতে বাংলাদেশের সহযোগিতা দরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এবারের ঢাকা সফরে সেই সুযোগ আছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহস জুগিয়েছে উপনির্বাচনের সাফল্য। বনগাঁ লোকসভা আর কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের অভাবনীয় জয় তাকে শক্ত জমির ওপর দাঁড় করিয়েছে। তৃণমূলের জয়ের সঙ্গে শক্তি বৃদ্ধিও ঘটেছে। আগের চেয়ে ব্যবধান বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সিপিএম। তাদের ভোট কমছে তো কমছেই। অন্যদিকে ধাপে ধাপে বিজেপি ওপরে উঠে আসছে। বিজেপি যদি এভাবে বাড়তে থাকে ১৪ মাস পর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ইমেজে জমা জঞ্জাল সাফ করে উজ্জ্বল করতে চান। বাংলাদেশে হারানো জনপ্রিয়তা উদ্ধারও তার সংকল্পের মধ্যে পড়ে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে সে কারণেই তিনি ইতিবাচক ভূমিকা নেবেন। শেখ হাসিনাকে জানাবেন, তিস্তা, ছিটমহল চুক্তিতে তার আর আপত্তি নেই। কাজটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ফেব্রুয়ারির শেষে সংসদের বাজেট অধিবেশনে ছিটমহল চুক্তি অনুমোদনের সম্ভাবনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই সম্মতি জানিয়েছেন। তিস্তা চুক্তি নিয়ে পর্যালোচনার কাজটা এগিয়েছে। মার্চে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের কথা। শেখ হাসিনাকে তখন তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। মোদির আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথাটাই শেখ হাসিনাকে বলতে চান।
ভারতীয় সাংবাদিক
No comments