সৌদি আরবে গৃহশ্রমিক পাঠানো by আব্দুল হান্নান বিশ্বাস
দীর্ঘ
ছয় বছর পর সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সেই লক্ষ্যে ১০ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ছয় বছরে মোট ১ হাজার ২৬০
জন নারী শ্রমিক বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে সৌদি আরবে গেছেন (উৎস: জনশক্তি
কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো—বিএমইটি)। কদিন আগে সাম্প্রতিক চুক্তির
খবর সংবাদমাধ্যমে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশিত হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা ও
বিশ্লেষণ হচ্ছে। এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির অংশ।
কখনো কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে এবং তা নিরসনের প্রশ্ন উঠলে এ ধরনের
চুক্তি স্বাক্ষরকারী উভয় দেশের জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশি
কর্মী নিয়োগের চুক্তি দুদেশের সরকারের মধ্যে হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের
বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব
ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরবের
জনশক্তি আমদানিকারকদের একমাত্র সংগঠন সৌদি ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট কমিটি
(সানারকম)।
এ ধরনের চুক্তি তাই গুরুত্বপূর্ণ এবং তা স্বাক্ষরের আগে যথেষ্ট প্রস্তুতি ও আলোচনার প্রয়োজন থাকে। উভয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন এবং তাঁদের নিজ নিজ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, মজুরি বিষয়ে সৌদি প্রতিনিধিদের একটি যুক্তিতেই সব আলোচনার পরিসমাপ্তি ঘটে। শ্রম আমদানি ও রপ্তানিকারক সংগঠনের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে। যাই হোক, এ ধরনের চুক্তি আসলে আমাদের গৃহকর্মে গমনেচ্ছু অভিবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
শ্রমের মজুরি বিষয়ে প্রথমেই বলতে হয়, সদ্য স্বাক্ষরিত চুক্তির আগে এ দুটি দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, সেখানে অদক্ষ-আধা দক্ষ গৃহকর্মীর মাসিক বেতন ধরা হয়েছিল ৮০০ সৌদি রিয়াল। সেই সঙ্গে কর্মীর থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া বহন করবে নিয়োগকারী। কিন্তু নতুন চুক্তিতে আগের মজুরির সঙ্গে এবারের ধার্য করা মজুরির কোনো সমন্বয় করা হয়নি। কিন্তু আলোচনায় বসার আগে মাননীয় মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করেছিলেন, নতুন চুক্তিতে ন্যূনতম মজুরি হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল এবং অভিবাসনের সব খরচ নিয়োগকারী প্রদান করবে।
চুক্তিমোতাবেক দক্ষ গৃহশ্রমিক (নারী শ্রমিক) পাঠাতে বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত? এ ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন অতি জরুরি। তা করা হলে মানবসম্পদ রপ্তানির সুযোগ বহুগুণ বাড়াতে পারে, তার ফলে দেশের বেকারত্বের হারও কমবে। অন্যদিকে সৌদি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সানারকম, সৌদি সরকার ও সে দেশের নাগরিক যাঁরা বাংলাদেশি গৃহকর্মী নারীদের তাঁদের গৃহকাজে নিযুক্ত করেন, তাঁরা গৃহশ্রমিকদের উপযুক্ত মর্যাদা দিতে কতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছেন? সানারকমের প্রতিনিধিরা আগের চুক্তির সময়ও জানিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের নারী গৃহশ্রমিকদের তাঁরা নিজেদের বোনের মতো দেখবেন, সেভাবেই নিরাপত্তা দেবেন। এ কথা তাঁরা এবারও বলেছেন। কিন্তু দেশে ফিরে এসেছেন বা আসতে বাধ্য হয়েছেন, এমন গৃহকর্মীদের অভিজ্ঞতার দু-চারটি ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত (সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা খুব কম প্রকাশিত হয়) হয়েছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। অভিবাসী বিষয়ে বিভিন্ন মাঠ গবেষণার ফলাফলে এরকম আরও অনেক অমানবিক ঘটনার কথা জানা গেছে।
নারীকর্মী অভিবাসনের নিয়োগ–প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন স্তরের দালাল চক্রের অনিয়ম, প্রবঞ্চনা, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রভাবিত করা এবং ক্ষেত্রবিশেষে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা বিভিন্ন মাঠ গবেষণায় বারবার উঠে এসেছে। নিরাপদ অভিবাসন নীতিমালার বাস্তবায়নে গৃহীত কর্মকাণ্ডের আশানুরূপ ফল যে পাওয়া যায়নি, এসব ঘটনা তার প্রমাণ। নিরাপদ অভিবাসন সামগ্রিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হলেও দালালদের দৌরাত্ম্য বাংলাদেশের সামগ্রিক অভিবাসন ব্যবস্থাকে নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। দেশের সাত শরও বেশি রিক্রুটিং এজেন্সি অনিবন্ধিত দালালদের ওপর দীর্ঘকাল নির্ভরশীল থেকে ব্যবসা পরিচালনা ও সুবিধাজনক স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখেছে। এখন পর্যন্ত একটি জনস্বার্থবান্ধব টেকসই রিক্রুটিং ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বিভিন্ন ফোরামে এই ব্যবস্থার সমালোচনা হরহামেশা শোনা যায়, কিন্তু কোনো কাজ হয় না।
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পেশায় নারী কর্মীদের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বিএমইটির ওয়েবসাইটে নিবন্ধনকৃত নারীর সংখ্যা যথেষ্ট কম হলেও পুরুষ শ্রমজীবীর সংখ্যা বাজার-চাহিদার চেয়ে বহুগুণ বেশি। সরকারিভাবে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু অনলাইন নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা দেখে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়। দেশে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারে নারী শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট উপকৃত হলেও পেশাদার কাজে যোগদানের জন্য যে প্রয়োজনীয় কারিগরি ও ব্যবহারিক বিদেশি ভাষা শিক্ষার দরকার, তা এখনো টেকসই নীতিমালার অভাবে অপর্যাপ্তই রয়ে গেছে। এ ছাড়া ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, পারিবারিক ও সামাজিক বিধিনিষেধের জন্য বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নারীদের মানবসম্পদ হিসেবে না দেখে এখনো নির্ভরশীল বোঝা হিসেবে দেখা হয়। ফলে সামগ্রিক শ্রম চাহিদার নিরিখে নানা কারণে বিদেশ গমনেচ্ছু নারীর সংখ্যা এখনো সীমিত। এ বিষয়টি অবশ্যই আমাদের সরকারি নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় থাকা উচিত। যাঁরা শ্রম-অভিবাসনসহ শ্রমের মজুরি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় আলোচনা-বিতর্কে অংশ নেন, তাঁদের এটা মনে রেখে যুক্তি উপস্থাপন করা সংগত।
এ ছাড়া শ্রমশক্তি আমদানিকারী দেশগুলোর শ্রম আইন, সামাজিক প্রথা (যেমন: মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাফালা প্রথা), ভাষা-সংস্কৃতি, গৃহকর্মীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, মানবাধিকার, গৃহশ্রমিকদের সঙ্গে নিয়োগকারী পরিবারের সদস্যদের আচার-ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতাও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিতর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিগত কয়েক বছর গৃহ খাতে নারী শ্রমিক রপ্তানিকারক দেশগুলো বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করতে শুরু করেছে। তাই নারী শ্রমিক অভিবাসনের চুক্তির সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি আনুপাতিক হারে পুরুষ শ্রমিক রপ্তানির বিষয়টিকেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে আলোচনার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এ ছাড়া কলম্বো প্রসেস ও ঢাকা ঘোষণায় গৃহকর্মী রপ্তানিকারক দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে শ্রমস্বার্থ, কল্যাণ নিশ্চিতকরাসহ কর্মপরিবেশের উন্নয়ন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসহ মর্যাদার সঙ্গে অভিবাসনের বিষয়গুলোকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে উপলব্ধি করেছে। এসব বিষয় আমাদের নতুন চুক্তিতে যুক্ত হওয়া সংগত।
আব্দুল হান্নান বিশ্বাস: শ্রম অভিবাসন ও মানব পাচারবিষয়ক গবেষক, দৃষ্টি রিসার্চ সেন্টার।
এ ধরনের চুক্তি তাই গুরুত্বপূর্ণ এবং তা স্বাক্ষরের আগে যথেষ্ট প্রস্তুতি ও আলোচনার প্রয়োজন থাকে। উভয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন এবং তাঁদের নিজ নিজ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, মজুরি বিষয়ে সৌদি প্রতিনিধিদের একটি যুক্তিতেই সব আলোচনার পরিসমাপ্তি ঘটে। শ্রম আমদানি ও রপ্তানিকারক সংগঠনের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে। যাই হোক, এ ধরনের চুক্তি আসলে আমাদের গৃহকর্মে গমনেচ্ছু অভিবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
শ্রমের মজুরি বিষয়ে প্রথমেই বলতে হয়, সদ্য স্বাক্ষরিত চুক্তির আগে এ দুটি দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, সেখানে অদক্ষ-আধা দক্ষ গৃহকর্মীর মাসিক বেতন ধরা হয়েছিল ৮০০ সৌদি রিয়াল। সেই সঙ্গে কর্মীর থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া বহন করবে নিয়োগকারী। কিন্তু নতুন চুক্তিতে আগের মজুরির সঙ্গে এবারের ধার্য করা মজুরির কোনো সমন্বয় করা হয়নি। কিন্তু আলোচনায় বসার আগে মাননীয় মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করেছিলেন, নতুন চুক্তিতে ন্যূনতম মজুরি হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল এবং অভিবাসনের সব খরচ নিয়োগকারী প্রদান করবে।
চুক্তিমোতাবেক দক্ষ গৃহশ্রমিক (নারী শ্রমিক) পাঠাতে বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত? এ ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন অতি জরুরি। তা করা হলে মানবসম্পদ রপ্তানির সুযোগ বহুগুণ বাড়াতে পারে, তার ফলে দেশের বেকারত্বের হারও কমবে। অন্যদিকে সৌদি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সানারকম, সৌদি সরকার ও সে দেশের নাগরিক যাঁরা বাংলাদেশি গৃহকর্মী নারীদের তাঁদের গৃহকাজে নিযুক্ত করেন, তাঁরা গৃহশ্রমিকদের উপযুক্ত মর্যাদা দিতে কতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছেন? সানারকমের প্রতিনিধিরা আগের চুক্তির সময়ও জানিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের নারী গৃহশ্রমিকদের তাঁরা নিজেদের বোনের মতো দেখবেন, সেভাবেই নিরাপত্তা দেবেন। এ কথা তাঁরা এবারও বলেছেন। কিন্তু দেশে ফিরে এসেছেন বা আসতে বাধ্য হয়েছেন, এমন গৃহকর্মীদের অভিজ্ঞতার দু-চারটি ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত (সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা খুব কম প্রকাশিত হয়) হয়েছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। অভিবাসী বিষয়ে বিভিন্ন মাঠ গবেষণার ফলাফলে এরকম আরও অনেক অমানবিক ঘটনার কথা জানা গেছে।
নারীকর্মী অভিবাসনের নিয়োগ–প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন স্তরের দালাল চক্রের অনিয়ম, প্রবঞ্চনা, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রভাবিত করা এবং ক্ষেত্রবিশেষে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা বিভিন্ন মাঠ গবেষণায় বারবার উঠে এসেছে। নিরাপদ অভিবাসন নীতিমালার বাস্তবায়নে গৃহীত কর্মকাণ্ডের আশানুরূপ ফল যে পাওয়া যায়নি, এসব ঘটনা তার প্রমাণ। নিরাপদ অভিবাসন সামগ্রিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হলেও দালালদের দৌরাত্ম্য বাংলাদেশের সামগ্রিক অভিবাসন ব্যবস্থাকে নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। দেশের সাত শরও বেশি রিক্রুটিং এজেন্সি অনিবন্ধিত দালালদের ওপর দীর্ঘকাল নির্ভরশীল থেকে ব্যবসা পরিচালনা ও সুবিধাজনক স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখেছে। এখন পর্যন্ত একটি জনস্বার্থবান্ধব টেকসই রিক্রুটিং ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বিভিন্ন ফোরামে এই ব্যবস্থার সমালোচনা হরহামেশা শোনা যায়, কিন্তু কোনো কাজ হয় না।
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পেশায় নারী কর্মীদের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বিএমইটির ওয়েবসাইটে নিবন্ধনকৃত নারীর সংখ্যা যথেষ্ট কম হলেও পুরুষ শ্রমজীবীর সংখ্যা বাজার-চাহিদার চেয়ে বহুগুণ বেশি। সরকারিভাবে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু অনলাইন নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা দেখে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়। দেশে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারে নারী শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট উপকৃত হলেও পেশাদার কাজে যোগদানের জন্য যে প্রয়োজনীয় কারিগরি ও ব্যবহারিক বিদেশি ভাষা শিক্ষার দরকার, তা এখনো টেকসই নীতিমালার অভাবে অপর্যাপ্তই রয়ে গেছে। এ ছাড়া ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, পারিবারিক ও সামাজিক বিধিনিষেধের জন্য বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নারীদের মানবসম্পদ হিসেবে না দেখে এখনো নির্ভরশীল বোঝা হিসেবে দেখা হয়। ফলে সামগ্রিক শ্রম চাহিদার নিরিখে নানা কারণে বিদেশ গমনেচ্ছু নারীর সংখ্যা এখনো সীমিত। এ বিষয়টি অবশ্যই আমাদের সরকারি নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় থাকা উচিত। যাঁরা শ্রম-অভিবাসনসহ শ্রমের মজুরি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় আলোচনা-বিতর্কে অংশ নেন, তাঁদের এটা মনে রেখে যুক্তি উপস্থাপন করা সংগত।
এ ছাড়া শ্রমশক্তি আমদানিকারী দেশগুলোর শ্রম আইন, সামাজিক প্রথা (যেমন: মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাফালা প্রথা), ভাষা-সংস্কৃতি, গৃহকর্মীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, মানবাধিকার, গৃহশ্রমিকদের সঙ্গে নিয়োগকারী পরিবারের সদস্যদের আচার-ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতাও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিতর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিগত কয়েক বছর গৃহ খাতে নারী শ্রমিক রপ্তানিকারক দেশগুলো বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করতে শুরু করেছে। তাই নারী শ্রমিক অভিবাসনের চুক্তির সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি আনুপাতিক হারে পুরুষ শ্রমিক রপ্তানির বিষয়টিকেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে আলোচনার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এ ছাড়া কলম্বো প্রসেস ও ঢাকা ঘোষণায় গৃহকর্মী রপ্তানিকারক দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে শ্রমস্বার্থ, কল্যাণ নিশ্চিতকরাসহ কর্মপরিবেশের উন্নয়ন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসহ মর্যাদার সঙ্গে অভিবাসনের বিষয়গুলোকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে উপলব্ধি করেছে। এসব বিষয় আমাদের নতুন চুক্তিতে যুক্ত হওয়া সংগত।
আব্দুল হান্নান বিশ্বাস: শ্রম অভিবাসন ও মানব পাচারবিষয়ক গবেষক, দৃষ্টি রিসার্চ সেন্টার।
No comments