সিসির মসনদ কি উল্টে যাবে? by মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
মিসরে
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মুরসি সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে
ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল
সিসি মনে হয় একটু বেকায়দায় পড়ে গেছেন। যে মরীচিকার টানে তিনি ব্রাদারহুডের
সত্য ও ন্যায়ের ঝাণ্ডাকে ধ্বংস করার দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা যে আসলেই
অলীক স্বপ্ন এবং সত্যিকার অর্থেই মরীচিকা তা জেনারেল সিসি টের পেতে শুরু
করেছেন। সৌদি আরবের নতুন বাদশাহ সালমান দায়িত্ব গ্রহণের পরই দৃশ্যপট পাল্টে
যাচ্ছে। আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি গত ৯ ফেব্রুয়ারি নিজেকে কঠিন এক বিপদে
পড়েছেন বলে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। কী এই বিপদ?
বিপদ হলো, তাকে মিসরের জনমতের তোয়াক্কা না করে শত শত মুসলমানের লাশের সারি ডিঙিয়ে ক্ষমতা দখলে যারা সহযোগিতা ও প্ররোচিত করেছিল, সেই ধনকুবের উপসাগরীয় দেশগুলো তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছে। জানা গেছে, ওই সব দেশ তাকে বিপুল আর্থিক সহায়তা দেয়া সত্ত্বেও তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতাদের বিদ্রƒপ করে বলেছিলেন, আমি তাদের ঘৃণা করি। আল সিসির ওই গোপন তথ্যটি সম্প্রতি ফাঁস হওয়ার পর উপসাগরীয় নেতারা বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য তাকে তলব করেছেন।
সিসির ওই বক্তব্যের রেকর্ডিং হয়তো এখন প্রমাণ করা কঠিন হবে। তার পরও বেশির ভাগ বিশ্লেষক একমত হয়েছেন যে, বক্তব্যের এই রেকর্ডিং যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। তারা এই বক্তব্যকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবেন। তারা (উপসাগরীয় নেতারা) এই বক্তব্যের ব্যাপারে এখন তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও ভবিষ্যতে হয়তো এটা আরো রাজনৈতিক শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে পারে। ২০১৩ সালে সিসি যখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে, তখন তিনি ওই সব কথা বলেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়। ওই বক্তব্যের রেকর্ডিং ২০১৩ সালের। উল্লেখ্য, সিসি পরে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে মিসরের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হন এবং তিনি এখনো দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বেও রয়েছেন।
কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটির (এইউসি) প্রফেসর ও জর্জ টাউন ভার্সিটির রাজনীতিবিজ্ঞানের ভিজিটিং প্রফেসর ইমাদ শাহীন বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারগুলোর নীরবতা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যে নিউজ সাইটে বিষয়টি পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হয়তো জালিয়াতিও হতে পারেÑ এ ধরনের আশঙ্কাও রয়েছে। কিন্তু সেটা প্রমাণ করার অফিসিয়াল কিছু নেই।
আমরা আগের গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার পরিণতি দেখেছি। ওই সব বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করার জন্য কেউ আগে এগিয়ে আসেনি অথবা ওই সব তথ্যের আস্থা হানি করার চেষ্টা করেনি। জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর মুসলিম খ্রিশ্চিয়ান আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জন ইসপোসিটো এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত আমরা এই গোপন তথ্য ফাঁস করার ব্যাপারে আস্থা না আনার মতো দৃঢ় কোনো তথ্য-প্রমাণ পাইনি। গত বছরের শেষের দিকে প্রথম গোপন তথ্য ফাঁসের এ ঘটনা ঘটে। তখন তুরস্কভিত্তিক একটি স্যাটেলাইট স্টেশনে সম্প্রচারিত হয় এটা। সর্বশেষ তথ্য ফাঁসের মতোই পত্রপত্রিকাগুলো সব সাময়িকভাবে অস্বীকার করে; কিন্তু প্রেসিডেন্ট এবং তার ভেতরের সার্কেল এটা প্রত্যাখ্যান করে।
ইসপোসিটো বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে যে আকস্মিকভাবে এটা আসেনি। গোপন তথ্য ফাঁসের কিছু ঘটনার আগে এটা ঘটে এবং এতে সত্যিকারভাবে দেখানো হয় লোকেরা কোথা থেকে আসছে।
বড় প্রশ্ন হচ্ছে এ ব্যাপারে দাতারা কী মনে করবে? বাহ্যিকভাবে এর জবাব হচ্ছে গতানুগতিক ও নিরস। সিসির ফোনকলের বিষয়টি শান্ত হওয়ার পর সৌদি আরবের নতুন বাদশাহ সালমান জোর দেন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো উদ্যোগের চেয়ে উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্ক শক্তিশালী করতে।
কুয়েতের আমির সাবাহ আল জাবের আল সাবাহ সিসিকে আশ্বস্ত করেন যে, মিসরের সাথে ঐক্য সংহতিকে হেয় করার কোনো উদ্যোগ এখন নেই এবং ভবিষ্যতেও যেকোনো উদ্যোগে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
আগের রেকর্ডিংয়ের সাথে তুলনামূলকভাবে সর্বশেষ ব্যাচে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সাবেক সেনাপ্রধান থেকে প্রেসিডেন্ট পদে সমাসীন জেনারেল সিসি ব্যক্তিগতভাবে অভিযুক্ত। ওই রেকর্ডিংয়ে কেবল জেনারেল সিসি ও তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার মধ্যকার কথোপকথন রয়েছে বলে দাবি করা হয়। অধ্যাপক শাহীন বলেন, গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকদের সংখ্যা বেড়ে যাবে, এটা নিশ্চিত না হলেও এতে সিসি সমর্থক কমে যেতে পারে।
সিসি প্রশাসনের খোলামেলা সমালোচক অধ্যাপক শাহীনকে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মতোই গুপ্তচর বলে অভিযুক্ত করা হয়। অবশ্য তিনি এই অভিযোগ তীব্রভাবে অস্বীকার করেন।
মি ইসপোসিটো বলেন, এই গোপন তথ্য ফাঁসের ফলে দৃশ্যপটে মারাত্মক কোনো পরিবর্তন আসবে না। তবে এতে সিসি ও মিসরের বর্তমান নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সামরিক বাহিনীর পেশাদারিত্ব প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। ফলাফল হতে পারে আরো সঙ্ঘাতময়, বিশেষভাবে আগে যেসব তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাতে অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি যেমন মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর দমনাভিযান অথবা নির্বাচনী অনিয়ম ইত্যাদি ছিল। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য ফাঁসের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিষয়াদি আলোকপাত করা হয়েছে। এসব তথ্য ফাঁস হওয়ার ফলে সিসির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় ধস নামবে এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি হেয় প্রতিপন্ন হবেনÑ ইসপোসিটো এ কথা জানান। সুতরাং ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে সিসির ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি হলে এবং যৌথভাবে উপসাগরীয় দাতাদেশগুলোর পক্ষ থেকেও সিসিকে চাপ দেয়া হতে পারে, তাতে সিসি নিজেকে হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে দেখতে পাবেন।
চাথাম হাউজের সিনিয়র রিচার্স ফেলো জেইন কিনিনমেন্টিও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, অদূর ভবিষ্যতে সম্পর্ক হয়তো পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তথ্য ফাঁস হওয়ার কারণে ধনাঢ্য উপসাগরীয় দেশগুলো এবং ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু মিসরের মধ্যে পরস্পর অবিশ্বাসের কারণে বিরোধ শুরু হয়ে যেতে পারে।
ইতোমধ্যেই গুজব ছড়াতে শুরু করেছে। আরো গোপন তথ্য ফাঁস হতে পারে বলে গুজবের ডালপালা গজাচ্ছে।
কুয়েতের সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য নাসের আল দাওয়ালিয়াহর বক্তব্য অনুযায়ী, গোপন তথ্যসংক্রান্ত কমপক্ষে আরো দু’টি রেকর্ডিং আছে। ওয়েবসাইট আরাবিয়া২১ডটকম জানায়, নাসের আল দাওয়ালিয়াহ প্রথম সিসির গোপন তথ্য ফাঁসের বিষয়টি প্রকাশ্যে উল্লেখ করেন। এতে স্পষ্টত, এতই বেদনাদায়ক বিষয় রয়েছে যে, সৌদি কর্তৃপক্ষকে সিসির কোনো ফোনকল শান্ত করতে পারেনি। তিনি টুইটার বার্তায় বলেন, এ জন্য হয়তো সিসির মক্কায় ওমরা বা হজ করতে যাওয়ার প্রয়োজন হবে। জনাব দাওয়ালিয়াহ টুইটার বার্তায় আরো বলেন, গোপন তথ্য ফাঁসের অপর একটি ঘটনায় জানা যায়, মিসরে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজন হবে।
প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সিসির নেতৃত্বে মুরসি সমর্থকদের বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশের ওপর যে দমনাভিযান চালানো হয়, তাতে ব্রাদারহুডের বহু কর্মী সমর্থক নেতা নিহত হন। এসব গণহত্যা চালাতে গিয়ে সিসি উপসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছিলেন। সৌদি আরব, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিসরে আনুষ্ঠানিকভাবে তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলার অথবা আরো শত শত কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো মুসলিম ব্রাদারহুডের উত্থান ঠেকাতে মুক্তভাবে মিসরকে দু’হাতে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। কারণ তাদের আশঙ্কা প্রবীণ ধনাঢ্য বাদশাহ এবং তাদের সরকারগুলোর ব্রাদারহুডের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রভাবে পতন ঘটতে পারে। ইরানের মতো অন্য নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক শক্তি ইরানকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিস্তার রোধ করতে এবং মিসরকে পুনরায় সঙ্ঘাত থেকে বিরত রাখতে উপসাগরীয় দেশগুলো মিসরকে সহায়তা দিয়েছে।
দুরহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো অ্যান্ড আফটার দ্য শেখস : দ্য কামিং কলাপস অব দ্য গালফ মনার্কি গ্রন্থের লেখক ক্রিস্টোফার ডেভিডসন বলেন, মুসলিম ব্রাদারহুডের ক্ষমতাহরণের মতো অভিন্ন লক্ষ্য এবং অন্য সব নির্দেশক পশ্চিমা মিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়নি।
‘উদাহরণস্বরূপ, সিসির সাথে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সম্পর্ক সত্যিকারভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয় না। এ ব্যাপারে আরো কিছু আভাস পাওয়া যায়, উভয় দেশের সম্পর্ক তেমন মজবুত নয়। সিসির সাথে তার রুশ প্রতিপক্ষের উষ্ণ সম্পর্কে থাকলেও পশ্চিমাদের সাথে সিসির ব্যাপারে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্ক তেমন একটা উষ্ণ নয়। সিসি গত বছর পুতিনের ক্রিমিয়া দখলকে শুধু নিন্দা জানাতেই অস্বীকৃতি জানাননি, তিনি আগস্টে পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের একটি অস্ত্রচুক্তি স্বাক্ষর করেন। চলতি সপ্তাহে উভয় নেতা কায়রোতে পুনরায় বৈঠকে বসেন এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এমনকি তারা একটি পারমাণবিক প্ল্যান্ট নির্মাণেরও ঘোষণা দেন।
ডেভিডসন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, উপসাগরীয় নীতিনির্ধারণী সার্কেলের অভ্যন্তরে সিসিকে রাখা হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ডেভিডসন বলেন, সিসি মিসরে ব্রাদারহুডের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা সৌদি আরবের অনেক পর্যায়ে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, সৌদি আরবের রাজপরিবারের সদস্যসহ প্রবীণ সৌদি নাগরিকেরা ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোকে সমর্থন জানাননি। তারা বিশেষভাবে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সময় এবং অন্যান্য সময়েও মুসলিম ব্রাদারহুডকে সহায়তা দেয়ার কথা স্মরণ করেন। সত্যিকার অর্থে ব্রাদারহুডকে আংশিকভাবে সৌদি আরব সহায়তা দিয়ে এসেছে। সুতরাং সৌদি বাদশাহ ও রাজতন্ত্র দৃঢ়তার সাথে সিসির প্রতি সমর্থনদান করার পর ইতিহাস আমাদের এ অবস্থায় কত দিন চলতে দিতে পারে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করেছে। সম্প্রতি রিয়াদে ক্ষমতার পরিবর্তনে আমরা হয়তো দেখতে পাব সিসির সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক আগের মতো আর উষ্ণ থাকবে নাÑ সম্পর্ক ঠাণ্ডা হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। আর ব্রাহারহুডের সাথে সমঝোতা এবং কাতারের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার ব্যাপারে সম্ভবত আলোচনা ও সমঝোতা হবে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তেলের দাম যেখানে পতনের মুখে, সেখানে উপসাগরীয় দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে এত দৃঢ় অবস্থায় নেই যে, তারা মিসরকে বিশাল অর্থ সহায়তা দিতে পারবে। তেলের দাম পড়ে যাচ্ছে। তাই সৌদি আর্থিক সহায়তাও আগের মতো হয়তো আর সক্রিয়ভাবে দেখা যাবে না। প্রথম দিকে সুটকেস ভর্তি করে মিসরে যে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে, তা হয়তো আর দেয়া হবে না।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক একমত হয়েছেন, উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের আর্থিক সহায়তার ব্যাপারে কাটছাঁট করবে। এ ব্যাপারে আরো কঠোর কড়াকড়ি এবং জবাবদিহি করা হতে পারে।
ডেভিডসন বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহর আমলে ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছিল এবং দলটিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তখন সন্দেহভাজন অনেক ব্রাদারহুড সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়। এখন সম্ভবত বিষয়টি ইউটার্নে রূপ নেবে।
জনাব শাহীন বলেন, উপসাগরীয় এলাকায় এবং মিসরে মিডিয়ায় ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হয়। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়, সিসি ও উপসাগরীয় নেতারা ছাড়া ইরাকের মতো অথবা সিরিয়া ও লিবিয়ার অবস্থার মতো মিসর ও উপসাগরীয় দেশগুলোতেও অব্যাহতভাবে ভয়ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতার আবহ সৃষ্টি হবে। চূড়ান্তভাবে এখনো সেখানে অনেক লোক অন্তরীণ এবং বাইরে থেকে এই কাজে নিয়োজিত রয়েছে, যাতে এসব দেশকে ব্যর্থ করে দেয়া যায়।
ডেভিডসন বলেন, আমার সন্দেহ হয় যে, এই নীতিতে পরিবর্তন ঘটবে। কারণ আমেরিকার এই মিত্রদের প্রয়োজন। তাদের মধ্যপ্রাচ্যনীতি এই মুহূর্তে এই দেশগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। এ দিকে এসপোসিটো ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, সিসির প্রতি সমর্থনও রিয়াদ ও আবুধাবীর গভীরে প্রথিত রয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার উপলব্ধি হচ্ছে, প্রথমে সিসির সমর্থনে একটি বড় চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলোর কোনো কোনো সরকার নিজেরাই আগ্রাসীভাবে এই চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল। তারা অন্যান্য সরকারের ওপরও তীব্র চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছেÑ এটা শুধু তাদের অঞ্চলে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও। সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অভিমত হচ্ছে, সিসি ও উপসারগীয় দেশগুলোর সম্পর্কে ভবিষ্যতে টানাপড়েন সৃষ্টি হবে, ব্রাদারহুডের সাথে তাদের আগের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং উপসাগরীয় দেশগুলো সহযোগিতার হাত গুটিয়ে নিলে সিসির ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। অপর দিকে, ব্রাদারহুডের পূর্ণশক্তিতে চূড়ান্তভাবে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্রমেই উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।
khairulbashar407@gmail.com
বিপদ হলো, তাকে মিসরের জনমতের তোয়াক্কা না করে শত শত মুসলমানের লাশের সারি ডিঙিয়ে ক্ষমতা দখলে যারা সহযোগিতা ও প্ররোচিত করেছিল, সেই ধনকুবের উপসাগরীয় দেশগুলো তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছে। জানা গেছে, ওই সব দেশ তাকে বিপুল আর্থিক সহায়তা দেয়া সত্ত্বেও তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতাদের বিদ্রƒপ করে বলেছিলেন, আমি তাদের ঘৃণা করি। আল সিসির ওই গোপন তথ্যটি সম্প্রতি ফাঁস হওয়ার পর উপসাগরীয় নেতারা বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য তাকে তলব করেছেন।
সিসির ওই বক্তব্যের রেকর্ডিং হয়তো এখন প্রমাণ করা কঠিন হবে। তার পরও বেশির ভাগ বিশ্লেষক একমত হয়েছেন যে, বক্তব্যের এই রেকর্ডিং যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। তারা এই বক্তব্যকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবেন। তারা (উপসাগরীয় নেতারা) এই বক্তব্যের ব্যাপারে এখন তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও ভবিষ্যতে হয়তো এটা আরো রাজনৈতিক শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে পারে। ২০১৩ সালে সিসি যখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে, তখন তিনি ওই সব কথা বলেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়। ওই বক্তব্যের রেকর্ডিং ২০১৩ সালের। উল্লেখ্য, সিসি পরে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে মিসরের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হন এবং তিনি এখনো দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বেও রয়েছেন।
কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটির (এইউসি) প্রফেসর ও জর্জ টাউন ভার্সিটির রাজনীতিবিজ্ঞানের ভিজিটিং প্রফেসর ইমাদ শাহীন বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারগুলোর নীরবতা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যে নিউজ সাইটে বিষয়টি পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হয়তো জালিয়াতিও হতে পারেÑ এ ধরনের আশঙ্কাও রয়েছে। কিন্তু সেটা প্রমাণ করার অফিসিয়াল কিছু নেই।
আমরা আগের গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার পরিণতি দেখেছি। ওই সব বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করার জন্য কেউ আগে এগিয়ে আসেনি অথবা ওই সব তথ্যের আস্থা হানি করার চেষ্টা করেনি। জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর মুসলিম খ্রিশ্চিয়ান আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জন ইসপোসিটো এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত আমরা এই গোপন তথ্য ফাঁস করার ব্যাপারে আস্থা না আনার মতো দৃঢ় কোনো তথ্য-প্রমাণ পাইনি। গত বছরের শেষের দিকে প্রথম গোপন তথ্য ফাঁসের এ ঘটনা ঘটে। তখন তুরস্কভিত্তিক একটি স্যাটেলাইট স্টেশনে সম্প্রচারিত হয় এটা। সর্বশেষ তথ্য ফাঁসের মতোই পত্রপত্রিকাগুলো সব সাময়িকভাবে অস্বীকার করে; কিন্তু প্রেসিডেন্ট এবং তার ভেতরের সার্কেল এটা প্রত্যাখ্যান করে।
ইসপোসিটো বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে যে আকস্মিকভাবে এটা আসেনি। গোপন তথ্য ফাঁসের কিছু ঘটনার আগে এটা ঘটে এবং এতে সত্যিকারভাবে দেখানো হয় লোকেরা কোথা থেকে আসছে।
বড় প্রশ্ন হচ্ছে এ ব্যাপারে দাতারা কী মনে করবে? বাহ্যিকভাবে এর জবাব হচ্ছে গতানুগতিক ও নিরস। সিসির ফোনকলের বিষয়টি শান্ত হওয়ার পর সৌদি আরবের নতুন বাদশাহ সালমান জোর দেন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো উদ্যোগের চেয়ে উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্ক শক্তিশালী করতে।
কুয়েতের আমির সাবাহ আল জাবের আল সাবাহ সিসিকে আশ্বস্ত করেন যে, মিসরের সাথে ঐক্য সংহতিকে হেয় করার কোনো উদ্যোগ এখন নেই এবং ভবিষ্যতেও যেকোনো উদ্যোগে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
আগের রেকর্ডিংয়ের সাথে তুলনামূলকভাবে সর্বশেষ ব্যাচে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সাবেক সেনাপ্রধান থেকে প্রেসিডেন্ট পদে সমাসীন জেনারেল সিসি ব্যক্তিগতভাবে অভিযুক্ত। ওই রেকর্ডিংয়ে কেবল জেনারেল সিসি ও তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার মধ্যকার কথোপকথন রয়েছে বলে দাবি করা হয়। অধ্যাপক শাহীন বলেন, গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকদের সংখ্যা বেড়ে যাবে, এটা নিশ্চিত না হলেও এতে সিসি সমর্থক কমে যেতে পারে।
সিসি প্রশাসনের খোলামেলা সমালোচক অধ্যাপক শাহীনকে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মতোই গুপ্তচর বলে অভিযুক্ত করা হয়। অবশ্য তিনি এই অভিযোগ তীব্রভাবে অস্বীকার করেন।
মি ইসপোসিটো বলেন, এই গোপন তথ্য ফাঁসের ফলে দৃশ্যপটে মারাত্মক কোনো পরিবর্তন আসবে না। তবে এতে সিসি ও মিসরের বর্তমান নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সামরিক বাহিনীর পেশাদারিত্ব প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। ফলাফল হতে পারে আরো সঙ্ঘাতময়, বিশেষভাবে আগে যেসব তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাতে অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি যেমন মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর দমনাভিযান অথবা নির্বাচনী অনিয়ম ইত্যাদি ছিল। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য ফাঁসের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিষয়াদি আলোকপাত করা হয়েছে। এসব তথ্য ফাঁস হওয়ার ফলে সিসির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় ধস নামবে এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি হেয় প্রতিপন্ন হবেনÑ ইসপোসিটো এ কথা জানান। সুতরাং ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে সিসির ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি হলে এবং যৌথভাবে উপসাগরীয় দাতাদেশগুলোর পক্ষ থেকেও সিসিকে চাপ দেয়া হতে পারে, তাতে সিসি নিজেকে হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে দেখতে পাবেন।
চাথাম হাউজের সিনিয়র রিচার্স ফেলো জেইন কিনিনমেন্টিও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, অদূর ভবিষ্যতে সম্পর্ক হয়তো পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তথ্য ফাঁস হওয়ার কারণে ধনাঢ্য উপসাগরীয় দেশগুলো এবং ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু মিসরের মধ্যে পরস্পর অবিশ্বাসের কারণে বিরোধ শুরু হয়ে যেতে পারে।
ইতোমধ্যেই গুজব ছড়াতে শুরু করেছে। আরো গোপন তথ্য ফাঁস হতে পারে বলে গুজবের ডালপালা গজাচ্ছে।
কুয়েতের সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য নাসের আল দাওয়ালিয়াহর বক্তব্য অনুযায়ী, গোপন তথ্যসংক্রান্ত কমপক্ষে আরো দু’টি রেকর্ডিং আছে। ওয়েবসাইট আরাবিয়া২১ডটকম জানায়, নাসের আল দাওয়ালিয়াহ প্রথম সিসির গোপন তথ্য ফাঁসের বিষয়টি প্রকাশ্যে উল্লেখ করেন। এতে স্পষ্টত, এতই বেদনাদায়ক বিষয় রয়েছে যে, সৌদি কর্তৃপক্ষকে সিসির কোনো ফোনকল শান্ত করতে পারেনি। তিনি টুইটার বার্তায় বলেন, এ জন্য হয়তো সিসির মক্কায় ওমরা বা হজ করতে যাওয়ার প্রয়োজন হবে। জনাব দাওয়ালিয়াহ টুইটার বার্তায় আরো বলেন, গোপন তথ্য ফাঁসের অপর একটি ঘটনায় জানা যায়, মিসরে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজন হবে।
প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সিসির নেতৃত্বে মুরসি সমর্থকদের বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশের ওপর যে দমনাভিযান চালানো হয়, তাতে ব্রাদারহুডের বহু কর্মী সমর্থক নেতা নিহত হন। এসব গণহত্যা চালাতে গিয়ে সিসি উপসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছিলেন। সৌদি আরব, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিসরে আনুষ্ঠানিকভাবে তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলার অথবা আরো শত শত কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো মুসলিম ব্রাদারহুডের উত্থান ঠেকাতে মুক্তভাবে মিসরকে দু’হাতে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। কারণ তাদের আশঙ্কা প্রবীণ ধনাঢ্য বাদশাহ এবং তাদের সরকারগুলোর ব্রাদারহুডের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রভাবে পতন ঘটতে পারে। ইরানের মতো অন্য নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক শক্তি ইরানকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিস্তার রোধ করতে এবং মিসরকে পুনরায় সঙ্ঘাত থেকে বিরত রাখতে উপসাগরীয় দেশগুলো মিসরকে সহায়তা দিয়েছে।
দুরহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো অ্যান্ড আফটার দ্য শেখস : দ্য কামিং কলাপস অব দ্য গালফ মনার্কি গ্রন্থের লেখক ক্রিস্টোফার ডেভিডসন বলেন, মুসলিম ব্রাদারহুডের ক্ষমতাহরণের মতো অভিন্ন লক্ষ্য এবং অন্য সব নির্দেশক পশ্চিমা মিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়নি।
‘উদাহরণস্বরূপ, সিসির সাথে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সম্পর্ক সত্যিকারভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয় না। এ ব্যাপারে আরো কিছু আভাস পাওয়া যায়, উভয় দেশের সম্পর্ক তেমন মজবুত নয়। সিসির সাথে তার রুশ প্রতিপক্ষের উষ্ণ সম্পর্কে থাকলেও পশ্চিমাদের সাথে সিসির ব্যাপারে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্ক তেমন একটা উষ্ণ নয়। সিসি গত বছর পুতিনের ক্রিমিয়া দখলকে শুধু নিন্দা জানাতেই অস্বীকৃতি জানাননি, তিনি আগস্টে পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের একটি অস্ত্রচুক্তি স্বাক্ষর করেন। চলতি সপ্তাহে উভয় নেতা কায়রোতে পুনরায় বৈঠকে বসেন এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এমনকি তারা একটি পারমাণবিক প্ল্যান্ট নির্মাণেরও ঘোষণা দেন।
ডেভিডসন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, উপসাগরীয় নীতিনির্ধারণী সার্কেলের অভ্যন্তরে সিসিকে রাখা হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ডেভিডসন বলেন, সিসি মিসরে ব্রাদারহুডের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা সৌদি আরবের অনেক পর্যায়ে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, সৌদি আরবের রাজপরিবারের সদস্যসহ প্রবীণ সৌদি নাগরিকেরা ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোকে সমর্থন জানাননি। তারা বিশেষভাবে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সময় এবং অন্যান্য সময়েও মুসলিম ব্রাদারহুডকে সহায়তা দেয়ার কথা স্মরণ করেন। সত্যিকার অর্থে ব্রাদারহুডকে আংশিকভাবে সৌদি আরব সহায়তা দিয়ে এসেছে। সুতরাং সৌদি বাদশাহ ও রাজতন্ত্র দৃঢ়তার সাথে সিসির প্রতি সমর্থনদান করার পর ইতিহাস আমাদের এ অবস্থায় কত দিন চলতে দিতে পারে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করেছে। সম্প্রতি রিয়াদে ক্ষমতার পরিবর্তনে আমরা হয়তো দেখতে পাব সিসির সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক আগের মতো আর উষ্ণ থাকবে নাÑ সম্পর্ক ঠাণ্ডা হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। আর ব্রাহারহুডের সাথে সমঝোতা এবং কাতারের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার ব্যাপারে সম্ভবত আলোচনা ও সমঝোতা হবে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তেলের দাম যেখানে পতনের মুখে, সেখানে উপসাগরীয় দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে এত দৃঢ় অবস্থায় নেই যে, তারা মিসরকে বিশাল অর্থ সহায়তা দিতে পারবে। তেলের দাম পড়ে যাচ্ছে। তাই সৌদি আর্থিক সহায়তাও আগের মতো হয়তো আর সক্রিয়ভাবে দেখা যাবে না। প্রথম দিকে সুটকেস ভর্তি করে মিসরে যে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে, তা হয়তো আর দেয়া হবে না।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক একমত হয়েছেন, উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের আর্থিক সহায়তার ব্যাপারে কাটছাঁট করবে। এ ব্যাপারে আরো কঠোর কড়াকড়ি এবং জবাবদিহি করা হতে পারে।
ডেভিডসন বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহর আমলে ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছিল এবং দলটিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তখন সন্দেহভাজন অনেক ব্রাদারহুড সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়। এখন সম্ভবত বিষয়টি ইউটার্নে রূপ নেবে।
জনাব শাহীন বলেন, উপসাগরীয় এলাকায় এবং মিসরে মিডিয়ায় ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হয়। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়, সিসি ও উপসাগরীয় নেতারা ছাড়া ইরাকের মতো অথবা সিরিয়া ও লিবিয়ার অবস্থার মতো মিসর ও উপসাগরীয় দেশগুলোতেও অব্যাহতভাবে ভয়ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতার আবহ সৃষ্টি হবে। চূড়ান্তভাবে এখনো সেখানে অনেক লোক অন্তরীণ এবং বাইরে থেকে এই কাজে নিয়োজিত রয়েছে, যাতে এসব দেশকে ব্যর্থ করে দেয়া যায়।
ডেভিডসন বলেন, আমার সন্দেহ হয় যে, এই নীতিতে পরিবর্তন ঘটবে। কারণ আমেরিকার এই মিত্রদের প্রয়োজন। তাদের মধ্যপ্রাচ্যনীতি এই মুহূর্তে এই দেশগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। এ দিকে এসপোসিটো ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, সিসির প্রতি সমর্থনও রিয়াদ ও আবুধাবীর গভীরে প্রথিত রয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার উপলব্ধি হচ্ছে, প্রথমে সিসির সমর্থনে একটি বড় চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলোর কোনো কোনো সরকার নিজেরাই আগ্রাসীভাবে এই চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল। তারা অন্যান্য সরকারের ওপরও তীব্র চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছেÑ এটা শুধু তাদের অঞ্চলে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও। সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অভিমত হচ্ছে, সিসি ও উপসারগীয় দেশগুলোর সম্পর্কে ভবিষ্যতে টানাপড়েন সৃষ্টি হবে, ব্রাদারহুডের সাথে তাদের আগের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং উপসাগরীয় দেশগুলো সহযোগিতার হাত গুটিয়ে নিলে সিসির ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। অপর দিকে, ব্রাদারহুডের পূর্ণশক্তিতে চূড়ান্তভাবে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্রমেই উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।
khairulbashar407@gmail.com
No comments