কাঁদছে পদ্মাপাড়, ৪১ লাশ উদ্ধার by আতাউর রহমান ও বিপ্লব চক্রবর্তী
আবারও
ডুবল লঞ্চ। আবারও পদ্মাপাড়ে স্বজনহারাদের আহাজারি। ছোট্ট শিশুর নিথর দেহ
কোলে তুলে মা-বাবার বুকফাটা আর্তনাদ। ভাই হারিয়েছে বোন, বোন হারিয়েছে ভাই।
পদ্মা ট্র্যাজেডিতে ফের লণ্ডভণ্ড অনেকের স্বপ্ন, অনেকের সাজানো সংসার। এর
আগে পদ্মায় যতবার নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে প্রকৃতির হাত ছিল। তবে এবার
প্রমত্তা ঢেউয়ে নয়, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ঘটনায় পদ্মাপাড়ে আরেকটি মর্মন্তুদ
ট্র্যাজেডি তৈরি হলো। চলমান অবরোধ-হরতাল ঘিরে বার্ন ইউনিটে পেট্রোল বোমায়
দগ্ধ মানুষের আহাজারির মধ্যে পদ্মার পাড় থেকে হঠাৎ এলো ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ।
গতকাল রোববার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া পয়েন্টের পদ্মায় এমভি মোস্তফা নামে
যাত্রীবাহী একটি লঞ্চ ডুবেছে সারবোঝাই কার্গো জাহাজের ধাক্কায়। আর এতেই
ডুবে যায় অন্তত ১৬০ জনের বেশি যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে
যাওয়া লঞ্চটি। রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৪১ জনের লাশ উদ্ধার করা
হয়েছে। নিখোঁজ আছেন আরও অন্তত ২০ জন। এ লঞ্চডুবির ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি
গঠন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বার্তায় লঞ্চডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা সমকালকে জানান, নিহত ৪১ জনের মধ্যে ৩৮ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতটি শিশু ও ১৮ জন নারী। শনাক্ত না হওয়া তিনজনের মধ্যে এক নারী, এক শিশু ও একজন পুরুষ।
দুর্ঘটনার পর পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড় করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। তারা উৎকণ্ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন পদ্মার তীরে। গতকাল দুপুরে যাত্রা শুরুর মিনিট দশেক পর মাঝনদীতে কার্গোর ধাক্কায় উল্টে যায় লঞ্চটি। এর আগে গত বছরের ৪ আগস্ট পদ্মার মাওয়া পয়েন্টে যাত্রীবাহী লঞ্চ পিনাক-৬ ডুবে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় সন্ধান মেলেনি আরও ৬১ যাত্রীর। পদ্মাপাড়ের মানুষের স্বজন হারানো সেই কান্না না থামতেই এবার পাটুরিয়া পয়েন্টে ঘটল আরেক হৃদয়বিদারক ঘটনা।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নৌবাহিনীর ডুবুরি দল, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছিল। লঞ্চটির সন্ধান পাওয়া গেলেও টেনে তোলা সম্ভব হয়নি। উদ্ধার যান 'রুস্তম' রাত সোয়া ১১টায় ঘটনাস্থলে পেঁৗছে। এর আগে বিকেলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও বিআইডবি্লউটিএর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা জানান, যে কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে গেছে, নারগিস-১ নামের সেই কার্গো জাহাজের লস্কর শাহিনুর রহমান, শহীদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস সমকালকে জানান, লঞ্চটির ভেতরে আর কোনো লাশ রয়েছে কি-না, তা তল্লাশি করা হচ্ছে। লাশ শনাক্তের পর বহন ও দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বজনদের ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। রাত ৮টা পর্যন্ত ১০ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিআইডবি্লউটিএর পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের পেট্রোল ইন্সপেক্টর ফরিদুল ইসলাম সমকালকে জানান, দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে এমভি মোস্তফা লঞ্চটি দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তার দাবি, লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ১৪২ জন হলেও যাত্রীসংখ্যা এর কম ছিল।
অবশ্য পাটুরিয়া ঘাটের অন্যান্য লঞ্চের কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় লোকজন বলছেন, লঞ্চটিতে ১৬০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। এর মধ্যে গোপালগঞ্জগামী কমফোর্ট পরিবহনের একটি বাসের অন্তত ৪২ যাত্রী ছিল লঞ্চটিতে।
ঘাটের কর্মীরা জানান, কার্গোর ধাক্কার পর লঞ্চটি ডুবে যেতে দেখে তারা ঘাটে নোঙরে থাকা ৮ থেকে ১০টি লঞ্চ ও ট্রলার নিয়ে মাঝনদীতে উদ্ধার অভিযানে যান। বিভিন্ন লঞ্চ থেকে বয়া ফেলে যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান। এতে অন্তত ১০০ যাত্রী প্রাণে রক্ষা পান। তা ছাড়া দুর্ঘটনায় দায়ী কার্গো জাহাজেও ডুবে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার করে তুলে দেওয়া হয়। পরে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এমভি নারগিস-১ কার্গো জাহাজটি উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, খবর পেয়ে ঘটনার আধা ঘণ্টার মধ্যেই তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।
যেভাবে ডুবল লঞ্চটি :ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে জীবিত উদ্ধার যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লঞ্চটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় দুর্ঘটনায় পড়ে। মাঝনদীতে গিয়ে লঞ্চটি ঘাট থেকে আড়াআড়িভাবে নদী পাড়ি দিয়েছিল। এতে ঢাকামুখী সারবোঝাই কার্গো জাহাজটি লঞ্চের মাঝখানে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই লঞ্চটি উল্টে যায়।
কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মিলন মিয়া জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। তার তিন বছরের মেয়ে নীলিমাকেও জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছেন। মিলন সমকালকে জানান, তিনি মেয়েকে নিয়ে লঞ্চের সামনের অংশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ দেখেন, একটি কার্গো লঞ্চটির দিকে আসছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চের সঙ্গে কার্গোটির ধাক্কা লাগে। সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটি উল্টে গেলে তিনি নদীতে পড়ে যান। তবে তার স্ত্রী লিপি বেগমকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সোহরাব হোসেন তিন বছরের ছেলে জুনায়েদ আর স্ত্রী শিরিনকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে যাচ্ছিলেন। ছেলের লাশ পাওয়া গেলেও স্ত্রীর হদিস নেই। সোহরাব জানান, কার্গো জাহাজটি জোরে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই লঞ্চটি ডুবে যায়। জীবন রক্ষায় লঞ্চের ছাদে ও সামনে থাকা মানুষ নদীতে লাফিয়ে পড়েন। তবে ভেতরের কেউ বের হতে পারেননি। তারা জানান, দোতলা লঞ্চটি পুরো বোঝাই ছিল।
পাটুরিয়া ঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির টিকিট ম্যানেজার মঞ্জু মিয়া জানান, ঘাট থেকেই ডুবে যাওয়ার দৃশ্যটি দেখা যাচ্ছিল। লঞ্চটি ডুবতে পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় নিয়েছে। ভেতরের কোনো যাত্রী বের হতে পারেননি। তারা শুধু নদীতে লাফিয়ে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে পেরেছেন।
নিহত যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে :মাগুরার লাইলী বেগম, মানিকগঞ্জের লাবণী আক্তার মুক্তা, লতা, দৌলতপুরের শিশু ইমরান, সেলিম, কুষ্টিয়ার মেহেদী হাসান, ইউসুফ, ইমামুল, রেবেকা, বীথি খাতুন, কুষ্টিয়ার মিলনপাড়ার নাসির উদ্দিন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের সুফিয়া বেগম, রাজবাড়ীর নবীজান, সাবু, রাবেয়া বেগম, নাসিমা আক্তার, জয়নাল শেখ, মধুখালীর মধুসূদন সাহা, ঢাকার নবাবগঞ্জের শিশু ফারজানা আক্তার স্মৃতি, ফরিদপুরের ভাঙ্গার ইমামুল, ফরিদপুরের কিশোরী নারগিস, ফরিদপুরের কোতোয়ালির রতন, পাঁচ বছরের শিশু পাবন, নগরকান্দার রথীন সরকার, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর শিশু জুনায়েদ শেখ ও ফরিদপুরের অর্চনা।
নিখোঁজের সংখ্যা কত :তলিয়ে যাওয়া লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা ছিল কত, কতজন উদ্ধার হয়েছেন_ তার পুরো হিসাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। ঘাটে দায়িত্বরত বিআইডবি্লউটিএ, ঘাটকর্মী এবং উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জানান, যাত্রীসংখ্যা কোনোভাবেই ১৪০ জনের বেশি হবে না। ঘাটের কর্মী ও উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা বলছেন, যাত্রী ১৬০ জনের বেশি হবে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন একশ'র মতো যাত্রীকে উদ্ধার করেছেন। সে হিসাবে এখনও অন্তত ২০ যাত্রী নিখোঁজ। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন নিখোঁজদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেনি।
সারি সারি লাশের পাশে আহাজারি :ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে ডুবুরিরা লাশ উদ্ধার করে ট্রলার দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে পাঠাচ্ছেন। সেখান থেকে রেড ক্রিসেন্ট ও স্থানীয় লোকজন পাটুরিয়া মোড়ে বিআরটিসি বাসের যাত্রী ছাউনিতে লাশগুলো সারি করে রাখছেন। একেকটি লাশ আসছে আর হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন স্বজনরা। প্রিয় স্বজনের নিথর দেহ চিনতে পেরেই গগনবিদারী কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তারা। এখনও যাদের লাশ পাওয়া যায়নি সেই স্বজনরা উৎকণ্ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন পদ্মার দুই পাড় পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে।
যাত্রী ছাউনির ভেতর এক শিশুর লাশ নিয়ে গড়াগড়ি করছিলেন উজ্জ্বল। তার দুই ছেলে ইমরান (৮) ও ইমন (৪) সেলিম নামে এক আত্মীয়র সঙ্গে এমভি মোস্তফা লঞ্চটিতে ফরিদপুরে যাচ্ছিল। লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর ইমরান ও সেলিমের লাশ পাওয়া গেলেও ছোট্ট ইমনের খোঁজ পাওয়া যায়নি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত। এই বাবার কান্নায় যে কারোরই চোখের পানি ধরে রাখা দায়। আহাজারি করে তিনি বলেন, ছেলে দুইটা মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার সমেতপুর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। স্কুল খোলায় মামাতো ভাই সেলিমের সঙ্গে ফরিদপুর যাচ্ছিল। উজ্জ্বল ফরিদপুর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মচারী। তিনি সেখানেই থাকেন।
৫৫ বছর বয়সী ফজলুর রহমান বিআইডবি্লউটিএর ফরিদপুর অফিসের সহকারী পরিচালক ছিলেন। রাক্ষসী পদ্মা তারও প্রাণ নিয়েছে। ফজলুর রহমানের লাশের পাশে তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন আহাজারী করছিলেন।
স্কয়ার টেক্সটাইলের সিনিয়র অপারেটর সোহরাব হোসেন শেখ। ঢাকা থেকে তিন বছরের ছেলে জুনায়েদ শেখ আর স্ত্রী রিনা বেগমকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি কাশিয়ানি যাচ্ছিলেন। সোহরাব বেঁচে গেলেও ছেলে আর স্ত্রী নিহত হয়েছেন। ছোট্ট ছেলের লাশ কোলে নিয়ে এই বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। আহাজারি করে বলছিলেন, দুনিয়ায় তার আর কিছুই রইল না।
মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়েই জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়। পরে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে তল্লাশি শুরু করে।
ফিটনেসের মেয়াদ ছিল দু'দিন :সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শফিউর রহমান সমকালকে জানান, দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ ছিল আর মাত্র দু'দিন। ২৪ ফেব্রুয়ারির পর সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ হতো। আর দুর্ঘটনায় দায়ী কার্গো জাহাজের ফিটনেস সনদের মেয়াদ রয়েছে ২০ জুন পর্যন্ত। সুতরাং ফিটনেসের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আপাতত বলা যাচ্ছে না। তবে জাহাজ দুটির চালক প্রশিক্ষিত ছিলেন কি-না সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নূর উর রহমান সমকালকে বলেন, ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে দিনে ধারণক্ষমতা ১৪০ যাত্রী, রাতে ৬২ জন। ডুবে যাওয়ার সময় লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল কি-না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শিবালয় থানার ওসি রকিবুজ্জামান সমকালকে জানান, লঞ্চডুবির ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে রাত ১২টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। দুর্ঘটনায় দায়ী কার্গোর তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। কার্গোটিও জব্দ করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
পাটুরিয়া লঞ্চঘাট সূত্র ও নৌপুলিশ জানায়, ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মালিক মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহিম খান। তিনি পাটুরিয়া লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয় লোকজন জানান, রহিম খান একসময় জাকের পার্টি করলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সর্বশেষ তিনি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শিবালয় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে পরাজিত হন। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে তার অন্তত সাতটি লঞ্চ রয়েছে। এ ছাড়া তার একাধিক কার্গো ছাড়াও নানা ব্যবসা রয়েছে।
তদন্তে তিন কমিটি :লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে পৃথক তিনটি কমিটি করা হয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটিতে বিআইডবি্লউটিএ চেয়ারম্যান ড. শামসুজ্জোহা খন্দকারকে প্রধান করে আরও চারজন সদস্য রাখা হয়েছে। এ কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর অন্য একটি কমিটি করেছে। এতে সংস্থাটির নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. শাহজানকে প্রধান করা হয়েছে। এ কমিটিতে আরও দুই সদস্য রয়েছেন। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নৌ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নূর উর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাজবাড়ী প্রতিনিধি সৌমিত্র শীল চন্দন, মানিকগঞ্জ (শিবালয়) প্রতিনিধি নিরঞ্জন সূত্রধর, রাজবাড়ী (গোয়ালন্দ) প্রতিনিধি আসজাদ হোসেন আজু, সালথা (ফরিদপুর) মো. মজিবুল হক।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বার্তায় লঞ্চডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা সমকালকে জানান, নিহত ৪১ জনের মধ্যে ৩৮ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতটি শিশু ও ১৮ জন নারী। শনাক্ত না হওয়া তিনজনের মধ্যে এক নারী, এক শিশু ও একজন পুরুষ।
দুর্ঘটনার পর পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড় করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। তারা উৎকণ্ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন পদ্মার তীরে। গতকাল দুপুরে যাত্রা শুরুর মিনিট দশেক পর মাঝনদীতে কার্গোর ধাক্কায় উল্টে যায় লঞ্চটি। এর আগে গত বছরের ৪ আগস্ট পদ্মার মাওয়া পয়েন্টে যাত্রীবাহী লঞ্চ পিনাক-৬ ডুবে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় সন্ধান মেলেনি আরও ৬১ যাত্রীর। পদ্মাপাড়ের মানুষের স্বজন হারানো সেই কান্না না থামতেই এবার পাটুরিয়া পয়েন্টে ঘটল আরেক হৃদয়বিদারক ঘটনা।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নৌবাহিনীর ডুবুরি দল, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছিল। লঞ্চটির সন্ধান পাওয়া গেলেও টেনে তোলা সম্ভব হয়নি। উদ্ধার যান 'রুস্তম' রাত সোয়া ১১টায় ঘটনাস্থলে পেঁৗছে। এর আগে বিকেলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও বিআইডবি্লউটিএর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা জানান, যে কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে গেছে, নারগিস-১ নামের সেই কার্গো জাহাজের লস্কর শাহিনুর রহমান, শহীদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস সমকালকে জানান, লঞ্চটির ভেতরে আর কোনো লাশ রয়েছে কি-না, তা তল্লাশি করা হচ্ছে। লাশ শনাক্তের পর বহন ও দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বজনদের ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। রাত ৮টা পর্যন্ত ১০ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিআইডবি্লউটিএর পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের পেট্রোল ইন্সপেক্টর ফরিদুল ইসলাম সমকালকে জানান, দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে এমভি মোস্তফা লঞ্চটি দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তার দাবি, লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ১৪২ জন হলেও যাত্রীসংখ্যা এর কম ছিল।
অবশ্য পাটুরিয়া ঘাটের অন্যান্য লঞ্চের কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় লোকজন বলছেন, লঞ্চটিতে ১৬০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। এর মধ্যে গোপালগঞ্জগামী কমফোর্ট পরিবহনের একটি বাসের অন্তত ৪২ যাত্রী ছিল লঞ্চটিতে।
ঘাটের কর্মীরা জানান, কার্গোর ধাক্কার পর লঞ্চটি ডুবে যেতে দেখে তারা ঘাটে নোঙরে থাকা ৮ থেকে ১০টি লঞ্চ ও ট্রলার নিয়ে মাঝনদীতে উদ্ধার অভিযানে যান। বিভিন্ন লঞ্চ থেকে বয়া ফেলে যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান। এতে অন্তত ১০০ যাত্রী প্রাণে রক্ষা পান। তা ছাড়া দুর্ঘটনায় দায়ী কার্গো জাহাজেও ডুবে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার করে তুলে দেওয়া হয়। পরে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এমভি নারগিস-১ কার্গো জাহাজটি উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, খবর পেয়ে ঘটনার আধা ঘণ্টার মধ্যেই তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।
যেভাবে ডুবল লঞ্চটি :ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে জীবিত উদ্ধার যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লঞ্চটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় দুর্ঘটনায় পড়ে। মাঝনদীতে গিয়ে লঞ্চটি ঘাট থেকে আড়াআড়িভাবে নদী পাড়ি দিয়েছিল। এতে ঢাকামুখী সারবোঝাই কার্গো জাহাজটি লঞ্চের মাঝখানে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই লঞ্চটি উল্টে যায়।
কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মিলন মিয়া জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। তার তিন বছরের মেয়ে নীলিমাকেও জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছেন। মিলন সমকালকে জানান, তিনি মেয়েকে নিয়ে লঞ্চের সামনের অংশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ দেখেন, একটি কার্গো লঞ্চটির দিকে আসছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চের সঙ্গে কার্গোটির ধাক্কা লাগে। সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটি উল্টে গেলে তিনি নদীতে পড়ে যান। তবে তার স্ত্রী লিপি বেগমকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সোহরাব হোসেন তিন বছরের ছেলে জুনায়েদ আর স্ত্রী শিরিনকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে যাচ্ছিলেন। ছেলের লাশ পাওয়া গেলেও স্ত্রীর হদিস নেই। সোহরাব জানান, কার্গো জাহাজটি জোরে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই লঞ্চটি ডুবে যায়। জীবন রক্ষায় লঞ্চের ছাদে ও সামনে থাকা মানুষ নদীতে লাফিয়ে পড়েন। তবে ভেতরের কেউ বের হতে পারেননি। তারা জানান, দোতলা লঞ্চটি পুরো বোঝাই ছিল।
পাটুরিয়া ঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির টিকিট ম্যানেজার মঞ্জু মিয়া জানান, ঘাট থেকেই ডুবে যাওয়ার দৃশ্যটি দেখা যাচ্ছিল। লঞ্চটি ডুবতে পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় নিয়েছে। ভেতরের কোনো যাত্রী বের হতে পারেননি। তারা শুধু নদীতে লাফিয়ে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে পেরেছেন।
নিহত যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে :মাগুরার লাইলী বেগম, মানিকগঞ্জের লাবণী আক্তার মুক্তা, লতা, দৌলতপুরের শিশু ইমরান, সেলিম, কুষ্টিয়ার মেহেদী হাসান, ইউসুফ, ইমামুল, রেবেকা, বীথি খাতুন, কুষ্টিয়ার মিলনপাড়ার নাসির উদ্দিন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের সুফিয়া বেগম, রাজবাড়ীর নবীজান, সাবু, রাবেয়া বেগম, নাসিমা আক্তার, জয়নাল শেখ, মধুখালীর মধুসূদন সাহা, ঢাকার নবাবগঞ্জের শিশু ফারজানা আক্তার স্মৃতি, ফরিদপুরের ভাঙ্গার ইমামুল, ফরিদপুরের কিশোরী নারগিস, ফরিদপুরের কোতোয়ালির রতন, পাঁচ বছরের শিশু পাবন, নগরকান্দার রথীন সরকার, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর শিশু জুনায়েদ শেখ ও ফরিদপুরের অর্চনা।
নিখোঁজের সংখ্যা কত :তলিয়ে যাওয়া লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা ছিল কত, কতজন উদ্ধার হয়েছেন_ তার পুরো হিসাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। ঘাটে দায়িত্বরত বিআইডবি্লউটিএ, ঘাটকর্মী এবং উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জানান, যাত্রীসংখ্যা কোনোভাবেই ১৪০ জনের বেশি হবে না। ঘাটের কর্মী ও উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা বলছেন, যাত্রী ১৬০ জনের বেশি হবে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন একশ'র মতো যাত্রীকে উদ্ধার করেছেন। সে হিসাবে এখনও অন্তত ২০ যাত্রী নিখোঁজ। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন নিখোঁজদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেনি।
সারি সারি লাশের পাশে আহাজারি :ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে ডুবুরিরা লাশ উদ্ধার করে ট্রলার দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে পাঠাচ্ছেন। সেখান থেকে রেড ক্রিসেন্ট ও স্থানীয় লোকজন পাটুরিয়া মোড়ে বিআরটিসি বাসের যাত্রী ছাউনিতে লাশগুলো সারি করে রাখছেন। একেকটি লাশ আসছে আর হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন স্বজনরা। প্রিয় স্বজনের নিথর দেহ চিনতে পেরেই গগনবিদারী কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তারা। এখনও যাদের লাশ পাওয়া যায়নি সেই স্বজনরা উৎকণ্ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন পদ্মার দুই পাড় পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে।
যাত্রী ছাউনির ভেতর এক শিশুর লাশ নিয়ে গড়াগড়ি করছিলেন উজ্জ্বল। তার দুই ছেলে ইমরান (৮) ও ইমন (৪) সেলিম নামে এক আত্মীয়র সঙ্গে এমভি মোস্তফা লঞ্চটিতে ফরিদপুরে যাচ্ছিল। লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর ইমরান ও সেলিমের লাশ পাওয়া গেলেও ছোট্ট ইমনের খোঁজ পাওয়া যায়নি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত। এই বাবার কান্নায় যে কারোরই চোখের পানি ধরে রাখা দায়। আহাজারি করে তিনি বলেন, ছেলে দুইটা মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার সমেতপুর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। স্কুল খোলায় মামাতো ভাই সেলিমের সঙ্গে ফরিদপুর যাচ্ছিল। উজ্জ্বল ফরিদপুর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মচারী। তিনি সেখানেই থাকেন।
৫৫ বছর বয়সী ফজলুর রহমান বিআইডবি্লউটিএর ফরিদপুর অফিসের সহকারী পরিচালক ছিলেন। রাক্ষসী পদ্মা তারও প্রাণ নিয়েছে। ফজলুর রহমানের লাশের পাশে তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন আহাজারী করছিলেন।
স্কয়ার টেক্সটাইলের সিনিয়র অপারেটর সোহরাব হোসেন শেখ। ঢাকা থেকে তিন বছরের ছেলে জুনায়েদ শেখ আর স্ত্রী রিনা বেগমকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি কাশিয়ানি যাচ্ছিলেন। সোহরাব বেঁচে গেলেও ছেলে আর স্ত্রী নিহত হয়েছেন। ছোট্ট ছেলের লাশ কোলে নিয়ে এই বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। আহাজারি করে বলছিলেন, দুনিয়ায় তার আর কিছুই রইল না।
মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়েই জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়। পরে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে তল্লাশি শুরু করে।
ফিটনেসের মেয়াদ ছিল দু'দিন :সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শফিউর রহমান সমকালকে জানান, দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ ছিল আর মাত্র দু'দিন। ২৪ ফেব্রুয়ারির পর সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ হতো। আর দুর্ঘটনায় দায়ী কার্গো জাহাজের ফিটনেস সনদের মেয়াদ রয়েছে ২০ জুন পর্যন্ত। সুতরাং ফিটনেসের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আপাতত বলা যাচ্ছে না। তবে জাহাজ দুটির চালক প্রশিক্ষিত ছিলেন কি-না সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নূর উর রহমান সমকালকে বলেন, ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে দিনে ধারণক্ষমতা ১৪০ যাত্রী, রাতে ৬২ জন। ডুবে যাওয়ার সময় লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল কি-না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শিবালয় থানার ওসি রকিবুজ্জামান সমকালকে জানান, লঞ্চডুবির ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে রাত ১২টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। দুর্ঘটনায় দায়ী কার্গোর তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। কার্গোটিও জব্দ করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
পাটুরিয়া লঞ্চঘাট সূত্র ও নৌপুলিশ জানায়, ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মালিক মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহিম খান। তিনি পাটুরিয়া লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয় লোকজন জানান, রহিম খান একসময় জাকের পার্টি করলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সর্বশেষ তিনি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শিবালয় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে পরাজিত হন। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে তার অন্তত সাতটি লঞ্চ রয়েছে। এ ছাড়া তার একাধিক কার্গো ছাড়াও নানা ব্যবসা রয়েছে।
তদন্তে তিন কমিটি :লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে পৃথক তিনটি কমিটি করা হয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটিতে বিআইডবি্লউটিএ চেয়ারম্যান ড. শামসুজ্জোহা খন্দকারকে প্রধান করে আরও চারজন সদস্য রাখা হয়েছে। এ কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর অন্য একটি কমিটি করেছে। এতে সংস্থাটির নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. শাহজানকে প্রধান করা হয়েছে। এ কমিটিতে আরও দুই সদস্য রয়েছেন। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নৌ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নূর উর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাজবাড়ী প্রতিনিধি সৌমিত্র শীল চন্দন, মানিকগঞ্জ (শিবালয়) প্রতিনিধি নিরঞ্জন সূত্রধর, রাজবাড়ী (গোয়ালন্দ) প্রতিনিধি আসজাদ হোসেন আজু, সালথা (ফরিদপুর) মো. মজিবুল হক।
No comments