মঙ্গোলিয়ার আকাশে একসঙ্গে তিন সূর্য
পৃথিবীর
নক্ষত্র একটাই আর সেটি হল সূর্য। সূর্যকে পৃথিবীর প্রাণ সঞ্চারি বলা হয়।
সূর্য পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক আলো এবং উত্তাপের উৎস। গত ২২ জানুয়ারিতে
মঙ্গোলিয়ার আকাশে দেখা গেল অসম্ভব একটি ঘটনা। একটি দুটি নয়, তিনটি সূর্য
আলোকদ্যূতি ছড়াচ্ছে সে দেশের আকাশ থেকে। এমন আজগুবি ঘটনা ভিডিও চিত্রসহ
প্রকাশ হয়েছে দ্য গার্ডিয়ান নিউজ সাইটে। প্রকাশিত ভিডিওটি দেখে বিশ্ববাসী
হতভম্ব। ভিডিওর বর্ণনায় দ্য গার্ডিয়ান ব্যাখ্যা দিয়েছে, ‘মঙ্গোলিয়ার
দিগন্তে তিনটি সূর্য দৃশ্যমান হচ্ছে। এটি একটি বিরল স্বর্গীয় বিভ্রম। মূলত
এখানে সূর্য একটি। তিনটির মধ্যখানের আলোটি আমাদের সূর্য যা প্রতিদিন উদয়
হয়। আর ডান ও বামের দুটো হল সূর্যটির প্রতিচ্ছবি।’ তবে ইতিহাস বলে আকাশে
তিন সূর্যের উপস্থিতি এটাই প্রথম নয়। ঘটনাটি বিরল হলেও এমন ঘটেছে আরও
অনেকবার। প্রস্তর যুগে প্রাকৃতিক এই ঘটনাকে অপয়া বলে মনে করা হতো। সুইডিশ
পেইন্টিং ভাদার্সোলস্তাভান-এ তিন সূর্য আঁকা রয়েছে। ১৫২০ সালের ২০ এপ্রিল
স্টকহোমবাসীরা দুই ঘণ্টা ব্যাপী সূর্যকে ঘিরে আরও দুটি সূর্য দেখতে পায়।
গুজব রটে, রাজা গুতাভভাজার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ঈশ্বরের পক্ষ থেকে এই
সংকেত দেয়া হয়েছে যে রাজার ধ্বংস নিশ্চিত। এই রটনার প্রেক্ষিতে ঘটনাটি অমর
করে রাখতে সে সময়ের চ্যান্সেলর ও স্কলার অলাউস পেত্রি তিন সূর্যের ছবি
আঁকতে নির্দেশ দেন। রাজা এসব ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দিয়ে অলাউস পেত্রি ও এর
চিত্রশিল্পীকে শাস্তি দেন।
পরবর্তী কালে আসল ছবিটি হারিয়ে গেলেও বর্তমানে ১৬৩০ সালের করা একটি কপি স্টকহোমের একটি চার্চে আজও শোভা পাচ্ছে। শেকসপিয়রের কিং হেনরি নাটকে তিন সূর্যের কথা বলা হয়েছে। ইংল্যান্ডে ১৪৬১ সালে মরটিমেয়ারস ক্রসের যুদ্ধে হিয়ারফরডশায়ার নামক স্থানে একসঙ্গে তিন সূর্য দেখার ঘটনার বর্ণনা আছে। সে সময় ইয়র্কের কমান্ডার ৪র্থ এডওয়ার্ড তার সৈন্যদের আকাশে দৃশ্যমান তিন সূর্য দেখিয়ে বলেন, এটি ঈশ্বরের পাঠানো স্বর্গীয় সংকেত। জয় তাদের নিশ্চিত। তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে সৈনিকরা যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ ও ৩২২ সালের মাঝে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল তার মিটিওরলজি ৩ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘দুটি নকল সূর্য আসল সূর্যের সঙ্গে উদয় হয়েছিল এবং সারাদিন তাকে ঘিরে থেকে আসল সূর্যের সঙ্গেই অস্ত হয়েছিল। এ দুটি নকল সূর্য সবসময় দুই পাশে থেকেছে, কখনও ওপর নিচে যায়নি। এছাড়া দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এদের সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় বেশি স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল।’ খ্রিস্টপূর্ব ৩১০ ও ২৪০ সালের মাঝে কবি অ্যারাটাস তার ফেনমেনিয়া বইয়ে তিন সূর্যের আবির্ভাবের কথা বলে গেছেন। তার মতে এগুলো বৃষ্টি, বাতাস বা ঝড়ের পূর্বাভাস। এছাড়াও রোমান ইতিহাসে তাদের নানা বইয়ে একই সঙ্গে তিন সূর্যোদয়ের কথা উল্লেখ আছে। যেমন সিস্যারো-এর ‘অন দ্য রিপাবলিক’ বইয়ে এবং রোমান দার্শনিক অ্যাপিউলিয়াস-এর অ্যাপোলজিয়া ১৫-তে এ সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়।
এবার ইতিহাস ছেড়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় আসা যাক। প্রচলিত ভাষায় একই সঙ্গে তিন সূর্যের আবির্ভাবকে সান ডগস বলা হয়- যার বৈজ্ঞানিক নাম পারহেলিয়া। আকাশে ভেসে থাকা বরফের ক্রিস্টালের ওপর সূর্যকিরণের প্রতিফলনই এ পারহেলিয়ার কারণ। সূর্যের আলো যখন পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয় তখন যদি বাতাসে ভেসে বেড়ানো তুষারকণায় পড়ে তখন তা ২২ ডিগ্রি কোণে প্রতিফলিত হয়। এসব তুষারকণা প্রিজমের মতো কাজ করে। ফলে প্রতিফলিত আলো সূর্যের চারদিকে বলয়ের সৃষ্টি করে। সূর্যের চারপাশে একটি গোলাকার রিংয়ের মতো আলোকচ্ছটা দেখা যায়। সূর্যোদয়ের সময়ে এ ঘটনা ঘটলে সানডগগুলো ধীরে ধীরে সূর্য থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। সূর্যের কাছে থাকলে এদের লালচে মনে হয় এবং দূরে যেতে থাকলে এরা ক্রমশ হলুদ, কমলা এবং শেষের দিকে নীলচে হয়ে যায়। মাঝখানে সূর্য থাকে আলোকচ্ছটার মতো। আর এর দু’পাশে দেখতে পাওয়া যায় সূর্যের উপচ্ছায়া। শীতপ্রধান দেশে এ ঘটনা বেশি ঘটে। কারণ সেখানে হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায় বাতাসে বরফস্ফটিকের বেশি উপস্থিতি দেখা দেয়। আর ঠিক এ কারণেই ২২ জানুয়ারি মঙ্গোলিয়ার আকাশে তিন সূর্যের দেখা মিলেছিল।
সাঈদ আল হাসান শিমুল
পরবর্তী কালে আসল ছবিটি হারিয়ে গেলেও বর্তমানে ১৬৩০ সালের করা একটি কপি স্টকহোমের একটি চার্চে আজও শোভা পাচ্ছে। শেকসপিয়রের কিং হেনরি নাটকে তিন সূর্যের কথা বলা হয়েছে। ইংল্যান্ডে ১৪৬১ সালে মরটিমেয়ারস ক্রসের যুদ্ধে হিয়ারফরডশায়ার নামক স্থানে একসঙ্গে তিন সূর্য দেখার ঘটনার বর্ণনা আছে। সে সময় ইয়র্কের কমান্ডার ৪র্থ এডওয়ার্ড তার সৈন্যদের আকাশে দৃশ্যমান তিন সূর্য দেখিয়ে বলেন, এটি ঈশ্বরের পাঠানো স্বর্গীয় সংকেত। জয় তাদের নিশ্চিত। তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে সৈনিকরা যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ ও ৩২২ সালের মাঝে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল তার মিটিওরলজি ৩ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘দুটি নকল সূর্য আসল সূর্যের সঙ্গে উদয় হয়েছিল এবং সারাদিন তাকে ঘিরে থেকে আসল সূর্যের সঙ্গেই অস্ত হয়েছিল। এ দুটি নকল সূর্য সবসময় দুই পাশে থেকেছে, কখনও ওপর নিচে যায়নি। এছাড়া দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এদের সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় বেশি স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল।’ খ্রিস্টপূর্ব ৩১০ ও ২৪০ সালের মাঝে কবি অ্যারাটাস তার ফেনমেনিয়া বইয়ে তিন সূর্যের আবির্ভাবের কথা বলে গেছেন। তার মতে এগুলো বৃষ্টি, বাতাস বা ঝড়ের পূর্বাভাস। এছাড়াও রোমান ইতিহাসে তাদের নানা বইয়ে একই সঙ্গে তিন সূর্যোদয়ের কথা উল্লেখ আছে। যেমন সিস্যারো-এর ‘অন দ্য রিপাবলিক’ বইয়ে এবং রোমান দার্শনিক অ্যাপিউলিয়াস-এর অ্যাপোলজিয়া ১৫-তে এ সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়।
এবার ইতিহাস ছেড়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় আসা যাক। প্রচলিত ভাষায় একই সঙ্গে তিন সূর্যের আবির্ভাবকে সান ডগস বলা হয়- যার বৈজ্ঞানিক নাম পারহেলিয়া। আকাশে ভেসে থাকা বরফের ক্রিস্টালের ওপর সূর্যকিরণের প্রতিফলনই এ পারহেলিয়ার কারণ। সূর্যের আলো যখন পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয় তখন যদি বাতাসে ভেসে বেড়ানো তুষারকণায় পড়ে তখন তা ২২ ডিগ্রি কোণে প্রতিফলিত হয়। এসব তুষারকণা প্রিজমের মতো কাজ করে। ফলে প্রতিফলিত আলো সূর্যের চারদিকে বলয়ের সৃষ্টি করে। সূর্যের চারপাশে একটি গোলাকার রিংয়ের মতো আলোকচ্ছটা দেখা যায়। সূর্যোদয়ের সময়ে এ ঘটনা ঘটলে সানডগগুলো ধীরে ধীরে সূর্য থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। সূর্যের কাছে থাকলে এদের লালচে মনে হয় এবং দূরে যেতে থাকলে এরা ক্রমশ হলুদ, কমলা এবং শেষের দিকে নীলচে হয়ে যায়। মাঝখানে সূর্য থাকে আলোকচ্ছটার মতো। আর এর দু’পাশে দেখতে পাওয়া যায় সূর্যের উপচ্ছায়া। শীতপ্রধান দেশে এ ঘটনা বেশি ঘটে। কারণ সেখানে হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায় বাতাসে বরফস্ফটিকের বেশি উপস্থিতি দেখা দেয়। আর ঠিক এ কারণেই ২২ জানুয়ারি মঙ্গোলিয়ার আকাশে তিন সূর্যের দেখা মিলেছিল।
সাঈদ আল হাসান শিমুল
No comments